শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

৭ম শ্রেণির কবিতাগুলি হলো-


  • নতুন দেশ লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


নদীর ঘাটের কাছে

নৌকো বাঁধা আছে

নাইতে যখন যাই, দেখি সে

        জলের ঢেউয়ে নাচে।

            আজ গিয়ে সেইখানে

                  দেখি দূরের পানে

                    মাঝ নদীতে নৌকা, কোথায়

ভাটার টানেচলে

জানিনা কোন দেশে

পৌঁছে যাবে শেষে,

            সেখানেতে কেমন মানুষ

                  থাকে কেমন বেশে।


    থাকি ঘরের কোণে,

    সাধ জাগে মোর মনে,

অমনি করে যাই ভেসে, ভাই,

নতুন নগর বনে।

            দূর সাগরের পাড়ে,

            জলের ধারে ধারে,

নারিকেলের বনগুলি সব

দাঁড়িয়ে সারে সারে। থাকি ঘরের কোণে,

    সাধ জাগে মোর মনে,

            পাহাড়-চূড়া সাজে

            নীল আকাশের মাঝে,

বরফ ভেঙ্গে ডিঙ্গিয়ে যাওয়া

কেউ তা পারে না-যে।

            কোন সে বনের তলে

            নতুন ফুলে ফলে

নতুন নতুন পশু কত

              বেড়ায় দলে দলে।

                কত রাতের শেষে

নৌকো যে যায় ভেসে।

      বাবা কেন আপিসে যায়,

      যায় না নতুন দেশে?


  • কুলি মজুর লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম


দেখিনু সেদিন রেলে,

কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!

চোখ ফেটে এল জল,

এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?

যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,

বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।

বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!

কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?

রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,

রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,

বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা

কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।

তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,

ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!


আসিতেছে শুভদিন,

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!

হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,

পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,

তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,

তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;

তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,

তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!


  • আমার বাড়ি লেখক: জসীমউদদীন


আমার বাড়ি যাইও ভোমর,

বসতে দেব পিঁড়ে,

জলপান যে করতে দেব

শালি ধানের চিঁড়ে।

শালি ধানের চিঁড়ে দেব,

বিন্নি ধানের খই,

বাড়ির গাছের কবরী কলা,

গামছা-বাঁধা দই।

আম-কাঁঠালের বনের ধারে

শুয়ো আঁচল পাতি,

গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাস

করব সারা রাতি।

চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো

মাখিয়ে দেব সুখে

তারা ফুলের মালা গাঁথি,

জড়িয়ে দেব বুকে।

গাই দোহনের শব্দ শুনি

জেগো সকাল বেলা,

সারাটা দিন তোমায় লয়ে

করব আমি খেলা।

আমার বাড়ি ডালিম গাছে

ডালিম ফুলের হাসি,

কাজলা দীঘির কাজল জলে

কাঁসগুলি যায় ভাসি।

আমার বাড়ি যাইও ভোমর,

এই বরাবর পথ,

মৌরী ফুলের গন্ধ শুঁকে

থামিও তব রথ।


  • শোন একটি মুজিবরের থেকে লেখক: গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার


শোন একটি মুজিবরের থেকে

লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি

আকাশে বাতাসে ওঠে রণি

বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

সেই সবুজের বুক চেরা মেঠোপথে

আবার যে যাব ফিরে, আমার

হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব

শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে

হায়রে এমন সোনার খনি।।

বিশ্বকবির ‘সোনার বাংলা’

নজরুলের ‘বাংলাদেশ’

জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’

রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।

‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার

এখনো কেন ভাব, আমার

হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব

অন্ধকারে পুব আকাশে

উঠবে আবার দিনমণি।।


  • সবার আমি ছাত্র লেখক: সুনির্মল বসু


আকাশ আমায় শিক্ষা দিল 

উদার হতে ভাই রে, 

কর্মী হবার মন্ত্র আমি 

বায়ুর কাছে পাই রে। 

পাহাড় শিখায় তাহার সমান- 

হই যেন ভাই মৌন-মহান, 

খোলা মাঠের উপদেশে- 

দিল-খোলা হই তাই রে। 

সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয় 

আপন তেজে জ্বলতে, 

চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে, 

মধুর কথা বলতে। 

ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর- 

অন্তর হোক রত্ন-আকর; 

নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম 

আপন বেগে চলতে। 

মাটির কাছে সহিষ্ণুতা 

পেলাম আমি শিক্ষা, 

আপন কাজে কঠোর হতে 

পাষান দিল দীক্ষা। 

ঝরনা তাহার সহজ গানে, 

গান জাগাল আমার প্রাণে; 

শ্যাম বনানী সরসতা 

আমায় দিল ভিক্ষা। 

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, 

সবার আমি ছাত্র, 

নানান ভাবে নতুন জিনিস 

শিখছি দিবারাত্র। 

এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়, 

পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায় 

শিখছি সে সব কৌতূহলে, 

নেই দ্বিধা লেশমাত্র। 


  • শ্রাবণে লেখক: সুকুমার রায়


জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত-

অফুরান্‌ নামতায় বাদলের ধারাপাত।

আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার,

পৃথিবীর ছাত পিটে ঝামাঝম্‌ বারিধার ।

স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়,

নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায়।

উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের

শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের।

জলেজলে জলময় দশদিক্‌ টলমল্‌,

অবিরাম একই গান, ঢালো জল ঢালো জল ।

ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,

ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের।

শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্‌ধুক্‌,

ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ।


  • গরবিনী মা-জননী লেখক: সিকানদার আবু জাফর


ওরে আমার মা-জননী

জন্মভূমি বাঙলারে

তোর মত আর পুণ্যবতী

ভাগ্যবতী বল মা কে।

কার চোখে মা নদীর কাজল

সবুজ তৃণের আঁচল বুকে।

কার পায়ে মা ধুলোর নূপুর

সন্ধ্যা দুপুর বেজেই চলে।

রোজ ভোরে কে শিশির খোঁপায়

বোকুল যূথীর গন্ধ মাখে

কার দুপুরের তন্দ্রা ভেজে

ক্লান্ত ঘুঘুর বিলাপ-জলে।

কামার কুমোর জেলে চাষী

বাউল মাঝি ঘর-উদাসী

কার ছেলেরা নিত্য হাজার

মরণ-মারের দন্ড গোনে,

ছেলের বুকের খুন ছোপানো

কোন জননীর আঁচল- কোণে

দুর্ভাগিনী কার মেয়েরা

কান্নাফুলের নকশা বোনে।


সেই মাকে যার হাজার হাজার

মা-নাম-ডাকা পাগল ছেলে

মায়ের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে

ভয়ঙ্করের দুর্বিপাকে।

কার ছেলে মা উপড়ে ফেলে

বুলেট ফাঁসির শাসন কারা

দুখের ধুপে সুখ পুড়িয়ে

কার ছেলে মুখ উজল রাখে।

তুই তো সে-মা

ও মা তুই তো রে সেই গরবিনী

রক্তে -ধোওয়া সরোজিনী

যুগ-চেতনার চিত্তভূমি

নিত্যভূমি বাঙলারে।


  • সাম্য লেখক: সুফিয়া কামাল


শতকের সাথে শতক হস্ত

মিলায়ে একত্রিত

সব দেশে সব কালে কালে সবে

হয়েছে সমুন্নত।

বিপুলা পৃথিবী,প্রসারিত পথ,

যাত্রীরা সেই পথে,

চলে কর্মের আহ্বান কোন

অনন্ত কাল হতে

মানব জীবন! শ্রেষ্ঠ,কঠোর

কর্মে সে মহীয়ান,

সংগ্রামে আর সাহসে প্রজ্ঞা

আলোক দীপ্তিমান।

পায়ের তলায় মাটিতে ,আকাশে,

সম্মুখে সিন্ধু জলে

বিজয় কেতন উড়ায়ে মানুষ

চলিয়াছে দলে দলে।


  • মেলা লেখক: আহসান হাবীব


ফুলের মেলা পাখির মেলা

আকাশ জুড়ে তারার মেলা,

রোজ সকালে রঙের মেলা

সাত সাগরে ঢেউয়ের মেলা।

আর এক মেলার জগৎ জুড়ে

ভাইরা মিলে, বোনরা মিলে,

রঙ কুড়িয়ে বেড়ায় তারা

নীল আকাশের অপার নীলে।

ফুলের বুকে সুবাস যত

বুলে-মুখে নেয় মেখে তাই

পাখির কলকণ্ঠ থেকে

সুর তুলে নেয় তারা সবাই।

রাতের পথে পাড়ি যখন,

তারার অবাক দীপ জেলে নেয়

রোজ সকালের আকাশ পথে

আলোর পাখি দেয় ছেড়ে দেয়

সাত সাগরের বুক থেকে নেয়

ঢেউ তুলে নেয় ভালোবাসার।

জগৎ জুড়ে যায় ছড়িয়ে

যায় ছড়িয়ে আলো আশার।

ভালোবাসার এই যে মেলা

এই যে মেলা ভাই-এর বোনের,

এই যে হাসি এই যে খুশি

এই যে প্রীতি লক্ষ মনের-

কচি সবুজ ভাই-বোনদের

আপনি গড়া এই যে মেলা,

এই মেলাতে নিত্য চলে

আপন মনে একটি খেলা।

সারা বেলাই সেই এক খেলা

গড়বে নতুন একটি বাগান,

অনেক ফুল আর অনেক পাখি

সব পাখিদের আলাদা গান-

তার মাঝেই একটি সুরে

সবারই সুর যায় মিলিয়ে

এক দুনিয়া এক মানুষের

স্বপ্ন তারা যায় বিলিয়ে।


  • এই অক্ষরে লেখক: মহাদেব সাহা


এই অক্ষর           যেন নির্ঝর

ছুটে চলা অবিরাম

যেন কিছু তারা           দিচ্ছে পাহারা

আকাশেতে লিখে নাম।

অক্ষরগুলি           চায় মুখ তুলি

অন্তরে জাগে গান,

শিখি তার কাছে           অজানা যা আছে

আনন্দে ভরে প্রাণ;

এই অক্ষরে           মাকে মনে পড়ে

মন হয়ে যায় নদী,

আর কিছু তাই           পাই বা না পাই

চিঠি খানা পাই যদি।

সেই উপমায়           মন ভরে যায়

দেখি অপরূপ ছবি-

সকাল দুপুর           উদাস নুপূর

বাজায় উদাস কবি।

এই অক্ষরে           ডাক নাম ধরে

ডাক দেয় বুঝি কেউ,

স্বপ্নের মতো           রূপকথা যতো

অন্তরে তোলে ঢেউ।

এই অক্ষর           আত্মীয়- পর

সকলেরে কাছে টানে,

এই প্রিয় ভাষা           বুকে দেয় আশা

বিমোহিত করে গানে।

এই অক্ষরে           কঠিন পাথরে

শিলালিপি লেখা হয়,

এই ভাষা দিয়ে           গান লিখে নিয়ে

যুদ্ধ করেছি জয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ