F.Rahman

Call

আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন আর প্রায় ১০০০ ট্রিলিয়ন সিন্যাপস(দুটি নিউরনের সংযোগস্থল,এর মাধ্যমেই সংকেত একটি নিউরন থেকে আরেকটিতে যায় ফলে আমরা কার্যকর উদ্দীপনা প্রদান করতে পারি)।

ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে আমেরিকার বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস একটি ছেলের আইকিউ পরীক্ষার পর বলেন মানুষ তার মস্তিষ্কের সবটুকুই সঠিকভাবে ব্যবহার করে না।বিভিন্ন প্রচারণা মাধ্যম, ম্যাগাজিন আর লোকমুখে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই অপরীক্ষিত অদ্ভুত তত্ত্ব। শুধু তা-ই নয় লুসি, লিমিটলেস, ফ্লাইট অব দ্য নেভিগেটর এর মতো বিখ্যাত কিছু হলিউড মুভিতেও এই তত্ত্বের দেখা মেলে।

তাহলে এই মিথ কতটুকু সত্য?

প্রথমত, যদি আমাদের ব্রেনের ১০% কাজ করতো তাহলে বাকী ৯০% জায়গায় যদি কোনো আঘাত লাগতো বা ক্ষতি হতো তাহলে তো আমাদের কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হওয়ার কথা ছিলো না।কিন্তু এমনটি দেখা যায় না।

দ্বিতীয়ত, বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে, যদি আমাদের ব্রেনের ১০% কাজ করে অর্থাৎ, বাকী ৯০% যেহেতু অপ্রয়োজনীয় তাই সেই অংশের অনেক আগেই বিবর্তনের মাধ্যমে বাদ পড়ে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু মানুষের পৃথিবীতে আগমনের ২ মিলিয়ন বছর পরও এমনটি হয় নি।

তাই প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ব্রেনের পুরোটাই কাজ করতে পারে। কিন্তু মস্তিষ্ক কখনোই একইসাথে একশ ভাগ ব্যবহার করে না। নির্দিষ্ট কাজের জন্য মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ উদ্দীপ্ত হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে মস্তিষ্কের এক থেকে ষোল শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হয়।

তাহলে যদি এমন হতো যে আমাদের মস্তিষ্ক কোনো একটি কাজে ১০০% সক্রিয় হয়ে যায়! তাহলে তখন আপনি একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। সাধারন অবস্থায় একইসময়ে মনোযোগ দিয়ে কখনোই একের অধিক কাজ করা যায় না।কারণ, একের অধিক কাজের জন্য পর্যাপ্ত সক্রিয়তা মস্তিষ্কের থাকে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Mahadi

Call

মানুষ তার জীবদ্দশায় মস্তিষ্কের ঠিক কত অংশ ব্যবহার করে- এ প্রশ্নের উত্তরে একটি কুসংষ্কার বেশ প্রচলিত। অনেকের মতে, মানুষ তার অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন মস্তিষ্কের ১০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারে না। আরেকটি ধারণাও বেশ প্রচলিত, আমরা যদি আমাদের মস্তিষ্কের বাকি ৯০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারতাম, তবে আমরা হয়ে উঠতাম অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী, "মাইন্ড রিডিং" ও "টেলিকাইনেসিস" এর মতো মানসিক ক্ষমতাগুলো থাকতো আমাদের হাতের মুঠোয়! গবেষণায় দেখা যায়, অন্তত ৬৫ শতাংশ মানুষ এ কুসংষ্কারে বিশ্বাসী। এ ভ্রান্ত ধারণার পেছনে রয়েছে অনেক কল্পকাহিনীর সমর্থন।

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় সিনেমা 'লুসি' তে আমরা দেখতে পাই মাদকের সহায়তা নিয়ে একজন নারী তার মস্তিষ্কের অব্যবহৃত ৯০ শতাংশ ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ঈশ্বরের মতো কিছু ক্ষমতা লাভ করে। এমনকি অন্য একটি গবেষণায় মনোবিজ্ঞানের ছাত্রদের অংশগ্রহণে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে এক-তৃতীয়াংশের উত্তর ছিলো, মানুষ নাকি তার মস্তিষ্কের কেবলমাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারে সক্ষম! তবে যাই হোক, প্রচলিত এ ভুল ধারণার বিপরীতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন মানুষ তার জীবদ্দশায় তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে পারে! তাই "টেন-পারসেন্ট মিথ" বা ১০ শতাংশ ব্যবহার নিয়ে যে কুসংষ্কার প্রচলিত আছে তা ঝেড়ে ফেলার এখনই সময়!

নিউরোসাইকোলজির আলোকে ব্যাখ্যা

মস্তিষ্কের শারীরবৃত্তিক গঠন কীভাবে আবেগ, আচরণ ও বুদ্ধিবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে আলোচনা করা হয় নিউরোসাইকোলজিতে। বহু বছর যাবত বিজ্ঞানীরা দেখিয়ে আসছেন মস্তিষ্কের প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন অংশ একেকটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিয়োজিত থাকে। পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি ও ফাংশনাল এমআরআই এর মতো ব্রেইন ইমেজিং কৌশল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন দৈনন্দিন কাজকর্মে ও চিন্তা ভাবনায় মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ সমবেতভাবে অংশ নেয়। সুতরাং, টেন-পারসেন্ট মিথ এখানে একেবারেই ভিত্তিহীন। গবেষণায় মস্তিষ্কের একেবারেই অব্যবহৃত কোনো অংশ এখন অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত মস্তিষ্কের একটি কোষকেও একেবারেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পাওয়ার রেকর্ড নেই।

অনেক ব্রেইন ইমেজিং টেস্ট থেকেই প্রমাণিত যে, একটি নির্দিষ্ট কাজ করার সময় মস্তিষ্কের সব অংশই মোটামুটি সক্রিয় থাকে, তবে ওই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশগুলোর সক্রিয়তা বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন: আপনি যখন আপনার স্মার্টফোনে এই লেখাটি পড়ছেন তখন আপনার দৃষ্টিশক্তি, পড়ার ক্ষমতা, হাত দিয়ে ফোন ধরে রাখা ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের অংশগুলো বেশি সক্রিয় থাকছে। মস্তিষ্কের কোনো অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে আমরা চরম সমস্যার সম্মুখীন হবো। একবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক নারীর মস্তিষ্কের সেরেব্রাম প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কারণে সে চিন্তা করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি, আবেগ, অনুভূতি সব হারিয়ে ফেলে। কারণ সেরেব্রাম আমাদের মস্তিষ্কের ৮৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। সুতরাং, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মস্তিষ্কের পুরোটাই দরকার, মাত্র ১০ শতাংশ নয়!

বিবর্তনগত প্রমাণ

মস্তিষ্কের সিংহভাগই যে আমরা জীবদ্দশায় ব্যবহার করি তার স্বপক্ষে আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে বিবর্তন। ওজনের দিক থেকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক দেহের মোট ওজনের মাত্র দুই শতাংশ, অন্যদিকে এটি দেহের প্রয়োজনীয় মোট শক্তির প্রায় ২০ শতাংশ ব্যবহার করে! অন্যদিকে অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর মস্তিষ্ক তাদের দেহের মোট শক্তির মাত্র দুই থেকে আট শতাংশ ব্যয় করে থাকে। মানব মস্তিষ্ক হলো লাখ লাখ বছরের ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলাফল। যুগের পর যুগ বিবর্তিত হয়ে আজকের এ উন্নত অবস্থায় এসে পৌঁছছে মস্তিষ্ক। তাই এর মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারের জন্য দেহের শক্তি সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় করা অর্থহীন। এসব তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রমাণগুলো বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করা যায়, মস্তিষ্কের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের মাঝে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা কতটা যুক্তিহীন!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ