Call

জিনদের দুনিয়াঃ জিন কোথায় থাকে, সে প্রসঙ্গে আমরা একটি হাদিস উদ্ধৃত করতে পারি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিন ৩ প্রকার। এক প্রকারের পাখা আছে যা দিয়ে বাতাসে উড়তে পারে, এক প্রকার দেখতে সাপ ও কুকুরের মত এবং আরেক প্রকার যারা বিশ্রামের জন্য থামে এবং আবার যাত্রা শুরু করে।

=>এ হাদিস থেকে এটি পরিষ্কার যে জিন বিভিন্ন প্রকারের এবং তারা আকাশের পাশাপাশি পৃথিবীতেও থাকে।

তাদের দুনিয়া সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে কতটুকু বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ

জিন জাতি আল্লাহর বিস্ময়কর ও রহস্যঘেরা সৃষ্টি। কোরআনের শতাধিক আয়াতে জিন শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। মানুষের মতো তারাও আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য আদিষ্ট। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : জুররিয়্যাত, আয়াত : ৫৬)।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো নিচে উল্লেখ করা হল।

“হে জিন ও মানবকূল, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।”

এ ছাড়াও লক্ষ্যণীয় যে, সুরা আস সফফাত ৩৭:৬-৭ আয়াতে আকাশমণ্ডলকে শয়তান (যা এক প্রকার জিন) থেকে সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে আকাশে জিনদের উপস্থিতি আছে। যদিও জিনেরা মানুষের মত কোন প্রাণী নয়। এরা এমন এক প্রকারের প্রাণী মুহূর্তের মধ্যেই যাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষমতা আছে।

সুরা আস সফফাত ৩৭:৬-৭ এ আকাশে জিনদের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে এবং সুরা নামল ২৭:৩৮-৪০এ নবী সুলাইমান (আঃ) এর বাহিনীর জিনদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিন মানুষের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির জীব এবং আকাশ, পৃথিবী – উভয় স্থানেই জিনদের বিচরণ রয়েছে।

কোরআনের বর্ণনায় জিন জাতির ইসলাম গ্রহণঃ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও জিনদের মধ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে জিনদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ প্রমাণিত হয়। হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) জিন জাতির কাছে একাধিকবার দ্বিনের দাওয়াত নিয়ে যান এবং তাঁর হাতে জিনদের এক ও একাধিক দল ইসলামও গ্রহণ করে। পবিত্র কোরআনে ‘জিন’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা রয়েছে। যার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘বলুন! আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কোরআন) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথের নির্দেশ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (সুরা: জিন, আয়াত : ১-২)।

সুরা আহকাফেও এমন একটি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। যেখানে স্বজাতির মধ্যে জিনদের ইসলাম প্রচারের বিবরণও এসেছে।  ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো! যখন আমি তোমার প্রতি জিনদের একটি দলকে আকৃষ্ট করেছিলাম, যারা কোরআন পাঠ শুনেছিল। যখন তারা তার নিকট পৌঁছাল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোনো। কোরআন পাঠ শেষে তারা নিজ সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। ...হে আমাদের সম্প্রদায়, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদের মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ২৯-৩১)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

জিন জাতি আল্ কোরআন বর্ণিত একটি জীব বা সৃষ্টি। প্রাক ইসলামী যুগেও জিন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাস আরব এবং কাছাঁকাছি এলাকায় বিদ্যমান ছিল। আরবি জিন শব্দটির আক্ষরিক শব্দার্থ যে কোন কিছু যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী বা অনেক দূরবর্তী।

কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্‌ তা’য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তারা ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।

ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে।কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আ:) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে “ইবলিশ” তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জ্বীনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জ্বীন আল্লাহর অপর একটি সৃষ্টি যারা এই পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে সহ-অবস্থান করে। আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টির পূর্বে জ্বীন সৃষ্টি করেন এবং তিনি মানুষ সৃষ্টির উপাদান হতে ভিন্নতর উপদানের সমষ্টি দিয়ে জ্বীন সৃষ্টি করেছেন। জ্বীনের সম্বন্ধে কোরআনে একটি সম্পুর্ণ সূরা,সূরা আল্-জিন (৭২নং সূরা) অবর্তীর্ণ হয়েছে।

    আল্লাহ বলেনঃ
    “আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি ছাঁচে-ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা হইতে। এবং ইহার পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি জিন অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ হইতে।” [সূরা আল্-হিজর ১৫:২৬,২৭]

তাদের জ্বীন নামকরণ করা হয়েছে কারণ তারা মানব জাতির চোখের অন্তরালে রয়েছে। ইবলিশ (শয়তান) জ্বীন জগতের,যদিও আল্লাহ যখন আদমকে সিজদা করার হুকুম দিয়েছিলেন তখন সে ফেরেশতাদের মধ্যে অবস্থান করছিল। যখন সে সিজদাহ করতে অসম্মত হল এবং তাকে তার অবাধ্যতার কারণ জিজ্ঞেস করা হল। যে সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ

    ”সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।” [ সূরা সাদ ৩৮:৭৬ ]

আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা দেন যে রাসূল (সঃ) বলেছেন,

    “ফেরেশতাদের আলো হতে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং জ্বীনদের ধুম্রবিহীনঅগ্নি হতে।” [SAHIH MUSLIM ]

আল্লাহ আরও বলেনঃ

    “এবং স্মরণ কর,আমি যখন ফেরেশতাগণকে বলিয়াছিলাম আদমের প্রতি সিজদা কর,তখন সকলেই সিজদা করিল ইবলীস ব্যতীত,সে জ্বীনদিগের একজন।” [সূরা আল্-কাহ্ফ ১৮:৫০]

সুতরাং তাকে (ইবলিশ কে) প্রত্যাখ্যাত ফেরেশতা অথবা ফেরেশতাদের একজন মনে করা ভুল হবে। জিনদের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণত তাদেরকে তিন শ্রেণীর ভাগ করা যেতে পারে ।

রাসুল (সঃ) বলেন,

    “তিন রকম জিন আছেঃ এক রকম যারা সারাক্ষণ আকাশে উড়ে, অন্য আর এক রকম যারা সাপ এবং কুকুর হিসাবে বিদ্যমান এবং পৃথিবীর উপর বসবাসকারী আর এক রকম যারা একস্থানে বাস করে অথবা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।” [আত্ তাবারী এবং আল্-হাকিম কর্তৃক সংগৃহিত]

আল্লাহ সূরা আল-জিন এ বিশ্বাসী জিনদের সম্বন্ধে বলেনঃ

    “বল,আমার প্রতি প্রেরিত হইয়াছে যে, জ্বীনদিগের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিয়াছে এবং বলিয়াছে,আমারাতো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবন করিয়াছি। যাহা সঠিক পথ -নির্দেশ করে;ফলে আমরা ইহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি। আমরা কখনও আমাদিগের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করিব না এবং নিশ্চয়ই সমুচ্চ আমাদিগের প্রতিপালকের মর্যাদা, তিনি গ্রহণ করেন নাই কোন পত্মী এবং না কোন সন্তান। এবং যে আমাদিগের মধ্যকার নির্বোধরা আল্লাহর সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করিত।” [ সুরা আল্-জিন ৭২:১-৪ ]

   

আল্লাহ আরো বলেন,

    “আমাদিগের কতক আত্মসমর্পণকারী এবং কতক সীমালংঘনকারী;যাহারা আত্মসমর্পণ করে তাহারা সুচিন্তিতভাবে সত্য পথ বাছিয়ে লয়। অপরপক্ষে,সীমালংঘনকারী তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।” [সুরা আল্-জিন ৭২:১৪-১৫]

জ্বীনদের মধ্যে অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়ঃ ইফরিত্, শয়তান, ক্বারিন, অপদেবতা, অশুভ আত্মা, আত্মা, ভূতপ্রেত ইত্যাদি। তারা বিভিন্নভাবে মানুষকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করে। যারাই তাদের কথা শুনে এবং তাদের জন্য কাজ করে তাদেরকেই মানব শয়তান বলে উল্লেখ করা হয়।

আল্লাহ বলেছেনঃ

    “এইরূপে মানব ও জ্বীনের মধ্যে শয়তানদিগকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করিয়াছি।” [সুরা-আল্-আন্’আম ৬:১১২]

রাসুল (সঃ) এই সম্পর্ককে এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন,

    “তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতে একজন করে সঙ্গী জীন দেয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল (সঃ)? তিনি বলেনঃ এখন সে আমাকে শুধু ভাল কাজ করতে বলে।” [SAHIH MUSLIM ]

আল্লাহ বলেন-

    “সুলায়মানের সম্মুখে সমবেত করা হইল তাহার বাহিনীকে-জিন,মানুষ ও বিহংগকুলকে এবং উহাদিগকে বিন্যস্ত করা হইল বিভিন্ন ব্যূহে।” [সুরা আন-নামল ২৭:১৭]

সুলায়মান (আঃ) ব্যতিত  অন্য কাউকে এই ক্ষমতা প্রদান করা হয় নাই। সুলায়মান (আঃ) ব্যতিত অন্য কাউকে জ্বীন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি এবং কেউ পারেও না।

রাসুল (সঃ) বলেছেন,

“যথার্থই গত রাতে  জ্বীনদের মধ্যে হতে একজন ইফরিত (একটি বলিষ্ঠ অথবা খারাপ জিন)” আমার সালাত ভেঙ্গে দেবার জন্য থু থু নিক্ষেপ করেছিল। যাহোক আল্লাহ তাকে পরাভূত করতে আমাকে সাহায্য করেন এবং যাতে তোমরা সকালে তাকে দেখতে পারো সে জন্য তাকে আমি মসজিদের একটি স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলাম। অতঃপর আমার ভ্রাতা সোলাইমানের দোয়া মনে পড়লঃ

    “হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যাহার অধিকারী আমি ছাড়া কেহ না হয়।” [সুরা সাদ ৩৮:৩৫]

মানুষ জিনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম নয় কারণ এই বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা শুধু পয়গম্বর সোলায়মানকে দেয়া হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, আছর অথবা ঘটনাক্রম ছাড়া  জ্বীনদের সাথে যোগাযোগ হওয়া বেশীর ভাগ সময়ই নিষিদ্ধ বা ধর্মদ্রোহী কাজের মাধ্যমেই হয়। [আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস্ এর Ibn taymeeyah`s Essay on the Jinn:: রিয়াদ তৌহিদ প্রকাশনী,১৯৮৯,পৃ.২১]

এভাবে তলব করে আনা দুষ্ট জিন তাদের সঙ্গীদের গুনাহ করতে এবং স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করতে সাহায্য করতে পারে। তাদের লক্ষ্য হল স্রষ্টা ছাড়া অথবা স্রষ্টার পাশাপাশি অন্যকে উপাসনা করার মত গুরুতর গুনাহ করতে যত বেশী জনকে পারা যায় তত জনকে আকৃষ্ট করে। একবার গণকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং চুক্তি হয়ে গেলে, জ্বীন ভবিষ্যতের সামান্য কিছ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জানাতে পারে।

রাসুল (সাঃ) বর্ণনা দিয়েছেন জ্বীনরা কিভাবে ভবিষ্যত সম্বন্ধে সংবাদ সংগ্রহ করে। তিনি বর্ণনা দেন যে,

    জিনরা প্রথম আসমানের উপর অংশ পর্যন্ত ভ্রমণ করত এবং ভবিষ্যতের উপর কিছু তথ্যাদি যা ফিরিশতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত তা শুনতে সক্ষম হত। তারপর তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে তাদের পরিচিত মানুষের কাছে ঐ তথ্যগুলি পরিবেশন করত। [ SAHIH MUSLIM, ENGLISH TRANS, VOL.4, P.1210, NO, 5538]

মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত এই ধরণের বহু ঘটনা সংঘটিত হত। এবং গণকরা তাদের তথ্য প্রদানে নির্ভূল ছিল। তারা রাজকীয় আদালতে আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।এমনকি পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে তাদের পূজাও করা হত।

রাসুল (সাঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচার শুরু করার পর হতে অবস্থার পরিবর্তন হয়। আল্লাহ ফিরিশতাদের দিয়ে আসমানের নীচের এলাকা সতর্কতার সঙ্গে পাহাড়া দেবার ব্যবস্থা করলেন। তারপর হতে বেশীরভাগ জ্বীনদের উল্কা এবং ধাবমান নক্ষত্ররাজি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হত। আল্লাহ এই বিস্ময়কর ঘটনা কোরআনের ভাষায় বর্ণনা করেছ্নেঃ

    “এবং আমরা চাহিয়াছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করিতে কিন্তু আমরা দেখিতে পাইলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কা পিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ ;আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে সংবাদ শুনিবার জন্য বসিতাম কিন্ত এখন কেহ সংবাদ শুনিতে চাহিলে সে তাহার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জলন্ত উল্কা পিন্ডের সম্মুখীন হয়।” [সূরা আল-জ্বিন ৭২:৮-৯]

আল্লাহ আরও বলেনঃ

    “প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হইতে আমি উহাকে রক্ষা করিয়া থাকি; আর কেহ চুরি করিয়া সংবাদ শুনিতে চাহিলে উহার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।” [সূরা আল হিজর ১৫:১৭-১৮]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, [ SAHIH AL-BUKHARI ]

“যখন রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর একদল সাহাবা উকাধ বাজারের দিকে রওয়ানা হলেন, তখন শয়তানদের ঐশী খবরাখবর শোনায় বাধা প্রদান করা হল। উল্কাপিন্ড তাদের উপর ছেড়ে দেয়া হল। ফলে তারা তাদের লোকদের কাছে ফিরে এল। যখন তাদের লোকরা জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছিল, তারা তাদের জানালো। কেউ কেউ পরামর্শ দিল যে নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে, কাজেই তারা কারণ খুজে বের করার জন্য পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের কয়েকজন রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণের সালাত রত অবস্থা দেখতে পেল এবং তারা তাদের কোরআন পড়া শুনলো। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল যে নিশ্চয় এটাই তাদের শোনায় বাধা প্রদান করেছিল। যখন তারা তাদের লোকদের মধ্যে ফিরে গেল তখন তারা বলল,

    “আমরা তো এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করিয়াছি। যাহা সঠিক পথ নির্দেশ করে, ফলে আমরা ইহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি। আমরা কখনও আমাদিগের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করিব না।” [সুরা আল জিন ৭২:১-২]

এইভাবে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচারের পূর্বে জিনরা যেভাবে সহজে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খবরাখবর সংগ্রহ করত তা আর পারেনি। ঐ কারণে তারা এখন তাদের খবরাখবরের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশ্রিত করে।

    আয়শা (রাঃ) তখন উল্লেখ করলেন যে গণকরা কখনও কখনও যা বলে সত্য হয়।

রাসুল (সঃ) বলেন,

    ‘‘ওতে সত্যতার কিছু অংশ যা জিনরা চুরি করে এবং তার বন্ধুর কাছে বলে কিন্তু সে এর সাথে একশটি মিথ্যা যোগ করে। ”আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা দেন যে তিনি আল্লাহর রাসূলের (সঃ) কাছে গণকদের সম্বন্ধে জিজ্ঞসা করলে তিনি উত্তর দেন যে ওরা কিছু না। [SAHIH AL- BUKHARI, ]

একদিন উমর ইবনে আল খাত্তাব যখন বসে ছিলেন তখন একটি সুদর্শণ লোক তার পাশ দিয়ে চলে গেলে তিনি বললেন, আমার যদি ভূল না হয় লোকটি এখনও প্রাক ইসলামি ধর্ম অনুসরণ করছে অথবা বোধ হয় সে তাদের একজন গণক। তিনি লোকটি কে তার সামনে আনতে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তার অনুমান সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন। লোকটি উত্তর দিল, আমি আজকের মত আর কোন দিন দেখিনি যেদিন মুসলিম এই ধরণের অভিযোগের সম্মূখীন হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন,অবশ্যই আমাকে তোমার অবহিত করা উচিত। লোকটি তখন বলল, অজ্ঞতার যুগে আমি তাদের গণক ছিলাম। ঐ কথা শুনে উমর জিজ্ঞাসা করলেন,তোমার মহিলা জ্বীন তোমাকে সব চেয়ে বিস্ময়কর কি বলেছে।  লোকটি তখন বলল,একদিন আমি যখন বাজারে ছিলাম,সে (মহিলা জ্বীন) উদ্বিগ্ন হয়ে আমার কাছে এসেছিল এবং বলেছিল মর্যাদাহানি হবার পর তুমি কি জ্বীনদের হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় দেখনি? তুমি কি দেখনি তাদেরকে (জ্বীনদেরকে) মাদী উট ও তাতে আরোহণকারীদের অনুসরণ করতে? উমর বাধাদান পূর্বক বললেন,এটা সত্য। [Sahih Al-Bukhari, Arabic-English, vol.5, p.131-2. no.206]

জিনরা তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মানুষকে আপতঃ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অবহিত করতে সক্ষম । উদাহরণস্বরূপ,যখন কেউ একজন গণকের কাছে আসে সে আসার আগে কি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তা গণকের জ্বীন আগত লোকটির ক্বারিনের (প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে নিয়োজিত জ্বীন) কাছ থেকে জেনে নেয়। সুতরাং গণক লোকটিকে বলতে সক্ষম হয় যে সে এটা করবে অথবা অমুক অমুক যায়গায় যাবে। এই প্রক্রিয়ায় একজন সতিকার গণক অপরিচিত লোকের অতীত পরির্পূণ ভাবে জানতে সক্ষম হয়। সে একজন অচেনা ব্যক্তির পিতার নাম, কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছিল এবং তার ছেলে বেলার আচারণ ইত্যাদি সম্বন্ধে বলেতে সক্ষম হয়। অতীত সম্বন্ধে পরিপূর্ণ বর্ণনা দেবার ক্ষমতা জ্বীন এর সঙ্গে মুহুর্তের মধ্যে বহু দুরত্ব অতিক্রম করতে এবং গোপন বিষয় হারানো জিনিস, অদেখা ঘটনা বলি সম্বন্ধে বহু তথ্যাদি সংগ্রহ করতেও সক্ষম।

কোরআনে বর্ণিত পয়গম্বর সুলায়মান এবং সিবার রাণী, বিলকিসের গল্পের মধ্যে এই ক্ষমতার সত্যতা পাওয়া যায়।

    যখন রাণী বিলকিসের গল্পে এলেন, তিনি একটি  জ্বীনকে রাণীর দেশ থেকে তার সিংহাসন নিয়ে আসতে বললেন। “এক শক্তিশালী জিন বলল,আপনি আপনার স্থান হইতে উঠিবার পূর্বে আমি উহা আনিয়া দিব এবং এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান বিশ্বস্ত। [সূরা আন নামল, ২৭:৩৯]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

জ্বিনেরা পৃথিবীতেই বাস করে । শুনেছি ময়লা জায়গায় ওরা থাকে । 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

জিনের দুনিয়া এ পৃথিবীতে তবে তাঁরা অদৃশ্য থাকে তাদেরকে আমরা দেখতে পাই না। সুরা জিন এবং আরাফের   ১১ এবং ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ জিনদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকে।যেমন পাহাড় পর্বত ও বনে জঙ্গলে বা মানুষের থেকে দূরে থাকে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ