আপনি একটি গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। স্বপ্ন বিষয়ের নিম্নের আলোচনাটি গভীর মনোগোগ দিয়ে পড়লে আশাকরি আপনি সমাধনা পাবেন-
প্রতিটি মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষের যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি মানুষের দেখা স্বপ্নেও রয়েছে ভিন্নতা। মানুষ ভালো স্বপ্ন যেমন দেখে, তেমন দেখতে পারে ভয়ঙ্কর বা দুঃস্বপ্ন। দারুণ স্বপ্ন মানুষকে আনন্দ দিলেও কিছু স্বপ্ন মানুষকে ভাবাতুর করে রাখে। চিন্তা-ভাবনা ও অস্থিরতায় ফেলে দেয়। জীবনের খুঁটিনাটি প্রত্যেক বিষয়ের মতো স্বপ্ন সম্পর্কেও ইসলামের বক্তব্য রয়েছে।স্বপ্ন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইসলাম স্বপ্নকে নবুয়্যতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা কী বা স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কী—তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, স্বপ্ন তিন প্রকার। এক. রুইয়ায়ে সালেহাহ (বা ভালো স্বপ্ন। আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে কোনো সুসংবাদ হিসেবে যা বিবেচ্য)। দুই. রুইয়ায়ে শয়তানিয়্যাহ (বা শয়তানকর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন)। তিন. রুইয়ায়ে নাফসানিয়্যা (বা মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র)। এরপর রাসুল সা. বলেছেন, যদি কেউ অপছন্দনীয়, ভয় বা খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং সে স্বপ্নের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কাউকে কিছু না বলে। -সুনানে আবু দাউদ)
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসুল সা. ফজরের নামাজের পর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর রাসুল সা. নিজে এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন।
চিরসত্যের ধারক মহানবী সা.-এর বাণীর আলোকে আমরা বিশ্বাস করি যে, কিছু ভালো স্বপ্ন আল্লাহ মহান তার প্রিয় ও নেক বান্দাদের দেখান। আর কিছু স্বপ্ন শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে এবং সেগুলো মানুষের চিন্তা ও ধারণার ফল।
জরুরি জ্ঞাতব্য যে, নবি-রাসুলদের স্বপ্ন ওহি। এ জন্যই স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম আ. নিজের ছেলে ইসমাইল আ.-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। জাতীয় কোনো স্বপ্ন দেখলে, কোনো ব্যক্তির জন্য এভাবে কোরবানি করতে উদ্যত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসুল সা.-কে বলতে শুনেছি, নবুয়্যতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন, ভালো স্বপ্ন। -সহীহ বুখারি
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরো বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে। মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হলো নবুয়্যতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। -সহীহ বুখারি ও মুসলিম
একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশি সত্যবাদী হবে তার স্বপ্ন তত বেশি সত্যে পরিণত হবে।
আপনাদে ধন্যবাদ।