ইসলামে পরকিয়ার বিধান:
সহিহ মুসলিমে এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”-সহিহ মুসলিম; হা. নং ২৬৫৭
পবিত্র কুরআনে কারীমে সে সব কর্ম থেকে দূরে থাকার আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلاً
“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”-সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৩২
এ আয়াতে আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, ব্যভিচার করো না; বরং বলেছেন: ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অর্থাৎ যেসব কর্ম ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় সেগুলোতেও লিপ্ত হয়ো না।
বেগানা নারী-পুরুষের মাঝে নির্জনবাসকে ইসলাম হারাম করেছে। হাদিসে এসেছে-
“কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হয় সেখানে শয়তান থাকে তৃতীয় ব্যক্তি”।-সুনানে তিরমিজি হা. নং ২১৬৫। সুতরাং প্রেম-ভালবাসার নামে যুবক-যুবতীদের মাঝে যা কিছু ঘটছে শরিয়তের ভাষায় সেগুলোও ব্যভিচারের পর্যায়ভুক্ত; জঘন্য গুনাহর কাজ।
এমুহূর্তে করণীয়:
১. দুজনে পরকাল ও সন্তানাদির কথা চিন্তা করে পরস্পর ধর্মকর্মের প্রতি মনোযোগী হওয়া। এবং নামায ও ধৈর্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান কামনা করা। পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। আর নিশ্চয়ই একাজ বিনয়ী ও খোদা ভীরু ছাড়া অন্যদের জন্য খুবই কঠিন।’ -সুরা বাকারা; আয়াত ৪৫
২. মিলে মিশে থাকা সম্ভব না হলে স্বামীর উচিত হবে উক্ত স্ত্রীকে কোন উত্তম উপায়ে আপন জুলুম থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেমন: তালাক প্রদান করা ইত্যাদি। কারণ স্ত্রীর দৈহিক চাহিদা পূরণ করা স্বামীর উপর আবশ্যকর্তব্য হক; স্বামী তা আদায়ে ব্যার্থ হলে রোজ কিয়ামতের দিন কঠিন স্বাস্তির সম্মুখিন হবেন। রাসূল সা. ইরশাদ করেন- জালিম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকারে নিপতিত হবে। -সহীহ বুখারী; হা. নং২৪৪৭, সহীহ মুসলিম; হা. নং ২৫৭৪।
৩. তাছাড়া ইসলামের একটি বিধান: স্বামী যদি স্ত্রীকে জৈবিক প্রশান্তি দিতে অক্ষম প্রমাণিত হয়, স্ত্রী চায় স্বামীকে ছেড়ে দিতে, স্বামী তাতে সম্মত নয়, এমতাবস্থায় ইসলাম কাজীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। স্ত্রী কাজির দরবারে অভিযোগ করে বিচারপ্রার্থিণী হবে। কাজি স্বামীর সার্বিক অবস্থা যাচাই বাছাই করবে। বাস্তবেই যদি স্বামী অক্ষম বলে প্রমাণিত হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য এক বছরের সুযোগ দিবে। এরই মাঝে সুস্থ হলে তো ভালো, অন্যথায় কাজি বিশেষ ক্ষমতাবলে উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব বলেন, যে কোনো মহিলাকে বিয়ে করল কিন্তু সহবাসে অক্ষম প্রমাণিত হলো তাকে একবছরের জন্য সুযোগ দেয়া হবে। এর মাঝে সুস্থ হলে তো ভালো, অন্যথায় উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। -মুয়াত্তা মালেক; হা. নং ২১৭৫
ইমাম মালেক ইবনে শিহাব জুহরীকে জিজ্ঞেস করেন, নপুংসক স্বামীকে চিকিৎসার জন্য যে একবছরের সুযোগ দেয়া হবে, তা কখন থেকে? বিয়ের দিন থেকে না, অভিযোগ উত্থাপনের দিন থেকে? ইবনে শিহাব বলেন, অভিযোগ উত্থাপনের দিন থেকে। এভাবেই স্ত্রী অক্ষম স্বামীর কবল থেকে মুক্তি পেতে পারে। পরে অন্য কোথাও বিয়ে বসবে। -মুয়াত্তা মালেক; হা. নং ২১৭৬