*ই-কার ব্যবহৃত হবেঃ ক. যেসব তৎসম (বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত) শব্দে ই-কার বা ঈ-কার দুটোই শুদ্ধ এবং প্রচলিত, বানানের সমতাবিধানের লক্ষ্যে সেইসব শব্দে কেবল ই এবং তার কার চিহ্ন ( ি ) ব্যবহৃত হবে। যেমন : কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, পঞ্জি, ধূলি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র ইত্যাদি। খ. সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং এদের-কার চিহ্ন ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), শাড়ি, তরকারি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, সিঙ্গি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, ছড়ি, কুমির, নিচ, নিচু ইত্যাদি। এমনকি স্ত্রীবাচক, ভাষা ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে । অর্থাৎই ও এর কার-চিহ্ন ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন— হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি/বাঙ্গালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, নানি, দাদি, বিবি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, ইত্যাদি। ব্যতিক্রম : বহুল ব্যবহারের কারণে আরবি শব্দ ঈদ, ঈমান ঠিক থাকবে। গ. অনুরূপভাবে- আলি বা আবলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন : খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, হেঁয়ালি, রূপালি, সোনালি, দৃশ্যাবলি, গ্রন্থাবলি, সূত্রাবলি ইত্যাদি। ঘ. পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন : ছেলেটি, লোকটি, বইটি। *ঈ-কার (ী) ব্যবহৃত হবেঃ অনেক তৎসম শব্দেই শুধুমাত্র ঈ-কার (ী) শুদ্ধ। এসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে, তাই এইসব শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। কখন ঈ-কার ব্যবহৃত হবে তার কিছু নিয়ম নিচে বর্ণনা করছি। ক. তৎসম শব্দ যদি বিশেষণ হয় তাহলে বানানের অন্তে ঈ-কার হবে। যেমন- উপকারী, জয়ী, আগামী, আইনজীবী, কর্মচারী, যুদ্ধাপরাধী, প্রবাসী, বিদ্যোৎসাহী, বিধর্মী, তপস্বী, প্রতিবাদী, আত্মীয়, অর্ধাঙ্গিনী ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে যে ঈ-কারান্ত বিশেষণবাচক পদের শেষে তা ও ত্ব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষ্য-এ পরিণত হয়। তখন পদ পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে ঈ-কার ই-কার-এ রূপ নিবে। যেমন- উপকারী+তা = উপকারিতা সহযোগী+তা = সহযোগিতা প্রতিযোগী+তা = প্রতিযোগিতা কৃতী+ত্ব = কৃতিত্ব দায়ী+ত্ব = দায়িত্ব মন্ত্রী+ত্ব = মন্ত্রিত্ব খ. বাংলা ভাষায় যে কোনো ধরনের শব্দ অর্থাৎ তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের শেষে ঈয় প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষণ-এ রূপ নিলে তখনও ঈ-কার হবে। যেমন- নাটক+ঈয়= নাটকীয়, মানব+ঈয়= মানবীয়, ধর্ম+ঈয়= ধর্মীয়, রোবট+ঈয়= রোবটীয়, আচরণ+ঈয়= আচরণীয়, নিন্দন+ঈয়= নিন্দনীয়। গ. ব্যক্তির '-কারী'-তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন— সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি। ব্যক্তির '-কারী' নয়, এমন শব্দে ই-কার হবে। যেমন— সরকারি, দরকারি ইত্যাদি।
বাংলা লিপিতে "ি" এবং "ী" উচ্চারণের জন্য ২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রভাবিত বলে সংস্কৃত ভাষার মতনই বাংলা লিপিতে "ি" এবং "ী" উচ্চারণের জন্য উচ্চারণের তারতম্যের ভিত্তিতে হ্রস্ব (ই) এবং দীর্ঘ (ঈ) এই দুই রকম বর্ণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আধুনিক বাংলা উচ্চারণে হ্রস্ব আর দীর্ঘ উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই।