বর্তমানে আমাদের সমাজে টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, নাটক, সিনেমা ভালোবাসার নামে যা প্রচার করা হয় তার কারণেই হয়ত আপনার মাঝে এজাতীয় প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। মূলতঃ ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি-বিয়ে। সুতরাং শরীয়তের বাঁধা না থাকলে এবং বিয়ের জন্য উপযুক্ত মনে হলে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিবে। প্রস্তাব গৃহীত হলে বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলবে। প্রস্তাব গৃহীত না হলে ভুলে যাবে। ভুলে না যাওয়ার মানে হচ্ছে, শয়তানের পক্ষ থেকে বিপথগামী হওয়ার জন্য দরজা খুলে রাখা। বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয় এজন্য যে, ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন পরনারী কোন পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায়না। ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনূভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবিরা গুনাহ। ( মুসলিম ২ /৩৩৬) ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল (সাঃ)! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যাবে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর’।(সহীহ বুখারি;হাদিস নং- 2798) অপর হাদিসে বলা হয়েছে, ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয় (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬) (সুতরাং বিয়ের আগে প্রেম জায়েজ নয়)
স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না” (সূরা আল মায়িদা: ৫) ২। এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ নং আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। ৩। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। ৪। আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। জিনা তথা অবৈধ শারীরীক সম্পর্ক হারাম। (সূরা বনি ইসরাঈল আয়াতঃ ৩২) (সূরা ফুরকানঃ ৬৮) জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ। বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। দেখুন, (সূরা বাকারাঃ১৬৫) . এসব দলিল কুরআন থেকে দিলাম। আর হাদিস থেকে দলিল চান? হাদিসে সরাসরি হারাম বলা হয়েছে। ইজমা, কেয়াস ও ফেকাহ থেকে চান! যেটা কুরআনে আছে সেটাকে বিশ্বাস না করে ফেকাহ শাস্ত্রে খুঁজলে আপনার ঈমান থাকবে না তো।