শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আল্লাহর পয়গাম্ভর হযরত ঈসা আঃ কে আল্লাহ তাআলা সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি মারা যাননি। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাষায় এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের একথা বলার কারণে যে,আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে,তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়। {সূরা নিসা-১৫৭-১৫৮} এবং তিনি ঈসা আঃ কেয়ামতের আগে আবার দুনিয়াতে আগমন করবেন হাদিসে মহা নবী সঃ বলেনঃ ঈসা বিন মরিয়ম আগমন করবেন কিয়ামতের আগে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৯১৮, মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৭২০, মাশকিলুল আসারলিত তাহাবী, হাদীস নং-৮২০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২৫৩৫, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২৭৪০} আর প্রতিষ্টা করবেন একাত্ববাদ । তিনি আগমন করবেন মোহাম্মদ সঃ এর উম্মত হয়ে, দুনিয়াতে দ্ধিন ইসলামের সত্যায়নকারী রূপে । হাদিসে প্রিয় নবী সঃ বলেনঃ তারপর ঈসা আঃ আসবেন মুহাম্মদ সাঃ কে সত্যায়নকারী হিসেবে তার উম্মত হয়ে। {আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৫৮০} এবং অশান্তি অবিচার ব্যাবিচার যখন চরম আকার ধারন করবে । তখন হযরত ঈসা আঃ আর্বিভুত হবেন একজন সুশাসক হিসাবে । দুনিয়া থেকে দুর করবেন জুলুম অত্যাচার অবিচার মুত্তিপুজা । ভেংগে পেলবেন ক্রুস নিতি, প্রতিষ্টা করবেন ইনসাফ সুবিচার , হাদীসে প্রিয় নবী এভাবে বলেনঃ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঐ সত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই ঈসা আঃ ইনসাফগার শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। অতঃপর তিনি ক্রুশ চিহ্নকে ভেঙ্গে ফেলবেন। শুকরকে বিনাশ করবেন। আর জিযিয়াকে রহিত করবেন। তখন সম্পদের এমন প্রবাহ ঘটবে যে, কেউ তা গ্রহণ করার মত থাকবে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২১০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪০৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২৩৩, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১১৩} এভাবে ঈসা আঃ মানুষের মাজে দুনিয়াতে যতদিন থাকবেন হাদিসে তার প্রতিও ইশারা করে রাসূলে খোদা সাঃ বলেন-ঈসা বিন মরিয়ম অবতরণ করে ৪০ বছর মানুষের মাঝে অবস্থান করবেন। {আল মুজামূল আওসাত, হাদীস নং-৫৪৬৪} কিয়ামত ঘনিয়ে আসার সময় কেন ঈসা (আ) প্রত্যাবর্তন করবেন, কেন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নন? এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল শেইখ আবু ক্বতাদাহকে, আল্লাহ উনার মুক্তি ত্বরান্বিত করুন! শেইখ এই প্রশ্নের জবাবে বলেনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না পাঠিয়ে ঈসা (আ) কে প্রেরণ করবেন, তার উত্তরে কুরআনের এই একটি আয়াতই যথেষ্ট- “আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন ক্ষমতা নেই।” [সূরাহ ক্বসাস ২৮: ৬৮] এবার প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। দুনিয়াতে যখন ঈসা (আ) ফিরে আসবেন তখন একটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যাবে, তা হচ্ছেঃ ইহুদী এবং খ্রিস্টান উভয়েই ঈসা (আ) কে নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। কেননা খ্রিস্টানদের দাবী অনুসারে তো ঈসা (আ) ইতিমধ্যে তাদের হাতে (ইহুদীদের) নিহত হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -ই কেবল আমাদেরকে সঠিক তথ্যটি দিয়েছিলেন যে, ঈসা (আ) দুনিয়ার শেষ সময়ের দিকে প্রত্যাবর্তন করবেন। তাই ঈসা (আ) প্রত্যাবর্তন করলে আমরা ২ ভাবে উপকৃত হচ্ছিঃ প্রথমত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য বলেছেন, সেটা আবারো প্রমাণিত হবে। মুহাম্মদ (সা) সকল নবী-রাসূল এর সীলমোহর, দুনিয়ার বুকে শেষ নবী। তিনি আমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে প্রাপ্ত যা কিছু বর্ণনা করেছেন, সমস্ত কিছু নির্ভুল এবং সত্য। দ্বিতীয়ত, প্রমাণিত হবে যে, খ্রিস্টানরা ঈসা (আ) কে মিথ্যা গুজব রটিয়েছে। চিন্তা করে দেখুন, যদি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে আসতেন, তাহলে আমাদের তেমন কোন উপকার হতো না। কেননা তিনি তো নবুওয়্যাত সম্পূর্ণ করে আমাদের কাছে রেখে গেছেন। তিনি কোন নতুন বিষয়ের উদ্ভাবন করতেন না। কুরআনও সুন্নাহ আজো যেমন আছে, তেমনি অবিকল থাকতো। কিন্তু যদি ঈসা (আ) ফিরে আসেন, এবং এরপর মুহাম্মদ (সা) এর দেখানো শরীয়াহর অনুসরণ করেন, সেই অনুযায়ী শাসন করেন, লোকেদেরকে তা মানতে বাধ্য করেন, নিজেও ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক চলেন, ইমাম মাহদির পেছনে দাঁড়িয়ে সালাহ আদায় করেন – তাহলে নিঃসন্দেহে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, নবীজি মুহাম্মদ (সা) -ই শেষ নবী এবং মুহাম্মদের আনীত শরীয়াহ হলো আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা। আর তাই ঈসা (আ) তাকেই অনুসরণ করছেন। সুতরাং তখন কেউ নিজেকে ঈসা (আ) এর অনুসারী দাবি করে পার পাবে না। কারণ ঈসা (আ) নিজেই ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা শাসন করবেন। আর আরেকটিও হিকমাহ রয়েছে দেখুন, মিথ্যে মাসীহ এর হত্যা হবে সংঘটিত হবে প্রকৃত মাসীহের হাতে। দাজ্জাল কে ঈসা ইবন মারিয়াম (আ) হত্যা করবেন। অর্থাৎ কুফরের মাসীহ নিহত হবে ঈমানের মাসীহ এর হাতে। ঈসা (আ) হলেন সেই নবী যিনি তার জনপদকে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের সুসংবাদ দান করেছিলেন। কুরআনের সূরা সফে এর উল্লেখ আছেঃ “স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ।” [সূরাহ সফ ৬১: ৬] তেমন gospel এও বলা হয়েছে। সুতরাং ঈসা (আ) ফিরে এসে দেখবেন যে যারা তাঁর অনুসারী বলে দাবী করে আসছে, তারা কি আসলেই তাঁর দেওয়া সুসংবাদ গ্রহণ করেছে? নাকি নিজেদের কুফর আর জেদের ওপরই বজায় আছে? মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা করেন সেটাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম। আমরা তার পেছনের কার্যকারণ বুঝতে পারি বা না-পারি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ