অনেক মুসলমান আছেন,যারা নামাজ পড়েন না,তারা বলেন কোর-আনে নামাজ সম্পর্কে কিছু নেই,আছে সুধু নামাজ কায়েম করো,আদায় না,আমি এই বিষয়টি পুরোপুরিভাবে জানতে চাই?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Yakub Ali

Call
পবিত্র কোরআনে নামাজের কথা যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে
ইসলাম ডেস্ক: সালাত একটি আরবী শব্দ। এর ফারসী রূপ নামাজ। এর আভিধানিক অর্থ রহমত বা অনুগ্রহ, ক্ষমা প্রার্থনা, দু‘আ, আল্লাহর তাসবীহ করা, আল্লাহর গুণগান করা ইত্যাদি। (আল কামুসুল মুহীত)
পূর্বের নবী-রাসূলদের উপর কোন কোন সালাত ফরয ছিল তা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে স্পষ্ট পাওয়া যায় না। মি‘রাজের হাদীসে পাওয়া যায়, মূসা (আ) এর উম্মতের উপর দু ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল ফজর ও মাগরিব । সূরাহ রা‘দের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, সুলাইমান (আ) এর উপর আসরের নামায ফরয ছিল। এশার সালাত কেবল মুহাম্মদ (সা) এর উম্মতের বৈশিষ্ট্য।
নবীজীর নবুওয়াত লাভের পর থেকেই সালাত ফরয হয়। তখন ফজর ও আসর দু’ দু’ রাকাত ছিল। (কুরতুবী) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা করুন সূর্যাস্তের পূর্বে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে।’ (সূরাহ মুমিন, ৫৫)
আয়িশা (রাযি) বলেন, ‘শুরুতে সালাত বাড়িতে ও সফরে দু’ দু’ রাকাত ছিল।’ (মুসলিম, হা-৬৮৫)। এছাড়াও নবীজী তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। (সূরাহ ইসরা, ৭৯)। মি‘রাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয হয়। ফজর, যুহর, আসর, মাগরিব ও এশা। আর ১ম হিজরিতে জুমু‘আর সলাত ফরয হয়। [ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ-২৯]
পবিত্র কুরআনে ৮২ বারের মতো সালাতের কথা এসেছে। যা অন্য কোন ইবাদতের ব্যাপারে এত বেশি আসেনি। এতেই সালাতের গুরুত্ব প্রকাশ পায়।
সূরাহ বাকারাহ : মহান আল্লাহ বলেন, ‘(মুত্তাকী) তারা যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে (সৎপথে) ব্যয় করে।’ (আয়াত নং-৩)
ঈমান বিল গইব বা অদৃশ্য বিষয়ের বিশ্বাস হল, রাসূল (সা) যে হিদায়াত ও শিক্ষা নিয়ে এসেছিলেন সেসব আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া। ইকামাহ বা প্রতিষ্ঠা অর্থ হল, শুধু নিজে নামাজ আদায় করা নয় বরং নামাযকে সকল দিক দিয়ে ঠিক করা। নামাজে সব ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, এতে সবসময় সুদৃঢ় থাকা এবং এর ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করা সবই বুঝায়। আর এসব প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এককথায় নামাযে অভ্যস্ত হওয়া, তা শরীয়াতের নিয়ম মতো আদায় করা এবং এর সকল নিয়ম যর্থাথভাবে পালন করা। আহকাম ও আরকানসমূহ পূর্ণরূপে পালন করে নিয়মিত নামাজ আদায় করা। ইনফাক বা ব্যয় দ্বারা ফরয যাকাত, ওয়াজিব সদাকা এবং নফল দানও বুঝায়।
‘আর নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়।’ (আয়াত নং-৪৩)
ইকামাহ হল, সোজা করা, স্থায়ী রাখা। সাধারণতঃ যেসব খুঁটি দেয়াল বা গাছ প্রভৃতির আশ্রয়ে সোজাভাবে দাঁড়ানো থাকে, সেগুলো স্থায়ী থাকে এবং পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য এটা স্থায়ী ও স্থিতিশীলকরণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। নির্ধারিত সময়ে যাবতীয় শর্তাদি ও নিয়মাবলী রক্ষা করে নামায আদায় করা।
‘তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই তা কঠিন। কিন্তু বিনয়ীদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (আয়াত নং-৪৫)
ধৈর্য ধারণ করে ভোগ-বিলাস ও প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বশীভূত করে ফেলো। তাতে সম্পদপ্রীতি কমে যাবে। সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতি ধৈর্য ও নামায। বিনয় অর্থ অধিকারের ক্ষেত্রে ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সবার সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করা এবং আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা পালন করতে যেয়ে হৃদয়কে শুধু তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়া। ইচ্ছাকৃত কৃত্রিম উপায়ে বিনয়ীদের রূপ ধারণ করা শয়তান ও প্রবৃত্তির প্রতারণা মাত্র। আর তা অবশ্যই নিন্দনীয়। অবশ্য তা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেই ক্ষমার্হ।
‘যখন আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতীম ও দীন দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষদের সৎ কথা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে। তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে। তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।’ (আয়াত নং-৮৩)
‘তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।’ (আয়াত নং-১১০)
‘হে মুমিনেরা তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (আয়াত নং-১৫৩)
‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করবে বরং বড় সৎকর্ম হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং নবী-রাসূলদের উপর আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মুহাব্বতে আত্মীয়, এতীম, মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক এবং মুক্তিকামী দাসদের জন্য। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয়, যারা কৃত ওয়াদা সম্পাদন করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হল, সত্যাশ্রয়ী। আর তারাই পরহেযগার।’ (আয়াত নং-১৭৭)
‘নামাযের প্রতি যত্নবান হও। বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।’ (আয়াত নং-২৩৮)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ