আমরা শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত ।  আমি দেখেছি আহলে হাদীস  ও হানাফী মাযহাব  এর সালাত আদায় করার পদ্ধতি অন্যরকম।  কেন এদের মধ্যে কোন মাযহাবের সালাত সঠিক   দলিল সহ  জানাবেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আমাদের মাযহাব হানাফী এটা আমাদের ওপর আল্লাহ পাকের বড় দয়া এবং রহমত। আমাদের আদি পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর টাইটেল ছিল হানীফ। আমাদের দীনের নামও ﻣﻠﺔ ﺣﻨﻔﻴﺔ ﺑﻴﻀﺎﺀ | আমাদের ইমামও আবু হানিফা আল্লাহু আকবার। কত বড় সৌভাগ্যবান আমরা। আমাদের আদি পিতাও হানিফ, আমাদের দীনের নামও ﻣﻠﺔ ﺣﻨﻔﻴﺔ | আমাদের মাযহাবও হানাফী মাযহাব, কত বড় সৌভাগ্য আমাদের। আল্লাহ পাক বলেন, ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍِﺑْﺮٰﻫِﻴْﻢُ ﻳَﻬُﻮْﺩِﻳًّﺎ ﻭَّﻟَﺎ ﻧَﺼْﺮَﺍﻧِﻴًّﺎ ﻭَّﻟٰﻜِﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻨِﻴْﻔًﺎ ﻣُّﺴْﻠِﻤًﺎ ١ؕ ﻭَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴْﻦَ ۰۰۶۷ আমরা বলছি না যে, ইবরাহীম (আ.) ইহুদিও ছিলেন না এবং খ্রিস্টানও ছিলেন না, বরং তিনি একজন হানিফ মুসলিম তথা পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন।[১] সমস্ত পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ছিলেন। সত্য ধর্মের ওপর অটল, অবিচল ছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর কী প্রসাংশা করব! আল্লাহ পাক তাঁকে এত বেশি ঈর্ষান্বিত গুণাগুণ দিয়েছেন, যা তার অন্য সমসাময়িক যারা আছেন তাতে তাঁরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন, আর্শ্চান্বিত হতেন, এমন কি আমাদের ইমাম আবু হানিফার প্রসংশা হানাফীদের করতে হয়নি, অন্য মাযহাব অবলম্বনকারীরা ইমাম আবু হানিফার প্রসংশায় পঞ্চমুখ। যেমন- ইমাম ইবনে হাজর আল-আসকালানী এবং শাফিয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়া আল-কুবরা যার অনবদ্ধ সংকলন সেই ইবনে হাজর আল-হায়সমী আল-মক্কী আশ-শাফিয়ী (রহ.) ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর প্রসংশার ওপর একটি কিতাব রচনা করেছেন, যার নাম হল ﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﺍﻟﺤﺴﺎﻥ ﻓﻲ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺍﻟﻨﻌﻤﺎﻥ | তনি বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর জন্য অন্যান্য দুর্বল হাদীসের আশ্রয় নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’ বরং সহীহ আল-বুখারী শরীফের কিতাবুস তাফসীরে সুরায়ে জুমআর তাফসীরে বলা হয়েছে, ﻭَّﺍٰﺧَﺮِﻳْﻦَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻟَﻤَّﺎ ﻳَﻠْﺤَﻘُﻮْﺍ ﺑِﻬِﻢْ ١ؕ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳْﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴْﻢُ ۰۰۳ [২] উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুযুর (সা.) ইরশাদ করেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্যের বাসিন্দা। ইবনে হাজর মক্কী বলছেন, ﻭﻫﺬﺍ ﻣﻨﻘﺒﺔ ﻋﻈﻴﻤﺔ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻪ বলা হয়েছে, এখানে ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর সাথী-সঙ্গীদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। শাফিয়ী মাযহাবের আর এক প্রথিতযশা আলেম আল্লামা আবদুর রহমান জালাল উদ্দীন আস-সুয়ুতী (রহ.)ও ইমাম আবু হানিফার শ্রেষ্ঠত্বের ওপর কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাবের নাম হল ﺗﺒﻠﻴﻎ ﺍﻟﺼﺤﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ| তিনি লিখছেন, আল্লাহ পাক এই ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে ইলমে ফিকহের প্রথম সংস্কারক ও প্রথম আবিস্কারকের খ্যাতি অর্জন করার সৌভাগ্য দান করেছেন। তিনি হাদীসশাস্ত্রকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন। এর আগে এভাবে কেউ সৃষ্টি করেননি। লা-মাযহাবী নামের এক শ্রেণীর ভ্রান্ত সম্প্রদায় আছে, তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ইমাম আবু হানিফার নাকি হাদীস বিষয়ে ইলম নেই। আল্লামা সুয়ুতী (রহ.) বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ৪০ হাজার হাদীসের আহকাম থেকে নির্বাচিত করে তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইলমে ফিকহের তদওয়ীন তথা আবিস্কারের ওপর কিতাবুল আসার নামে এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব লিখেছেন এবং তার বিশিষ্ট দুই শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ তাঁর থেকে বর্ণনা করে ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺛﺎﺭ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﺃﺑﻲ ﻳﻮﺳﻒ ﻭﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺛﺎﺭ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺣﻤﻬﻤﺎ ﺍﻟﻠﻪ লিখেছেন। এই দুটো কিতাব হল ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর। অথচ তথাকথিত আহলে হাদীসরা বলে, ইমাম আবু হানিফার হাদীসশাস্ত্রে কোন কিতাব নেই। দেখুন! কি রকম মিথ্যাচার। ইমাম শাফিয়ীর উস্তাদ ইমাম ওকী’ ইবনে জর্রাহ (রহ.) তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অন্যতম শিষ্য। তিনি তাঁর জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন, ﻭﻛﺎﻥ ﻳﺤﻔﻆ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﻛﻠﻪ ﻭﻗﺪ ﺳﻤﻊ ﻣﻨﻪ ﺣﺪﻳﺜًﺎ ﻛﺜﻴﺮًﺍ ﻭﺍﻛﺜﺮ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ . অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সমস্ত হাদীস তিনি মুখস্ত করেছেন, অসংখ্য হাদীস শ্রবণ করেছেন এবং সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁর থেকে। ইমাম মক্কী ইবনে ইবরাহীম যিনি সদরুল আইম্মা। তিনিও ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শিষ্য। দেখুন হাদীসশাস্ত্রে তাঁর কত বড় মর্যাদা। তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺑﻮﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﻗﺪ ﺳﻤﻌﻪ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺍﻟﻔﻘﻪ ، ﻭﺃﻛﺜﺮ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺔ . অর্থাৎ তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করতেন। সমস্ত বড় বড় সবাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ছাত্র। মেশার ইবনে কেদা। তিনি ﻣﻴﺰﺍﻥ ﺍﻟﻌﻠﻢ ছিলেন, সুফয়ানে সুরার মধ্যে কোন মত বিরোধ হলে, তিনিসহ আরও যারা সমসাময়িক বিজ্ঞ আলেম ছিলেম তাঁরা সামাধান দিতেন। সেই মেশার ইবনে কেদাও ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শিষ্য ছিলেন এবং এ রকম আবদুর রহমান ইবনে মকরী। তিনি সেই যুগের শায়খুল ইসলাম ছিলেন। তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে ৯০০০ হাজার হাদীস মুখস্ত করেছেন। তিনি যখন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হতে হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন এটাও বলতে বলেছেন, ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺷﻬﻨﺸﺎﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻣﻠﻚ ﺍﻷﻣﻼﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ. অর্থাৎ হাদীসশাস্ত্রের সম্রাট আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। দেখুন! ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কত বড় ইমাম ছিলেন। আমরা যে হানিফী মাযহাব অনুসরণ করি। এটা আমরা অনর্থক তার অনুসরণ করছি না, বরং তিনি কেয়ামত পর্যন্ত যেসব নিত্য-নতুন সমস্যা সংঘঠিত হবে সব কিছুর সন্তোষজনক সামাধান কুরআন-হাদীস থেকে উদ্ঘাটন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করার যে প্রতিভা আল্লাহ পাক তাঁকে দিয়েছেন; এজন্য আমরা তাঁর অনুসরণ করি। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুরআন-হাদীস থেকে সমস্যা সামাধানের জন্য আহকাম উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব ইমাম থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর যে দূরদুুুর্শিতা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি, সঠিক কর্মপদ্ধতি ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পুরো বিশ্বব্যাপীর নযর কেড়ে নিয়েছিলো, আর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় সকলের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধারপাত্র বনে ছিলেন। এখনও আছেন আল-হামদু লিল্লাহ। আমি তো ইনশাআল্লাহ গর্ব করে বলতে পারবো, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর প্রতিটি মাসয়ালা ﺃﻭﻓﻖ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ (কুরআন-সুন্নাহর সাথে সর্বাধিক সামঞ্জস্যশীল)। অন্যান্য ইমামের মসয়ালা কুরআন-সুন্নাহর সাথে এ রকম মিল নেই। এভাবে বলতে গেলে আজকে পুরো রাত চলে যাবে। যেমন- ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢِ নামাযের মধ্যে আস্তে পড়া সুন্নত বলেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)। কিন্তু ইমাম শাফিয়ী (রহ.) বলেন বড় আওয়াজে পড়া সুন্নত। অথচ মুসলিম শরীফ, বুখারী শরীফসহ সমস্ত হাদীসের কিতাবও হাদীসে কুদসীর মধ্যেও আছে যে, নবী করীম (সা.) বিসমিল্লাহ বড় করে পড়তেন না, বরং আস্তে পড়তেন। আবার যেহেতু হুযুর (সা.) বিসমিল্লাহ ছোট করে পড়তেন তাই ইমাম মালিক (রহ.) বিসমিল্লাহ পড়া সাধারণত সুন্নতও বলেন না। তিনি বিসমিল্লাহ পড়াকে অস্বীকার করে দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন ছোট করে পড়া সুন্নত, বড় করে পড়া নয়। যেমন নামাযের মধ্যে সুরা আল-ফাতিহার পর বিসমিল্লাহ ছোট করে পড়াই সুন্নত। একটা ঘটনা বলি, শাফিয়ী মাযহাবের অন্যতম আলেম ইমাম দারাকুতুনী; তাযকিরাতুল হুফফায ও বাদায়িউস সানায়িয়ে লেখা হয়েছে, ইমাম দারাকুতুনী বিসমিল্লাহ বড় করে পড়া সুন্নত হওয়ার ওপর একটি রিসালা লিখেছিলেন। ইমাম দারাকুতুনী যে রিসালাটি লিখেছিলেন শাফিয়ী মাযহাবের পক্ষে, মালিকী মাযহাবের এক আলেম এই পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করে ইমাম দারাকুতুনী (রহ.)-এর কাছে এসে বললেন যে, আপনি শপথ দিয়ে বলুন, আপনার এ রিসালার মধ্যে কোন সহীহ হাদীস আছে কি নেই। তখন ইমাম দারাকুতুনী বাধ্য হয়ে গেলেন এবং বলেছেন, ﺍﻣﺎ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ^ ﻓﻠﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻣﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻓﺒﻌﻀﻪ ﺻﺤﻴﺢ ﻭﺑﻌﻀﻪ ﻏﻴﺮ ﺻﺤﻴﺢ . স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে গেলেন। রসূল (সা.) থেকে কোন সহীহ হাদীস নেই। সাহাবা থেকে যে কিছু হাদীস আছে এর মাঝে কিছু সহীহ এবং কিছু দুর্বল। তাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) যেটি বলেছেন এটিই ঠিক। এ রকম উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার মাসয়ালা। এখানে লা-মাযহাবীরা সৌদি আরব, ওমান, কাতার, আরব-আমিরাতসহ বিবিন্ন দেশে তারা তাদের এ ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের ঘৃণ্য চেষ্টায় লিপ্ত। লা-মাযহাবের অর্থ কি জানেন? মাযহাবকে সুবিধামত আমল করা। ওরা এখন মাযহাবকে সুবিধা মতো আমল করতে চায়; সুযোগসন্ধানীর দল। তারা প্রতিনিয়ত বলে বেড়ায় তারা নাকি তকলীদ তথা ইমামের অনুসরণ করে না, অথচ আমাদের চেয়েও তকলীদ বেশি করে তারাই। কারণ তকলীদ ছাড়া কোন উপায় নেই। সেটা বুঝেও জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। তারা ৭০০ হিজরীর একজন আলেম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার অনুসরণ করে। আর আমরাসহ বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ ইমামুল আইম্মা ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অনুসরণ করি যিনি প্রথম শতাব্দীর ইমাম। আমরা প্রথম শতাব্দীর ইমামের অনুসরণ করে কি অপরাধ করলাম? তারাও তো তকলীদ করে। নিজের যোগ্যতার বলে কিছুই করতে পারে না। তাবলীগ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং বড় বড় ইমামদের অনুসরণ থেকে জনসাধারণকে বিমুখ করে রেখে বিভ্রান্তির বেড়াজালে হাবুডুবু খেয়ে নিজেদের অনুসারী বানিয়ে রাখে। তারা তো কুরআন-হাদীস বুঝে না। কুরআন-হাদীসের মধ্যে কি পার্থক্য আছে সেসব তারা কি করে বুঝবে? আল্লাহর রহমতে আমরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বুখারী-মুসলিমসহ কুরআন-হাদীসের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এটিই প্রমাণ করতে সামর্থ হয়েছি যে, ﺃﻥ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺃﻭﻓﻖ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ | তারা তো কিছু কিছু অনুবাদ পড়ে, দুই একটা হাদীস শুনে তারপর বলে তকলীদ করতে হবে না। কুরআন-হাদীস যথেষ্ট বেশ। এভাবেই কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তাদের সুবিধা মতো আমল করা, এটাই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। এ রকম একটা একটা করে সমস্ত মাসয়ালা ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর স্বপক্ষের মতামতকে প্রধাণ্য দিয়ে প্রমাণিত করতে পারব ইনশাআল্লাহ। এই উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা মাসআলা যারা আমীন বলে চিৎকার করে উঠে নামাযের মধ্যে এটাতো সুন্নাতের পরিপন্থী। কেননা রসূল (সা.) এবং খুলাফায়ে রাশেদীন আমীন বড় করে বলতেন না। যে ইমামে হাদীস আমীন বড় করে পড়ার প্রবক্তা তার মাযহাবও আমীন ছোট করে পড়ার মাযহাব, আল্লাহু আকবর। হযরত সুফিয়ান আস-সওরী (রাহ.) হল আমীন বড় করে পড়ার প্রবক্তা, কিন্তু তিনি আমীন ছোট করে পড়ার মাযহাব গ্রহণ করলেন। আমীরুল মুমিনীন ইমাম শু’বা (রহ.) তিনি বলেন, রসূল (সা.) যখন ﻭﻻﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ বলতেন তখন আস্তে করে আমীন বলতেন। তার চার বিশিষ্ট খলিফারাও আস্তে পড়তেন। দেখেন কি সুন্দর? কত যুক্তিসঙ্গত ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাযহাব। তাঁর কথা হল সুরা আল-ফাতিহা কুরআনের অংশ, এখানে কারো দ্বিমত নেই, তদ্রুপ আমীন যে কুরআনের অংশ নয়, এতেও কারো দ্বিমত নেই। কেউ বলতে পারবে না যে, আমীন কুরআনের অংশ। এবার দেখেন মাগরিব ইশা ফজর জুমাসহ যে সমস্ত নামাযে আমরা কিরাআত বড় করে পড়ি সেখানে সুরা আল-ফাতিহাকে বড় করে পড়ি, কেননা সুরা আল-ফাতিহা কুরআনের অংশ। এখন যদি আমীনকে বড় করে বলা হয় তখন এটাতো কুরআনের অংশ হয়ে যাবে। আমীন আর সুরা আল-ফাতিহার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। সাধারণ মানুষ মনে করবে এটাও সুরা আল-ফাতিহার অংশ অথচ আমীন সুরা আল-ফাতিহার অংশ নয়। পৃথিবীর মধ্যে কোন আলেম বলতে পারবেনা যে, আমীন সুরা আল-ফাতিহার অংশ। সে জন্য ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, সুরা আল-ফাতিহাকে বড় করে বলতে হবে আর আমীনকে ছোট করে বলতে হবে। এখান থেকে ছোট্ট একটি পার্থক্য বুঝে আসে। হযরত আলী (রাযি.) বলেন, আমীন এটি হচ্ছে দুআর শীলমোহর। আল্লাহপাক বান্দার দুআর শেষে আমীন বলে শীলমোহর করে দিয়েছেন। কেননা সুরা আল-ফাতিহার শেষের ভাগ হচ্ছে বান্দার দরখাস্ত। আর প্রথম অর্ধেক হচ্ছে আল্লাহর প্রসংশা। সে জন্য হাদীসে কুদসীর মধ্যে আছে হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ،^ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰٰ ﺻَﻠَﺎﺓً ﻟَّـﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺑِﺄُﻡِّ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻓَﻬِﻲَ ﺧِﺪَﺍﺝٌ ‏» ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ ﻏَﻴْﺮُ ﺗَﻤَﺎﻡٍ . ﻓَﻘِﻴْﻞَ ﻟِﺄَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ : ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﻜُﻮْﻥُ ﻭَﺭَﺍﺀَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻗْﺮَﺃْ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲْ ﻧَﻔْﺴِﻚَ ‏» ؛ ﻓﺈﻧِّﻲْ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ^ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ‏« ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰٰ : ﻗَﺴَﻤْﺖُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﻋَﺒْﺪِﻱْ ﻧِﺼْﻔَﻴْﻦِ ، ﻭَﻟِﻌَﺒْﺪِﻱْ ﻣَﺎ ﺳَﺄَﻝَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ : ‏[ ﺍَﻟْـﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَـﻤِﻴْﻦَ ‏] ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰٰ : ﺣَﻤِﺪَﻧِﻲْ ﻋَﺒْﺪِﻱْ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ : ‏[ ﺍَﻟﺮَّﺣْﻤٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢِ ‏] ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰٰ : ﺃَﺛْﻨَﻰٰ ﻋَﻠَﻲَّ ﻋَﺒْﺪِﻱْ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ : ‏[ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ‏] ، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺠَّﺪَﻧِﻲْ ﻋَﺒْﺪِﻱْ – ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣَﺮَّﺓً ﻓَﻮَّﺽَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻋَﺒْﺪِﻱْ – ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ : ‏[ ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻦُ ‏] ، ﻗَﺎﻝَ : ﻫَﺬَﺍ ﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﻋَﺒْﺪِﻱْ ، ﻭَﻟِﻌَﺒْﺪِﻱْ ﻣَﺎ ﺳَﺄَﻝَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ : ‏[ ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟْـﻤُﺴْﺘَﻘِﻴْﻢَ ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬﻳْﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْـﻤَﻐْﻀُﻮْﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴْﻦَ ‏] ﻗَﺎﻝَ : ﻫَﺬَﺍ ﻟِﻌَﺒْﺪِﻱْ ﻭَﻟِﻌَﺒْﺪِﻱْ ﻣَﺎ ﺳَﺄَﻝَ ». বুখারী শরীফ ছাড়া সমস্ত হাদীসের কিতাব এটা বর্ণনা করেছেন।[৩] [ ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟْـﻤُﺴْﺘَﻘِﻴْﻢَ…] থেকে শেষ পর্যন্ত এটা বান্দার দরখাস্ত। আল্লাহপাক বান্দাকে কিভাবে আল্লাহর দরবাবে দুয়া করতে হবে এটা শিক্ষা দিয়েছেন। শেষে যখন আমীন বলব এটা হল: ﺧﺎﺗﻢ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﻦ অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার এই দুআর ওপর শীল করে দিয়েছেন যেন ফেরত না হয়। এ জন্যই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) আমীন ছোট করে পড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এবার দেখুন, ইমামের পেছনে কিরাআত পড়ার মাসয়ালা। অর্থাৎ ইমামের পিছনে কিরাআত না পড়া প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের যে শক্তিশালী প্রমাণ এ রকম প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহপাক বলেন, ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍٰﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪٗ ﻭَﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥَ ۰۰۲۰۴ [৪] এটিই হানাফী মাযহাবের জন্য ইমামের পেছনে কিরাআত পড়ার মাসআলার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। কেউ এমন কোন হাদীস দেখাতে পারবে না যেখানে নবী (সা.) ইমামের পিছনে কিরাআত পড়তে বলেছেন। নবী (সা.) বলেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন, « ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻓِﻲْ ﻧَﻔْﺴِﻚَ ». তোমরা কিরাতে নফসী (মনে মনে) পড় কিরাতে লফযী (উচ্চারণগত) কিরাআত পড় না।[৫] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, « ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺇِﻣَﺎﻡٌ ، ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓٌ ».[৬] তারা ইবনে মাজাহর একটি বর্ণনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো চেষ্টা করে। কোন রকম এদিক সেদিক করে হাদীসকে দুর্বল প্রমাণ করার চেষ্টা করে, অথচ এই হাদীসের আরও দুই চারটি বর্ণনা আছে যাতে কোন রকম দুর্বলতার গন্ধ নেই। তাহাওয়ী ও মুসান্নফে ইবনে আবু শায়বাসহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে এই হাদীস সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত আছে। যাতে দুর্বলতার কোন গন্ধ নেই। সমস্ত বর্ণনাকারী সিকা (শর্তযুক্ত), ইরশাদ করেছেন, « ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺇِﻣَﺎﻡٌ ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺗُﻪُ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓٌ »[৭] সুতরাং « ﻟَﺎ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ »[৮] যে একটা বলা হয় সেটা হল যারা একাকী নামায পড়ে তাদের জন্য প্রযোজ্য আমরা হানাফীরা বলিনি, ইমাম সুফয়ান ইবনে উয়াইনা, ইমাম জাফর ইবনে আবদুল্লাহ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ সবাই বলেছেন ইমামের পিছনে যারা নামায পড়ে তাদের জন্য এ হাদীস প্রযোজ্য হবে না। বরং তখন ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍٰﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪٗ ﻭَﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥَ ۰۰۲۰۴ (যখন ইমাম কিরাআত পড়বে তখন মুকতাদিরা নিরব থাকবে)। নাসায়ী শরীফের মধ্যে তরজমাতুল বাব কায়েম করেছেন এভাবে, ﺗَﺄْﻭِﻳْﻞُ ﻗَﻮْﻟِﻪِ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍٰﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪٗ ﻭَﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥَ ۰۰۲۰۴ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম নাসায়ী ও হযরত আবু মুসা আল-আশআরী বর্ণনা করেছেন, যখন ইমাম কিরাআত পড়বে তখন তোমরা নিরবে চুপ করে বসে থাকবে। কেউ ইমামের পিচনে সুরা আল-ফাতিহা পড়বে না। শুধু একটা দুইটা হাদীস না, হাদীসও আছে, কুরআনও আছে। পক্ষান্তরে তাদের পক্ষে কুরআনের কোন দলীল নেই। দেখুন! কত শক্তিশালী হানাফী মাযহাবের প্রমাণাদি। তার পর দেখুন, নামাযে হাত উঠানো। নামাযে সাত জায়গায় হাত উঠানোর ব্যাপারে হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে। তারা শুধু দুই জায়গায় হাত উঠায় আর বাকি জায়গায় উঠায় না। আমরা বলি বর্ণিত সব জায়গায় উঠাতে পারেন না? ওই সাত জায়গার সবকটি তো হাদীসে আছে। ইবনে ওমর (রাযি.) যিনি নামাযে হাত উঠানোর বর্ণনা কারী। তার বিশ্বস্ত শিষ্য মুজাহিদ ইবনে জবল বলেন, « ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﺧَﻠْﻒَ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﻜْﺒِﻴْﺮَﺓِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ». আমি হযরত ইবনে ওমরের সংস্পর্শে অনেক বছর থেকেছি। অথচ ইবনে ওমর (রাযি.) নিজেই নিজের বর্ণিত হাদীসের বিধান ছেড়ে দিয়েছেন।[৯] প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত ইবনে মসউদ (রাযি.) কখনো নামাযে হাত উঠাননি। কেননা নামাযের মধ্যে বার বার হাত উঠানো এটা নামাযের একাগ্রতা ও একনিষ্টতা পরিপন্থী। এ জন্য নবী (সা.) আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়েছেন। কেননা নামাযের মধ্যে স্থিরতা থাকতে হয় নামাযে বারবার হাত উঠালে স্থিরতা থাকে না, অমনুযোগী হয়ে যায়। সেজন্য আমরা নামাযে বার বার হাত উঠাই না। নবী (সা.) প্রথমিক যুগে নামাযে হাত উঠাতেন। কেননা হিদায়াগ্রন্থকার লিখছেন, নামাযে হাত ওঠানো এটা ভালো একটা ইঙ্গিত। কেননা নামাযে হাত ওঠানোর উদ্দেশ্য হল গায়রুল্লাহর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা আর আল্লাহর একাত্বতার ওপর অটলতার বহিঃপ্রকাশ করা। সাহেবে হিদায়া লিখেছেন, যেহেতু এটি একটি উত্তম ইশারা ছিল, সে জন্য নবী (সা.) আগে নামাযে হাত ওঠাতেন, কিন্তু যখন দেখছেন পরবর্তীতে সাহাবাদের আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাস মজবুত হয়ে গেছে, আর বার বার নামাযে হাত উঠানোর প্রয়োজন নেই। কেননা এট নামাযের স্থিরতার পরিপন্থী। সে জন্য আস্তে আস্তে ক্রমাগত রসূল (সা.) সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু তকবিরে তাহরিমার সময় হাত উঠানোর নিয়ম বজায় রাখছেন। আর সব জায়গা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এটি ব্যতীত তিনি আর কোন জায়গায় হাত উঠাননি। এরকম ইনশাআল্লাহ আমরা প্রতিটি মসয়ালার মধ্যে দেখাতে পারব, ﺃﻥ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺃﻭﻓﻖ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ | এই তথাকথিত আহলে হাদীসরা এত বিভ্রান্তি ছড়ায় কিন্তু আমাদের সাথে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বসে না। তারাও আহ্বান করে না, আমাদের আহ্বানেও সাড়া দেয় না। বিগত দুই বছর আগে এই আহলে হাদীসরা ইন্টানেটে চরমোনাই পীর সাহেবের সাথে মুনাযারা করবেন বলে সময়, তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে ফেসবুকসহ বিবিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলো, চরমোনাই পীর সাহেবের অজান্তে, তাদের সাথে কোন কথা না বলে, যাতে তাদের অজান্তে সময় পেরিয়ে গেলে কাল্পনিক বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু আল-হামদু লিল্লাহ চরমোনাইঅলারা যখন এই সংবাদ পেয়ে যায় তখন সেই সীমিত সময়ের মধ্যে তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে উল্লিখিত স্থানে সময় মতো উপস্থিত হন। সরকারি প্রশাসন ও বিচারকসহ শীর্ষস্থানীয় অনেকেই উপস্থিত হয়। কিন্তু এ দুষ্কৃতিকারী লা-মাযহাবীর দল আসেনি এবং বিচারক চরমোনাই তথা আমাদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এ রকম কিছুদিন আগেও চট্টগ্রামের জামিয়া মাদানিয়া শুলকবহরেও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এ গোষ্ঠীরা শুধু দূর থেকে চেঁচামেচি করে কিন্তু আমাদের সামনে বসে না। কেননা আমাদের সাথে বসলে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে। বর্তমানে আরব দেশসমূহের যে অবস্থা তাতে তাদের কোন অনুসরণ করা যাবে না। কুরআন-হাদীসের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে সৌদি আরবের অনুকরণ করতে হবে, বরং নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, « ﺗَﺮَﻛْﺖُ ﻓِﻴْﻜُﻢْ ﺃَﻣْﺮَﻳْﻦِ ، ﻟَﻦْ ﺗَﻀِﻠُّﻮْﺍ ﻣَﺎ ﺗَﻤَﺴَّﻜْﺘُﻢْ ﺑِﻬِﻤَﺎ : ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠﻪِ , ﻭَﺳُﻨَّﺔَ ﻧَﺒِﻴِّﻪِ ^».[১১] কুরআন-হাদীসকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার কথা আছে, সৌদি আরবকে অনুসরণ করার কথা নেই। তারা যদি কুরআন-হাদীসের ওপর চলত, তাহলে আমরা তাদের অনুসরণ করতাম। যেমন- আরবীরা ﺛﺪﻝ ﺛﻮﺏ অর্থৎ নামায পড়ার সময় মাথার ওপর একটা কাপড় ডেলে দিয়ে তার উভয় দিক ছেড়ে দেয়। এটা কি নামায পড়ে নাকি পাগলামি করে। এখন কি আমরা তাদের অনুসরণ করব নাকি? কেনন রসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ^ ﻋﻦ ﺍﻟﺜﺪﻝ . সদলের অর্থ হল নামায পড়া আবস্থায় মাথার ওপর একটা কাপড় দিয়ে তার উভয় দিক ছেড়ে দেওয়া। যেমন- বর্তমানে সৌদি শেখরা করে, তারা অনেকে এখন নবী (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত দাড়িও রাখে না, তাই তারা কি আমাদের অনুকরণীয় হতে পারে? এবং তারা প্রতিনিয়ত মসজিদের মধ্যে জানাযার নামায পড়ে, অথচ রসূল (সা.) জীবনে কখনো মসজিদে জানাযার নামায পড়েননি, শুধু একটি ঘটনা ছাড়া। এরা বিনাকারণে প্রতিটা জানাযা মসজিদে পড়ে। দেখুন তো! এরা বলে আবার হাদীস মানে। এ রকম ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া সুন্নত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ^ ﻳﺨﺮﺝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺼﻠﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﺍﻷﺿﺤﻰ . নবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মধ্যে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামায পড়তেন। এরা ঈদের নামায পড়ে মসজিদের মধ্যে। সেজন্য তারা করলেই ধর্ম হবে কুরআন কি বলে সুন্নাহ কি চায় সে দিকে ভ্রুক্ষেপও করা হবে না, এটা কেমন কথা? সেজন্য আপনারা তাদেরকে দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। ওরা আসলে হাদীসদের মতো আমল করছে না। যেটা সুবিধা মতো দেখছে সেটাই আমল করছে। এখন আবার ﺟﻤﻊ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺗﻴﻦ করে অর্থাৎ দুই ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করে পড়ে। এখানে নামাযের ওয়াক্তের কি গুরুত্ব থাকলো? এখন আরবদের নামায নিয়ামত চাষার মতো হয়ে গছে। সে সারাদিন চাষের কাজ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে ওযু করে জায়নামায নিয়ে দিন-রাতের সব নামায এক সাথে পড়ে। আর বলে ফজর, যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশা আমার নাম নিয়ামত চাষা আল্লাহু আকবর। এ রকম এখন সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশের অবস্থা তারা যুহুর, আসর, মাগরিব ও ইশাকে দুই ওয়াক্ত নামাযকে একত্রিত করে পড়ে। সে জন্য আমি আপনাদেরকে বলছি, সৌদি আরবের অনুসরণ করতে হবে এ রকম কোন কথা কুরআন-হাদীসে নেই। আমরা ইনশাআল্লাহ ﺣﻨﻴﻔﺔআবু হানিফা (রহ.)-এর মাযহাব অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় কুরআন-হাদীসের সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) যে সমস্ত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মাসআলা আবিস্কার করেছেন অন্যান্য ইমামগণ এর ধারে কাছেও যেতে পারে নাই। সে জন্য কেউ ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে মানলে তারা সমালোচনা করে। আলহামদুলিল্লাহ ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর প্রতিটি মাসআলার মধ্যে কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলীলের উপচেপড়া ভীড়। কুরআন-হাদীসের বাহিরে তিনি কোন কথা বলেন নাই। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে যেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাযহাবের ওপর অটল-অবিচল থেকে জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করুন। আমীন। অনুলিখন: মুহাম্মদ নুরুল বশর আজীজ [১] আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:৬৭ [২] আল-কুরআন, সূরা আস-সাফ, ৬২:৩ [৩] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ২৯৬, হাদীস: ৩৮ (৩৯৫) [৪] আল-কুরআন, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪ [৫] আবু ইয়া’লা আল-মুসিলী, আল-মুসনদ, দারুল মামূন লিত-তুরাস, দামেস্ক, সিরিয়া (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৪ হি. = ১৯৮৪ খ্রি.), খ. ১১, পৃ. ৩৩৬-৩৩৭, হাদীস: ৬৪৫৬ [৬] ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ২৭৭, হাদীস: ৮৫০ [৭] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ ফীল আহাদীস ওয়াল আসার, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সুউদি আরব, খ. ১, পৃ. ৩৩১, হাদীস: ৩৮০২ [৮] ইবনে আবু শায়বা, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৩১৬ [৯] আত-তাহাওয়ী, শরহু মা‘আনিয়াল আসার, ‘আলিমুল কিতাব, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২২৫, হাদীস: ১৩৫৭ [১০] মালিক ইবনে আনাস, আল-মুওয়াত্তা, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৭০, হাদীস: ১৮৭৪

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
mmmamun

Call

আহলে হাদীস ও হানাফী মাযহাব উভয়ের সালাতই সঠিক ৷৷৷ কারন,সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য যে সকল ফরজ ও সুন্নাত পালন করতে হয় ,সেগুলো উভয় দলই পালন করে ৷৷৷ তবে হানাফী মাযহাব রাসুলের শেষ দিকের আমলগুলোর দিকে বেশী দৃষ্টিপাত করে ৷৷৷ আর আহলে হাদীস রাসুলের শুরু দিকের আমলগুলোর দিকে বেশী লক্ষ্য করে থাকে ৷৷৷

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

বুখারি ৭৩৯ ও আবু দাউদ ৭৫৯

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ