করোনা একটি আরএনএ(RNA) ভাইরাস। ১৯৩৭ সালে পাখিদের মধ্যে এটি প্রথম দেখা যায়। মানুষের শরীরে এটির সংক্রমণ প্রথম পরিলক্ষিত হয় ১৯৬০ সালে। করোনার সংক্রমনে সাধারণ সর্দি কাশি থেকে সার্স ( SARS-Severe Acute Respiratory Syndrome) পর্যন্ত হতে পারে।

সার্সের প্রথম বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে, চীনের গুয়াংডুং প্রদেশের একজন অসুস্থ স্বাস্থ্য সেবাকর্মী থেকে৷ এই প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশ্বে প্রায় ৯০০০ জন আক্রান্ত হন এবং ৭৭৪ জন মারা যান।[1]

২০১২ সালে করোনা ভাইরাসের একটি নতুন রূপ সৌদী আরবে সার্সের মত একটি প্রাদুর্ভাব ঘটায়। তবে সার্সের থেকে আলাদা হওয়ায় এটার নাম হয় MERS-CoV(Middle East Respiratory Syndrome Corona Virus)। মেরস্-সিওভিতে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বমোট ৮১১ জন মারা গিয়েছেন। [2]

করোনা সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে প্রচন্ড জ্বর এসে শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যঘাত ঘটা।

সার্স হলে মাংসপেশীতে ব্যথা, সর্দি কাশি, নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। সার্স এক প্রকার ভাইরাল নিউমোনিয়া যেটি শ্বাসযন্ত্রের নিম্নভাগে হয়ে থাকে৷দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারলে বিভিন্ন ঔষধের মিশ্র চিকিৎসায় সার্স ভালো হয়ে যায়।

করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর দিকটি হচ্ছে এটি খুবই ছোঁয়াছে। হাঁচি কাশি , এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তিন ফুট দূরত্বে কথা বললেও ছড়াতে পারে।

বর্তমানে চীনে নতুনভাবে শুরু হওয়া নোভেল করোনা( 2019 nCoV) ভাইরাসটির মূল ভয়ানক রূপ হচ্ছে এটি অনবরত জিন সিকুয়েন্স পরিবর্তন (mutation) করে যাচ্ছে।ভাইরাসটির নতুন পরিবর্তিত রূপের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ঔষধ বা ভ্যাকসিন বানানো যাচ্ছেনা৷ রোগটি এতই ছোঁয়াছে যে রোগীদেরকে নিবিড় নির্জন পরিবেশে রাখা লাগছে এবং সেবাকারী ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যসেবার কর্মীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিচর্যা করছেন।

বর্তমানে চলা প্রাদুর্ভাব যেভাবে শুরু হয়েছিলো: ডিসেম্বর ২০১৯ এর শুরু থেকে মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে বহু লোক নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে। লক্ষণ নিউমোনিয়ার হলেও দেখা যায় নিউমোনিয়ার প্রচলিত চিকিৎসায় রোগীদের কোন উন্নতি হচ্ছে না। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় রোগীদের প্রায় সবাইই কোন না ভাবে উহান শহরের 'হুয়ানান সী-ফুড হোলসেল মার্কেটের' সাথে জড়িত (ক্রেতা, বিক্রেতা, যোগানদাতা ইত্যাদি), যেখানে জীবিত ও অর্ধমৃত জন্তু-জানোয়ারের কাঁচা মাংস কেনা-বেচা ও খাওয়া-দাওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে জানা যায় হুয়ানান মাছবাজারই কেবল নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎস ছিলনা। [3]

২১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে চীনের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (CDC) এর কাছে রহস্যময় ভাইরাসের সম্ভাব্য মহামারীর বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়। গবেষকরা প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা দেন, রহস্যময় রোগের জন্য দায়ী নতুন এক ধরণের করোনা ভাইরাস, যাকে তাৎক্ষণিক ভাবে 'উহান করোনা ভাইরাস' নামকরণ করা হয়। [4]

৩০ শে ডিসেম্বর উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চোখের ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং WeChat( চীনের ওয়াটস্এপ এর মত) এ বন্ধুদেরকে রহস্যময় ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে জানান। চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাঃ ওয়েনলিয়াংয়ের বার্তার স্ক্রীনশট ভাইরাল হয়ে গেলে সরকার তাঁকে গুজব ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করে এবং পুলিশ তাঁকে এই বিষয়ে আর উচ্চবাচ্য করতে নিষেধ করে।[5] ডাঃ লি তাঁর কর্মস্থলে ফিরে যান এবং একজন রোগীর থেকে তিনিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ ই জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন।দুইদিন আগে অর্থাৎ গত ৭ ই ফেব্রুয়ারী ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং মারা যান।[6]

ডাঃ লি ওয়েনলিয়াং

৩০ শে ডিসেম্বরে ডাঃ লি এর করা মহামারীর আশঙ্কাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও পরদিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর চীনের CDC(center for disease control) বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে।[7]

একই দিনে সরকারীভাবে হুয়ানান সী-ফুড হোলসেল মার্কেটকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয় এবং ক্রেতাদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। সংবাদমাধ্যমে অভিযানের খবর ফলাও ভাবে প্রচার করা হলেও একদিন পর অর্থাৎ ০১ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে আকষ্মিকভাবে মার্কেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। [8]

২ ই জানুয়ারী উহানে ৪১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের ২৭ জনই ছিলেন হুয়ানান সী-ফুড হোলসেল মার্কেটের সাথে যুক্ত। ৩ ই জানুয়ারীতে 2019 Novel Coronavirus কে সংক্ষেপ করে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয় 2019 nCoV [9] । এদিন মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ জন। ৪ ই জানুয়ারীতে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯ জন।

প্রথম রোগী মারা যায় ১০ ই জানুয়ারীতে[10] । তারপর প্রথম চারদিন মারা যায় ১ জন করে। তারপরের চারদিন ২ জন করে। পরের দিন ৩ জন। ২৩ জানুয়ারীতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ জন।

এই পর্যন্ত মোট মারা গেছে ৯১০ জন। গত তিন-চার দিন দৈনিক ৭০-৮০ জন করে মারা যাচ্ছে, শুরুতে যে সংখ্যাটা ছিল ১-২ জন । সংখ্যাগুলোর যদিও চীনের সরকারী হিসেব অনুযায়ী। [11]

চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে এই মূহুর্তে পৃথিবীর অষ্টম আর চীনের দ্বিতীয় (আলিবাবা প্রথম) বৃহত্তম কোম্পানী- টেক জায়েন্ট Tencent তাদের ওয়েবসাইটে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির একটি ট্র্যাকার চালু করেছে। ২ ই ফেব্রুয়ারী রাতে তারা অদ্ভুত সব সংখ্যা দেখানো শুরু করে, যেখানে দেখা যায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৪,০২৩ আর মৃতের সংখ্যা ২৪,৫৮৯। অথচ সেদিন পর্যন্ত সরকারী হিসেব মতে আক্রান্ত ছিল ১৪,৫৫১ জন আর মৃত ৩৬২ জন। Tencent কিছুক্ষণের মধ্যেই সংখ্যাগুলো সরিয়ে ফেললেও সংবাদমাধ্যমগুলো ততক্ষণে এটার খবর প্রকাশ করে দেয়, আশঙ্কা করা হচ্ছে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা চীনের সরকারি হিসেবের তুলনায় কল্পনাতীত ভাবে বেশি।[12]

তথ্যগুলোর অল্পকিছু আমি নিজে জানতাম এবং বাকিগুলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । ডাঃ লি এর মৃত্যু আমাকে ব্যথিত করেছে। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং দুনিয়াবী সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ