প্রশ্নঃ ১।  আমরা জানি যে, আগেরকার দিনের প্রায় অধিকাংশ নবীদের একাধিক স্ত্রী  ছিলো। নবীদের জন্য এই বহুবিবাহের ব্যাপারটা কতটা শোভনীয়? তারা কেন একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতেন? এতে কি নারীদের অধিকার খর্ব হতো না?  প্রশ্নঃ ২। কেউ যদি এমন ধারণা পোষণ করে যে, নবীদের বহু বিবাহ প্রথাটা তার কাছে অপছন্দনীয়। এমনকি সে এটা (বহুবিবাহের অপছন্দের কথা)  বলতে চায়, যদিও সে জানে বললে গোনাহ হতে পারে,  তথাপিও বলতে কুন্ঠাবোধ করবে না। এতে কি তার বড় কোনো গোনাহ হবে?  সে যদি এটা না বুঝে বলে থাকে, তারপরেও সে কি  গোনাহগার হবে? ( কোনো আক্রমনাত্নক উত্তর আশা করছি না, সংক্ষিপ্ত কোনো উত্তর আশা করছি না, ব্যাখ্যা/দলিল/যুক্তি/তথ্য এই গুলার মাধ্যমে সুন্দর উত্তর আশা করছি)
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

নিচের লেখাটি পড়লে আপনার সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন আশা করি।

রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) এর বহুবিবাহঃ বিভ্রান্তির অবসান
ইসলামের প্রথম প্রভাত হতেই ঘোরতর ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্মবেত্তা ও তাদের দালাল, কুলাঙ্গাররা চরম শত্রুতাবশতঃ ইসলাম ও ইসলামের নবীর ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়।হীনস্বার্থ চরিতার্থের অন্ধ উন্মাদনায় মত্ত হয়ে মুসলিম ও মুসলমানদের নবীর ওপর প্রবল আক্রমণ চালিয়ে আসছে। তারা রাসূলাল্লাহ (সাঃ) এর অবমাননা ও তাঁর রেসালাতের প্রতি আক্রমণ চালিয়ে আসছে। যেন ধর্মপ্রান মানুষ তাঁর রেসালাতের ওপর ঈমার আনা থেকে বিরত থাকে এবং মুসলমানগণ তাদের ধর্মের ব্যাপারে সন্দেহে নিপতিত হয়। সে সকল কুলাঙ্গারদের কালো থাবা থেকে রক্ষা পাইনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মহৎ উদ্দেশিত বহুবিবাহ বিধানটি ও।
এ ব্যাপারে ইসলাম বিদ্বষী অনেকেই উচ্চস্বারে বহু কথাই বলেছে। তারা এ বিষয়ে সন্দেহের ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে।তারা চেয়েছে এর দ্বারা মহান রেসালাতের অধিকারী হযরত মুহাম্মাদ(সঃ) এর মান-সম্মান ও ইজ্জত-আব্রু লুন্ঠন করতে। তারা বলে থাকে- অবশ্যই মুহাম্মাদ (সাঃ) ভোগী প্রকৃতির লোক ;যিনি ছিলেন ভোগ, উত্তেজনা ও আনন্দ ফূর্তির ব্যাপারে তৎপর এবং আবেগের দ্বারা পরিচালিত হতেন। তিনি তার অনুসারীদের ওপর এক থেকে চারজন পরযন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। অথচ তিনি নিজেই একজন থেকে চারজন স্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। মনের বাসনা অনুযায়ী তিনি বহু সংখ্যক বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো এগার বা ততোধিক।-(নাঊযুবিল্লাহ)
প্রিয় নবী (সঃ)এর ওপর এর চেয়ে বড় আঘাত ও অপবাদ আর কি হতে পারে? সততা, পবিত্রতা, নিষ্ঠা, সংযম ও সাধনা ছিলো যার জীবনের একমাত্র ভুষণ। ছলনা মিথ্যা আর কপটতাকে করেছেন যিনি সারা জীবন ঘৃণা। তিনি যে এত খারাপ চরিত্রের হবেন, এটা নিছক মিথ্যা ও প্রতিহিংসার বেসাতি বৈ কিছুই হতে পারেনা!!!
যদি হুযূর (সঃ) এর উদ্দেশ্য ভোগ-বাসনা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলা কিংবা শুধু নারী সঙ্গের আনন্দ লাভ করা হতো, তাহলে তিনি নিশ্চয় তার পূর্ণ যৌবনেই একাধিক বিয়ে করতেন এবং বিগত যৌবনা ও পৌঢ়া বিধবা তালাক প্রাপ্তা নারীদেরকে বিয়ে না করে সুন্দরী যুবতী ও কুমারীদের বিয়ে করতেন।
পঁচিশ বছরের টগবগে যৌবনকালে চল্লিশ বছরের বৃদ্ধা মহিলা হযরত খাদিজা (রাজিঃ) কে বিয়ে করতেন না, এবং ভরা যৌবনের শেষাব্ধি তার সাথেই অতিবাহিত করতেন না। অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে এটাই যে, তিনি পঁশিচ বয়সে চল্লিশ বছরের বৃদ্ধা হযরত খাদিজা (রাজিঃ) কে বিয়ে করে তার সাথে যৌবনের মূল সময় তথা পঞ্চাশতম বছর পরযন্ত অতিবাহিত করেন। এরপর একান্নতম বছর থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম মুহুর্ত পরযন্ত তথা তেষট্টিতম বছর পরযন্ত সময়ে (মোট তের বছর) বাকি স্ত্রীদেরকে বিয়ে করেন্। তারা আবার একজন তথা্ হযরত আয়েশা(রাযিঃ) ছাড়া সকলেই ছিলেন বিধবা। অনেকে আবার ছিলেন বৃদ্ধা। অথচ তিনি হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) কে সুগন্ধিযুক্ত ও সজীব চেহারার মেয়ে দেখে বিয়ে করেছেন কিনা প্রশ্নের উত্তরে বিধবা বিয়ের কথা শুনে কুমারী বিয়ে করা উচিৎ বলে মনোভাব প্রকাশ করে বলেন কুমারী বিয়ে বরলে না কেন? তাতে তোমরা দু’জনে মিলে আনন্দ করতে পারতে!-(বোখারী শরীফ-কিতাবুন নিকাহ-২-৭৬০)
এ হাদীসে হুযুর (সাঃ) হযরত যাবের (রাযিঃ) কে কুমারী বিয়ে করার দিকে ইশারা করেছেন। কুমারী বিয়ে করা কামনা পুরণের বড় উপায় জানা সত্ত্বেও তিনি বিধবা বিয়ে করতেন কি? যদি তিনি নারী লোভী হতেন!!!
নবী কারীম (সাঃ) একাধিক বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন পবিত্র জীবনের পঞ্চাশটি বসন্ত কেটে যাওয়ার পর। তাহলে কি তিনি যৌবনের মূল সময় তথা পঞ্চাশতম বছর পর্যন্ত ছিলেন চরিত্রবান, আর জীবনের শেষ বয়সে এসে হয়ে গেলেন চরিত্রহীন? এটা কি কোন বিবেক প্রসূত কথা? অথচ তিনি চাইলে সে সময় মক্কার শ্রেষ্ট সুন্দরী আর ধনী কুমারীদের বিয়ে করতে পারতেন। অনেকেই তাকে এমন উপটৌকনও দিতে চেয়েছে। যেমন-মক্কী জীবণে কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বহু বারই বলে ছিলো যে, ‘আপনি চাইলে আরবের সব চেয়ে সুন্দরী নারীদেরকে আপনার সামনে নিয়ে এসে হাজির করি’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন,- আমার এক হাতে সূর্য আর অপর হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে একটুও পিছপা হবো না (ইনশাআল্লাহ)। সুন্দর নারীদের প্রতি যদি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর লোভই থাকত (নাউযু বিল্লাহ), তাহলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ঐ সময় মক্কার কাফিরদের কথা মেনে নিয়ে সুন্দরী নারীদের হস্তগত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে দিকে চোখ তুলেই তাকাননি; বরং নিজ দায়িত্বেই ছিলেন অটল্। এথেকে কি প্রমানিত হয় না যে, তিনি নারী লোভী ছিলেন না?
নিন্দুকরা যদি তাদের শত্রুতা ছেড়ে নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহন করে এবং নিরপেক্ষভাবে বিচার- বিবেচনা করে, তাহলে তারা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর একাধিক বিয়ের তাৎপর্য ও মাহাত্ম স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে। তারা খুঁজে পাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর এ বিয়ের মধ্যে মহান মরযাদাশীল মানুষদের জন্যে একটি উৎকৃষ্ট উদাহারণ। সাথে সাথে এটাও পাবে যে, বহু বিবাহে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত নূন্যতম স্বার্থও ছিলো না; বরং তাতে কেবলই দ্বীনের স্বার্থ সংরক্ষন নিহিত ছিলো।
অত্যন্ত দঃখ ও বেদনা নিয়ে বলতে হয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পশ্চিমাপন্থী ও সাম্রাজ্যবাদী মহলের দোসর আমার সোনার বাংলার বুকে সুপরিকল্পিত ভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)কে নিয়ে ব্যঙ্গ,কটূত্তি, ও উপহাস করে বক্তব্য প্রদান ও নাটক সম্প্রাচার করছে।
গত 27 মার্চ 2012 খ্রীঃ মঙ্গলবার সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ‘স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত নাট্যনুষ্ঠানে স্থানীয় নাট্যকার মীর শাহিনুর রহমান ও বিদ্যালয়ের সহকারী হিন্দু শিক্ষিকা মিতা রাণী কর্তৃক উপস্থাপিত “হুযূর কেবলা” নাটকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নারী লোভী বলে আখ্যায়িত করে(নাউযুবিল্লাহ)। কারণ হিসাবে বলে , ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মাদ (সঃ) ১১ জন নারী বিয়ে করলেন কেন? অথচ বহুবিবাহ কেবল রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর আদর্শ নয়; বরং সকল জাতিতেই এই প্রথা চালু ছিলো। গ্রীক, চৈনিক, ভারতীয়, ককেশীয়, আশেরীয়, মিশরীয়, প্রভৃতি সব জাতিতেই এই প্রথা চালু ছিলো শুধু তাই নয়; বরং তারা এর কোন সীমা সংখ্যাও মেনে চলতো না। চীনের ‘লেসকী’ আইনে তো একশ ৩০ জন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি ছিলো। চীনের জৈনিক শাসকের স্ত্রীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার ছিলো বলেও শোনা যায়।
পশ্চিম বাংলার একজন জনপ্রিয় উপন্যাসিক সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে ব্রিটিশ ভারতের সময়কাল ১৯০০ সালের দিকে ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মানিক্যের স্ত্রী ব্যতীত যে আরো অনেক রক্ষীতা ছিলো, এ তথ্য খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই রক্ষীতাদের ঘরে বীর চন্দ্র মানিক্যের অনেক সন্তান ও ছিলো, যাদেরকে বলা হতো- মহারাজার পৌরষত্যের প্রতীক।আর রক্ষীতাদেরকে ভদ্র ভাষায় উপ-পত্নী বলা হতো। তাদের যখন ৪০ বছর বয়স পেরিয়ে যেত, তখন রাজা মানিক্য লাথি তাদেরকে রাজ প্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দিত। তাদের ছিলো না কোন সামাজিক স্বীকৃতি, আর ছিলনা কোন নিরাপত্তা।এমনকি তাদের সন্তানরাও পিতৃ পরিচয় ছাড়াই বড় হতো। 1990 সালের দিকে যদি সমাজ পতিরা বিয়ে বহির্ভুত উপায়ে কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই নারীদেরকে এভাবে ভোগ করে। তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন, 1700-1800 সালের দিকে ঐসব দেশে মেয়েদের অবস্থা কি ছিলো? এছাড়াও আদিকাল হতে আল্লাহর সেরা নবী-রাসুলগণও একাধিক বিবাহের আদর্শ পালন করে আসছেন। এ ব্যাপারে খ্রীস্টজগতের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলেও যথেষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। যেমন-হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তিনজন স্ত্রী ছিলো।–আদি পুস্তক-(১৬=৪-১২) হযরত ইয়াকূব (আঃ) বা ইসরাঈল (আঃ)এর চারজন স্ত্রী ছিলো্। হযরত মূসা(আঃ) এর চারজন স্ত্রী ছিলো।তাওরাতে হযরত মূসা (আঃ) কে সংখ্যা নির্ধারণ না করে যত ইচ্ছা বিবাহ করার অনুমতি দিয়ে ছিলেন।–(দ্বিতীয় বিবরণ-২১=১০-১৩)। হযরত দাঊদ (আঃ) এর ১৯ জন স্ত্রী ছিলো। (বাইবেল-২ শামুয়েল-৩ অধ্যায় ২-৫)। তাওরাতে আরো বলা হয়েছে যে হযরত সুলাইমান (আঃ) এর ৭০০ জন স্ত্রী এবং ৩০০ দাস দাসী ছিলো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বহু বিবাহ শুধু আমাদের মহানবী (সঃ) করেছিলেন ছিলেন এমন নয়; বরং প্রত্যেক ধর্মপ্রান মানুষ যাদেরকে আল্লাহ প্রেরিত পয়গাম্বর বলে বিশ্বাস করে, এবং অন্তর দিয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, তারাও বহু বিবাহ করেছিলেন। তাহলে কেন তাদের কে বহুবিবাহের কারণে কামুক, লম্পট, কপট ও নারী লোভী বলা হয় না? অথচ মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর উপর তারা একারণে জঘন্য অপবাদ দিচ্ছে? এটা কি মিথ্যাচার নয়?!!!
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর বহুবিবাহের মাহাত্ম ও উদ্দেশ্য
পাপ বিদগ্ধ-তৃষিত এ বসুন্ধরায় রাহমাতুল্লিল আলামীনের আগমনে পাপাচারের সয়লাবে ডুবন্ত এ ধরণী ফিরে পেয়েছিল নতুন প্রান। বিদূরিত হয়েছিল তার হিদায়াতের নূরানী রোশনীতে অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা্র কালো আধার। হয়ে উঠেছিল সারা বিশ্ব খুশীতে মাতোয়ারা ও আনন্দে আত্মহারা। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাক মহান চরিত্র, সুন্দর ও সর্বশ্রেষ্ট আদর্শের ক্ষেত্রে সমগ্র মানবতার ইমাম ও অগ্রনায়ক। তার প্রত্যেক পদক্ষেপেই ছিলো আদর্শের রূপরেখা। তেমনি ছিলো তার বহু বিবাহের মাঝে অসংখ্য আদর্শ ও হিকমত। নিম্নে তার কয়েকটি মৌলিক আদর্শের নমুনা্ দেয়া হলো।–
১- শিক্ষা দানঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর একাধিক বিবাহের মূল উদ্দেশ্য ছিলো- ইসলামী আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ মেয়েদের জন্যে এমন কতগুলো শিক্ষিকা মহিলার ব্যবস্থা করা, যারা ইসলামী হুকুম আহকামের শিক্ষাদান করাবে। কেননা, পুরুষদের ওপর যে সমস্ত আহকাম পালনের নির্দেশ রয়েছে, মেয়েদের ওপরও ঐ সমস্ত আহকাম পালনের নির্দেশ রয়েছে।বিশেষ করে নারী সম্পর্কীয় ও দাম্পত্য জীবনের গোপনীয় ব্যাপারে। যেমন-হায়েয, নিফাস, ও পাক হওয়া, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কীয় মাসয়ালা। এ ধরনের আহকাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে অধিকাংশ মেয়ে লজ্জাবোধ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর নিকট উপরোক্ত মাসয়ালা সমুহ থেকে কোন একটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের লজ্জা হতো। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর স্ত্রীদের পক্ষেই এইসবের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিলো। আবার অনেক সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করতে লজ্জাবোধ করতেন। তাই ইশারার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু অনেক মহিলা তা বুঝতে সক্ষম হতেন না। ফলে তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্যে শিক্ষিকার প্রয়োজন ছিলো। যা রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর বিবিগণের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে। যেমন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন আল্লাহ তায়লা আনসার মেয়েদের রহম করুন। যাদের লজ্জাবোধ দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে বাঁধা দেয়নি। তারা রাতের আঁধারে হযরত আয়েশা(রাযিঃ) এর কাছে দ্বীনের আহকাম জানার জন্যে আসতেন। হায়েয, নিফাস, ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক সমাধান শিক্ষা নিতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর প্রত্যেক স্ত্রীই ছিলেন তাদের জন্যে উত্তম শিক্ষিকা ও পথ প্রদর্শিকা। তাদের বদৌলতে মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছ্। অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ(সঃ) এর এমন আরো অনেক কাজ আছে, যেগুলো তার বিবিদের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি। অন্যথায় তা অর্জনে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হতো।
২: সাম্য নীতি প্রতিষ্টাঃ= ইসলাম মানবতার ধর্ম, গণমানুষের ধর্ম। একজন অপরজনকে বুকে টেনে নেয়ার ধর্ম। ইসলামে আমির-প্রজা, দাস-প্রভু, পত্নী-দাসী সবাই সমান।মানুষ মাত্রই মানুষের নিকট সম্মানের অধিকারী। সমান মর্যাদার হকদার। ইহুদী, খ্রীস্টান, চামার, চণ্ডাল, কুমার, তাঁতি, জেলে, কৃষক প্রভৃতি সকলেই ইসলামের চোখে সমান মর্যাদার। তবে যে যত বড় আল্লাহ ভীরু এবং যার মধ্যে যত বেশি গুণ আছে সে তত বড় মর্যাদার অধিকারী। এ নীতি কাজে পরিণত করাও বহুবিবাহের অন্যতম কারণ। হযরত সাফিয়া ও জুয়াইরিয়া (রাযিঃ)দাসী রূপে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে এসেছিলেন। বিশেষতঃ হযরত জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) বেদুঈন দস্যু দলপতির মেয়ে ছিলেন। আর হযরত সাফিয়া (রাযিঃ) ছিলেন ইহুদীর মেয়ে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বিয়ে করে হযরত আয়িশা(রাযিঃ), হাফসা(রাযিঃ), মায়মূনা(রাযিঃ), প্রমূখ অভিজাত শ্রেণীর পত্নীদের সমান মর্যাদা দান করেছেন। তারা সকলেই আজ উম্মুল মুমিনীন মর্যাদায় অভিষিক্ত।
৩: ধর্মীয় বিধান জারিঃ= রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বহুবিবাহের অন্যতম হিকমত হলো-ধর্মীয় বিধান জারি ও জাহেলী যুগের ঘৃণ্য অভ্যাসকে বাতিল করা। উদাহারণ স্বরুপ বলা যেতে পারে- ‘পালক আত্মীয়তার প্রথা’। ইসলাম আসার পুর্বে আরববাসীরা অন্যের ছেলেকে পালক নিতো। তারা নিজেদের ঔরসজাত সন্তান নয় এমন কাউকে পালন করত, এবং নিজেদের উত্তরাধিকারী ছেলের মত গন্য করত।নিজের ছেলের ওপর আরোপিত সকল বিধান তার জন্য ও প্রযোজ্য মনে করত। যেমন-উত্তরাধিকারী, তালাক, বিয়ে, মুহাররামাতে মুছাহারা-(ভাই-বোন, মা-ছেলে ইত্যাদির মাঝে যে হুরমত), এবং মুহাররামাতে নিকাহ-(পুত্র বধু-শশুর ইত্যাদির মাঝে যে হুরমত) ইত্যাদির ক্ষেত্রে। এটা তাদের বর্বরতার যুগের অনুসৃত দ্বীন হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। অপরদিকে ইসলাম আসেনি তাদেরকে বতিলের ওপর অটল রাখার জন্যে। আসেনি তাদেরকে অজ্ঞতার অন্ধকারে পাগলামী করার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়ার জন্যেও। তাই আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে যায়েদ বিন হারিস (রাযিঃ) কে লালন-পালন করান। এবং তার পালক পুত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করান। এমনকি তাকে অনেকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলতো। এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফুফাত বোন হযরত জয়নাব (রাযিঃ) সাথে বিবাহ আবদ্ধ করেন। তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় হযরত যায়েদ (রাযিঃ) জয়নাব (রাযিঃ) কে তালাক দিলে, আসমানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। এর মাধ্যমে জাহেলী যুগের ঐ প্রথাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করেন, এবং ঘোষণা করেন পালক পুত্র আপন পুত্রের মত নয়। পালক পুত্রের তালাক দেওয়া স্ত্রীর সাথে পালক শ্বশুরের বিয়ে বৈধ।.......(চলবে- ইনশা আল্লাহ)
৪. নারীত্বের মর্যাদা দানঃ ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদেরকে তদানীন্তন আরববাসী পশুতুল্য মনে করত। তাদের না ছিলো কোন মান-মর্যাদা, আর না ছিলো সুন্দর জীবন যাপন করার অধিকার। বিশেষ করে বিধবাদের দুর্গতি ছিলো সবচেয়ে বেশি।মানুষের মত বেঁচে থাকার অধিকার ছিলো না তাদের। এজন্যেই মানবতার নবী, গণমানুষের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিধবা নারীদেরকে বিবাহ করে কুমারীদের সমান মর্যদা দান করতঃ বিশ্ব জগতের সম্মুখে একটা উন্নত আদর্শ তুলে ধরেছেন; যা মানবেতিহাসে নজিরবিহীন। হযরত সাওদা (রাযিঃ), হযরত উম্মুল মাসাকিন জয়নাব (রাযিঃ), ও হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ), কে তিনি এই কারণেই বিয়ে করেছিলেন।
৫. সমতা বিধানঃ একাধিক স্ত্রীদের কিভাবে রাখতে হবে এবং তাদের সাথে কিরূপ আচার-আচরণ করতে হবে, এই আদর্শ স্থাপন করাও ছিলো রাসুল (সাঃ) এর বহুবিবাহের এবটি মহান উদ্দেশ্য।
৬. সামাজিক হিকমতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বংশগত সম্পর্ক স্থাপন এবং তা অটুট রাখার উদ্দেশ্যে বহুবিবাহ করেছেন। যেন একারণে তারা ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েন। যেমন- সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সব চেয়ে প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর আদরের কন্যা আয়িশা (রাযিঃ), ও আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ফারুক (রাযিঃ) এর কন্যা হযরত হাফসা (রাযিঃ) কে বিবাহ করেন। যার ফলে তাদের অন্তর রাসূল (সাঃ) এর দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তারা আল্লাহর মহত্ব ও সম্মানের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর দাওয়াতের দিকে আকৃষ্ট হন।...
৭. রাজনৈতিক হিকমাতঃ মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোনো কোনো উম্মাহাতুল মুমিনীনকে বিয়ে করেছেন তার গোত্রের সাথে সম্পর্ক ও আত্মীয়তা করার লক্ষ্যে। কারণ, এটা অবিদিত নয় যে, নিশ্চয় মানুষ যখন কোন এক গোত্রে কিংবা কোন এক সম্প্রদায় হতে বিয়ে করে, তখন তাদের উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আর এরই মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সেই ব্যক্তি নতুন সম্পর্কিত গোত্রের লোকদের সাহায্য-সহযোগিতার আহবান করে।
উদাহারণ স্বরূপ কয়েকটি উপমা পেশ করা হলো।
*রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বনূ মুসতালাক গোত্রের নেতা হারেসের কন্যা জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) কে বিয়ে করাঃ
হযরত জুয়ইরিয়া (রাযিঃ)সম্প্রাদায় ও আত্মীয়-স্বজনসহ বন্দী হয়ে আসার পর স্বীয় সত্ত্বাকে মুক্ত করার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করলে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তার মুক্তিপণ পরিশোধ করে নিজের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। হযরত জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বিয়ে করে নেন। অতঃপর সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শ্বশুর সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে আত্মীয়তার দিকে লক্ষ্য করে সকল বন্দীদের মুক্ত করে দেন। তারাও সাহাবাদের এই মহত্ব, উদারতা, বুদ্ধিমত্তা, ও চক্ষুলজ্জা দেখে সবাই ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন এবং সবাই আল্লাহর দ্বীনের পতাকা তলে সমবেত হন ও মুসলিম হিসাবে আত্মপরিচয় লাভ করেন। জুয়াইরিযা (রাযিঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ বিয়েই তার নিজের এবং তার সম্প্রদায় ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্যে সৌভাগ্য স্বরূপ এবং ইসলাম গ্রহণ ও মুক্তি লাভের কারণ হয়।
*রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিয়ে করেন সুফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখতাবঃ
যিনি খায়বারের যুদ্ধে স্বামীর মৃত্যুর পর বন্দী হয়ে এসেছিলেন। এবং কোন মুসলমানের ভাগে পড়ে ছিলেন। তখন বুদ্ধিমান ও সমঝদার সাহাবাগণ বলেন, তিনি হলেন কুরায়যা গোত্রের নেত্রী, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভাগে পড়া ছাড়া অন্য কারো ভাগে পড়া উচিৎ হবেনা। অতঃপর রাসূলূল্লাহ (সাঃ) কে এ বিষয়টি জানানো হলে, তিনি সুফিয়া (রাযিঃ) কে দুটি বিষয়ে এখতিয়ার প্রদান করেন-
(ক) তাকে মুক্ত করে নিজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নিবেন।
(খ) দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবেন, অতঃপর সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাবেন।
সুফিয়া (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তম ব্যবহার, মহত্ব, ও মর‌যাদা দেখে আযাদ হয়ে রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বিয়ে করে নেন। যার ফলে তার গোত্রের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। একইভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মে হাবীবা (আবু সুফিয়ানের কন্যা রমলা) কে বিয়ে করেন।
যে আবু সুফিয়ান, সে সময় ইসলামের ঘোর শত্রু ছিলেন এবং শিরকের পতাকাবাহী ছিলেন। তিনি যখন আপন মেয়ে রমলার সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বিয়ের সংবাদ শুনেন, তখন তা স্বীকৃতি দেন। সাথে সাথে তিনি ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহন করে, নামের সাথে যোগ করেন রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং হয়ে যান ইসলামের এক বিপ্লবী সিপাহসালার।
সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে, এই বিয়ে ছিলো তার ও মুসলমানদের কষ্টকে লাঘব করার জন্যে এবং তাই ঘটেছে। এর চেয়ে উত্তম রাজনীতি আর কি হতে পারে? তার চেয়ে ভাল কোন হিকমত আর কি আছে?
এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বহুবিবাহের আরো অনেক হিকমত ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যার বর্ণনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়।
উম্মাহাতুল মুমিনীনদের নামসমূহ
১.খদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ(রাযিঃ), ২.সাওদা বিনতে জাম’আ (রাযিঃ) ৩.আয়িশা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ), ৪.হাফসা বিনতে উমর (রাযিঃ), ৫.জয়নব বিনতে খুযায়মা (রাযিঃ), ৬.উম্মে সালমা বিনতে আবি উমাইয়্যা (রাযিঃ), ৭.জয়নাব বিনতে জাহশ (রাযিঃ), ৮.জুয়াইরিয়া বিনতে হারেছ (রাযিঃ), ৯.উম্মে হাবীবা (রমলাহ) বিনতে আবু সুফিয়ান (রাযিঃ), ১০.সাফিয়া বিনতে হুওয়াই (রাযিঃ), ১১.মায়মুনা বিনতে হারিছ (রাযিঃ), ১২.মারিয়া আল-কিবতিয়া (রাযিঃ),
তথ্য সহায়কগ্রন্থ

১.সীরাতে মোস্তাফা (সাঃ), ২.ইসলাম ও পাশ্চাত্য সামাজে নারী, ৩.মালফূজাতে আহমদ শফী (দাঃবাঃ), ৪.মাদারিজুন নবুওয়াত, ৫.রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একাধিক স্ত্রী সম্পর্কে সন্দেহ ও ভ্রান্তি মতবাদ ৬.উইকিপিডিয়া বাংলা।


আর সে যদি এ ধরনের কথা বলে তাহলে কবীরা গুনাহ তো হবেই। কটাক্ষ করে ধৃষ্টতার সাথে বললে ঈমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি এরূপ কথা সে অজ্ঞতাবশত বলে তাহলে কবীরা গুনাহ হবে। তবে এ ধরনের গুনাহ যাতে আগামীতে না হয়, এজন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে কায়মনোবাক্যে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এবং পুনরায় কালিমা পড়ে ঈমান নবায়ন করতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ