ফোবিয়া বা ভয় রোগ কাকে বলে?

প্রকৃত বিপদের উপস্থিতি ছাড়াই কোন বস্তু বা পরিস্থিতির প্রতি অত্যধিক ভয়কে বলে ফোবিয়া। যে বস্তু বা পরিস্থিতির থেকে ভয়ের সৃষ্টি হয় তার সম্পর্কে চিন্তা করলেও উদ্বেগের অনুভূতি হতে পারে। গুরুতর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে উদ্বেগের অনুভূতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি ঘটনা, কিন্তু কোন বাস্তব কারণ বা বিপদ ছাড়াই উদ্বিগ্ন বোধ করা স্বাভাবিক নয়। সুতরাং, ফোবিয়া মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত যে বস্তুগুলির প্রতি ফোবিয়া দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল, পশু, কীটপতঙ্গ, ইনজেকশন, উচ্চতা, জনসমক্ষে বক্তব্যপেশ, এবং মানুষের ভিড়।

একটি ভারতীয় গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ফোবিয়া হল একপ্রকার এংজাইটি ডিসঅর্ডার এবং ভারতীয় জনসংখ্যার 4.2%-এর উপরে এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

ফোবিয়া বা ভয় রোগ এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
ভয় ও উদ্বেগের পাশাপাশি অন্য যে উপসর্গগুলি এতে দেখতে পাওয়া যায় তা নিচে দেওয়া হল:

  • মাথা ঘোরা বা মূর্ছা যাওয়ার মত অনুভূতি।
  • হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি।
  • শ্বাস নিতে সমস্যা এবং গেলার সমস্যা।
  • ঘাম হওয়া।
  • বুকে ব্যথা।
  • বমিভাব ও বমি।
  • কাঁপুনি।
  • অবশতা।
  • পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে সচেতনতার অভাব।

এই উপসর্গগুলির তীব্রতা বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম হয়। গুরুতর পরিস্থিতিতে ফোবিয়া থেকে প্যানিক এট্যাক ডিসঅর্ডার জাতীয় অন্যান্য এংজাইটি ডিসঅর্ডারের সৃষ্টি হতে পারে।

ফোবিয়া বা ভয় রোগ এর প্রধান কারণ কি?
ফোবিয়ার কোন নির্দিষ্ট কারণ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। নিম্নলিখিত কারণগুলির ফলে এটি ঘটতে পারে:

  • অতীত পরিস্থিতি (যেমন, উড়ান বা জনসমক্ষে বক্তব্য রাখার খারাপ অভিজ্ঞতা, লিফটে আটকে যাওয়া, ছোটবেলায় কুকুরের কামড়, দুর্ঘটনা যার ফলে মৃত্যু হতে পারতো, ইত্যাদি)
  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একই প্রকৃতির ভয়।
  • জিনগত কারণ।
  • চাপের মধ্যে আছেন এরকম মানুষ বা এংজাইটি ডিসঅর্ডারের রোগী।

ফোবিয়া বা ভয় রোগ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
যদি কোন বস্তু বা পরিস্থিতি আপনার মধ্যে ফোবিয়া বা অত্যধিক ভয়ের উদ্রেক করে তাহলে প্রথম কর্তব্য হল বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করা। সে বন্ধু হতে পারে বা পরিবারের সদস্য। দ্বিতীয়ত, শান্ত হওয়ার কিছু প্রক্রিয়া (রিল্যাক্সেশন টেকনিক), যেমন যোগব্যায়াম, ধ্যান ও শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির সাহায্যে আপনি দেহকে শান্ত হতে শেখাতে পারেন।

যদি পেশাদারি সাহায্য চান তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। আপনার ভীতি এবং তার তীব্রতা নির্ণয়করণের পরে তিনি আপনাকে চিকিৎসা প্রণালীগুলি জানাবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফোবিয়ার কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হল:

  • কাউন্সেলিং ও থেরাপির মাধ্যমে ধাপে ধাপে ভয়ের উৎসের মুখোমুখি হওয়া এবং সমস্যাটির সম্বন্ধে চিন্তাপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা।
  • ভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত উদ্বেগের উপশমের ওষুধের ব্যবহার।
  • একই ফোবিয়ায় আক্রান্ত অন্যান্য মানুষদের সাথে গ্রূপ থেরাপি।
  • কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি।
  • যোগব্যায়াম ও ধ্যান জাতীয় রিল্যাক্সেশন টেকনিক।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে