শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

১. রাশিফল বিশ্বাস করার কী হুকুম?
.
শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ তাঁর ‘যে সকল হারামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে’ গ্রন্থে বলেন, “পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলের আশ্রয় নেওয়া কুফরি। যে ব্যক্তি রাশিফলের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বিশ্বাস করবে সে সরাসরি মুশরিক হয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে রাশিফলের প্রতি বিশ্বাস হয়ে সেগুলো পাঠ করা শির্ক।”
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিন্তভাবেই মুহাম্মাদের ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)
.
হাদীসের ‘মুহাম্মাদের ওপর যা নাযিল হয়েছে’ ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসে কিরআম বলেন, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা নাযিল হয়েছে তার কুফরি করলো অর্থাৎ কুরআনকে অস্বীকার করলো।
.
......................১.১. গণক কে?
.
অনেকেই মনে করে থাকেন, জিনের সাহায্য নিয়ে যেসব গণক কাজ করেন উপরিউক্ত কঠোর বাণীগুলো বুঝি তাদের জন্যই খাটবে শুধু। কাওসার আহমেদরা তো সংখ্যাতত্ত্ব আর নক্ষত্র নিয়ে কাজ করেন।
.
ধারণাটা একদম ভুল।
.
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর কিতাবুত তাওহীদে গ্রন্থে বলেন, গণক বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যে ভবিষ্যতের গায়েবী বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয়।
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “গণক, জ্যোতির্বিদ এবং বালির উপর রেখা টেনে ভাগ্য গণনাকারী এবং এ জাতিয় পদ্ধতিতে যারাই গায়েব সম্পর্কে কিছু জানার দাবী করে তাদেরকেই আররাফ (গণক) বলা হয়।”
.
কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যায় এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) এর মতে যে সম্প্রদায় আবজাদ পদ্ধতিতে ভাগ্য নির্ণয় করে ও তারকারাজিতে দৃষ্টিপাত করে তাদেরকেও গণকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই।
.
ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “এক গোত্রের কিছু লোক আরবি লিখে নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং তা দ্বারা ভাল-মন্দ যাচাই করে। আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন ভাল ফল আছে বলে আমি মনে করিনা।
.
সারকথা হচ্ছে, গণক বিদ্যার প্রকার অনেক কিন্তু মূল কথা একই – ভাগ্য গণনা ও ভবিষ্যৎবাণী করা। যে কোন উপায়ে এই কাজ করাই হারাম।
এক হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি জ্যোতিষশাস্ত্রের কোনো জ্ঞান চয়ন করল, সে জাদু-টোনার একটি শাখা চয়ন করল”। (আবু দাউদ, ৩৯০৫; ইবনে মাজাহ, ৩৭২৬)

.
২. আচ্ছা, নাহয় না বিশ্বাস করলাম এসব। কিন্তু শুধু পড়ার জন্য কি পড়া যাবে না?
.
যে ব্যক্তি মনে করে গণকরা গায়েব জানেনা কিন্তু স্রেফ পড়ার জন্যই রাশিফল পড়লে বা এমনি এমনি হাত দেখাতে চাইলে এমন কী ক্ষতি, সে ব্যক্তি কুফরি করলনা বটে তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবেনা।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবেনা।” (সহীহ মুসলিম, ২২৩০; মিশকাত, ৪৫৯৫)
.
এ থেকে বোঝা গেল গণকের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করাই পাপ, যদিও তা বিশ্বাস না করা হয়।
.
শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, সেই ব্যক্তি অবশ্যই সালাত আদায় করতে হবে এবং বিশেষ ভাবে তওবা করতে হবে।
.
শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল আযীয আলে শায়েখ কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যায় বলেন, “সেই ব্যক্তির চল্লিশ দিনের সালাত আদায় হয়ে যাবে তবে কোন সাওয়াব পাবেনা। কেননা গণকের কাছে আগমন তার চল্লিশ দিনের সালাতের সাওয়াব নষ্ট করে দিয়েছে।”
.
এই প্রসঙ্গে একটা কথা সবারই জানা দরকার। গণকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে যা বলে তা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য হয়ে যায়। তা কী করে সম্ভব?
.
বর্ণিত আছে, প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোন হুকুম আদিষ্ট হবার পর তা নিয়ে যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে তখন জিনেরা তা শুনে ফেলে। এই কথাগুলোই তারা তাদের গণকের কাছে পৌছিয়ে দেয় এবং সেগুলো সত্য বলে মানুষের কাছে প্রতীয়মান হয়।
.
'রাশিফল' ও 'রাশিচক্রে'র নামে বর্তমানে আমাদের সমাজে যা চলছে, তা জ্যোতিষশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, এটা বিশ্বাস করা কুফরি। রাশি হলো, সৌরজগতের কতগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের কল্পিত প্রতীক। জ্যোতিষশাস্ত্রের ধারণানুযায়ী এসব গ্রহ-নক্ষত্রের গতি, স্থিতি ও সঞ্চারের প্রভাবে ভবিষ্যৎ শুভ-অশুভ নির্ণয় করা যায়। এ নির্ণয়কে ভাগ্য বিচারও বলা হয়। ইসলামের সাথে এই ব্যাপারগুলো বিভিন্ন কারনে সাঙ্ঘর্ষিক। প্রথমত, ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাসমতে, গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব কোনো প্রভাব নেই। আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই সব ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ”(সুরা আনআম: ৫৭)। দ্বিতীয়ত, এ ভাগ্যবিচারের মাধ্যমে ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকিদা 'তাকদিরে বিশ্বাস'কে চ্যালেঞ্জ করা হয়। জ্যোতির্বিদদের খবরের অন্ধ বিশ্বাস কোনো কোনো ধর্মে থাকলেও ইসলামে তা শক্তভাবে পরিত্যাজ্য। একইভাবে মণি, মুক্তা, হিরা, চুন্নি, পান্না, আকিক প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে- এমন বিশ্বাস রাখা মুশরিকদের কাজ, মুসলমানদের কাজ নয়।
.
যা মনে রাখা দরকারঃ
.
• রাশিফলে বিশ্বাস করা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
• যে কোন উপায়ে ভাগ্য গণনা করা বা ভবিষৎ বাণী করা কুফরি। যারা এমন কাজ করেন তারাই গণক। হোক সেটা জিনের সাহাযে, নক্ষত্রের অবস্থান দেখে বা সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে।
• বিশ্বাস না করেও শুধু পড়ার জন্য রাশিফল পড়া বা ভাগ্যগণনা করা হলে তা কুফরি হবেনা বটে তবে চল্লিশ দিনের সালাত আদায় করা হলেও সেগুলোর কোন সাওয়াব পাওয়া যাবেনা।


তথ্যসুত্রঃ
১. শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ রচিত ‘যে সকল হারামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে’
২. শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল আযীয আলে শায়েখ রচিত কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা
৩. “ইসলামের দৃষ্টিতে গণক ও জ্যোতিষীর খবর”। লেখকঃ হাফেজ মাওলানা আখতার হোসাইন।

সুত্র ইন্টারনেট

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ