স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয় বিষয় প্রয়োজন ছাড়া অন্য কারো সাথে আলোচনা করা একেবারেই নিষেধ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আমানত।
"আব্দুর রহমান ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ "ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় আমানত হবে স্বামী স্ত্রীর পরষ্পর সম্ভোগ সম্পর্কিত বিষয়। যে গোপনীয় বিষয় স্বামী প্রকাশ করে দিলো। (সুনানে আবু দাউদ , হাদিস নং ৪৮৭০)।
ইসলামে স্বামী স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য অাল্লাহ কঠোর হুকুম করেছেন। এ বিষয়ে রাসূল (সঃ) আরো বলেন,
"কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে,যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়,অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।" (মুসলিম)।
মহোদয়! তাহলে উক্ত হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী বলা যায়, স্বামী-স্ত্রীর একান্ত কোন বিষয় অপরের কাছে প্রকাশ বা প্রকট করা নিষেধ।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার গোপনীয়তা রক্ষা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান
স্বামী স্ত্রীর ব্যাপারগুলো সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়ার বিষয় না, এমন কি বিশেষ মুহূর্ত গুলোতে, সাথে থাকা ফেরেশতারাও দূরে চলে যান!
স্বামী/স্ত্রী একে অপরের আমানত, এই আমানতের হেফাজত করতে হবে৷ বিশেষ করে স্বামীর জন্য এই হুকুম অধিক কঠোর৷
কেননা, নিজ স্ত্রীর বর্ণনা দিয়ে যখন সে বন্ধু বা সমবয়সী কারো সাথে গোপনীয় বিষয় শেয়ার করল তখন উক্ত ব্যক্তি যে স্ত্রীকে নিয়ে কোন লালসা পোষন করছে না তার নিশ্চয়তা কি!
ব্যাপারটা এমন হয়ে যায় "ক্ষুধার্ত সিংহের কাছে গিয়ে হরিণের বর্ণনা"৷ হরিণের বর্ণনায় কেবল সিংহের ক্ষুধাই বাড়িয়ে তুলবে!
অপরদিকে কোন মেয়ে যখন তার বান্ধবী বা সমবয়সী কারো কাছে গোপনীয় বিষয় গুলো শেয়ার করে তবে যার কাছে শেয়ার করছে সে যে উক্ত অবস্থা কল্পনায় আনছে না তারও নিশ্চয়তা নেই!
কারও গোপনীয় অবস্থায় তাকে কল্পনা করা কতটা লজ্জাজনক!
অন্যদিকে যার কাছে বর্ণনা করছে তার জীবনে যদি অতৃপ্ততা থাকে অথবা কোন কষ্টে থাকে অথবা এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী যদি তার সংসার বা সম্পর্ক না হয় তবে এক্ষেত্রে দুটি ঘটনা হতে পারে-
১৷ বর্ণনাকারীর কথা শুনে সে নিজের জীবনের সাথে তুলনা করে আরও হতাশ হবে, কষ্ট পাবে৷ ফলস্বরূপ, তার সংসারে আরও অশান্তি হবে এমন কি সংসার ভেঙেও যেতে পারে! আর এর জন্য বর্ণনাকারী দায়ী থাকবে!
২৷ ইসলামে "বদ নজর" বলে একটা ব্যাপার আছে! বর্ণনাকারীর সংসার এবং সম্পর্কে এর প্রভাব পড়তে পারে!
তাই সাংসারিক ব্যাপার গুলো নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়৷ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করতে হবে৷ এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
"কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়। (মুসলিম : ২৫৯৭)
অন্যদিকে অনেকেই গোপন ব্যাপার শেয়ার না করলেও স্বামী স্ত্রীর দোষ শেয়ার করে মন হালকা করতে চায়! এটা একে তো গীবতের পর্যায়ে পড়ে, যা ইসলামী শরীয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাযাহ : ১)
দ্বিতীয়ত স্বামীর না-শোকরিয়া করা হয়! এ বিষয়ে একটি হাদিস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোনো দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল! কেন? তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শুকরি করে৷ তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোনো দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূর্ণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোনো কল্যাণই পেলাম না।’’ (মুসলিম- ৬:৪৬৫)
নিজের কোন অপরাধ যেমন অন্যের নিকট প্রকাশ উচিত নয় তেমনি গোপনীয় ব্যাপার গুলোও প্রকাশ করা উচিৎ না৷ আর ইতোপূর্বে ভুল হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে পুনরায় এমন কাজ না করার ওয়াদা করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে৷
গোপন কথা বলা যেমন পাপ, তেমনি শোনাও সমান পাপ! আল্লাহ আমাদের গোপনীয়তা সকলের কাছে গোপনীয় করে রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন৷