শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হিসাব চক্রের ধাপসমূহ (Steps in Accounting Cycle) :

প্রতিষ্ঠান চলমান থাকাকালীন হিসাব চক্রটি প্রতিনিয়ত আবর্তিত হতে থাকে। হিসাব চক্রের ধাপসমূহ নিম্নে বর্ণিত হল:



১. লেনদেন সনাক্তকরণ ও পরিমাপকরণ (Indentification and Measurement of Transactions) ঃ হিসাব চক্রের প্রথম ধাপে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত সমস্ত ঘটনাগুলাে থেকে লেনদেন সনাক্তকরণ ও অর্থের মাপ কাঠিতে পরিমাপ করতে হয়। যে সমস্ত ঘটনা অনার্থিক এবং টাকার অংকে পরিমাপ করা যায় না তা হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা যায় না।



২. লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording Transactions:) হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপে হিসাবের বইতে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়। লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈতসত্তা বিশ্লেষণ করে এক পক্ষকে ডেবিট ও অন্য পক্ষকে ক্রেডিট করে প্রাথমিক পর্যায়ে তারিখ অনুযায়ী হিসাবের বই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। জাবেদায় লেনদেন লিপিবদ্ধ করাকে জাবেদাভুক্তকরণ বলা হয়। হিসাব কার্যক্রমে জাবেদার গুরুত্ব অনেক বেশী। কারণ এই বইতে কোন লেনদেন লিপিবদ্ধ করা না হলে পরবর্ত হিসাবগুলি সঠিক হয় না।


৩. শ্রেণীবদ্ধকরণ (Classification of Transations) লেনদেনগুলােকে জাবেদাভুক্তকরণের পর সমজাতীয় লেনদেনগুলাে শ্রেণীবিন্যাস করে পৃথক পৃথক শিরােণামে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ কার্যক্রমকে খতিয়ানভুক্তকরণ বলা হয়। যে হিসাবের বইতে লেনদেনসমূহ শ্রেণীবদ্ধভাবে ও সংক্ষিপ্তাকারে পাকাপাকিভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান(Ledger) বলে। খতিয়ানে

লিপিবদ্ধ করার কাজকে খতিয়ানভুক্তকরণ (Ledger posting) বলা হয়।



৪. সংক্ষিপ্তকরণ (Summarizing) ঃ খতিয়ানস্থিত হিসাবসমূহের ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্তসমূহ নিয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এই তালিকাকে রেওয়ামিল বলে। রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতে তথ্য সরবরাহ করার জন্য। রেওয়ামিলের দুইপার্শ্ব সর্বদাই সমান হয়। এক্ষেত্রে সমস্ত খতিয়ানের জের ১টি শীটে

উপস্থাপন করা হয় বলে এ ধাপকে সংক্ষিপ্তকরণ বলা হয়।


৫. সমন্বয় ও সমাপনি দাখিলা (Adjusting and Closing Entrises) ঃ রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর বকেয়া ও অগ্রিম আয়-ব্যয় সমন্বয় করে হিসাব কালের সঠিক আয়-ব্যয় নির্ণয় করা হয়। হিসাবের কোথাও ভুল-ত্রুটি থাকলে সংশােধন করতে হয়। এরূপ সমন্বয় ও সংশােধন, সমন্বয় ও সংশােধনী দাখিলার মাধ্যমে করা হয়। তাছাড়া, মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয় হিসাবগুলাের উদ্বৃত্ত আর্থিক বিবরণীতে স্থানান্তর করে মুনাফাজাতীয় হিসাবসমূহ বন্ধ করতে হয়। মুনাফা জাতীয় হিসাব বন্ধের জন্য যে দাখিলা দেয়া

হয় তাকে সমাপনী দাখিলা বলে ।


৬. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ (Preparation of Financial Statements) ঃ রেওয়ামিল ও সমন্বয় তথ্য নিয়ে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত হিসাবকাল শেষে আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা জানার জন্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

আর্থিক বিবরণীসমূহের মধ্যে উৎপাদন ব্যয় বিবরণী, আয় বিবরণী ও উন্বতপত্র প্রধান।


৭. বিবরণী বিশ্লেষণ ও ব্যাখাদান (Analysis and Interpretation of Statements) ঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ যেমন মালিক, ব্যবস্থাপনা, পাওনাদার, দেনাদার, কর্মচারী, সরকার, কর কর্তৃপক্ষ, জনসাধারণ, গবেষক প্রমুখ বিভিন্ন

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রয়ােজন অনুভব করে। আর্থিক বিবরণী ও এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে তথ্য বিবরণ ও প্রতিবেদনের আকারে ঐ সমস্ত পক্ষগুলােকে সরবরাহ করে। বিবরণী বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অনুপাত, তহবিল বিবরণী, সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণ ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করা হয়।


৮. প্রারম্ভিক জাবেদা লিখন (Opening Journal Entries) ঃ হিসাবকাল শেষে সম্পত্তি ও দায় হিসাবসমূহের উদ্বৃত্ত একটি

প্রারম্ভিব জাবেদার মাধ্যমে পরবর্তী বৎসরের হিসাব বইয়ে স্থানান্তর করা হয়। এভাবেই বিগত ও চলতি বৎসরের হিসাবের মধ্যে যােগসূত্র স্থাপিত হয় এবং এভাবে হিসাবরক্ষণ চক্রাকারে আবর্তিত হয়।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ