image আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসল জন্ম তারিখ কোনটি!?  তার প্রমাণ কি? 

 বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম

 ধন্যবাদ! 


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

নবীজীর জন্ম

এক:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের দিন ও মাস নির্দিষ্ট করা নিয়ে সিরাতপ্রণেতা ও ঐতিহাসিকগণ মতানৈক্য করেছেন। এ মতানৈক্যেরযৌক্তিক কারণও রয়েছে।যেহেতু কারো জানা ছিল না যে, এ নবজাতকভবিষ্যতেবড় কিছু হবে? অন্য নবজাতকের জন্মকে যেভাবে নেয়া হত তার জন্মকেও সেভাবে নেয়া হয়েছে। এ জন্য কারো পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবেনিশ্চিত করেননি।

ড. মুহাম্মদ তাইয়েব আন-নাজ্জার -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন:

“সম্ভবত এর রহস্য হলো- যখন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন তখন তার থেকে কেউ এমন বিপদ আশঙ্কা করেনি। এ জন্যই জন্মলগ্ন থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সময়েআলোচনায় আসেননি। চল্লিশ বছর বয়সে যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে রিসালাতের দাওয়াত পৌঁছানোর নির্দেশ প্রদান করেন তখন থেকে মানুষ এ নবী সংক্রান্ত তাদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকা ঘটনাগুলো স্মরণ করতে থাকে এবং একে অপরকে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি সব ইতিহাস জিজ্ঞেস করতে থাকে। এ বিষয়ে তাদেরকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছেবুঝবান হওয়ার পর থেকে নিজের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা- যে ঘটনাগুলো তিনি পার করেছেন অথবা তাঁর উপর দিয়ে পার হয়েছে। অনুরূপভাবে তার সাহাবীগণের বর্ণনা ও এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গদের বর্ণনা।এভাবে মুসলমানেরা তাদের নবীর ইতিহাস সংক্রান্ত শ্রুত সব ঘটনা সংগ্রহ করা আরম্ভ করেন, যেন কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য তা বর্ণনা করে যেতে পারেন”।[আল-কাওলুল মুবিন ফী সীরাতে সায়্যিদিল মুরসালীন,(পৃষ্ঠা নং-৭৮]

দুই:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম সম্পর্কিত যে তথ্যগুলোর ব্যাপারে সকলে একমত সেটা হচ্ছে- জন্মের সাল ও দিন।

জন্মেরসাল: তার জন্মের বছর ছিল “আমুল ফিল” তথা হস্তি বাহিনীর বছর। ইমাম ইবনুল কাইয়ূম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার অভ্যন্তরে হস্তি বাহিনীর বছর জন্ম গ্রহণ করেন।”[যাদুলমা‘আদ, পৃষ্ঠা-১/৭৬]

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সালেহি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “ইবনেইসহাক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: তার জন্ম ছিল হস্তি বাহিনীর বছর। ইবনে কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: অধিকাংশ আলেমের নিকট এ অভিমতটি প্রসিদ্ধ। ইমাম বুখারির উস্তাদ ইবরাহিম ইবনেমুনযির বলেছেন: এ ব্যাপারে কোন আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। খলিফা ইবনে খাইয়্যাত, ইবনুল জাযযার, ইবনে দিহইয়াহ, ইবনুল জাওযি ও ইবনুল কাইয়্যেম প্রমুখ আরেকটু বাড়িয়ে এ মতের উপর সকল সিরাতপ্রণেতারইজমা (মতৈক্য)উল্লেখ করেছেন।”[সুবুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরিল ইবাদ (১/৩৩৪-৩৩৫)]

ড. আকরাম জিয়া আল-উমরিবলেন:

“সত্য হলো: বিপরীত বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটির সনদ দুর্বল।যে বর্ণনাগুলোতে বলা হয়েছে যে, তাঁর জন্ম ছিল হস্তি বাহিনীর ১০ বছর অথবা ২৩ বছর অথবা ৪০ বছর পর। কিন্তু অধিকাংশ আলেম বলেছেন তাঁর জন্ম হয়েছে হস্তি বাহিনীর বছর। আধুনিক যুগে মুসলিম ও পাশ্চাত্যপন্থী গবেষকদের পরিচালিত গবেষণাও এ মতকে সমর্থন করে। তাদের মতে, হস্তি বাহিনীর বছর হচ্ছে- ৫৭০অথবা ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ।”[আস-সিরাতুন নববিয়াহ আস-সাহিহাহ (১/৯৭)]

জন্মদিন: সোমবার। তিনি সোমবারে জন্ম গ্রহণ করেন, সোমবারে নবুওয়ত পান এবং সোমবারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবু কাতাদা আনসারি (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

سئل صلى الله عليه وسلم عن صوم يوم الاثنين؟ قال : ذاك يوم ولدت فيه، ويوم بعثت - أوأنزل علي فيه). رواه مسلم : (1162)

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারেরোজা রাখার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন: এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছে অথবা এ দিনে আমার উপর (অহি) নাযিল হয়েছে।” [সহিহ মুসলিম (১১৬২)]

ইবনে কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “যারা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন রবিউল আউয়াল মাসের সতের তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছেন, তাদের কথা সুদূর পরাহত; বরং ভুল। জনৈক শিয়া মতাবলম্বী কর্তৃক লিখিত “ইলামুর রুওয়া বি আলামিল হুদা”নামক গ্রন্থ থেকে হাফেজ ইবনে দিহইয়াহ এমতটিউদ্ধৃত করেছেন।এরপর তিনি এ মতের দুর্বলতা প্রমাণ করেছেন। এ মতটি আসলেই দুর্বল। যেহেতু এটি হাদিসের বিপরীত”। [আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ (১/১৯৯)]

তিন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের ব্যাপারে মতবিরোধ হচ্ছে মাস ও তারিখনিয়ে। এ বিষয়ে আমরা আলেমদের বহু অভিমত জানতে পেরেছি, যেমন:

১. কেউ কেউ বলেছেন: ২ রা রবিউল আউয়াল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেন।

ইবনে কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “কেউ কেউ বলেছেন ২ রা রবিউল আউয়াল। ইবনে আব্দুল বারর “ইস্তেআব” গ্রন্থে এ অভিমত উল্লেখ করেন এবংওয়াকেদি এ বর্ণনাটি আবু মাশার নাজিহ ইবনে আব্দুর রহমান আল-মাদানি থেকেও উদ্ধৃত করেন”।[আস-সিরাতুন নববিয়াহ”(১/১৯৯)]

২. কেউ কেউ বলেন: ৮ ই রবিউল আউয়াল।

ইবনে কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “কেউ বলেছেন: ৮ ই রবিউল আউয়াল। হুমাইদি এ বর্ণনাটি ইবনে হাজম থেকে বর্ণনা করেন। আর মালেক, উকাইল ও ইউনুস ইবনে ইয়াযিদ প্রমুখ এটি বর্ণনা করেন জুহরি থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুতয়িম থেকে। ইবনে আব্দুল বারর বলেন, ঐতিহাসিকরা এ মতটিকেসঠিক বলেছেন। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারজেমি এ তারিখের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত। হাফেজ আবুল খেতাব ইবনে দিহইয়াহ ‘আত-তানবির ফি মাওলিদিল বাশিরিন নাজির’ গ্রন্থে এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন”।[আস-সিরাতুন নববিয়াহ(১/১৯৯)]

৩. কেউ কেউ বলেছেন: ১০ রবিউল আউয়াল।

ইবনেকাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “কেউ বলেন: ১০ রবিউল আউয়াল। এ মতটি ইবনে দিহইয়াহ তার গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবংইবনে আসাকের এ মতটি আবু জাফর আল-বাকের থেকে এবং মুজালিদ নামক রাবী শা‘বি থেকে বর্ণনা করেন”।[আস-সিরাতুন নববিয়াহ (১/১৯৯)]

৪. কেউ কেউ বলেছেন: ১২ রবিউল আউয়াল।

ইবনেকাছির (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন: “কেউ বলেন,১২ রবিউল আউয়াল।ইবনে ইসহাক এ মতটিউল্লেখ করেন। ইবনে আবু শায়বাহ তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এ মতটি আফ্‌ফান থেকে, তিনিসাঈদইবনে মিনা থেকে, তিনি জাবের ও ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। তারা উভয়ে বলেছেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তি বাহিনীর বছর, ১২ ই রবিউল আউয়াল, সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ দিনেই তাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়, এ দিনেই তার মিরাজ হয়েছিল, এ দিনেই তিনি হিজরত করেছেন এবং এ দিনেই তিনি মারা যান’। জমহুর আলেমদের নিকট এ মতটিই বেশী প্রসিদ্ধ”।[আস-সিরাতুন নববিয়াহ (১/১৯৯)]

কেউ কেউ বলেন: তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন রমযান মাসে, কারো কারো মতে, সফর মাসে; ইত্যাদি আরও অভিমতরয়েছে।

আমাদের নিকট যে মতটি অগ্রগণ্য মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের আট বা বারো তারিখের কোন একদিন জন্ম গ্রহণ করেন।কিছুকিছু মুসলিম গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ গবেষণা করে বের করেছেন যে, রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখসোমবার ছিল! তাহলে এটা আরেকটি মত হল। এ মতটিও শক্তিশালী, এ তারিখটি ৫৭১খৃষ্টাব্দের নিসান (এপ্রিল) মাসের বিশ তারিখ পড়ে। সমকালীন সিরাতপ্রণেতাদের কেউ কেউ এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যেউস্তাদ মুহাম্মদ আল-খুদারি ও শফিউর রহমান মোবারকপুরি অন্যতম।

আবু কাসেম আস-সুহাইলি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “গণিতবিদগণ বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম সৌরমাস “নিসান”এর বিশ তারিখে ছিল”। [আর-রওদুল উন্‌ফ (১/২৮২)]

উস্তাদ মুহাম্মদ আল-খুদারী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “মিসরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মরহুম মাহমুদ পাশা(মৃত্যু : ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দ)-যিনি একাধারেজ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূগোল, গণিতবিদ্যা, বই লেখা ও গবেষণায় পারদর্শী ছিলেন-বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ছিল সোমবার সকাল বেলা, রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখমোতাবেক এপ্রিল/নিসান-এর ২০ তারিখ, ৫৭১খ্রিষ্টাব্দ। এ বছরটি হস্তি বাহিনীর ঘটনার প্রথম বছর। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন বনু হাশেম পল্লীতে আবু তালেবের ঘরে”।[নূরুল ইয়াকিন ফি সিরাতে সাইয়্যেদিল মুরসালিন, পৃষ্ঠা-৯;আরও দেখুন: আর-রাহিকুল মাখতুম (পৃষ্ঠা নং: ৪১)]

চার:

মৃত্যুদিন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, তিনি সোমবার দিন মারা গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুধবার মারা গেছেন মর্মে ইবনে কুতাইবার বর্ণনা সঠিক নয়। তবে এর দ্বারা যদি তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাফন করা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে ঠিক আছে।

মৃত্যু সাল: এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, তিনি ১১ হিজরিতে মারা যান।

মৃত্যু মাস: এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেন।

কিন্তু এ মাসের নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে আলেমগণের মতপার্থক্য রয়েছে:

১. অধিকাংশ আলেম বলেছেন: রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ।

২.খাওয়ারেযমি বলেছেন : রবিউল আউয়ালের প্রথম তারিখ।

৩. ইব্‌নুল কালবি ও আবু মিখনাফ বলেছেন : রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ। সুহাইলি ও হাফেজ ইবনে হাজার এ মতের দিকেই ঝুঁকেছেন।

তবে অধিকাংশ আলেমেরপ্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগারো হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন। দেখুন:সুহাইলিপ্রণীত “আর-রওদুল উন্‌ফ (৪/৪৩৯-৪৪০), ইবনে কাছিরের “আস-সিরাহ আন-নববিয়াহ” (৪/৫০৯), ইবনে হাজারের “ফাতহুল বারি” (৮/১৩০)।

আল্লাহই ভাল জানেন।

তথ্যসূত্র : এখানে দেখুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের মাস হিসাবে রবিউল আউয়াল মাস মুসলিম মানসে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।

সহীহ হাদীস থেকে সুস্পষ্টরূপে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন।

হাদীসে নাবাবী থেকে তাঁর জন্মমাস ও জন্মতারিখ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না। পরবর্তী যুগের আলিম ও ঐতিহাসিকগণ তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন।

এ বিষয়ে ১২টিরও বেশি মত রয়েছে। ইবন হিশাম, ইবন সাদ, ইবন কাসীর, কাসতালানী ও অন্যান্য ঐতিহাসিক এ বিষয়ে নিম্নলিখিত মতামত উল্লেখ করেছেনঃ

(১). কারো মতে তাঁর জন্মতারিখ অজ্ঞাত, তা জানা যায় নি এবং জানা সম্ভব নয়। তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এটুকুই শুধু জানা যায়, জন্ম মাস বা তারিখ জানা যায় না।

(২). কারো কারো মতে তিনি মুহাররাম মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

(৩). অন্য মতে তিনি সফর মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

(৪). কারো মতে তিনি রবিউল আউআল মাসের ২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহাদ্দিস আবু মাশার নাজীহ বিন আব্দুর রাহমান আস-সিনদী ''১৭০হি'' এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

(৫). অন্য মতে তাঁর জন্মতারিখ রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ। আল্লামা কাসতালানী ও যারকানীর বর্ণনায় এ মতটিই অধিকাংশ মুহাদ্দিস গ্রহণ করেছেন। এ মতটি দুইই জন সাহাবী ইবনু আব্বাস ও জুবাইর বিন মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও সীরাত বিশেষজ্ঞ এ মতটি গ্রহণ করেছেন বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

(৬). অন্য মতে তাঁর জন্মতারিখ ১০ রবিউল আউয়াল। এ মতটি ইমাম হুসাইনের পৌত্র মুহাম্মাদ ইবন আলী আল বাকির ''১১৪ হি'' থেকে বর্ণিত। ইবন সাদ তার বিখ্যাত ‘‘আত-তাবাকাতুল কুবরা’’-য় শুধু দুইটি মত উল্লেখ করেছেন, ২ তারিখ ও ১০ তারিখ।

(৭). কারো মতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর জন্মতারিখ ১২ রবিউল আউয়াল। এ মতটি দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ''১৫১ হি'' গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাতির বছরে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। এখানে লক্ষণীয় যে, ইবন ইসহাক সীরাতুন্নবীর সকল তথ্য সাধারণত সনদসহ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এ তথ্যটির জন্য কোনো সনদ উল্লেখ করেন নি। কোথা থেকে তিনি এ তথ্যটি গ্রহণ করেছেন তাও জানান নি বা সনদসহ প্রথম শতাব্দীর কোনো সাহাবী বা তাবিয়ী থেকে মতটি বর্ণনা করেন নি। এ জন্য অনেক গবেষক এ মতটিকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। তা সত্ত্বেও পরবর্তী যুগে এ মতটিই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইবন কাসীর উল্লেখ করেছেন যে ২ জন সাহাবী জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবন আববাস (রাঃ) থেকে এ মতটি বর্ণিত।

(৮). অন্য মতে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জন্ম তারিখ ১৭-ই রবিউল আউয়াল।

(৯). অন্য মতে তাঁর জন্ম তারিখ ২২-শে রবিউল আউয়াল।

(১০). অন্য মতে তিনি রবিউস সানী মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

(১১). অন্য মতে তিনি রজব মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। ।

(১২). অন্য মতে তিনি রমযান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আমরা সবাই জানি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার। এই দিন টিকে আমরা সবাই সিরাতুন্নবী (সাঃ) বলে জানি ও মানি, কিন্তু রাসূল (সাঃ) এর প্রকৃত জন্ম তারিখ নিয়ে প্রথম থেকেই ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। রাসূল (সাঃ) যখন জীবিত ছিলেন তখন তার সাহাবায়ে কেরামগন এবং তারপর তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ীগন তার জন্ম দিবস পালন করেননি এছাড়া মহাগ্রন্থ আল কুরআন কিংবা আল হাদীসে রাসূল (সাঃ) এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে সুস্ষ্ট কিছু বলা হয়নি। ফলে রাসূল (সাঃ) এর জন্মের ১৪০০ বছর পর বর্তমান সময়ে এসে তার প্রকৃত জন্ম তারিখ খুঁজে বের করা ছিল খুবই দুরহ কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, পন্ডিত, জ্যোতির্বিদ এবং জ্যোতিষীগন রাসূল (সাঃ) এর সঠিক জন্ম তারিখ ও বার খুঁজে বাহির করার জন্য ব্যাপক গবেষণা করেছেন। আত তাবারি, ইবনে খালদুন, ইবনে হিশাম প্রমূখ ঐতিহাসিকগন রাসূল (সাঃ) এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে ১২ ই রবিউল আউয়াল নির্দেশ করেছেন। আমরা তাদের মতাদর্শ অনুসারে রাসূল (সাঃ) এর জন্ম দিবস ১২ রবিউল আউয়াল এই দিনটি পালন করে থাকি। কিন্তু ঐতিহাসিক আবুল ফিদা উল্লেখ করেন রাসূলে করিম (সাঃ) জন্ম গ্রহন করেন রবিউল আউয়াল মাসের ১০ তারিখ। তবে সমস্ত ঐতিহাসিকগন এই বিষয়ে ঐক্যমত্য পোষন করেছেন যে, রাসূল (সাঃ) এর জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। আধুনিক মুসলমান ঐতিহাসিক ও জ্যোতির্বিদগন সুক্ষ্মভাবে হিসাব করে দেখেছেন যে, ৫৭০/৫৭১ খ্রিষ্টব্দে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ বা ১০ তারিখ সোমবার হতে পারে না। এটি ৯ অথবা অন্য কোন তারিখ হবে। মিসরের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ পন্ডিত মাহমুদ পাশা ফারুখী গাণিতিক যুক্তিতর্কের সাথে প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রকৃত জন্ম তারিখ ছিল রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ সোমবার ইংরেজি ২০ এপ্রিল। সেই হিসেবে তিনি এই তারিখটি তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। পন্ডিত মাহমুদ পাশা ফারুখীর গবেষণা অনুসারে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ পণ্ডিতগন এই মত গ্রহণ করেছেন যে, মোহাম্মদ (সাঃ) ১২ রবিউল আউয়াল নয় বরং তিনি ০৯ রবিউল আউয়াল সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন। তবে সকল পন্ডিতগন এই বিষয়ে ঐকমত যে, মোহাম্মদ (সাঃ) ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ১১ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার ইন্তেকাল করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ