শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

একজন মুসলমান ইসলামী আইন অনুযায়ী কোন সম্পত্তি কোন প্রতিদান ব্যতিরেকে দান করে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহীতাকে হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলে। হেবা ইসলামী আইন অনুযায়ী এক ধরনের দান। হেবা গ্রহীতার প্রতি দাতার প্রীতি ও শুভেচ্ছা স্বরূপ। এবং তার নিকট হতে শ্রদ্ধা ও সম্মান লাভের উদ্দেশ্যে হেবা করা হয়। আপনি যে কাউকে আপনার সমস্ত সম্পত্তি হেবা করতে পারেন। অছিয়তের ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগের বেশি অছিয়ত না করা গেলেও এখানে সমুদয় হেবা করতে কোন আইনী বাঁধা নেই। আপনি ব্যক্তি ছাড়াও কোন প্রতিষ্ঠান যেমন- স্কুল, কলেজ বা মসজিদ মাদ্রাসাকে জমি হেবা করতে পারেন। হেবা করা সম্পূর্ণ হলে সেই জমি আর ফেরৎ নেয়া যায় না। তবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হেবা করতে বাধ্য করলে তা হেবা বলে গণ্য হবে না। হেবাকারীর স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে হেবা হতে হবে। জমি ছাড়াও কোন কোন বস্তু বা অর্থ হেবা করা যেতে পারে। হেবা করতে হলে জমির মূল স্বত্ত্ব হেবা করতে হবে। কোন জমির শুধু লভ্যাংশ বা ফসল হেবা করা বুঝায় না। বন্ধক বা রেহেন দেয়া সম্পত্তিও হেবা করা যায়। আবার রেহেনের টাকাও হেবা করা যায়। তবে হেবা করার জন্য তিন শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হয়। তার পক্ষে আইনত ক্ষমতা প্রদত্ত কেউ ঘোষণা দিলেও চলে। যেমন- পাওয়ার-অব-এ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা প্রাপ্ত। দ্বিতীয়ত যার উদ্দেশ্যে হেবা করা হচ্ছে তার দ্বারা হেবা গ্রহণ। তবে গ্রহণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হতে পারে। তার পক্ষে তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেউ হলেও কাজ চলে। তৃতীয়ত হেবা গ্রহীতার হেবাকৃত সম্পত্তির দখল গ্রহণ। এখন দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী, আপন ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীকে হেবা করার জন্য প্রতিটি হেবা দলিলের জন্য ১০০ টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফি দিতে হবে। তার বাইরে কাউকে হেবা করার জন্য সম্পূর্ণ রেজিষ্ট্রেশন ফি দিতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন ফি হার প্রতি বছর হেরফের হতে পারে। বাজেট ঘোষণার সময় রেজিষ্ট্রেশন ফি’র কি হেরফের হবে তা অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলে দেন। আগে মৌখিকভাবে হেবা করা হলে অনেকে সন্তুষ্ট হতে পারতেন না। ভাবতেন যদি কেউ হেবার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তবে হেবাকারীর মৃত্যুর পর বা তিনি বিগড়ে গেলে কিভাবে হেবা প্রমাণ করবে। কিংবা মিউটেশন করতে গেলে বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। তাই মৌখিক হেবা করার পর এফিডেভিটের মাধ্যমে ঘোষণা দিতেন যে আমি বিগত অমুক তারিখে অমুকের বরাবরে অমুক জমি হেবা করেছি তাহলেও আপনার কোন রেজিষ্ট্রেশন ফি লাগতো না বা দলিল রেজিষ্ট্রি করতে হতো না অথচ একটি লিখিত প্রমাণ পেয়ে যেতেন। এতে হেবা সম্পর্কে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তাকে সহজেই পরাস্ত করা যেতো। রেজিষ্ট্রি ছাড়ায় জমি হস্তান্তর করার বিধান থাকায় প্রায়ই জমির মালিকের মারা যাওয়ার পর ভূয়া হেবাগ্রহীতা সেজে মামলা মোকদ্দমা দায়ের করতো। আবার প্রকৃত হেবা গ্রহীতাকে অস্বীকার করে মামলা করতো। আবার অনেক জমি বিক্রয় করলেও ট্যাক্স ফাকি দেয়ার জন্য হেবা করতো। তাই সরকার ২০০৪ সালে ২৫ নম্বর আইনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন আইন ও সম্পত্তি হস্তান্তর আইন সংশোধন করে হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করার বিধান করেছে। এখন জালিয়াতি করে হেবানামা করা কঠিন। বর্তমানে কাউকে রেজিষ্ট্রি দলিলে হেবা করা হলে তা আগের তুলনায় নিরাপদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ