শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

গর্ভবস্থায় রোজা রাখলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে আসুন তা জেনে নিয়ঃ গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা না রাখা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থার উপর। তবে গর্ভবতী মায়ের যদি কোন শারীরিক দুর্বলতা না থাকে এবং তিনি রোজা রাখলে কোন শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন না হন তবে রোজা রাখতে কোন বাধা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে গর্ভস্থ শিশুর গ্রোথ, ডেভেলপমেন্ট এবং জন্মকালীন ওজনের উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য হয় না। গর্ভস্থ বাচ্চা মায়ের পুষ্টি নিয়েই বেড়ে ওঠে। সুতরাং মায়ের কোনো সমস্যা না হলে গর্ভস্থ বাচ্চার সমস্যা হওয়ার কথা না। ক) রোজা রাখার আগে গর্ভবতী মায়ের পূর্ব প্রস্তুতিঃ রোজার রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যসর্বপ্রথম একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত। ১. ডায়াবেটিস, অ্যানেমিয়া এবং প্রি-অ্যাকলেমপসিয়া আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন। ২. রোজা শুরুর পূর্বে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট প্ল্যান তৈরি করে রাখতে পারলে ঐ সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টি মান অটুট থাকে। ৩.রমজান শুরুর পূর্ব থেকেই কফি, চা (এমনকি গ্রিন টি) এবং চকোলেট খাওয়া কমিয়ে দিতে পারলে ভালো। কারণ এগুলোতে ক্যাফেইন থাকে, যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা রোজার সময় পানি শূন্যতায় ভুগতে পারেন। খ) গর্ভকালীন অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই রোজা রাখা নির্ভর করে। গর্ভকালীন সময়কে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি— ১. প্রথম তিন মাস : গবেষণায় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে মা সুস্থ থাকেন। প্রথম তিন মাসে কারও ক্ষেত্রে কিছু কম বা কারও ক্ষেত্রে কিছু বেশি সময় বমি ও বমি-বমিভাব স্থায়ী হয়। দেখা যায়, রোজা রাখলে বমির ভাব কম হয় এবং বমিও কম হয়। সেক্ষেত্রে সারাদিন ভালো থাকা যায়। ইফতার ও সাহরিতে বমিনাশক ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে। ২. মধ্যবর্তী তিন মাস : এ সময় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সাধারণত কোন সমস্যা থাকেনা। তাই মায়েরা অনায়াসে রোজা রাখতে পারেন। ৩. শেষ তিন মাস : শেষের তিন মাস গর্ভবতী মাকে সতর্ক হয়ে চলতে হয়। এ সময় বাচ্চা দ্রুত বাড়ে। তাই দুজনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিতে হয়। এ সময়েও পুষ্টি নিশ্চিত করে রোজা রাখা যায় । গ) সাহরি ও ইফতার এবং রাতের খাবার মেন্যু কেমন হতে পারেঃ ১. সাহরিঃ গর্ভবতী মায়ের বুকজ্বলা বা গ্যাসের সমস্যা থাকলে সাহরির সময় যে খাবারে গ্যাস হয় বা বুক জ্বালা করে ওই খাবারগুলো অবশ্য বর্জনীয়। ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা এড়াতে পানি ও তরল খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো ফল, যেমন- আম, কলা ইত্যাদি সাহরির মেন্যুতে রাখবেন। ফল ও আঁশযুক্ত খাবার ধীরগতিতে পরিপাক হয় বলে ক্ষুধা কম লাগবে। ২. ইফতারঃ রোজা রাখার ফলে আপনার পরিপাক ক্ষমতা ধীর হয়ে যায়, তাই ইফতার করতে হবে যথাসম্ভব ধীরে। প্রথমে ছোট এক গ্লাস ফলের রস বা পানি পান করুন। এরপর অল্প খাবার গ্রহণ করুন। এক বা দুই ঘন্টা পরপর বারবার অল্প করে খাবার খান। প্রচুর পরিমাণ তরল এবং পানি পান করুন। ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করে ইফতারে খেজুর, ফলের রস, চিঁড়া-দই-ফল খেতে পারেন। এতে করে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে। দুধ ও দুধের তৈরি খাবার রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা কমায়। দুধ, লাচ্ছি, মাঠা ইত্যাদিও ভালো। এছাড়া তাজা ফল বা সবজির সালাদ, স্যুপ ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। ৩. রাতের খাবারঃ ইফতারের পর অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন কিন্তু বারবার খান। নানা জাতের ডাল, মাছ, গোশত, ইত্যাদি আমিষ খাবারের সঙ্গে সবজির সুষম সমন্বয়ে রাতের খাবার খেতে পারলে খুব ভালো ।ঢেকিছাঁটা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাওয়া ভালো। ঘ) রোজাদার গর্ভবতী মায়েদের জন্য কিছু সতর্কতামুলক পরামর্শঃ ১) গর্ভাবস্থায় বেশী মসলাদার,ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও বাসি খাবার ইত্যাদি পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। ২) খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ডুবো তেলে ভাজা কিংবা চর্বিযুক্ত খাবার। ৩) চা বা কফি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়। ৪) যদি খালি পানি পান করতে একঘেয়ে লাগে তবে দুধ, দই, বরফ এবং ফলমূল দিয়ে তৈরী সালাদ খেতে পারেন। ৫) ইফতার ও সাহরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। কোন অবস্থাতেই সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না তাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে ও অনাগত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। ৬) গর্ভাবস্থায় আনুপাতিক হারে আঁশযুক্ত, প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন।কারণ এসব উপাদান ধীরগতিতে পরিপাক হয় বিধায় ক্ষুধা কম লাগবে। ৭) রোজার সময় বেশি বিশ্রাম নিন ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন। ৮) পরিমিত চিনিযুক্ত ও জাউ ভাত জাতীয় খাবার খেতে পারেন। ৯) অনেকক্ষণ রোদে বা গরমে অবস্থান না করে বাতাস আছে এমন খোলামেলা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। ১০) রাতের খাবারের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবেন এবং তারপর বাকি কাজ। ১১) দিনের কাজগুলো পরিকল্পনা মাফিক করুন, যাতে আপনি নিয়মিত বিশ্রাম নিতে পারেন। ১২) দীর্ঘ পথ হাঁটা এবং ভারি কিছু বহন করা থেকে বিরত থাকুন। ১৩) ঠান্ডা জায়গায় থাকুন। ১৪) খেজুর খাবেন বেশি করে। খেজুরে অনেক বেশি ক্যালরি ও খাদ্যগুণ বিদ্যমান। এ ছাড়া আম, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, ডাব, নারকেল ইত্যাদি ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। ১৫) ইসবগুলের শরবত নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে এড়ানো যায়। ১৬) বাচ্চার নড়াচড়া ১২ঘন্টায় ১০-১২বার হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। ঙ) যেসব লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেনঃ ১. যদি শিশুর নড়াচড়া অনুভব না করেন। ২. আপনার তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন যেমনটা মাসিকের সময় হয়ে থাকে। ৩. অনেক বিশ্রাম নেয়ার পর ও আপনি যদি ঘুম ঘুম ভাব বা দুর্বলতা অনুভব করেন। ৪. যদি গা গুলিয়ে উঠে এবং বমি হতে থাকে। ৫. যদি আপনি প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করেন। ৬. জ্বর জ্বর ভাব থাকে। ৭. যদি আপনার ও গর্ভের শিশুর ওজন না বাড়ে। ৮. যদি খুব ঘন ও কম প্রস্রাব হয়।বুঝতে হবে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন। ৯. যদি বিকট গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয় ।সেক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশান এর সম্ভাবনা থাকে যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। একটু সচেতনতা,সুস্থতা আর রুটিন মাফিক জীবন যাত্রা আপনাকে পবিত্র রমযানের রোজা রাখার সুযোগ করে দিবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ