আমার মনে হয় যে, এসব কর্মকান্ডতে কোনো কল্যাণ নেই । কেননা, ইসলাম কখনো রংতামাশা কে  গ্রহণ করে না।        
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

বিধর্মীদের মত করে নবী এর (সাঃ) জন্মদিন পালন ও মসজিদে আলোকসজ্জা রাস্তাঘাট সাজানো এতে কোনই কল্যাণ নেই। জন্মদিন ইহুদি নাসারাদের পালনীয় বিষয় মুসলিমদের নয়। যার জন্য মহানবী (সাঃ) বলেছেন, অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির সুন্নত তথা ইহুদি নাসারাদের তরিকা অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ বা সম্পূর্ণরূপে। এমনকি তারা যদি সাণ্ডার বা গোসাপ জাতীয় এক প্রকার জন্তুর গর্তে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাকে অনুসরণ করবে এবং তাদের কেও যদি রাস্তার উপর প্রকাশ্যে স্ত্রী-সঙ্গম করে তবে তোমরাও তা করবে! বলা বাহুল্য, বিজাতীর অনুকরণে এমন উৎসব বা অনুষ্ঠান পালন করা বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ) জনাব! আপনি ঠিক-ই বলেছেন যে এই সব কর্মকান্ডতে কোন কল্যান নেই। কেননা ইসলাম কখনো রং তামাশা কে গ্রহণ করে না। আর এতে যদি কল্যান থাকত তাহলে রাসুল (সাঃ) সাহাবি তাবেঈ চার ইমাম সবাই এভাবে পালন করে যেতেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালন এবং মসজিদ ও রাস্তায় আলোকসজ্জা করা হারাম। কারণ এটা নবীযুগ থেকে প্রমাণিত নয় এবং এতে অপচয়ের পাশাপাশি এটা হারাম হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে- ১। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা তাঁর খলীফাদের সুন্নাত ছিল না। ফলে এটি একটি নিষিদ্ধ নব উদ্ভাবন, কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছি; তোমরা একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাক। (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান হও, কেননা প্রতিটি নবোদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।” (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে তিরমিযী) নবীর জন্মদিন পালন একটি বিদআত যা মুসলিমদের দ্বীনকে নষ্ট করার জন্য ফাতেমীয় শিয়ারা চালু করেছিল প্রথম তিন শ্রেষ্ঠ যুগ (সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন) অতিবাহিত হওয়ার পর। কেউ যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এমন কিছু করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি কিংবা করতে বলেননি এবং তার উত্তরসূরী খলীফারাও করেননি, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে সে দাবী করছে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের কাছে পরিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ব্যাখ্যা করেননি (নাউযুবিল্লাহ), ফলে সে আল্লাহর এই আয়াতকে অস্বীকার করে: “আজ আমি, তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা মায়িদাহ; আয়াত ৩) কারণ সে দ্বীনের মধ্যে বাড়তি কিছু সংযোজন করছে এবং দাবী করছে যে তা দ্বীনের অংশ অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নিয়ে আসেননি। ২। রাসূলের জন্মদিন উদযাপনের দ্বারা খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের অনুসরণ করা হয়। কেননা তারা যীশু খ্রিস্ট (হযরত ঈসা আ.) এর জন্মদিন পালন করে। আর তাদের অনুসরণ করা চূড়ান্ত হারাম কাজ। হাদীসে আমাদেরকে কাফিরদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের থেকে ভিন্ন হতে আদেশ করা হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কেউই কোন জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই একজন হিসেবে পরিগণিত।” (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবু দাঊদ) তিনি আরো বলেন, “মুশরিকদের থেকে ভিন্ন হও।” (সহীহ মুসলিম) বিশেষত এই নির্দেশ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে যা তাদের ধর্মীয় নিদর্শন এবং আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। ৩। বিদআত এবং খ্রিস্টানদের অনুসরণ করার মত হারাম কাজ হওয়া ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন উদযাপন অতিরঞ্জন এবং নবীজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ উন্মোচন করে, যা কিনা আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং তাঁর সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে, যেমনটি বিদআতী এবং মিলাদ পালনকারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘটে থাকে, যখন তারা আল্লাহর পরিবর্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকে, তাঁর সহযোগিতা চায় এবং “কাসীদায়ে বুরদা” জাতীয় শিরকপূর্ণ প্রশংসাসূচক কাসীদা আওড়ে থাকে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেছেন: “আমাকে এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রিস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে (হযরত ঈসা আ.কে) করে থাকে। কেননা আমি আল্লাহর বান্দা মাত্র। সুতরাং (আমার সম্পর্কে) বল, আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” (সহীহ বুখারী) অর্থাৎ খ্রিস্টানরা যেমন ঈসা আ. এর প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তার ইবাদত করা শুরু করে দিয়েছে, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তেমনটি করো না। আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেছেন: “হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কথা বলো না। মরিয়মের পুত্র মসীহ ঈসা তো আল্লাহর রাসূল ও মরিয়মের নিকট প্রেরিত তাঁর বাণী ছাড়া আর কিছুই নন, এবং আল্লাহর সৃষ্টি করা এক রূহ।…” (সূরা নিসা, আয়াত ১৭১) আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, পাছে না আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে, যা তাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই তিনি বলেছেন, “অতিরঞ্জনের ব্যাপারে সাবধান! কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা অতিরঞ্জনের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল।” (সুনানে নাসাঈ) ৪। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালনের এই বিদআত উদযাপন অন্যান্য বিদআতের দ্বার উন্মুক্ত করে এবং সুন্নাত থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই বিদআতপন্থীদেরকে দেখা যায় বিদআতের ক্ষেত্রে খুব উৎসাহী আর সুন্নাত পালনের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা। তারা একে ঘৃণা করে এবং সুন্নাতের অনুসারীদেরকে শত্রুজ্ঞান করে। শেষ পর্যন্ত তাদের গোটা ধর্মই পরিণত হয় বাৎসরিক বিদআতী অনুষ্ঠানাদি এবং মিলাদের সমষ্টিতে। এভাবে তারা বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে এবং সাহায্যের জন্য আল্লাহর পরিবর্তে এইসব তথাকথিত বুজুর্গ ব্যক্তিদের ডাকে, তারা ধারণা করে যে এইসব ব্যক্তি উপকার কিংবা ক্ষতি বয়ে আনতে সক্ষম। এমনিভাবে তারা আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে গিয়ে জাহেলিয়াতের যুগের লোকেদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “এবং তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” (সূরা ইউনুস, আয়াত ১৮) অন্যত্র বলেন, “…আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে, তারা বলে, আমরা তো এদের উপাসনা করি কেবল এজন্য যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেয়…।” (সূরা যুমার, আয়াত ৩)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ