মানত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মানত করো না। মানত আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারেনা। এটি কৃপণের সম্পদ থেকে কিছু অংশ বের করে আনে মাত্র’ (বুখারী হা/৬৬০৮, মুসলিম হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/৩৪২৬)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ্র নাফরমানীতে কোন মানত নেই। যদি কেউ কোন অন্যায় কাজের মানত করে, তবে তা পূরণ করতে হবে না এবং যদি কেউ এমন মানত করে যা তার সাধ্যের অতীত, তাহ’লে তা পূরণ করা আবশ্যক নয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪২৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি কেউ মানত করে যে, আমি সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব, বসবো না, ছায়ায় যাবো না ও ছিয়াম রাখবো। সে যেন বসে ও ছায়ায় যায় এবং ছিয়াম পূর্ণ করে’ (বুখারী, মুসলিম হা/৩৪৩০)। আর মানত ভঙ্গের কাফফারা হ’ল শপথভঙ্গের কাফফারার ন্যায় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৩৪২৯)। আর তা হ’ল- দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম মানের খাদ্য অথবা বস্ত্র দান করা অথবা একজন (মুমিন) ক্রীতদাস মুক্ত করা অথবা তিনদিন (একটানা) ছিয়াম রাখা (মায়েদাহ ৮৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি কেউ আল্লাহ্র আনুগত্যপূর্ণ কাজের মানত করে, তবে সে যেন তা পূর্ণ করে (বুখারী, মিশকাত হা/৩৪২৭)। অনুরূপ মানত পূর্ণ করার আগেই মৃত্যু হয়ে গেলে তার ওয়ারিছগণ তা পূরণ করবে (যদি তিনি সম্পদ রেখে যান)’ (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৪৩৩-৩৪)।
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াত ২৯) আল্লাহ আরো বলেন: তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭০) আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন : তারা মানত পূরণ করে। (সূরা আল- ইনসান, আয়াত ৭) এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়, এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন। দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি পাওয়া যায় না। তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ হিসাবে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। তাই মানত পূরণ করলে সওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে। চার. মানুষ মানত করলে, কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ না করে কোনো উপায় নেই। পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে। মানত পূরণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻄﻴﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻴﻄﻌﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻌﺼﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻳﻌﺼﻪ যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে । আর যে অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে। (সহিহ বুখারি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, নাসায়ি) আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভাল কাজের মানত করলে শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম। যা নিম্নে আলোচিত হল।
কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াতঃ ২৯) আল্লাহ আরো বলেন, তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭০) আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন, তারা মানত পূরণ করে। (সূরা আল-ইনসান, আয়াত ৭) এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয় যে, মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন। কিন্তু আপনি মানত সম্পর্কে জানতে গিয়ে মনে মনে বলে ফেলছেন যে, আমি যদি পরীক্ষায় ভালো করি তাহলে ওমরা হজ করতে যাব। মুখে না উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে ভাবার কারনে তা আদায় করতে হবে না। অসাধ্য-অসম্ভব বিষয়ের মানত শরিয়তের দৃষ্টিতে মানত হিসেবে ধর্তব্য হয় না। অসাধ্য ও অসম্ভব হওয়ার দুই অর্থঃ ১। প্রাকৃতিকভাবে বিষয়টি অসম্ভব। গতকালের রোজা বা ইতিকাফের মানত। ২। শরিয়তের দৃষ্টিতে অসম্ভব। যেমন ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ের রোজা রাখার মানত। মানত হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা শর্ত। অন্তরের নিয়ত ও সংকল্পের দ্বারা মানত হয় না। মুখ দিয়ে যা উচ্চারণ করতে হবে, শুধু তা-ই ধর্তব্য হবে। যদি অন্তরে এক জিনিস থাকে আর মুখে ভুলবশত অন্য কিছু উচ্চারণ করে বসে, তাহলে উচ্চারণকৃত বিষয়ই তার ওপর অপরিহার্য হবে।