এই পৃথিবীতে মানুষ অনেক রকম হয়। এই যেমন লম্বা বা বেঁটে,মোটা বা চিকন। সবার উচ্চতা ও গড়ন যেমন এক নয়, তেমনি সবার গায়ের রঙও আলাদা। কেউ ফর্সা, কেউ শ্যামবর্ণ, কেউবা কালো।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই শ্যামবর্ণ। আবার পশ্চিমা অনেক দেশের মানুষের গায়ের রঙ অনেক ফর্সা। অন্যদিকে, আফ্রিকার মানুষেরা হয় কৃষ্ণবর্ণের।
এখন প্রশ্ন হলো-গায়ের রঙের এই পার্থক্যের কারণ কি?আসুন সে সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক।
মানুষের শরীরে মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। এই মেলানিন পিগমেন্টের ধরন ও পরিমাণের উপরেই নির্ভর করে আমাদের গায়ের রং।
মেলানিন দুই প্রকার, ইউমেলানিন ও ফিউমেলানিন। ইউমেলানিন বাদামি বা কালো রঙের পিগমেন্ট, আর ফিউমেলানিন লাল বা হলুদ রঙের পিগমেন্ট। এ মেলানিনগুলো মেলানোসাইটস নামে একটি কোষে তৈরি হয়। এই কোষ থাকে আমাদের ত্বকের বাইরের অংশে অর্থাৎ এপিডার্মিস স্তরে।
সাধারণত শরীরে ইউমেলানিনের পরিমাণ যত বেশি হয়, গায়ের রঙ তত গাঢ় হয়। আবার ফিউমেলানিনের পরিমাণ বেশি হলে গায়ের রঙ হালকা হয়।
এছাড়া শরীরে পিগমেন্টের পরিমাণ যত কম থাকে, ত্বকের রঙ ততই হালকা হয়। আবার পিগমেন্ট বেশি থাকলে ত্বকের রঙ গাঢ় হয়।
এবার আপনার মনে হতে পারে, কেন মেলানিন পিগমেন্টের পরিমাণ বা ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম! হ্যা!এটাও প্রশ্ন?
মূলত জিনগত পার্থক্যের কারণে মানুষের শরীরে মেলানিন পিগমেন্টের ধরন ও পরিমাণ ভিন্ন হয়।
খেয়াল করলে দেখবে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও গায়ের রঙের ভিন্নতা দেখা যায়। এজন্য একেক দেশের মানুষের গায়ের রঙ একেক রকম হয়। এর পেছনে মূল কারণ সূর্যের আলো। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি যেখানে যত বেশি পড়ে, সেখানকার মানুষের ত্বকের রঙ তত গাঢ় হয়। অতিবেগুনি রশ্মি যেখানে যত কম, সেখানকার লোকজনের গায়ের রঙ তত হালকা।
বিজ্ঞান এর নানা রকম বর্ণনা দিয়েছে। তবে কুরআন ও হাদিস এ প্রসঙ্গে কী বলেছে!
এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসের বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসুল সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আদমকে এক মুঠো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই মাটি তিনি জমিনের সব জায়গা থেকে নিয়েছেন, যার কারণে আদম সন্তান হয়েছে জমিনের প্রকৃতির মতো, কেউ লাল, কেউ কালো, কেউ সাদা ও কেউ হলুদ এমন নানা বর্ণের। এভাবে কেউ হয়েছে নরম স্বভাবের, কেউ হয়েছে কঠিন, কেউ ভালো, আবার কেউবা খারাপ।’ (তিরমিযি, ইবনে হিব্বান)
এই হাদিস পড়লেই স্পষ্ট হয়, মানুষের একেক রকম বর্ণ ও একেক রকম স্বভাব আল্লাহর একান্ত সৃষ্টি ও মানুষের তাকদির অনুসারে হয়েছে। মানুষ হয়েছে তার উপাদানের ধরণ অনুযায়ী। যে কালো মাটি থেকে সৃষ্ট তিনি কালো বর্ণের। যে সাদা বা লাল মাটি থেকে তৈরি তিনি সাদা বা লাল হয়ে থাকেন।
আর এ বিষয়টি সবারই জানা, পৃথিবীর সব জায়গার মাটি এক বর্ণের নয়। আফ্রিকার মাটি আর যুক্তরাষ্ট্রের মাটির মধ্যে রাত দিন তফাৎ। যে কারণে তাদের চেহারাও আমরা পুরোপুরি ভিন্ন দেখতে পাই। আবার মাটির স্বভাবও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোথাও কাদা মাটি কোথাও বা পাথরের মতো শক্ত। সেই মাটি অনুযায়ী মানুষের স্বভাবও হয়ে থাকে তেমনই নরম ও কঠিন। এগুলো আল্লাহর কুদরত ও মহান ক্ষমতার নির্দশন। তিনি চান সকল মানুষ তার ক্ষমতার অধীনে থাকুক। তিনি তার প্রজ্ঞা অনুসারে যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। কেননা, তিনি যা চান, যেভাবে চান করতে পারেন।
পবিত্র কুরআনে বর্ণের এ ভিন্নতা নিয়ে আল্লাহ বেশ কিছু আয়াত নাজিল করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, বর্ণের এ ভিন্নতায় জ্ঞানীদের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। সত্যিই এটি নিয়ে কেউ চিন্তা করলেই বেশ কিছু বিষয় খুব সহজেই ধরা পড়ে।
আল্লামা শানকিতি রহ. বলেন, ‘একাধিক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন, মানুষের রং ও বর্ণের পার্থক্য অথবা তার অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে তারতম্য আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতার বহির্প্রকাশ। এসব বস্তুর বিভিন্ন রং ও বর্ণ তার মহান সৃষ্টি ও নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল।’ (আদওয়াউল বায়ান ৬/১৭৩)
মানুষ ইচ্ছে করলেই গবেষণার মাধ্যমে বের করতে পারবে মানব রং-এর এ তারতম্য বিষয়ে। আর মানুষের হেকমত তো হলো তার ¯স্রষ্টার সৃষ্টিকে মেনে নেয়া। কেননা তিনিই উত্তম বিধানদাতা।
সুতরাং -কোরান হাদিসের আলোকে বলা যায়,এটা আল্লাহর একটা কুদরত বা নিদর্শন! আল্লাহ যেমন ইচ্ছা সৃষ্টি করেছেন!