শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

চা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানী পন্য। বাংলাদেশ চা অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়েও প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানী হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চা চাষ শুরু হয় ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে। বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে ১৮৪০ খ্রীস্টাব্দে। তারপর ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দে সিলেটের মালনীছড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চা বাগান উন্মুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশের প্রধানত: দুটি অঞ্চলে চায়ের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে; একটি সুরমা ভ্যালীস্থ বৃহত্তর সিলেট এলাকা ও অপরটি হালদা ভ্যালীস্থ চট্টগ্রাম এলাকা। তবে সমপ্রতি করোতোয়া ভ্যালীস' উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগঢ় এলাকায় চা চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি চা বাগানের ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ৫৮ হাজার মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে।

উদ্ভিদ পরিচিতি: চা গাছ একটি বহুবর্ষজীবি চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ”ক্যামেলিয়া সাইনেসিস”। চা গাছ ছেঁটে না রাখলে মাঠে ১০ মিটার পর্যন্ত উচুঁ হতে পারে। আদর্শ পরিবেশে একটি চা গাছ ৫০-৬০ বছর বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ফলন দিতে সক্ষম। বাংলাদেশে সাধারনত: বড় পাতাওয়ালা আসাম জাত ও ছোট পাতার চীনা জাত চাষ করা হয়।

চায়ের অনুকূল পরিবেশ: চা গাছ তার বৃদ্ধিতে কিছুটা আরণ্যক পরিবেশ পছন্দ করে। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ যেখানে তাপমাত্র ২৬ - ২৮ ডিগ্রি সে: এবং বৃষ্টিপাত ২০০০ মি.মি. এর উপরে ও বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমান অর্থাৎ আদ্রতা ৭০ - ৯০%, সে জায়গা চায়ের জন্য আদর্শ পরিবেশ। এছাড়া দিবালোকের স্থায়ীত্ব ১২ ঘন্টার কাছাকাছি ও মাটি অম্লধর্মী (পিএইচ ৪.৫ - ৫.৮), বেলে দোঁয়াশ ও সন্তোষজনক পুষ্টিমানসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। চা গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি কোনটাই চায়ের অনুকুল নয়।

চায়ের বংশবিস্তার ও নার্সারী ব্যবস্থাপনা: বীজ ও অঙ্গজ (ক্লোন) এর মাধ্যমে চা গাছের বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। চা বীজ গুটিবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে বীজতলায় ২০ সে.মি. ী ২০ সে.মি. ত্রিভূজ দূরত্ব পদ্ধতিতে লাগাতে হবে। বীজ বা কাটিং লাগানোর পূবেই নার্সারীর মাটি নেমাটোডমুক্ত রাখতে হবে। বীজতলায় ছায়া প্রদান আবশ্যক। প্রতি বেডে ৬০ - ৭৫ সে.মি. উচুঁতে ছন বা বাশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারীর চারার বৃদ্ধি ও সজীবতার জন্য রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি) ২:১:২ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অঙ্গজ বংশবিস্তার বা কাটিং পদ্ধতিতে উন্নতমানের ক্লোন হতে চারা তৈরি করা হয়। কাঙ্খিত ক্লোনের মাতৃবৃক্ষ হতে ডাল সংগ্রহ করে একটি পূর্ণপাতা ও তার সঙ্গে সুপ্ত পত্রকলি সমেত কাটিং তৈরি করা হয়। প্রথমে প্রাথমিক বেডে কাটিং লাগিয়ে ২-৩ পাতা গজানো পর্যন্ত ৩-৪ মাস পর নার্সারী ব্যাগে মাধ্যমিক বেডে স্থানান্তর করা হয়। কাটিং নার্সারীতে ১৫০-১৮০ সে.মি. উচুঁতে ছন বা বাশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারীতে নিয়মিত পানি সিঞ্চন করতে হবে। নার্সারী সর্বদা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। পোকামাকড় ও রোগবালাই এর হাত থেকে চারাগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুমোদিত বীজজাত ও ক্লোন: সাধারণ বীজের চেয়ে উন্নত মান ও ফলনের জন্য এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪ ধরনের বাইক্লোনাল বীজস্টক যথা-বিটিএস১, বিটিএস২, বিটিএস৩ এবং বিটিএস৪ নামক বীজস্টক চা শিল্পে ছাড়া হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন ও গুনগতমান বৃদ্ধিও লক্ষ্যে বিটিআরআই বীজজাত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্লোনাল সিলেকশন বা ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত নিজস্ব ১৭টি ক্লোনজাত অবমুক্ত করেছে। বিটি১, বিটি২, বিটি৩, বিটি৫, বিটি৭, বিটি৯, বিটি১১, বিটি১৩ ও বিটি১৪ ক্লোনগুলি আদর্শ ক্লোন হিসাবে পরিগনিত। বিটি১০ ও বিটি১২ ক্লোনদ্বয় উ"চফলনশীল ক্লোন শ্রেণীভূক্ত। বিটি৪, বিটি৬ ও বিটি১৫ উচ্চ পেয়ালীমানসম্পন্ন ক্লোন হিসেবে পরিচিত।

চাষ পদ্ধতি: 

জমি প্রস্ন্তুতি ও রোপণ পরিকল্পনা:বাংলাদেশে চায়ের আবাদযোগ্য শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ ভাগই টিলা। টিলা বা পাহাড়ী জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে চায়ের চাষ করা হয়। উচুঁ সমতল ভূমিতে চাষ ও মই দিয়ে এবং আগাছা পরিস্কার করে জমি তৈরি করতে হয়।

চারা রোপণ: এপ্রিল/মে মাসে প্রাক-বর্ষাকালীন সময়ে চা চারা রোপণ করাই ভাল। তবে যদি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তাহলে ডিসেম্বর/মার্চ মাসেও চারা রোপণ করা যায়।

রোপণ সারি: একক সারি প্রণালীতে টিলাতে রোপণ দূরত্ব- ৯০ সে.মি.x ৬০ সে.মি. অর্থাৎ হেক্টর প্রতি ১৮,৫১৮টি গাছ; সমতল ভূমিতে দূরত্ব ১০৫ সে.মি. x ৬০ সে.মি. অর্থাৎ হেক্টর প্রতি ১৫,৫৭৬টি গাছ। দ্বৈতসারি প্রণালীতে রোপণ দূরত্ব ১০৫ সে.মি. x ৬০ সে.মি. x ৬০ সে.মি. অর্থাৎ হেক্টর প্রতি ১৯,৯৬০টি গাছ।

রোপণ পদ্ধতি: ক্লোন চারার জন্য ৩০-৩৫ সে.মি ও বীজ চারার জন্য ৪০-৪৫ সে.মি. গভীরতা বিশিষ্ট এবং উভয়টির জন্য ২৫-৩০ সে.মি. প্রশস্ততা বিশিষ্ট গর্ত করে ৪০-৫০ সে.মি. উচ্চতাসম্পন্ন সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে। গর্তেও প্রথম ২৩ সে.মি. মাটি গর্তের একপাশে তুলে রেখে এ মাটির সাথে প্রতিটি গর্তের জন্য ২ কেজি পচা গোবর সার, ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫ গ্রাম এমপি সাথে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত এ মাটি গর্তের নিচে দিতে হবে।

মাল্‌চ প্রয়োগ: মাটির আদ্রতা সংরক্ষণের জন্য সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রোপনের পর চারার গোড়া থেকে ৭-১০ সে.মি. দূরে এবং ৮-১০ সে.মি. উচুঁ করে মাল্‌চ বিছিয়ে দিতে হবে। মাল্‌চ হিসেবে কচুরীপানা, গুয়াতেমালা বা সাইট্রোনেলা ঘাস, এমনকি ঝোপ-জঙ্গলও ব্যবহার করা যেতে পারে।

চা গাছ ছাঁটাই এর সময় ও পদ্ধতি: চা গাছ রোপনের পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত চা গাছকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা অপরিণত চা গাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরিণত চা গাছের ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্য হল গাছটিকে ঝোপাকৃতি করা। যত বেশী ঝোপন শাখা-প্রশাখা বেশী হবে তত বেশী পাতা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি চা গাছ এপ্রিল/মে মাসে রোপণ করা হয় তবে পরের বৎসর জানুয়ারি মাসের শেষে অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে ১ম সপ্তাহে ছাঁটাই করতে হবে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে অপরিণত চা গাছ ছাঁটাই করা হয়, যেমন- মধ্যকান্ডচ্ছেদন, ভঙ্গন, বক্রন/বাহুবদ্ধকরণ ইত্যাদি।

সারণী ১: অপরিণত চা গাছ ছাঁটাই ও পাতা চয়ন উচ্চতা 

ঊৎসর
ছাঁটাই প্রকৃতি ছাঁটাই উচ্চতা
পাতা চয়ন উচ্চতা

ডিসেন্টার/ব্রেকিং ১৫-২৩ সে.মি. ৫০ সে.মি.

প্রুন 
৪০ সে.মি. 
৫০ সে.মি.

স্কীফ
৫০-৫৩ সে.মি. ৫২-৫৫ সে.মি.


প্রুন
স্কীফ 
৪৫-৫০ সে.মি.
৭৫ সে.মি.
৭০-৭৫ সে.মি.
৭৮-৮০ সে.মি


পরিণত চা গাছ ছাঁটাই: পরিণত চা গাছ ছাঁটাই এর উদ্দেশ্য হল ফলনকালে গাছকে সবসময় সজীব ও পত্রময় এবং সীমিত উ"চতায় রাখা। অবস'াভেদে চা গাছের ছাঁটাই চক্র ত্রিবার্ষিক অথবা চতুর্বার্ষিক হতে পারে।

ত্রিবার্ষিক চক্র = লাইট প্রুনিং - লাইট স্কীফ - ডীপ স্কীফ
চতুর্বার্ষিক চক্র = লাইট প্রুনিং - ডীপ স্কীফ - মিডিয়াম স্কীফ - লাইট স্কীফ
শুধুমাত্র চরম খরাপ্রবণ এলাকা ছাড়া আজকাল ত্রিবার্ষিক চক্রের প্রচলন নেই বললেই চলে। চতুর্বার্ষিকচক্র পদ্ধতিতে প্রথম চক্রের প্রথম বৎসর অর্থাৎ ৬ষ্ঠ বৎসরে লাইট প্রুনিং ৫৫ সে.মি. (২২ ইঞ্চি) উচ্চতায় প্রুনিং বা ছাঁটাই করার পর যে শাখা প্রশাখা গজাবে ঐগুলিকে প্রুনিং মার্ক বা ছাঁটাই চিহ্ন থেকে ২০ সে.মি. উচ্চতায় টিপিং করতে হবে। ৭ম বৎসরে ডীপ স্কীফ ৬৫ সে.মি. এবং ৭৫ সে.মি. পাতা চয়ন করতে হবে। ৮ম বৎসরে মিডিয়াম স্কীফ ৭০ সে.মি. করে ৭৫ সে.মি. এ পাতা চয়ন করতে হবে এবং ৯ম বৎসরে ৭৫ সে.মি. লাইট স্কীফ করে ৭৭.৫ সে.মি. উ"চতায় পাতা চয়ন করতে হবে। এভাবে একটি চতুর্বার্ষিকচক্র শেষ হলে দ্বিতীয় চতুর্বার্ষিকচক্র শুরু হয়।

সারণী ২: পরিণত চা গাছ ছাঁটাই এর সময়

ছাঁটাই প্রকৃতি ছাঁটাই এর সময়
লাইট প্রুনিং
ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ
ডীপ স্কীফ
জানুয়ারির ১ম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ
মিডিয়াম স্কীফ জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহ
লাইট স্কীফ
মিডিয়াম প্রুনিং
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পুরো মাস
চক্র শুরুর ২৪ থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে একবার

ছায়াগাছ রোপন ও প্রতিপালন: চা গাছ অত্যধিক সূর্যতাপ সহ্য করতে পারে না। তাই বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ছায়া একটি অপরিহার্য প্রয়োজন। এ ছায়া পদ্ধতিতে আপতিত সূর্যকিরণের শতকরা ৫০-৭০ ভাগ চা গাছের উপর পতিত হওয়া জরুরী। সে জন্যে চা গাছ রোপণের সাথে সাথে ছায়া গাছও রোপণ করা প্রয়োজন। চা বাগানে সাধারণত অস্থায়ী ছায়া হিসেবে বগামেডুলা, ক্রোটালারিয়া ও ইন্ডিগুফেরা এবং স্থায়ী ছায়া হিসেবে কালশিরিষ, শীলকড়ই ও লোহাশিরিষ গাছ লাগানো হয়ে থাকে। অস'ায়ী ছায়াগাছ ৩ মিটার দ্ধ ৩ মিটার দূরত্বে এবং স'ায়ী ছায়াগাছ ৬ মিটার দ্ধ ৬ মিটার দূরত্বে লাগাতে হবে। ৯০ সে.মি. গভীর দ্ধ ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করে গর্ত প্রতি ১০ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫ কেজি ছাই এবং ৫০০ গ্রাম গুড়া চুন প্রয়োগ করতে হবে।

পাতা চয়ন পদ্ধতি: প্রুনিং করার পর মার্চ মাসের শেষে অথবা এপ্রিলে চায়ের শাখা থেকে কচি কচি শাখা ও পাতা (কিশলয়) গজায়। এ কচি ডগাগুলি নির্দিষ্ট উ"চতায় প্রথম টিপিং করা হয়। এভাবে একটি চয়ন টেবিল প্রতিষ্ঠা কওে পরে সপ্তাহ অন্তর অন্তর পাতা তোলা হয়।

সার প্রয়োগ: চা চারা বেড়ে উঠার সাথে সাথে এনপিকে মিশ্রসার প্রতি গাছে প্রয়োগ করতে হবে। নিম্নে কোন আবাদীর হেক্টর প্রতি ১০০০ কেজি হতে ৩০০০ কেজি উৎপাদনের দুইটি প্রান্ত ধরে প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ ও মাত্রা দেয়া হলো।

সারণী ৩: হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ

নাইট্রোজেন ১ম দফা ৫০ কেজি থেকে ১৫৮ কেজি (ইউরিয়া ১১০ কেজি থেকে ৩০০ কেজি)
২য় দফা ৬০ কেজি (ইউরিয়া ১৩০ কেজি)
ফসফরাস একমাত্র দফায় ২০ কেজি থেকে ৪০ কেজি (টিএসপি ৪৪ কেজি থেকে ৮৮ কেজি)
পটাশ ১ম দফা ৩০ কেজি থেকে ৭৫ কেজি (এমপি ৬০ কেজি থেকে ১৫০ কেজি)
২য় দফা ৩০ কেজি (এমপি ৬০ কেজি)

নাইট্রোজেন সারের অভাব পূরণ এবং গাছের পত্র-পল্লব বৃদ্ধির জন্য ২ কেজি ইউরিয়া সার প্রতি ১০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে চা গাছের পাতায় সিঞ্চন করতে হবে। পটাশ সারের অভাব পূরণে ইউরিয়ার সাথে ১% পটাশ সার মিশিয়ে পাতায় সিঞ্চন করতে হবে। জিংক বা দস্তার অভাব পূরণে ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম জিংক সালফেট ১০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সিঞ্চন করতে হবে। মাটির অম্লত্ব কমানোর জন্য লাইট প্রুনিং বৎসরে হেক্টর প্রতি ৪০০-৫০০ কেজি সহজলভ্য চুনসার ডলোমাইট ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন: গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদনে পানির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দূরকরণে চা বাগানে সিপ্রংক্লার পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হয়। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির জন্য জলাবদ্ধতা দেখা দেয় বিশেষ করে সমতল নিম্নভূমিতে। সেজন্য উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে জমিতে নর্দমা খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সূত্র: http://onishchit.blogspot.com/2010/08/blog-post_6622.html?m=1

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

চা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানি পণ্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশে চা চাষ শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে। তারপর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মালনীছড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চা বাগান উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেট এলাকা ও অপরটি হালদা ভ্যালিস্থ চট্টগ্রাম এলাকা চা উৎপাদন কেন্দ্র। সম্প্রতি করতোয়া ভ্যালিস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় এলাকায় চা চাষ শুরু হয়েছে। দেশে ১৬৭টি চা বাগানের ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ৫৮ হাজার মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে।
চায়ের অনুকূল পরিবেশ : চা গাছ তার বৃদ্ধিতে কিছুটা আরণ্যক পরিবেশ পছন্দ করে। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ যেখানে তাপমাত্র ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত ২০০০ মিলিমিটারের উপরে ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি অর্থাৎ আর্দ্রতা ৭০-৯০% সেই এলাকা চায় চাষের আদর্শ পরিবেশ। এছাড়া দিনের আলোর স্থায়িত্ব ১২ ঘণ্টার কাছাকাছি ও মাটি অম্লধর্মী (পিএইচ ৪.৫-৫.৮), বেলে দোআঁশ ও সন্তোষজনক পুষ্টিমানসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। চা গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। চা বীজ গুটিবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে বীজতলায় ২০ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার ত্রিভুজ দূরত্ব পদ্ধতিতে লাগাতে হবে। বীজ বা কাটিং লাগানোর আগেই নার্সারির মাটি নেমাটোডমুক্ত রাখতে হবে। বীজতলায় ছায়া প্রদান আবশ্যক। প্রতি বেডে ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারির চারার বৃদ্ধি ও সজীবতার জন্য রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি) ২:১:২ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কাটিং নার্সারিতে ১৫০ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নার্সারিতে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
অনুমোদিত বীজ জাত ও ক্লোন : সাধারণ বীজের চেয়ে উন্নত মান ও ফলনের জন্য এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪ ধরনের বাইক্লোনাল বীজস্টক যথা : বিটিএস১, বিটিএস২, বিটিএস৩ এবং বিটিএস৪ নামক বীজস্টক চা শিল্পে ছাড়া হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিআরআই বীজজাত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্লোনাল সিলেকশন বা ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত নিজস্ব ১৭টি ক্লোনজাত অবমুক্ত করেছে। বিটি১, বিটি২, বিটি৩, বিটি৫, বিটি৭, বিটি৯, বিটি১১, বিটি১৩ ও বিটি১৪ ক্লোনগুলো আদর্শ ক্লোন হিসাবে পরিগণিত। বিটি১০ ও বিটি১২ ক্লোনদ্বয় উচ্চফলনশীল ক্লোন শ্রেণিভুক্ত। বিটি৪, বিটি৬ ও বিটি১৫ উচ্চ পেয়ালীমানসম্পন্ন ক্লোন হিসেবে পরিচিত।
চাষ পদ্ধতি : বাংলাদেশে চায়ের আবাদযোগ্য শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ ভাগই টিলা। টিলা বা পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে চায়ের চাষ করা হয়। উঁচু সমতল ভূমিতে চাষ ও মই দিয়ে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে প্রাক-বর্ষাকালীন চা চারা রোপণ উত্তম। তবে যদি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তাহলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসেও চারা রোপণ করা যায়। একক সারি পদ্ধতিতে টিলাতে রোপণ দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ৯০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৮ হাজার ৫১৮টি গাছ এবং সমতল ভূমিতে দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৫ হাজার ৫৭৬টি গাছ। দ্বৈতসারি পদ্ধতিতে রোপণ দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি ১৯ হাজার ৯৬০টি গাছ। ক্লোন চারার জন্য ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার ও বীজ চারার জন্য ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার গভীরতা বিশিষ্ট এবং উভয়টির জন্য ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ততা বিশিষ্ট গর্ত করে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতাসম্পন্ন সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে। গর্তের প্রথম ২৩ সে.মি. মাটি গর্তের একপাশে তুলে রেখে এ মাটির সঙ্গে প্রতিটি গর্তের জন্য ২ কেজি পচা গোবর সার, ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫ গ্রাম এমপি সঙ্গে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত এ মাটি গর্তের নিচে দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রোপণের পর চারার গোড়া থেকে ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার দূরে এবং ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার উঁচু করে মাল্চ বিছিয়ে দিতে হবে। মাল্চ হিসেবে কচুরিপানা, গুয়াতেমালা বা সাইট্রোনেলা ঘাস, এমনকি ঝোপ-জঙ্গলও ব্যবহার করা যেতে পারে। চা চারা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এনপিকে মিশ্রসার প্রতি গাছে প্রয়োগ করতে হবে।...

বি.দ্র. বাকীটুক মন্তব্যে দেখুন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ