বিস্তারিত লিখবেন । প্রমাণ সহ ।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

 করােনা মহামারি মােকাবিলায় পৃথিবীজুড়ে জোরদার প্রচেষ্টা চলছে কী করে খুব সহজে ও অল্প খরচে করােনাভাইরাস টেষ্ট করা যায়। একদিকে যেমন চলছে প্রচলিত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করা টেস্টের পরিবর্তন ও পরিমার্জন, অন্যদিকে চলছে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন। এর সর্বশেষ সংযােজন হলাে স্নিফার ডগ। এর মানে হলাে, বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুরকে দিয়ে রােগীর নমুনার গন্ধ শুকিয়ে শনাক্ত করা যাবে করােনাভাইরাস। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এ গবেষণায় বেশ আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যাচ্ছে। স্নিফার ডগ, যাদের  ডিটেকশন ডগ বা শনাক্তকারী কুকুরও বলা হয়, এদের দিয়ে মানুষের রােগ পরীক্ষা করার ধারণা একদম নতুন নয়। কুকুরদের রয়েছে অস্বাভাবিক ঘ্রাণশক্তি, মানুষের চেয়ে ১০ হাজার ঘ্রাণশক্তি, মানুষের চেয়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ গুণ বেশি।

আমাদের নাসিকা গহ্বরের পেছনে রয়েছে বিশেষ ধরনের নার্ভ সেল। এই নার্ভ সেলগুলােকে বলা হয় ওলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর। গন্ধ উৎপাদনকারী যেকোনাে রাসায়নিক পদার্থ এসব সেন্সর সেলকে আঘাত করে। সেই আঘাতের সিগন্যাল মস্তিষ্কে তৈরি করে গন্ধানুভূতি। কুকুরের ক্ষেত্রেও একই রকম পদ্ধতি। তবে গন্ধ শোঁকার জন্য মানুষের রয়েছে ৬০ লাখ ওলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর। কুকুরের রয়েছে ৩০ কোটি! আবার কুকুরের মস্তিষ্কের যে অংশ গন্ধের অনুভূতি পর্যালােচনা করে, তার আকারও আমাদের চেয়ে ৪০ গুণ বড়। কুকুরের এই অসাধারণ ঘ্রাণশক্তির কারণে এদের নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় বিমানবন্দরে,
বিশেষ করে বিস্ফোরক দ্রব্য বা বেআইনি ড্রাগ শনাক্ত করতে। 

কুকুরের এই বিস্ময়কর ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়া গেছে মানুষের বিভিন্ন রােগ যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, ম্যালেরিয়া এবং আরও বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রােগ পরীক্ষায়। রােগীর শরীর থেকে নির্গত কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ শুকে কুকুর চিহ্নিত করতে পারে নির্দিষ্ট রােগে কে পজিটিভ আর কে নেগেটিভ। করােনাভাইরাস নিয়েও চলছে একই ধরনের গবেষণা—ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন রকমের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা চলছে। কোথাও রােগীর ঘাম, কোথাও ইউরিন,
আবার কোথাও শ্বাসতন্ত্রীয় নমুনা নিয়ে কুকুরকে গন্ধ শোকাননা
হচ্ছে। কুকুরের অস্বাভাবিক ঘ্রাণশক্তি ছাড়াও যে ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা হলাে কুকুরকে ঠিকভাবে ট্রেনিং দেওয়া। ট্রেনিংয়ে একদিকে কুকুরকে আরটি-পিসিআর করে নিশ্চিত করা করােনা রােগীর নমুনার গন্ধের সঙ্গে পরিচিত করে তােলা হয়। আবার কুকুর যেহেতু কথা বলতে পারে না, তার জন্য প্রয়ােজন কুকুরকে টেস্টের ফলাফল প্রকাশ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া।

সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্রে আটটি করােনাভাইরাস শনাক্তকারী কুকুর নিয়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কুকুরকে ট্রেনিং দেওয়ার পদ্ধতিটিও খুব মজার। গন্ধ শোঁকার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে
রয়েছে সাতটি হােল বা গর্ত। এসব গর্ত পাইপের মাধ্যমে
নমুনা রাখার চেম্বারের সঙ্গে সংযুক্ত। একসঙ্গে একটি পজিটিভ স্যাম্পল ও ছয়টি নেগেটিভ স্যাম্পল ব্যবহার করা হয়েছে। কুকুর যদি ২ সেকেন্ডের জন্য কোনাে গর্তে মুখ লাগিয়ে রাখে, তাকে ধরা হয়েছে পজিটিভ। আর কুকুর যদি সঠিকভাবে পজিটিভ স্যাম্পল শনাক্ত করতে পারে, মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার দিয়ে কুকুরটিকে পুরস্কৃত করেছে। 

এভাবে। করােনাভাইরাসে আক্রান্ত রােগীর মুখের লালা ও শ্বাসতন্ত্রীয় নমুনা ব্যবহার করে এক সপ্তাহ ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরপর এক হাজার রােগীর নমুনা পরীক্ষা করে শতকরা ৯৪ ভাগ সঠিক ফল পাওয়া গেছে। এর চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীরা। সেখানে বিমানবন্দরে কুকুর দিয়ে করােনাভাইরাস পরীক্ষা করার ট্রায়ালও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে। কুকুরের মাধ্যমে আবার রােগ ছড়াতে পারে কি না। সে আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কারণ,করােনাভাইরাস মূলত মানুষকেই সংক্রমিত করে। বাদুড় আর প্যাঙ্গোলিন ছাড়া অন্য প্রাণীতে সংক্রমণ ঘটানাের  প্রমাণ খুবই বিরল। বরং এ ভয়াবহ মহামারি মােকাবিলায় সহজসাধ্য, সাশ্রয়ী ও দ্রুততার সঙ্গে করতে পারা টেষ্ট হিসেবে কুকুরের এই গন্ধ শোঁকা পদ্ধতি বেশ ভালােই চলবে মনে হচ্ছে। এ পদ্ধতি সফলতার সঙ্গে প্রয়ােগ করা গেলে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলােতে নিয়ে আসতে পারে অন্য রকম স্বস্তি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ