আমীন বলা সম্পর্কে দুই রকমম হাদিস পাওয়া যায়। অর্থাৎ জোরে অথবা আস্তে উভয় পদ্ধতি জায়েয। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন, সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গইরিল মাগযুবি আলাইহিম অলায-দ্বলীন পাঠ করতে এবং আমীন বলতে শুনেছি। আমীন বলতে গিয়ে তিনি নিজের কণ্ঠস্বর দীর্ঘ ও উচ্চ করলেন।
(সূনান আত তিরমিজী, হাদিস নম্বরঃ ২৪৮, ইবনু মাজাহঃ ৮৫৫)।
এ অনুচ্ছেদে আলী ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ওয়াইল ইবনু হুজরের হাদীসটি হাসান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবা, তাবিঈন ও তাদের পরবর্তীগণ ‘আমীন’ স্বশব্দে বলার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইমাম শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এই মত গ্রহণ করেছেন।
শুবা (রহঃ) এই হাদিসটি সালামা ইবনু কুহায়ল হুজর আবূল আম্বাস আলকামা ইবনু ওয়াইল তার পিতা ওয়াইল রাদিয়াল্লাহু আনহ এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গইরিল মাগযুবি আলাইহিম অলায-দ্বলীন পাঠের পর আস্তে আমীন বলেছেন।
(সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ২৪৯ আবু দাউদঃ ৮৬৩)।
শরীয়তের মূলনীতি হলো: যেসব
ক্ষেত্রে একাধিক সুন্নাহ আছে, যেহেতু
দুটোই শরীয়তে স্বীকৃত, তাই যে অঞ্চলে
যে সুন্নাহ প্রচলিত সেখানে সেটিই চলতে
দেওয়া উচিত।
কতিপয়ের মতে, আমীন হলো যিকির।
আর যিকিরের হাকীকত হলো আস্তে পড়া।
যেমন: কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
তোমরা তোমাদের
প্রতিপালকের যিকির করো একাগ্রতার সাথে ও
অনুচ্চস্বরে। এ কারণেই কিরাত ব্যতীত
নামাযের সবগুলো যিকির তাসবীহ
সর্বসম্মতিক্রমে আস্তে ও নিম্নস্বরে বলাকে
সুন্নাত মনে করা হয়। সারকথা, আমীনকে ‘যিকির’
সাব্যস্ত করা হলে, সেটাও আস্তে বলা সুন্নাত
হবে। অবশ্যই ইমামের তাকবীরগুলো জোরে
বলা হয় বিশেষ কারণে।
অপর কতিপয়ের অভিমত হলোঃ ‘আমীন’
হচ্ছে একটি দুআ বা মুনাজাত, যা আল্লাহর দরবারে
পেশ করা হয়। আতা ইবনে রাবাহ (রহঃ) তো স্পষ্ট
বলেছেন, অর্থাৎ আমীন হচ্ছে দুআ।
(বুখারীঃ ১/১০৭)।
লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য
গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে [১/২০৫] আছে
আমীন অর্থ- হে আল্লাহ! আমার
দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক। কুরআনে
মাজীদেও আমীনকে দুআ বলা হয়েছে।
যেমন: ইরশাদ হয়েছে অথচ হযরত
হারূন আ. শুধুমাত্র আমীন বলেছিলেন। আল্লাহ
তাআলা এটিকে ‘দুআ’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন।
আর দুআর মূল হাকীকত হলো চুপিসরে করা।
যেমন: কুরআনে এসেছে অর্থাৎ তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো
বিণীত ও চুপিস্বরে। (সূরা আরাফঃ ৫৫)।
ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) একটি বাক্যে গোটা
বিষয়ের সারনির্যাস উল্লেখ করেছেন। তিনি
বলেছেন, আমীন যদি দুআ হয় তাহলে সূরা
আরাফের ৫৫ নং আয়াতের আলোকে তা আস্তে
বলা উচিত। আর যদি একে যিকির ধরা হয় তাহলেও
আস্তে বলা উচিত। আর তা একই সূরার ২০৫ নং
আয়াতের নির্দেশক্রমে। [দরসে তিরমিযী;
তুহফাতুল আলমাঈ]