শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

স্টিম বাথের কিছু উপকারিতা:

গলায় ব্যথা হলে ডাক্তার সাহেব বলেন উষ্ণ পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গারগিল করতে। আর কি আশ্চর্যের ব্যাপার ব্যথাটা সত্যি সত্যি দুই-এক দিনের ভেতর সেরেও যায়। এই গরম পানি আমাদের শুধু গলার ইনফেকশনই নয়, শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ (ডি-টক্সিফিকেশন), ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখা, ফাইব্রোমায়ালজিয়া ও সাধারণ বাতের উপশম ছাড়াও আর অনেক ক্ষেত্রে ভীষণ কার্যকরী।

বালনেওলজি-তে স্টীম বাথ বা বাষ্পস্নান (যার মাধ্যমে শরীরের থেকে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়) পদ্ধতিটি বিশেষ জায়গা করে নিচ্ছে। সাধারণ ছোটখাট রোগ প্রতিরোধ করতে এবং শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এর জুড়ি মেলাভার।

দশম শতাব্দীতে সোয়েট বাথ পূর্ব ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ১৮৫৬ সালে আইরিশ চিকিৎসকগণই প্রথম গরম বাতাসওয়ালা ঘরে সাওয়ারের মাধ্যমে ঠাণ্ডা ও গরম পানিতে সারা শরীরে ধুয়ে ফেলার প্রচলন করেন। তবে জাপানিরা এটাকে শুধু শরীর পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া হিসাবে না দেখে এটাকে বাত রোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ করে।

দেখা গেছে শরীর তার হারানো তাপকে ত্বক এবং ফুসফুসের মাধ্যমে ফিরে পেতে চেষ্টা করে। পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা যদি দেহের তাপমাত্রা থেকে বেশি থাকে তবে শরীর ঘাম নির্গমনের মাধ্যমে তার সমতা রক্ষা করে। কিউটেনাস সারকুলেশন বৃদ্ধি পেলে পরিবেশ থেকে শরীর খুব দ্রæত তাপ শোষণ করতে পারে। দেহের তাপমাত্র ৯৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইটে পৌঁছে দিতে পারে। বাষ্পস্নানের ফলে দেহের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি হরমোন ও শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। মেটাবলিক রেট ১২ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। সংবহনগত পালস রেট ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ধমনীর রক্তচাপ-এর ক্ষেত্রে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ১০ দশমিক ৪ মিলিমিটার মারকারি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ মিলিমিটার মারকারি পর্যন্ত হতে পারে তবে কেবল ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার সামান্য হ্রাস পায়। শিরার রক্তচাপ সুস্বাস্থ্যের অধিকারীদের বেলায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আর যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের বেলায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

বাষ্পস্নানের সময় শরীরে পানি শূন্যতার কোন লÿণ দেখা দেয় না। করণ সম্পৃক্ত আদ্র বাতাস ফুসফুসে টেনে নেয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্র পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা থাকে এবং ত্বকের মাধ্যমে শরীর প্রয়োজনীয় পানির চাহিদার যোগান পায়। প্রকারান্তরে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাসিয়াম বেরিয়ে যাওয়ায় শরীরের ওজন হ্রাসে সহায়ক হয়।

বাষ্পস্নানের মত একই রকমের কার্যকর আর একটি পদ্ধতি হল ইনফ্রারেড হিট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বাষ্পস্নানের মত শরীরকে গরম করে শরীরের নানান রোগ উপসর্গকে প্রতিরোধ বা উপশম করা সম্ভব। দেহের বাইরে যে বাতাস রয়েছে তাকে গরম না করে সরাসরি শরীরকে গরম করার এক প্রক্রিয়া হল বিকীর্ণ তাপ। এই বিকীর্ণ তাপকে ইনফ্রারেড এনার্জি বা আইআর বলা হয়। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালীকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়। এদের একটি ভাগ হল এই ইনফ্রারেড তরঙ্গ। বর্ণালীর এই ইনফ্রারেড তরঙ্গটি (লাল বর্ণের আলো) পরবর্তীতে হালকা মাত্রার শক্তি বলয়ে রূপান্তরিত হয়। খালি চোখে এ আলো দেখা যায় না। আমাদের টিস্যু স্বাভাবিকভাবে ইনফ্রারেড শক্তি উৎপাদন করে এবং আমাদের শরীর গরম রাখতে ও টিস্যুর ক্ষতিপূরণে সহায়তা করার জন্য জ্বালানি হিসাবে একে পোড়ান হয়।

জাপানের ফুজি মেডিক্যালের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এর সদস্য ডাঃ টাডাশি ইশিকাওয়া ইনফ্রারেড থার্মাল সিস্টেমের ওপর প্রথম প্যাটেন্ট লাভ করার ১৪ বছর পর ১৯৮১ সাল থকে যুক্তরাষ্ট্রে নবজাতককে গরম করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। গভীরভাবে তাপকে শরীরের ভেতর প্রবেশ করানের জন্য ইনফ্রারেড বাষ্পস্নান পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। গভীরভাবে তাপকে শরীরের ভেতর প্রবেশ করানের জন্য ইনফ্রারেড বাষ্পস্নান পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। মিডল ইনফ্রারেড ব্যান্ডের থেকে ২ থেকে ৫ দশমিক ৬ মাইক্রন এবং লং ব্যান্ড থেকে ৫ দশমিক ৬ থেকে ২৫ মাইক্রন তাপ বিকিরণ করে। দেখা গেছে এই রশ্মি শরীরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না।

স্টীম বাথ বা বাষ্পস্নানের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো, ত্বককে আরও প্রাণবন্ত ও সজিব করা, শরীরকে নমনীয় অবস্থায় আনা, শরীরের পেশীগুলোকে ও মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করা এবং সাবকিউটেনাসের চর্বিকে নরম করে কার্যকরভাবে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। এছাড়াও ইনফ্রারেড থেরাপির মাধ্যমে হুইপল্যাশ, সাইয়াটিকা, মেনোপজ, আর্থ্রাইটিস, কাঁধ শক্ত হওয়া, ঘুম না আসা, ব্রণ, পেটের সমস্যা, কানের রোগ প্রভৃতি সারানো সম্ভব। চিনের এক দল গবেষক জানাচ্ছেন, এই হিট থেরাপির মাধ্যমে কোমল টিস্যু, কাঁধের পেরিআর্থ্রাইটিস, সাইয়াটিকা, রজস্রাবকালীন বেদনা, নিউরোডারমাটাইটিস, সংক্রমণযুক্ত একজিমা, অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সংক্রমণ, ফেসিয়াল প্যারালাইসিস (বেলস পালসি), ডায়েরিয়া, কোলেসিসটাইটিস, নিউব্যাসথেনিয়া, পেলভিক সংক্রমণ, শিশুদের নিউমোটিয়া, দাদ, জ্বালাযুক্ত তুষার ক্ষত প্রভৃতির ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বেশি সাফল্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও ডাঃ ইয়ামাজাকির নেতৃত্বে জাপানের একদল গবেষক জানাচ্ছেন ইনফ্রারেড ট্রিটমেন্টের ফলে পোড়া ঘায়ের যন্ত্রণা উপশম করে এবং দ্রুত ক্ষত সারায়; নিয়মিত ব্যবহারে উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে; ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের আহত অবস্থায় নিরাময়ে সহায়তা করে; সাময়িক স্মৃতিভ্রমের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটায়; জিহ্বার ক্যান্সারের উন্নতি ঘটায়; ইলেক্ট্রোম্যানেটিক ফিল্ডের বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রভাব ফেলে; সেরিব্রাল হিমোরেজ লক্ষণীয়ভাবে সাবায়; খুব ভালভাবে বাত উপশম করে; গেটে বাতে আরাম দেয়; রিউমেটয়েড বাতে আরাম দেয়; মেনোপজাল লক্ষণসমূহ (অবসাদ, হতাশা, মানসিক চাপ, মাথা ঘোরা ভাব, মাথা ব্যথা ও পেট ব্যথা কমায়); ওজন হ্রাস ঘটায় (ঘাম উৎপন্ন করে, শক্তি ঘাম উৎপাদনে ব্যায় হয় এবং সরাসরি মেদ বের করতে সাহায্য করে); কোমল টিস্যুগুলো কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এছাড়াও পিঠের বেদনা, হিমোরয়েডস, নার্ভাস টেনশন, ডায়াবেটিস শিশুদের অতিরিক্ত ক্লান্ত পেশিসমূহ, ভেরিকোস ভেইন, নিউরাইটিস, বার্সাইটিই, রিউম্যাটিসম, স্ট্রেইন্ড মাসল, ফ্যাটিগ, স্ট্রেটচ মার্ক, মেনস্ট্রুয়াল স্ক্রাম্প, আপসেট স্টমাক, পা ও ডিকিউবইটাস আলসার, পোস্ট-অপারেটিভ ঈডেমা, পেরিফেরাল অক্লুসিভ ডিজিজ প্রভৃতি উপশমের জন্য স্টীম বাথ ও ইনফ্রায়েড থেরাপি খুবই সহায়ক।

সার্বিক আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হল সংবহনগত সমস্যা সম্পর্কিত রোগসমূহ এবং শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ কমাতে স্টীম বাথ অদ্বিতীয়। ত্বক থেকে সরাসরি মেদ অপসারণের মাধ্যমে ওজন হ্রাস করতে এই পদ্ধতি পশ্চিমের দেশগুলোতে সমাদৃত। আমাদের দেশেও এই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা ও প্রয়োগ স্থূলতা কমাতে সহায়ক হবে।


তথ্যসূত্র :

https://www.ebanglahealth.com/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%80%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A5/

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Habib96

Call

স্টিম বাথের কিছু উপকারিতা: রক্তচাপ কমায় গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৩০ মিনিটের স্টিম বাথেই নেমে যাবে রক্তচাপ । যেমন কারও রক্তচাপ যদি ১৩৭ থাকে তাহলে একবার স্টিম বাথ নিলেই রক্তচাপ নেমে যাবে ১৩০-এ। আবার স্টিম বাথ নেওয়ার আগে রক্তচাপের মাত্রা ৮২ থাকলে বাথের পর তা নেমে ৭৫ হয়ে যাবে। রোগ প্রতিরোধ শুধু রক্তচাপ নয়, অন্যান্য অসুস্থতার মাত্রাও কমে যাবে অনেক। পরিবার বা অফিসের চাপ আর দুশ্চিন্তা মস্তিস্ক হৃদপিণ্ড দুটোকেই অস্থির করে তোলে। স্টিম বাথ অন্যান্য জটিল রোগও প্রতিরোধ করতে পারে। রক্ত চলাচলে সহায়তা করে রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে পারলে কমে হৃদরোগের সম্ভাবনা, শরীরে রক্ত চলাচল সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়মিত স্টিম বাথের ফলে রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত এই সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে ফেলা যায়। স্টিম বাথের সময় অয়েল ম্যাসাজের ফলে পুরো শরীরে রক্ত চলাচল খুব ভালো হয়। শ্বাসকষ্ট কমায় শুধু রক্তচাপ জনিত সমস্যাই নয়, স্টিম বাথে কমবে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যাও। শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে বাতাস চলাচলের জন্য স্টিম বাথের কোনো বিকল্প নেই। ওজন কমায় স্টিম নিলে শরীরের ভেতরকার চর্বি গলতে শুরু করে৷ এ জন্য ওজন কমাতেও স্টিম বাথ বেশ কার্যকর৷ হাড়ের শক্তি কার্যকর কাজ করতে করতে পায়ের পাতা ঝিমঝিম করে উঠতে পারে, এছাড়া দেখা দিতে পারে মেরুদণ্ডের ব্যথা৷ আবার বাইরের ধুলো বালি আর রোদে মাইগ্রেনের ব্যথা হলে স্টিম বাথ দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্টিম বাথের অপকারিতা: ১৮ বছর বয়সের আগে স্টিম বাথ নেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ এ ছাড়া যাঁদের শ্বাসকষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য স্টিম বাথ একেবারেই প্রযোজ্য নয়৷ আবার ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা এবং মৃগী রোগীদের স্টিম বাথ নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ