শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

জিনসেং ঃ মুলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুনসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত- আমেরিকান ও এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে বলা হয় প্যানাক্স জিনসেং। প্যানাক্স শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ “panacea” থেকে যার অর্থ হলো বা সর্ব রোগের ঔষধ। জিনসেং সাদা (খোসা ছাড়ানো) ও লাল (খোসা সমেত) এই দুই রকম রূপে পাওয়া যায়। খোসা সমেত অবস্থায় এটি অধিক কার্যকরী। এদের মধ্যে থাকা জিনসেনোনোসাইড নামক একটি উপাদান এর কার্যক্ষমতার জন্য দায়ী। সাইবেরিয়ান জিনসেং নামে আরেক ধরণের গাছ আছে, যা জিনসেং বলে ভূল করা হলেও তা আসলে প্রকৃত জিনসেং না। জিনসেং ও লিংগোত্থানে অক্ষমতাঃ জিনসেং এর গুনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী যা প্রমানিত তা হলে, পুরুষের লিংগোত্থানে অক্ষমতা রোধে এর ভূমিকা। ৪৫ জন ইরেকটাইল ডিসফাংশন (লিংগোত্থানে অক্ষম ব্যাক্তি) এর রোগীর উপর একটি পরীক্ষা চালান। তাদের কে ৮ সপ্তাহের জন্য দিনে ৩বার করে ৯০০ মিগ্রা জিনসেং খেতে দেয়া হয়, এরপর দুই সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার ৮ সপ্তাহ খেতে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৮০% জানান যে, জিনসেং গ্রহনের সময় তাদের লিংগোত্থান সহজ হয়েছে। ২০০৭ সনে এ ৬০ জন ব্যাক্তির উপর করা এবং এ ৯০ জন ব্যাক্তির উপর করা অনুরুপ আরো দুটি গবেষনা প্রকাশিত হয়। ২০০২ সালের একটি গবেষনায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, জিনসেং কিভাবে লিংগোত্থানে সহায়তা করে। পুরুষের যৌনাংগে নামে বিষেশ ধরণের টিস্যু থাকে। নাইট্রিক অক্সাইডের উপস্থিতিতে এই টিস্যু রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে লিংগোত্থান ঘটায়। জিনসেং সরাসরি দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমান বাড়িয়ে লিংগোত্থানে সহায়তা করে। জিনসেং ও দ্রুত বীর্যস্খলন যদিও কাচা জিনসেং এর মূল এই রোগে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা যায়না তবে জিনসেং এর তৈরী একটি ক্রীম পুরুষদের দ্রুত বীর্যস্খলন রোধে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার হয়ে আসছে যা মিলনের একঘন্টা আগে লিঙ্গে লাগিয়ে রেখে মিলনের আগে ধুয়ে ফেলতে হয়। তে ২০০০ সনে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুযায়ী এটি বীর্যস্খলনের সময় কাল কার্যকরী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে বাড়ায়। আসলে, জিনসেং শব্দটাই এসছে চাইনিজ শব্দ “রেনসেং” থেকে। “রেন” অর্থ পুরুষ ও “সেন” অর্থ “পা”, যৌনতা বৃদ্ধিতে এর অনন্য অবদান এর জন্যই এর এইরকম নাম (অবশ্য এটি দেখতেও পা সহ মানুষের মত)। জিনসেং ও বলতে বুঝায় বিভিন্ন মানসিক ক্ষমতা যেমন মনযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারার ক্ষমতা,কল্পনাশক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচারবুদ্ধি, চিন্তা শক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষমতা। সোজা ভাষায় বলতে গেলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি। জিনসেং স্নায়ুতন্তের উপর সরাসরি কাজ করে মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ২০০৫ সনে তে প্রকাশিত গবেষনা অনুযায়ী ৩০ জন সুস্বাস্থ্যবান যুবার উপর গবেষনা করে দেখা গিয়েছে যে জিনসেং গ্রহন তাদের পরীক্ষার সময় পড়া মনে রাখার ব্যাপারে পজিটিভ ভূমিকা রেখেছিল। একই জার্নালে ২০০০ সালে করা একটি গবেষনা, যুক্তরাজ্যের কর্তৃক ৬৪ জন ব্যাক্তির উপর করা একটি গবেষনা এবং চীনের কর্তৃক ৩৫৮ ব্যাক্তির উপর করা একটি গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ ব্যাক্তির স্মরণশক্তি ও সার্বিক বৃদ্ধিতেও সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৫ সনে তে প্রকাশিত ইদুরের উপর করা গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং মস্তিষ্কের কোষ বিনষ্টকারী রোগ যা স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে (যেমন পারকিন্সন ডিজিজ, হান্টিংটন ডিজিজ ইত্যাদি) সেসব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। জিনসেং ও ডায়াবেটিসঃ ২০০৮ সনে ১৯ জন টাইপ ২ ডায়বেটিস এর রোগীর উপর করা গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং টাইপ ২ ডায়বেটিস ম্যানেজমেন্টে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। জিনসেং ও কোলেস্টেরলঃ এ ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুযায়ী, দিনে ৬ মিগ্রা হারে ৮ সপ্তাহ জিনসেং গ্রহণ খারাপ কোলেস্টেরল যেমন- এর মাত্রা কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরল বা এর মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। জিনসেং ও ফুসফুসের রোগঃ হচ্ছে ফুসফুসের অন্যতম কমন রোগ। এই রোগীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে কফ থাকে ও কারো কারো ফুসফুসের ক্ষয় ঘটে। এ ২০০২ সনে প্রকাশিত ৯২ জন রোগীর উপর করা গবেষনা অনুযায়ী ১০০মিগ্রা ডোজে ৩ মাস জিনসেং গ্রহণে সার্বিক ভাবে এর অবস্থার উন্নতি হয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। জিনসেং ও ত্বকঃ জিনসেং বিভিন্ন এন্টি-এজিং ক্রীম ও স্ট্রেচ মার্ক ক্রীম এ ব্যবহৃত হয়। এইসব ক্রীম ত্বকের কোলাজেন এর উপর কাজ করে ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করে ও গর্ভবতী নারীদের পেটের ত্বক স্ফীতির কারণে তৈরী ফাটা দাগ নিরসন করে। তবে এটির জন্য জিনসেং এর ভূমিকা কতটুকু ও ক্রীমে থাকা অন্যান্য উপাদানের ভূমিকা কতটুকু তা জানা যায়নি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ