জিয়ারতের নিয়ম : বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) প্রায় সময়ই শেষ রাতে কবর জিয়ারত করতেন। তাই সম্ভব হলে শেষ রাতে কবর জিয়ারত করা উত্তম। কেননা মন তখন অধিক নরম থাকে। তাছাড়া অন্য সময়ও কবর জিয়ারত করা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। অধিকাংশ আলেমের মতে, জুতা-স্যান্ডেল পায়ে রেখে কবরের কাছে যাওয়া যায়। তবে ইমাম আহমদের মতে, প্রয়োজন না হলে জুতাসহ যাওয়া মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ)। জিয়ারতকারী যখন কবরের কাছে পৌঁছবে, মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। জিয়ারতকারী কবরবাসীকে সম্বোধন করে সালাম দেবে এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করবে। এ ক্ষেত্রে হাত তুলে ও না তুলে উভয় অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বাকি কবরস্থানে পৌঁছে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন, (মুসলিম)।
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাবার সময় ১১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে কবরবাসীর জন্য ছওয়াব রেছানী করবে সে ঐ কবরস্থানে দাফনকৃত মৃতদের সংখ্যার সমান ছওয়াব লাভ করবে।
সুরা ফাতেহা ও সুরা তাকাছুরের ফজীলত
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ফাতেহা, সুরা এখলাস ও সুরা তাকাছুর পাঠ করে বলবে হে আল্লাহ, আমি তোমার কালাম থেকে যা পাঠ করেছি, তার ছওয়াব এই কবরস্থানের মুমিন নর- নারীদের জন্য দান করলাম, কেয়ামতের দিন তারা তার জন্য সুপারিশকারী হবে।
সুরা ইয়াসিনের ফজীলত
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ইয়াসীন পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা সেই কবরস্থানের মৃতদের আজাব লাঘব করবেন এবং উক্ত ব্যাক্তি সেখানে দাফনকৃত মৃতদের সমান সংখ্যক ছওয়াব লাভ করবে।
এছাড়া সুরা মূলক, আয়তুল কুরছী, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং কোরান মজিদ যতটুকু পারা যায় তেলোয়াত করা ভাল।
কবর জিয়ারতের পদ্ধতি: এক. পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা মোস্তাহাব। নারী, যুবতী হলে তার জন্য কবরে যাওয়া জয়েয নেই। তবে বৃদ্ধা হলে কান্নাকাটি, মাতম ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কাজ করবে না। (ইমদাদুল আহকাম, ইমদাদুল ফাতাওয়া) দুই. প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার কবর যিয়ারত করা মোস্তাহাব। (আহকামে মাইয়েত) তিন. শুক্রবার কবর যিয়ারত করা অধিক উত্তম। বৃহস্পতিবার, শনিবার এবং সোমবারও কবর যিয়ারত করা উত্তম। চার. কবরস্থানে প্রবেশ করে সমস্ত কবরবাসীর উদ্দেশ্যে নিম্ন বাক্যে সালাম দিবে- “আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মুঅমিনিনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। ওয়ানাস আলুকাল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিইয়াত”। অর্থ: হে মু‘মিন সম্প্রদায়ের আবাসস্হলের অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শানিত বর্ষিত হোক, আমরাও আল্লাহ ইচ্ছা হলে তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য ক্ষমা আবেদন করছি। পাঁচ. অতপর মাইয়েতের পয়ের দিক থেকে চেহারার (কেবলার) দিকে যেয়ে দাঁড়াবে বা বসবে। বসলে জীবদ্দশায় তার সাথে যেরূপ সম্পর্ক ছিল সে অনুযায়ী নিকটে বা দূরে বসবে। ছয়. সালামের পর কেবলার দিকে পিঠ এবং মাইয়েতের (কবরের) দিকে মুখ করে যথাসম্ভব কুরআন শরীফ পড়ে মাইয়েতকে ছাওয়াব পৌঁছে দিবে। বিশেষভাবে সূরা-বাকারার শুরু থেকে মুফলিহুন পর্যন্ত, আয়াতুল কুরছী, সুরা-বকারার শেষ দুই আয়াত, সূরা ফাতেহা, সূরা ইয়াসীন, সুরা মুলক, সুরা-তাকাছুর বা সুরা এখলাস ১১/১২ বার কিংবা ৭ বার বা য পরিমাণ সহজে পড়তে পারে পড়ে দুআ করবে। মাইয়েতের মাগফিরাতের জন্যও দুআ করবে। সাত. তিলাওয়াত ও দুআ দুরূদ পড়ার পর কেবলামুখী হয়ে (অর্থাৎ, মাইয়েতের দিকে পিঠ করে দুআ করবে।)