কোন কিছু করতে ভালো না লাগলে কি করা উচিত? অস্থির বা ফাপর লাগলে,  অধৈর্য হয়ে পড়লে কি করা উচিত?কি করলে মন ভালো থাকবে, মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকবে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
HMMOBAROKBD

Call

ইসলাম এমন এক জীবন বিধান যেখানে মানুষের ছোট থেকে ছোট সব সমস্যার সমাধান দিয়েছে৷ তাই আমরাও আমাদের মনের এই সমস্যার জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তা মানে আল্লাহর কাছে যাব। আল্লাহ তাঁর কুর’আন ও হাদীসে মন খারাপ ও হতাশ হওয়ার কী সমাধান দিয়েছেন তা দেখব।

১.কারও মাথার উপর সাধ্যাতীত বোঝা নেই

প্রথম কথা, আল্লাহ কাউকে এত বড় বোঝা দেন না, যা সে বহন করতে পারে না। সূরা বাকারার আয়াতটা মনে আছে? “লাা য়ুকাল্লিফু-ল্লাহু নাফসান ইল্লা উস‘আহা” — আল্লাহ কারও মাথার উপর তার সাধ্যে কুলোবে না এমন বোঝা চাপিয়ে দেন না। (২:২৮৬)

কিছু কিছু সময় এমন মনে হয়, আর পারব না। এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারব না। অনেকে তো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে জীবনও দিয়ে বসেন। অনেকে আবার ভাঙচুর করে বসেন। খেলাধুলায় প্রিয় দলের হারে এরকম কত ঘটনার খবর পত্রিকায় আসে।

যাহোক, উপরের আয়াতটা যদি মাথায় থাকে, তাহলে বুঝবেন যে, যত বড় কষ্টই হোক না কেন, ওটা সহ্য করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আপনার আছে। আমার আপনার কথা রদবদল হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কথার কখনো কোনো রদবদল হয় না। তিনি যখন বলেছেন, তিনি আমাদের উপর এমন কোনো বোঝা চাপান না, যা আমরা সহ্য করতে পারব না, তাহলে তা-ই সই। আমার মধ্যে ঐ কষ্ট সহ্য করার সামর্থ্য আলবৎ আছে।

আপনি যখন এভাবে আপনার মনটাকে ঠিক করে নেবেন, তখন দেখবেন, মুহূর্তের মধ্যে মন শান্ত হয়ে যাবে।

কষ্টের খবর বা ঘটনায় কষ্ট তো লাগবেই, কিন্তু সেটা যেন আমাদেরকে শেষ করে না দেয়। কারণ…

২.কষ্টের পর স্বস্তি আছে 

“কষ্টের পর অবশ্যই স্বস্তি আছে। আবার শোনো, কষ্টের পর অবশ্যই স্বস্তি আছে।” (৯৪:৫)

একবার না, সূরা আল-ইনশিরায় আল্লাহ কথাটা পরপর দুবার বলেছেন। আমরা কখন কোনো কথা দুবার বলি বলেন তো?

শুধু দুবারই না, দুবারই বললেন, “অবশ্যই” আছে। আরবিতে “ইন্না”। মানে আছেই আছে।

উপরে একবার বলেছি, আমাদের কথার ঠিকঠিকানা না-ই থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কথার কোনো হেরফের হয় না কখনো। কাজেই তিনি যখন বলেছেন কষ্টের সাথে স্বস্তি আছেই আছে, দুনিয়ার আর কোনো ওষুধ আমার এই কষ্ট উধাও করতে পারবে না।ভাবুন......

৩. সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে, আপনার হাতে না

মানুষের মনে হতাশা কোথা থেকে আসে জানেন? অসহায়ত্ব থেকে। আমি যেভাবে সবকিছু ঠিক করেছিলাম সেভাবে হলো না। সবকিছু আমার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। দিনকেদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। এভাবে মানুষ একসময় সবকিছুর আশা ছেড়ে দেয়। আমি কিছু পারলাম না। আমাকে দিয়ে কিছু হলো না। এইসব আত্মঘাতী চিন্তাগুলো বাড়তে বাড়তে হতাশায় রূপ নেয়।

আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলেন তো, পৃথিবীর কোন জিনিসটার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে? সবকিছুই তো আল্লাহর হাতে। আল্লাহই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাহলে আপনি কেন খামোকা নিজের অক্ষমতা নিয়ে আক্ষেপ করে করে নিজের বারোটা বাজাচ্ছেন?

একটু থেমে চিন্তা করুন: চারপাশের পরিস্থিতি কোনোকালেই আপনার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যাঁর হাতে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ তিনিই সেরা পরিকল্পনাকারী। আর তাঁর চেয়ে বেশি কেউ আপনাকে ভালোও বাসে না।

কাজেই সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। দেখবেন, কী নির্ভার লাগছে!তারপর....

৪. নিজের সেরাটা ঢেলে বাকিটা আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিন

একটা জায়গায় যেয়ে আমরা সবাই বাধা। কাচ্চি বিরিয়ানী বানানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করে চুলোয় তুলে দেওয়ার পর আপনার কিন্তু আর কিছু করার নেই। এখন যা হওয়ার ওটা আল্লাহর ইচ্ছায় উপকরণগুলো নিজেরাই করবে। ওষুধ খাওয়ার পর আপনি কি ওষুধকে বলে দিতে পারেন, কী কী করতে হবে? ওষুধ তার নিজগুণেই করে। যখন আল্লাহ চান না, তখন সেই ওষুধের বাবারও কিছু করার থাকে না। একই ক্যানসার অসুখ থেকে যুবরাজ সিংরা বেঁচে আসে, আবার হুমায়ূন আহমেদরা মারা যায়। আমার আপনার কী করার আছে এখানে?

একটা সীমা পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারি। আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করতে পারি।

আমাদের কাজকর্ম আমাদের হাতে, কিন্তু এর ফলে কী হবে সেটা কস্মিনকালেও আমাদের হাতে ছিল না।

আপনার আমার কথা বাদ দেন, খোদ আল্লাহর নাবিদেরও তাদের কাজের ফলাফল কী হবে সেটার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল না।

৫. আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন

খারাপ সময়ে আমাদের আরেকটা জনপ্রিয় বদভ্যাসের কথা বলি। সময় যখন খারাপ যায়, তখন কী নেই এগুলোই দেখি। কত কী যে আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন সেগুলোর দিকে ভুলেও চোখ যায় না।

বিপদে আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য মা আছে। শক্তহাতে ধরার জন্য আপনার বাবা আছে। ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখার জন্য আপনার স্ত্রী আছে। ভালো বন্ধুবান্ধব আছে। নিদেনপক্ষে থাকার একটা ঘর আছে। কিছু না কিছু আছেই আপনার। কী আছে শুধু এটার লিস্ট বানিয়ে মনে হয় আরেকটা আর্টিকেল লেখা যাবে। এত কিছু থাকার পরও মন খারাপ করে থাকার কোনো মানে হয় না ভাই।

পশ্চিমে মানে পশ্চিমা দেশগুলোতে “গ্রাটিটুড জার্নাল” নিয়ে বেশ গবেষণা হচ্ছে। গ্রাটিটুড জার্নাল বা “কৃতজ্ঞতা রোজনামচা”র কাজ হলো আপনি আপনার জীবনের কোন কোন জিনিস নিয়ে কৃতজ্ঞ সেগুলোর তালিকা করবেন। ওরা গবেষণা করে দেখেছে যে, সামান্য এই তালিকা করলেই মনের উপর থেকে চাপ কমে যায়। মন শান্ত হয়। করণীয় কাজটা সুন্দর করে মন দিয়ে করা যায়।

আমাদের আল্লাহ সেই কবেই বলে দিয়েছেন, “তোমরা যদি কৃতজ্ঞ থাকো, তাহলে আমি আরও বাড়িয়ে দেব।” (১৪:৭)

কী বাড়িয়ে দেবেন সেটা নির্দিষ্ট করে বলে দেননি। আর মজাটা এখানেই। আপনার যখন যেটা প্রয়োজন বলে আল্লাহ মনে করবেন, ইনশা’আল্লাহ, তিনি তখন আপনাকে সেটা দেবেন। শুধু দেবেনই না, দিতেই থাকবেন! শুধু কৃতজ্ঞ থাকতে হবে আর কি!

৬. হতাশ অবস্থার দু‘আ-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা ও অস্থিরতা পড়তেন তখন বলতেন-يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُউচ্চারণ : ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ। অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)সুতরাং আল্লাহ তাআলা এ দোয়ার বরকতে ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণে দুনিয়াবি সব ধরনের চিন্তা, অস্থিরতা, দুঃখ ও কষ্ট থেকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে হিফাজত করুন। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘোরাঘুরি , খেলাধুলা করা ,, youtube , facebook, uc browser এগুলোতে সময় দেওয়া , বই পড়া , মভি ও নাটক দেখা ইত্যাদী এগুলো করলেই ভালো লাগবে এবং মেজাজ মন সুস্থ ও ফুরফুরা থাকবে ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ