শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জাদু ও ভাগ্যগণনা কুফর ও শির্কের পর্যায়ভুক্ত হারাম। জাদু তো পরিষ্কার কুফর এবং সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের অন্যতম। জাদু শুধু ক্ষতিই করে, কোনো উপকার করে না। জাদু শিক্ষা করা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “তারা এমন জিনিস (জাদু) শিক্ষা করে, যা তাদের অপকারই করে, কোনো উপকার করে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২] তিনি আরো বলেন, “জাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন সে সফল হবে না”। [সূরা ত্বোয়াহা, আয়াত: ৬৯] জাদু চর্চাকারী কাফের। মহান আল্লাহ বলেন, “সুলায়মান কুফুরী করেন নি। কিন্তু কুফুরী করেছে শয়তানেরা। তারা মানুষকে শিক্ষা দেয় জাদু এবং বাবেলে হারূত-মারূত নামের দু’জন মালাকের ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তা। ঐ ফিরিশতাদ্বয় কাউকে একথা না বলে কিছু শিক্ষা দেয় না যে, আমরা এক মহাপরীক্ষার জন্য। সুতরাং তুমি (জাদু শিখে) কুফুরী করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২] জাদুকরের উপর্জন অপবিত্র ও হারাম। জ্ঞানপাপী, অত্যাচারী ও দুর্বল ঈমানের লোকেরা অন্যের সঙ্গে শত্রুতা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য জাদুকরদের নিকটে যায়। অনেকে আবার জাদুর ক্রিয়া দূর করার জন্য জাদুকরের শরণাপন্ন হয়। এজন্যে যাওয়াও হারাম। বরং তাদের উচিত ছিল আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং আল্লাহর কালাম যেমন সূরা নাস, ফালাক ইত্যাদি দিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা। গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তা উভয়েই আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকারকারী কাফিরদের দলভুক্ত। কারণ, তারা উভয়েই গায়েবের কথা জানার দাবী করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। অনেক সময় তারা সরলমনা লোকদের সম্পদ লুটে নেওয়ার জন্য তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে। এজন্য তারা বালুর উপর আঁকি-বুকি, চটা (বাটি বা থালা) চালান, হাতের তালুতে ফুঁক, চায়ের পেয়ালা, কাঁচের গুলী, আয়না ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। এসব লোকের কথা একটা যদি সত্য হয় তো নিরানব্বইটাই হয় মিথ্যা। কিন্তু গাফিলরা এসব ধোঁকাবাজ- মিথ্যুকদের এক সত্যকেই হাযার সত্য গণ্য করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্যের শুভাশুভ তাদের নিকট জানতে চায়। তারা হারানো জিনিস কোথায় কীভাবে পাওয়া যাবে তা জানার জন্য তাদের নিকটে ছুটে যায়। যারা তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা বিশ্বাস করে, তারা কাফের এবং ইসলাম থেকে বহির্ভূত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদের ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৫৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ৩৩৮৭] যে ব্যক্তি তারা গায়েব জানে না বলে বিশ্বাস করে কিন্তু অভিজ্ঞতা কিংবা অনুরূপ কিছু অর্জনের জন্য তাদের নিকটে যায় সে কাফির হবে না বটে, তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩০; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫৯৫] তবে তাকে সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং বিশেষভাবে তওবা করতে হবে।


তথ্যসূত্র: মূল : শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ অনুবাদক : মু. সাইফুল ইসলামসম্পাদক : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া গ্রন্থনায় : ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ সৌজন্যে : মোঃ জুুুলেকুুুর রহমান।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

যাদু-টোনা যেটাকে আরবীতে সেহর বলা হয় তার আসল অর্থ হলো কোনো কিছুর প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয়া।

যখন যাদুকর যাদু করে তখন সে কোনো ঘটনা, বিষয়বস্তু বা যে কোনো কিছুকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিপরীতভাবে উপস্থাপন করে এবং মিথ্যাকে সত্য ও সত্যকে মিথ্যারুপে দৃষ্টিগোচর করে দিয়েছে বলে মনে হতে পারে। মূল বিষয়বস্তু, হাকিকত বা ঘটনাকে যাদুকর পরিবর্তন করে ফেলছে বলে হয়। যা সম্পূর্ণ হারাম, মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজি। অনেক যাদুকর আছে যারা তন্ত্র টোনার কুফর শিরক ও পাপাচারের প্রতি নির্ভর করে দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করে। যারা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তারা শয়তান অনিষ্টকারী জ্বীনকে সন্তুষ্ট করে কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা চালায়। যারা এই কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছে এবং যারা এই ঘৃণিত কাজের ওপর নির্ভর করে চলে, আস্থা রাখে তারা সকলেই গুনাহগার। ইসলামের পরিভাষায়, যাদু করা কবিরা গুনাহ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদু-টোনার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। জাদুকরের গুনাহ শবে কদর ও শবে বরাতের মহিমান্বিত রাতেও ক্ষমা করা হয় না। যে ব্যক্তি যাদু করে বা করবে বা যে এতে রাজি হবে সে কাফের বলে গন্য হবে।

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম যাদু বিদ্যার সঙ্গে মানুষ পরিচিত হয়  হারুত ও মারুত নামে দুজন ফেরেশতার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারাতে বলেছেন, ‘ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন- নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১০২)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি কবীরাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বলেছেন। সাত কবিরা গুনাহর একটি কবিরা গুনাহ হচ্ছে যাদু টোনা করা। এতোটা ঘৃণিত এই কাজ, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যাদু- টোনাকারীদের কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাদুকরের শাস্তি হলো তরবারি দিয়ে হত্যা করা’ (জামে তিরমিযী)। এটি এমন জঘন্য কাজ যারা জাদুটোনাতে জড়িত হয়ে যায় এতে আস্থা রাখে তারা কুফরিতে জড়িয়ে যায় এবং এ থেকে মুক্তি ও পেতে পারে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা হলো, শরাবখোর বা মদ্যপায়ী , রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী এবং যাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। (মুসনাদে আহমদ)

নবী রাসূলদের সময়কালেও যাদু-টোনার প্রচলন ছিল। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর মুজেজা পেয়েছিলেন তার বিপরীতে ফেরাউন বড় বড় যাদুকরদের ডেকে এনে যাদু দেখানোর নির্দেশ দিতেন। তবে আল্লাহর নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজেজার কাছে ওইসব যাদুকরদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতো।

  সূত্র

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ