এটি অনেক লম্বা কাহিনি,,, তাই সংক্ষিপ্ত করে বললাম,,,, কাবিল কেন হাবিলকে হত্যা করে এ ব্যাপারে,,,,, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.] এবং অন্যান্য কয়েকজন সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। তার বিষয়বস্তু হলো এই- মানবজগতের বংশবৃদ্ধির জন্য হজরত আদম আ.-এর নিয়ম ছিলো যে, হজরত হাওয়ার একবারের গর্ভজাত জমজ ছেলে ও মেয়েকে অন্যবারের গর্ভজাত ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিতেন। এই নিয়ম অনুযায়ী হাবিল ও কাবিলের বিয়ের বিষয়টিও সামনে ছিলো। কাবিল বয়সে বড় ছিলো এবং তার বোন হাবিলের বোনের চেয়ে বেশি সুন্দরী ছিলো। এ-কারণে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী হাবিলের বোনকে বিবাহ করতে এবং নিজের বোনকে হাবিলের কাছে বিয়ে দিতে কাবিল খুবই অনিচ্ছুক ছিলো। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য হজরত আদম [আ.] এই সিদ্ধান্ত প্রদান করলেন যে, তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে কুরবানি পেশ করবে। যার কুরবানি কবুল হবে সেই নিজের ইচ্ছা পূরণ অধিকার পাবে। সে কালে মানত ও কুরবানির বস্তু কোনো উুঁচ জায়গার ওপর রেখে দেয়া হতো। তারপর আসমান থেকে আগুন এসে কবুলকৃত বস্তুটিকে পুড়িয়ে দিতো। এই নিয়ম অনুযায়ী হাবিল নিজের পাল থেকে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা আল্লাহর নামে কুরবানি করলেন। ওদিকে কাবিল নিজের শস্যভাণ্ডার থেকে নিকৃষ্ট ধরনের কিছু শস্য কুরবানির জন্য পেশ করলেন। ফলে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে আগুন এসে হাবিলের কুরবানিকে পুড়িয়ে ফেললো এবং কুরবানি কবুল হওয়ার সম্মান তিনিই লাভ করলেন। কাবিল নিজের এই অপমান কোনোভাবেই সহ্য করতে পারলো না। সে ক্রুদ্ধ হয়ে হাবিলকে বললো, আমি তোমাকে হত্যা না করে ছাড়বো না, যাতে তোমার উদ্দেশ্য সফল না হয়। এবং তাকে হত্যা করে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, পৃথিবীর প্রথম হত্যাকারী ব্যক্তির নাম কাবিল, প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যাক্তির নাম হাবিল, প্রথম লাশ দাফনকারী ব্যক্তির নাম কাবিল,,, কোন এক বর্ননায় পাওয়া যায় পৃথিবীতে সেদিন থেকে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত যত মানুষকে হত্যা করা হবে তার অর্ধেক পাপ বহন করবে কাবিন,,,,,, ধন্যবাদ,,,,,,
মহান আল্লাহ সূরা মাইদা এর ২৭ নাম্বার আয়াতে বলেনঃ আর আদমের দুই ছেলের কাহিনী আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনান। যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল অতঃপর একজন থেকে কবুল করা হল এবং অন্যজনের কবুল করা হল না। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অন্যজন বলল, আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন। আদম-পুত্রদ্বয়ের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে সংক্ষেপে তা হল, যখন আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা- এরূপ যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন ভ্রাতা-ভগিনী ছাড়া আদমের আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা-ভগিনী পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ তাআলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম আলাইহিস সালামের শরীআতে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা-ভগিনী হিসাবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারিনী কন্যা সহোদরা ভগিনী গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহজাত সহোদরা ভগিনীটি ছিল পরমাসুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত ভগিনীটি ছিল অপেক্ষাকৃত কম সুন্দরী। বিবাহের সময় হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত ভগিনীটি কাবিলের ভাগে পড়ে। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শক্র হয়ে গেল। সে জিদ ধরল যে, আমার সহজাত ভগিনীকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। আদম আলাইহিস সালাম তার শরীআতের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্যে নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী গৃহীত হবে, সেই কন্যার পাণিগ্রহণ করবে। আদম আলাইহিস সালামের নিশ্চিত বিশ্বাস যে, যে সত্য পথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানীকে ভস্মিভূত করে আবার অন্তৰ্হিত হয়ে যেত। যে কুরবানী অগ্নি ভস্মিভূত করত না, তাকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত। হাবিল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষিকাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল। অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল, তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে ভাইকে বলে দিল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করল। এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। সে বলল, আল্লাহর নিয়ম এই যে, তিনি আল্লাহভীরু মুত্তাকীদের কর্মই গ্রহণ করেন। তুমি আল্লাহভীতি অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হত। তুমি তা করনি, তাই কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি? তারপর যা ঘটেছে, আল্লাহ তাআলা তা পবিত্র কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। (ইবন কাসীর) কাবীলের কুরবানী কবূল না হওয়ায় হাবীলের সাথে হিংসা করে সে তাকে হত্যা করে। এজন্য-ই কাবীল পৃথিবীর প্রথম হত্যাকারী। প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি হাবীল ও প্রথম লাশ দাফনকারী ব্যক্তির নাম কাবীল। তারপর সে অনুতাপ করতে লাগল! অর্থাৎ মানুষ কত দুর্বল! নিজের ভাইকে সে হত্যা করার পর কী করবে তা খুঁজে বুঝে উঠতে পারছিল না। তখন আল্লাহ তাআলা দুইটি কাক প্রেরণ করলেন, একটি অন্যটিকে মেরে ফেলে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখল। তখন কাবীল এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তার ভাইকে দাফন করল এবং নিজে খুব অনুতপ্ত হল।