আরাফ হল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর। জান্নাতে প্রবেশের প্রতীক্ষায় কিছু সময়ের জন্য যারা সেখানে অবস্থান করবেন তাদের- কে বলা হয় আরাফবাসী। আল্লাহ তাআলা বলেন: "আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ? তারা বলবে হ্যাঁ, অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা দেবে যে, আল্লাহর লানত যালিমদের উপর। যারা আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করত এবং তাতে বক্রতা সন্ধান করত এবং তারা ছিল আখিরাতকে অস্বীকারকারী আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের উপর সালাম। তারা (এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে। আর যখন তাদের দৃষ্টিকে আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আর আরাফের অধিবাসীরা এমন লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা চিনবে তাদের চিহ্নের মাধ্যমে, তারা বলবে, তোমাদের দল এবং যে বড়াই তোমরা করতে তা তোমাদের উপকারে আসেনি। এরাই কি তারা যাদের ব্যাপারে তোমরা কসম করতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৪৪-৪৯) আরাফবাসীদের পরিচয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে হুযাইফা রা. বলেন: আরাফবাসী হল এমন এক দল, যাদের সৎকর্ম এত পরিমাণ যে তা তাদের জাহান্নামে যেতে দেয় না আবার পাপাচার এত পরিমাণ যে তা জান্নাতে প্রবেশ করতে দেয় না। (অর্থাৎ পাপ ও পুণ্য সমানে সমান) যখন তাদের মুখ জাহান্নামবাসীদের দিকে ফেরানো হবে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রভূ! আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তারা এমনি অবস্থায় থাকবে। তখন তোমার প্রতিপালক বলবেন, যাও, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। (বর্ণনায়: হাকেম, তিনি বলেছেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম জাহাবী এ কথার সাথে একমত পোষণ করেছেন।) ইবনে কাসীর রহ. আরাফ ও আরাফবাসীদের পরিচয় প্রসঙ্গে বলেন: সূরা আরাফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা দ্বারা বুঝা গেল জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর আছে। যার কারণে জাহান্নামীরা জান্নাতের কাছে যেতে পারবে না। ইবনে জরীর রহ. বলেন, এই প্রাচীর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ﻓَﻀُﺮِﺏَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺑِﺴُﻮﺭٍ ﻟَﻪُ ﺑَﺎﺏٌ ﺑَﺎﻃِﻨُﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻭَﻇَﺎﻫِﺮُﻩُ ﻣِﻦْ ﻗِﺒَﻠِﻪِ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ)ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺤﺪﻳﺪ13 : ) তারপর তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর স্থাপন করে দেয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। তার ভিতরভাগে থাকবে রহমত এবং তার বহির্ভাগে থাকবে আযাব। (সূরা আল হাদীদ, আয়াত ১৩) আর সূরা আরাফে আল্লাহ এ প্রাচীরের কাছে অবস্থানকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক। আরবী ভাষায় উঁচু স্থানকে আরাফ বলা হয়। আরাফবাসী কারা হবে এ সম্পর্কে তাফসীরবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকলের মতামত একত্র করলে যে ফলাফল বের হয়ে আসে তা হল, যাদের সৎকর্ম ও পাপাচারের পরিমাণ সমানে সমান হবে তারাই হবে আরাফবাসী। সাহাবী হুযাইফা, ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ রা. প্রমূখের মতামত এ রকমই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)