উম্মতের জন্য চারের অধিক বিবাহের অনুমতি নেই। আল্লাহ বলেন : নারীদের মধ্যে যাদেরকে তোমাদের ভালো লাগে তাদের দুই, তিন বা চারজনকে বিবাহ করতে পার। (সূরা নিসা : আয়াত ৩) আর নবীজী (স) এর এগারো বিবাহের আদেশ আল্লাহ দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : এটি বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। (সূরা আহযাব : আয়াত ৫০)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
HMMOBAROKBD

Call

ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবন বিধান!যেখানে মানুষের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে৷

মুসলমানদের জন্য বহুবিবাহ /চার বিবাহ প্রসঙ্গে -

ইসলাম মুসলমানদের চারটি বিয়ে করার বাধ্যতামূলক নির্দেশ দেয়নি, বরং শর্তসাপেক্ষে ইসলামে একজন  স্বাধীন মুসলমানের জন্য একই সঙ্গে চারটি পর্যন্ত বিয়ের সুযোগ রয়েছে। একজন পুরুষের জন্য একজন স্ত্রীই যথেষ্ট।

কিন্তু যদি কেউ মনে করে, সে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমান অধিকার রক্ষা করতে পারবে এবং একাধিক স্ত্রী যদি তার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে একাধিক বিয়ে করতে পারে। তবে এর সঙ্গে বিশাল দায়িত্বশীলতা জড়িত। তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিপালিত না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বিবাহ করো তোমাদের পছন্দের নারী দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা (তাদের সঙ্গে) ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজন। ’ (সুরা নিসা : ৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার দুইজন স্ত্রী থাকবে আর সে উভয়ের সমান অধিকার রক্ষা করে না, কেয়ামতের দিন সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় উঠবে। ’ (তিরমিজি : ১১৪১)

উল্লেখ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতোগুলি বিয়ে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ীই করেছিলেন এবং চারাধিক বিয়ে তাঁর জন্যই খাস ছিল। এছাড়া তিনি যদি কামুক [না‘ঊযুবিল্লাহ্] হতেন তাহলে একজন অর্ধ বয়সী নারীকে বিয়ে করতেন না এবং শুধুমাত্র তাকে নিয়েই দীর্ঘ দিন সন্তুষ্ট থাকতেন না। এরূপ হলে তিনি জাহেলী যুগের মক্কার কাফিরদের থেকে তাঁর ন্যায় পরায়ণতা ও চারিত্রিক গুণাবলীর কারণে আল-আমীন উপাধিও পেতেন না।

-চারের অধিক স্ত্রী গ্রহণের নিষেধাজ্ঞা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এ সম্পর্কে সূরা আহযাবের ৫০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- হে নাবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মাহর তুমি প্রদান করেছ, আর বৈধ করেছি সে সব মহিলাদেরকেও যারা আল্লাহর দেয়া দাসীদের মধ্য হতে তোমার মালিকানাভুক্ত হবে, তোমার সে সব চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো বোনদেরকেও (বিবাহ বৈধ করেছি) যারা তোমার সাথে হিজরত করে এসেছে এবং কোন মু’মিন নারী নাবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট নিজেকে পেশ করলে এবং নাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ- এটা বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়। মু’মিনদের স্ত্রী আর তাদের দাসীদের ব্যাপারে কী সব বিধি-বিধান দিয়েছি তা আমি জানি, (আমি তোমাকে সে সব বিধি বিধানের ঊর্ধ্বে রেখেছি) যাতে তোমার পক্ষে কোন প্রকার সংকীর্ণতার অসুবিধা না থাকে; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াবান।

ইসলামে একাধিক বিবাহের অনুমতি কেন এবং কখন দিয়েছে:- ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া ভারসাম্যপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে দু’টি শর্তাধীনে পুরুষ কর্তৃক একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিধান দেয়া হয়েছে। (১) সর্বাধিক চার জন স্ত্রী সে একসঙ্গে রাখতে পারবে, (২) স্ত্রীদের সঙ্গে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইনসাফ বজায় রাখতে হবে। যে সব জাতি একাধিক স্ত্রী গ্রহণের কঠিন বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছে, তারা সামাজিক ক্ষেত্রে নানাবিধ দুঃখ, বেদনা, গঞ্জনার শিকার হয়েছে, তাদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই বিশেষ কারণে ইসলাম একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দিয়ে মানুষের জীবনে শান্তির অমিয় ধারা প্রবাহিত করার ব্যবস্থা করেছে।

১। কোন পুরুষ যখন দীর্ঘদিনের বিবাহিত জীবনে স্ত্রীর কারণে সন্তানাদি থেকে বঞ্চিত থাকে, তখন এ সীমাহীন বঞ্চনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে অন্য নারীকে বিবাহ করা।

২। স্ত্রী যদি চিররুগ্না হয়ে পড়ে কিংবা পাগল হয়ে যায় কিংবা বয়সের কারণে যৌনকর্মে আসক্তিহীন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সবল সুঠাম দেহের অধিকারী কোন পুরুষ কি আরেকটি বিবাহ না করে যৌন উত্তেজনার আগুনে আজীবন জ্বলতে থাকবে? নাকি গার্লফ্রেন্ড ও প্রণয়িনী জোগাড় করে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটিয়ে সমাজকে অনৈতিকতায় ভরে তুলবে?

অতএব একাধিক বিয়ের বিষয়টি শুধুমাত্র সেই স্বামীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যার শারীরিক ও আর্থিক সহ সার্বিক দিক দিয়ে সামর্থ্য রয়েছে।

৩। যুদ্ধের ফলে- যেমনটি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ইউরোপে ঘটেছিল- পুরুষের সংখ্যা কমে গেলে বহু নারী অবিবাহিতা থেকে যাবে যদি একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি না থাকে। সেক্ষেত্রে ঐ সকল নারীরা অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে গোটা সমাজকে কলূষিত করে তুলবে।

৪। কোন কোন পুরুষ অন্যান্য পুরুষদের চেয়ে অধিক দৈহিক শক্তির অধিকারী। এরূপ পুরুষদের জন্য একজন স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেননা, ইচ্ছে করেও সে তার জৈবিক শক্তিকে চেপে রাখতে পারে না। এমন পুরুষদের জন্য আইনগতভাবেই দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি থাকা বাঞ্ছনীয়। নতুবা এসব পুরুষের দ্বারা সমাজে কলূষতার বিস্তার ঘটবে।

৫। কোন শ্রমজীবী মনে করতে পারে যে, তার আরেকজন স্ত্রী হলে শ্রমের কাজে তাকে সাহায্য করতে পারবে, এমতাবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করা তার অর্থনৈতিক প্রয়োজন। এভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরো অনেক প্রয়োজন দেখা দিতে পারে যার কারণে এক ব্যক্তি এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে আরো স্ত্রী গ্রহণে বাধ্য হতে পারে।

ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে যা বহুবিধ কারণে ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত। কোন নারী যদি এ বিধানকে অবজ্ঞা করে তবে তার ঈমানের ব্যাপারে আশংকা রয়েছে।

ধন্যবাদ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

জাহেলী যুগে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ বা কোন সীমারেখা ছিলো না। প্রাচীনকালে প্রায় সর্বত্রই স্বামীদের একাধিক স্ত্রী ছিলো। একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারতো। ইসলাম এই রীতি বন্ধ করে দিয়েছে এবং চারটির বেশি বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যেসব সাহাবার চারের অধিক স্ত্রী ছিলো, রাসুল (সাঃ) তাদের বলেছেন, তাদের মধ্যে চারজন বাছাই করে রাখো, অন্যদের তালাক দিয়ে দাও। ইসলাম পূর্ব যুগে কারও কারও দশটি পর্যন্ত স্ত্রী থাকত। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। কায়েস ইবন হারেস (রাঃ) বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার স্ত্রী সংখ্যা ছিল আট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, এর মধ্য থেকে চারটি গ্রহণ করে নাও। (ইবন মাজাহ: ১৯৫২, ১৯৫৩) ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন শর্ত সাপেক্ষে দিয়েছে। সকল স্ত্রীর সাথে একই রকমের ব্যবহার এবং একই সুবিচার করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি তোমাদের এই ভয় হয় যে, তোমরা ( একের অধিক হলে) ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে (তোমাদের জন্য) একজনই যথেষ্ট। (আন নিসাঃ আয়াত ৩) তবুও আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ) কে সকল মানুষের তুলনায় একটি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দেয়ার আদেশ তাকে দেয়া হয়নি। তবে এরপর বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, যদি কোন নারীকে পছন্দ হয় তবুও। আল্লাহর এই নিষেধের কথা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছেঃ হে নবী! এরপরে তোমার জন্যে এটা বৈধ নয় তুমি তোমার (বর্তমান) স্ত্রীদের বদলে (অন্য নারীদের গ্রহণ করে ) নেবে, যদিও সেসব নারীদের সৌন্দর্য তোমাকে আকৃষ্ট করে। (আহযাবঃ ৫২) চারজন স্ত্রী রখে অন্যদের তালাক দেওয়ার আদেশ আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ) কে দেননি। তাকে এই আদেশ থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার ফলে উল্লেখিত মহিলারা বিশেষ সামাজিক মর্যাদা লাভ করেছেন। রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার কারণে তারা সমগ্র মুসলমানের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর নবী মোমেনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও বেশি প্রিয়।, নবীর স্ত্রীরা হচ্ছে তাদের মা (সমান)। (আহযাবঃ ৬) মুসলমানদের মা হওয়ার বন্ধনের কারণে তাদের বিয়ে করা যেকোন মুসলমানের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়াল বলেন, তোমাদের কারো জন্যই এটা বৈধ নয় যে, তোমরা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেবে (না এটা তোমাদের জন্য বৈধ যে,) তোমরা তারপর কখনও তার স্ত্রীদের বিয়ে করবে, এটা আল্লাহ তায়লার কাছে একটি বড় (অপরাধের) ব্যাপার। (আহযাবঃ ৫৩) চিন্তা করে দেখুন রাসুল (সাঃ) যদি চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দিতেন তবে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের বাকী জীবন অন্যকোন পুরুষের সাথে নিষিদ্ধ হতো। ফলে বাকী জীবন তাদেরকে স্বামী বিহীন অবস্থায় কাটাতে হতো। রাসুল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের কারণে তারা যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন, তালাকের পর সে মর্যাদা থাকতো না। এর অর্থ হচ্ছে কোন অপরাধ না করেও তারা শাস্তি ভোগ করতেন এবং বঞ্চনার স্বীকার হতেন। তাছাড়া যদি তাকে এ আদেশ দেয়া হত যে, আপনি চারজন স্ত্রী রেখে বাকী স্ত্রীদের তালাক দিন তবে রাসুল (সাঃ) এর জন্যে কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হতো। কারণ তিনি কাকে রেখে কাকে তালাক দিবেন? তার দৃষ্টিতে সকল স্ত্রী ছিলেন সমান। শুধু তাই নয়, চারজন রেখে বাকীদের সামাজিক মর্যাদাহানি হতো। তারা মুসলমানদের মা হওয়ার যে গৌরবলাভ করেছিলেন সেই গৌরব থেকে বঞ্চিত হতেন। এ কারণে তার সকল স্ত্রী বহাল থাকা ছিল যুক্তির দাবী। তবে পরবর্তীতে অন্য কোন নারীকে বিয়ে করতে রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ