ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে! এটা সত্য নয়। বরং ইসলাম নারী জাতিকে এক করুন অমানবিক অবস্থা
থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে
যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত
করেছে।
ইসলাম নারী জাতিকে এক করুন অমানবিক অবস্থা
থেকে উদ্ধার
পবিএ কোরআনে নারীদের অধিকার
ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর পুরুষদের
যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে,
তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী
পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের
উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ
হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত
নং-২২৮)।
একমাত্র ইসলামই মাতা, কন্যা স্ত্রী প্রভৃতি
হিসাবে নারীদেরকে বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার
প্রধান করেছে। নারীর প্রথম পরিচয় সে পিতা-
মাতার কন্যা। কিন্তু কন্যা হিসাবে ইসলাম-পূর্ব যুগে তার
কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবে তো লজ্জা-
শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে
জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর
সর্বএই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ
কালো হয়ে যেত।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন
মাজীদে বলা হয়েছে-“যখন তাদের কন্যা
সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় , তখন তাদের মুখ
কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট
হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে
সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে।
সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে
দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে।
শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সূরা
আন-নাহল, আয়াত নং-৫৮-৫৯)।
রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, কারো কন্যাসন্তান ভূমিষ্ট হলে সে
যদি তাকে পুঁতে না ফেলে, তাকে যদি সে
অপমানিত না করে এবং তাকে উপেক্ষা করে যদি
সে পুএসন্তানের পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে
আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)।
স্ত্রী হিসাবেও
ইসলাম নারীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে। পবিএ
কোরআনে বলা হয়েছে তারা তোমাদের
পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ। (সূরা আল-
বাকারা,আয়াত নং ১৮৭)।
ইসলাম বিবাহের ব্যাপারে
সুস্পষ্ট বিধান প্রধান করেছে। বহুবিবাহ প্রথাকে
নস্যাৎ করার জন্য চারজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহনের
অনুমতি দেয়া হলেও সে ক্ষেএে কতিপয় শর্ত
আরোপ করা হয়েছে। যার কারণে ইচ্ছা করলেই
একাধিক স্ত্রী গ্রহনের প্রবণতা রোধ হয়ে যায়।
প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর সুবিচার করার ক্ষমতা ও
সামর্থ্য না থাকলে একটি বিয়ে করার নির্দেশ জারি রাখা
হয়েছে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে
হাকীমে বলা হয়েছে-“বিয়ে করবে
তোমাদের পছন্দ মতো দুই, তিন কিংবা চার
নারীকে। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে,
তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে
পারবে না, তবে একজনকে” নিয়েই সন্তুষ্ট
থাকবে (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৩)।
কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত
(প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে
আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান
থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে
সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে
যায়।
বোন হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও
পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য
কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা
মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে
নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে
আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ
প্রাচুর্য দান করেন।
স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের
পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে
রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর
তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত:
১৮৭)।
স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.)
বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের
পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)।
তিনি আরও বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার
স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)।
পবিত্র
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের
স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা,
আয়াত: ১৯)।
কোরআনে আরেক জায়গায় বলা
হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার
রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের
ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
বিধবার অধিকার ও সম্মান
বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.)
বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ–পোষণের
দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী
এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও
মুসলিম)।
নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। মায়ের
মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “মায়ের পদতলে সন্তানের
জান্নাত।” একজন সাহাবী নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা
করলেন আমার নিকট খেদমত পাবার সবচেয়ে
বেশি হকদার কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন- তোমার মা। সাহাবী বললেন-
তারপর কে? রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন- তোমার মা। সাহাবী বললেন- তারপর
কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার
আত্মীয়-স্বজন। (বুখারী , মুসলিম, তিরমিযী ও
আবু দাউদ শরীফ)।
রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে ধন-সম্পওিতে
নারীদের কোন উওরাধিকার স্বীকৃত ছিল না।
ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পওির হকদার পুরুষের
পাশাপাশি নারীকেও প্রধান করে।
পবিত্র আল-
কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- “পিতা-মাতা ও
আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে
পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-
স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে নারীদেরও অংশ
আছে। অল্প হোক কিংবা বেশি হোক , এ অংশ
নির্ধারিত।” (সূরা আন-নিসা , আয়াত নং-৭)।