অনেক বক্তাকে বলতে শোনা যায় যে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম)মাটির তৈরি হলেও কোনো সাধারণ মাটি নয়, বরং জান্নাতি মাটির তৈরি। কারণ মানুষকে যেখানে কবর দেওয়া হয়, তাকে ঐ স্থানের মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। অার যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রওজা মুবারক জান্নাতের অংশ, বিধায় তিনি জান্নাতি মাটির তৈরি। এ বক্তব্য কী সহীহ? 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

রাসুল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরি হলেও কোনো সাধারণ মাটি নয়, বরং জান্নাতি মাটির তৈরি। কারণ মানুষকে যেখানে কবর দেওয়া হয়, তাকে ঐ স্থানের মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। অার যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মুবারক জান্নাতের অংশ, বিধায় তিনি জান্নাতি মাটির তৈরি। এ বক্তব্য সহীহ নয় মওদু অর্থাৎ মনগড়া জাল হাদিস। আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার মূল উপাদান হতে। [সূরা মুমিনুন, আয়াতঃ ১২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মতই একজন মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ একজন। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে। [সূরা কাহাফ, আয়াতঃ ১১০] আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ। [সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াতঃ ৬] যে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই বর্ণনা দিচ্ছেন যে, রাসূল সাধারণ একজন মানুষ, তিনি নূরের তৈরী বিশেষ মানুষ নন; বরং তিনি মাটির তৈরী। এরূপ স্পষ্টভাষায় বলার পরেও একশ্রেণির মানুষ বিশ্বাস করে যে, রাসূল নূরের তৈরী, তিনি আমাদের মত মানুষ নন, তিনি অদৃশ্যের খবর জানেন। তাদের এ বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল এবং অযৌক্তিক। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতা আব্দুল্লাহর ঔরশে মা আমীনার গর্ভে জন্ম নেয়া একজন মানুষ। ফেরেশতাদের ন্যায় নূরের তৈরী নন বরং অন্যান্য মানুষের মত তিনি মাটির তৈরী এবং তিনি কোন গায়েবের খবর জানেন না। শুধুমাত্র ওয়াহী দ্বারা তাকে যতটুকু জানানো হত তিনি ততটুকুই জানতেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

নবীজি পাক (সা.) এর নূর যখন তৈরি কারা হয় তখন আসমান-জমিন,জান্নাত-জাহান্নাম, আদাম-হাওয়া কোন কিছুরিই অস্তিত ছিলো না। তাই কোন ভাবেই তিনি জান্নাতি মাটির তৈরি নয়। আর হলেও জান্নাতের সব কিছুই আল্লাহর কুদরতি নূর দ্বারা তৈরি সেইদিক থেকেও নবীজি পাক (সা.) নূরের। 


সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ১১০


قُلْ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُوا۟ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَٰلِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدًۢا

উচ্চারণঃ কুল ইন্নামাআনা-বাশারুম মিছলুকুম ইউহাইলাইইয়া আন্নামাইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়া-হিদুন ফামান কা-না ইয়ারজূলিকাআ রাব্বিহী ফালইয়া‘মাল ‘আমালান সালিহাওঁ ওয়ালা-ইউশরিক বি‘ইবা-দাতি রাব্বিহীআহাদা-।

অর্থঃ বলো -- "আমি নিঃসন্দেহ তোমাদেরই মতই একজন মানুষ, আমার কাছে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে যে নিঃসন্দেহ তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য, সেজন্য যে কেউ তার প্রভুর সঙ্গে মুলাকাতের কামনা করে সে তবে সৎকর্ম করুক এবং তার প্রভুর উপাসনায় অন্য কাউকেও শরীক না করুক।


এখানে মতই বলতে মাটির বোঝানো হয় নি, কারন আমরা নিজেই তো মাটির না। এখানে বাশার শব্দের অর্থ যদি মাটির মানুষ হতো তাহলে কুরআন শরিফের আরো অনেক জায়গায় " বাশার " শব্দটি ব্যবহার করা হয়ছে। যেমন ঈসা (আ.) এর মায়ের কাছে যখন জিব্রাইল কে পাঠানো হয়েছিলো তখন জিব্রাইল (আ.) কে বাশার বলা হয়ছে তার মানে কি জ্রিবাইল (আ.) মাটির। কখনই না এখানে বাশার বলতে মানুষের আকৃতি কে বোঝানো হয়ছে। 


আমরা মাটির তৈরি না তার প্রমানঃ-


সূরা আত-তারিক্ব (الطّارق), আয়াত: ৫


فَلْيَنظُرِ ٱلْإِنسَٰنُ مِمَّ خُلِقَ

উচ্চারণঃ ফালইয়ানযুরিল ইনছা-নুমিম্মা খুলিক।

অর্থঃ সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কিসে থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।


সূরা আত-তারিক্ব (الطّارق), আয়াত: ৬


خُلِقَ مِن مَّآءٍ دَافِقٍ

উচ্চারণঃ খুলিকা মিম্মাইন দা-ফিকি।

অর্থঃ তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে-স্খলিত পানি থেকে,


সূরা আত-তারিক্ব (الطّارق), আয়াত: ৭


يَخْرُجُ مِنۢ بَيْنِ ٱلصُّلْبِ وَٱلتَّرَآئِبِ

উচ্চারণঃ ইয়াখরুজুমিম বাইনিসসুলবি ওয়াত্তারাইব।

অর্থঃ যা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্য হতে।


কুরআন পাক এর ভাষায় আমরা নিজেরাই মাটির মানুষ না। নবীজি পাক (সা.) কে কেমনে মাটি বলি। যেখানে আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষনা দিয়েছেন তিনি নূরঃ- 


সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১৫


يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌ وَكِتَٰبٌ مُّبِينٌ


উচ্চারণঃ ইয়াআহলাল কিতা-বি কাদ জাআকুম রাছূলুনা-ইউবাইয়িনুলাকুম কাছীরাম মিম্মাকুনতুম তুখফূনা মিনাল কিতা-বি ওয়া ইয়া‘ফূ‘আন কাছীরিন  কাদ জাআকুম মিনাল্লাহি নূরুওঁ ওয়া কিতা-বুম মুবীন।


অর্থঃ হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।


এর পরেও যদি কেও বলে নবীজি পাক (সা.) মাটি তার জন্য আরো অনেক প্রমান আছে নবীজি (সা.) আল্লাহর সৃষ্টি কৃত নূরের তৈরি।  


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ