শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

৬ষ্ঠ শ্রেণির কবিতাগুলি হলো-


  • জন্মভূমি লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।

সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে ॥

জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রানীর মতন,

শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে ॥

কোন্‌ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,

কোন্‌ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।

আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,

ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে ॥


  • সুখ লেখক: কামিনী রায়


নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?---

        এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?

যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে

        কেবলি কি নর জনম লয়?---

কাঁদাইতে শুধু বিশ্বরচয়িতা

        সৃজেন কি নরে এমন করে'?

মায়ার ছলনে উঠিতে পড়িতে

        মানবজীবন অবনী 'পরে?

বল্ ছিন্ন বীণে, বল উচ্চৈঃস্বরে,---

        না,---না,---না,---মানবের তরে

আছে উচ্চ লক্ষ্য, সুখ উচ্চতর,

        না সৃজিলা বিধি কাঁদাতে নরে |

কার্যক্ষেত্র ওই প্রশস্ত পড়িয়া,

        সমর-অঙ্গন সংসার এই,

যাও বীরবেশে কর গিয়ে রণ ;

        যে জিনিবে সুখ লভিবে সেই |

পরের কারণে স্বার্থে দিয়া বলি

        এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে?

        আপনার কথা ভুলিয়া যাও |

পরের কারণে মরণের সুখ ;

        "সুখ" "সুখ" করি কেঁদনা আর,

যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে,

        ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার |

গেছে যাক ভেঙ্গে সুখের স্বপন

        স্বপন অমন ভেঙ্গেই থাকে,

গেছে যাক্ নিবে আলেয়ার আলো

        গৃহে এস আর ঘুর'না পাকে |

যাতনা যাতনা কিসেরি যাতনা?

        বিষাদ এতই কিসের তরে?

যদিই বা থাকে, যখন তখন

        কি কাজ জানায়ে জগৎ ভ'রে?

লুকান বিষাদ আঁধার আমায়

        মৃদুভাতি স্নিগ্ধ তারার মত,

সারাটি রজনী নীরবে নীরবে

        ঢালে সুমধুর আলোক কত!

লুকান বিষাদ মানব-হৃদয়ে

        গম্ভীর নৈশীথ শান্তির প্রায়,

দুরাশার ভেরী, নৈরাশ চীত্কার,

        আকাঙ্ক্ষার রব ভাঙ্গে না তায় |

বিষাদ---বিষাদ---বিষাদ বলিয়ে

        কেনই কাঁদিবে জীবন ভরে'?

মানবের মন এত কি অসার?

        এতই সহজে নুইয়া পড়ে?

সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে

        পারনা মুছিতে নয়ন-ধার?

পরহিত-ব্রতে পারনা রাখিতে

        চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে

        আসে নাই কেহ অবনী 'পরে,

সকলের তরে সকলে আমরা,

        প্রত্যেকে আমরা পরের তরে |


  • মানুষ জাতি লেখক: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত


জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

সে জাতির নাম মানুষ জাতি;

এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত

একই রবি শশী মোদের সাথী।

শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা

সবাই আমরা সমান বুঝি,

কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি

বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।

দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,

জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙ্গা,

কালো আর ধলো বাহিরে কেবল

ভিতরে সবারই সমান রাঙা।

বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ

ভিতরের রং পলকে ফোটে,

বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র

কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।

বংশে বংশে নাহিক তফাত

বনেদি কে আর গর্-বনেদি,

দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ্

দুনিয়া সবারি জনম-বেদী।


  • ঝিঙে ফুল লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম


ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!

সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল-

ঝিঙে ফুল।

গুল্মে পর্ণে

লতিকার কর্ণে

ঢল ঢল স্বর্ণে

ঝলমল দোলো দুল-

ঝিঙে ফুল।।


পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,

গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।

পউষের বেলাশেষ

পরি জাফরানি বেশ

মরা মাচানের দেশ

ক’রে তোল মশগুল-

ঝিঙে ফুল।

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে,

আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুপুরে।


প্রজাপতি ডেকে যায়-

‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়!’

আসমানের তারা চায়-

‘চলে আয় এ অকূল!’

ঝিঙে ফুল।।


তুমি বল- ‘আমি হায়

ভালোবাসি মাটি-মা’য়,

চাই না ও অলকায়-

ভালো এই পথ-ভুল।’

ঝিঙে ফুল।


  • আসমানি লেখক: জসীম উদদীন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।
ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।

  • মুজিব লেখক: রোকনুজ্জামান খান

সবুজ শ্যামল বনভূমি মাঠ নদীতীর বালুচর
সবখানে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘর।

সোনার দেশের মাঠে মাঠে ফলে সোনাধান রাশি রাশি
ফসলের হাসি দেখে মনে হয় শেখ মুজিবের হাসি।

শিশুর মধুর হাসিতে যখন ভরে বাঙালির ঘর
মনে হয় যেন শিশু হয়ে হাসে চিরশিশু মুজিবর।

আমরা বাঙালি যতদিন বেঁচে রইব এ বাংলায়
স্বাধীন বাংলা ডাকবে: মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়!

  • বাঁচতে দাও লেখক: শামসুর রাহমান

এই তো দ্যাখো ফুলবাগানে গোলাপ ফোটে,
ফুটতে দাও।
রঙিন কাটা ঘুড়ির পিছে বালক ছোটে,
ছুটতে দাও।

নীল আকাশের সোনালি চিল মেলেছে পাখা,
মেলতে দাও।
জোনাক পোকা আলোর খেলা খেলছে রোজই,
খেলতে দাও।

মধ্যদিনে নরম ছায়ায় ডাকছে ঘুঘু,
ডাকতে দাও।
বালির ওপর কত্ত কিছু আঁকছে শিশু,
আঁকতে দাও।

কাজল বিলে পানকৌড়ি নাইছে সুখে,
নাইতে দাও।
গহিন গাঙে সুজন মাঝি বাইছে নাও,
বাইতে দাও।

নরম রোদে শ্যামাপাখি নাচ জুড়েছে,
নাচতে দাও।
শিশু, পাখি, ফুলের কুঁড়ি—সবাইকে আজ
বাঁচতে দাও।

  • পাখির কাছে ফুলের কাছে লেখক: আল মাহমুদ

নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল
ডাবের মত চাঁদ উঠেছে ঠাণ্ডা ও গোলগাল।
ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে গেলাম ঘর
ঝিমধরা এই মস্ত শহর কাঁপছিলো থরথর।
পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ?
দরগাতলা পার হয়ে যেই মোড় ফিরেছি বাঁয়
কোত্থেকে এক উটকো পাহাড় ডাক দিলো আয় আয়।

পাহাড়টাকে হাত বুলিয়ে লালদিঘির ঐ পাড়
এগিয়ে দেখি জোনাকিদের বসেছে দরবার
আমায় দেখে কলকলিয়ে দিঘির কালো জল
বললো, এসো, আমরা সবাই না-ঘুমানোর দল—
পকেট থেকে খোলো তোমার পদ্য লেখার ভাঁজ
রক্তজবার ঝোঁপের কাছে কাব্য হবে আজ।
দিঘীর কথায় উঠল হেসে ফুল পাখিরা সব
কাব্য হবে, কাব্য কবে— জুড়লো কলরব।
কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই
পাখির কাছে, ফুলের কাছে মনের কথা কই।

  • ফাগুন মাস লেখক: হুমায়ুন আজাদ

ফাগুনটা খুব ভীষণ দস্যি মাস
পাথর ঠেলে মাথা উঁচোয় ঘাস।
হাড়ের মতো শক্ত ডাল ফেঁড়ে
সবুজ পাতা আবার ওঠে বেড়ে।

সকল দিকে বনের বিশাল গাল
ঝিলিক দিয়ে প্রত্যহ হয় লাল।
বাংলাদেশের মাঠে বনের তলে
ফাগুন মাসে সবুজ আগুন জ্বলে।

ফাগুনটা খুব ভীষণ দুঃখী মাস
হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়ায় দীর্ঘশ্বাস
ফাগুন মাসে গোলাপ কাঁদে বনে
কান্নারা সব ডুকরে ওঠে মনে।

ফাগুন মাসে মায়ের চোখে জল
ঘাসের উপর কাঁপে যে টলমল।
ফাগুন মাসে বোনেরা ওঠে কেঁদে
হারানো ভাই দুই বাহুতে বেঁধে

ফাগুন মাসে ভাইয়েরা নামে পথে
ফাগুন মাসে দস্যু আসে রথে।
ফাগুন মাসে বুকের ক্রোধ ঢেলে
ফাগুন তার আগুন দেয় জ্বেলে

বাংলাদেশের শহর গ্রামে চরে
ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে।
ফাগুন মাসে দুঃখী গোলাপ ফোটে
বুকের ভেতর শহিদ মিনার ওঠে।

সেই যে কবে কয়েকজন খোকা
ফুল ফোটালো-রক্ত থোকা থোকা-
গাছের ডালে পথের বুকে ঘরে
ফাগুন মাস তাদেরই মনে পড়ে।

সেই যে কবে– তিরিশ বছর হলো–
ফাগুন মাসের দু-চোখ ছলোছলো |
বুকের ভেতর ফাগুন পোষে ভয়–
তার খোকাদের আবার কী যে হয়
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ