শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

৪র্থ শ্রেণির কবিতাগুলি হলো-


  • পালকির গান লেখক: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত


পালকি চলে!

পালকি চলে!

গহন-তলে

আগুন জ্বলে!

স্তব্ধ গাঁয়ে

আদুল্ গায়ে

যাচ্ছে কারা

রৌদ্রে সারা


ময়রা মুদি

চক্ষু মুদি'

পাটায় ব'সে

ঢুলছে ক'ষে!

দুধের চাঁছি

শুষছে মাছি,_

উড়ছে কতক

ভন্ ভনিয়ে।_

আসছে কা'রা

হন্ হনিয়ে?

হাটের শেষে

রুক্ষ বেশে

ঠিক্ দুপুরে

ধায়্ হাটুরে!


কুকুরগুলো

শুঁকছে ধুলো,_

ধুঁকছে কেহ

ক্লান্ত দেহ।


গঙ্গাফড়িং

লাফিয়ে চলে,

বাঁধের দিকে

সূর্য্য ঢলে।


পালকি চলে রে!

অঙ্গ ঢলে রে!

আর দেরী কত?

আরো কত দূর?


  • মুক্তির ছড়া লেখক: সানাউল হক


তোমার বাংলা আমার বাংলা 

সোনার বাংলাদেশ-

সবুজ সোনালি ফিরোজা রুপালি

রূপের নেই তে শেষ।

আমি তো মরেছি যতবার যায় মরা,

নবীন যাত্রী তোমাকে শোনাই ছড়া।

এদেশ আমার এদেশ তোমার 

সবিশষ মুজিবের,

হয়তো অধিক মুক্তিপাগল

সহস্র শহীদের।


  • নেমন্তন্ন লেখক: অন্নদাশঙ্কর রায়


যাচ্ছ কোথা ?

চিংড়িপোতা ।

কীসের জন্য ?

নেমন্তন্ন ।

বিয়ে বুঝি ?

না বাবুজি ।

কীসের তবে ?

ভজন হবে ।

শুধুই ভজন ?

প্রসাদ ভোজন ।

কেমন প্রসাদ ?

যা খেতে সাধ ।

কী খেতে চাও ?

ছানার পোলাও ।

ইচ্ছে কী আর ?

সরপুরিয়ার ।

আঃ কী আয়েশ

রাবড়ি পায়েশ ।

এই কেবলি ?

ক্ষীর কেদলি।

বাঃ কী ফলার !

সবরী কলার ।

এবার থামো ।

ফজলী আমও ।

আমিও যাই ?

না , মশাই ।


  • আবোল তাবোল লেখক: সুকুমার রায়


ছুটলে কথা, থামায় কে?

আজকে ঠেকায় আমায় কে?

আজকে আমার মনের মাঝে 

ধাই ধপাধপ তবলা বাঁজে- 

রাম-খটাখট ঘ্যাচাং ঘ্যাচ 

কথায় কাটে কথার প্যাচ। 

ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর 

গানের পালা সাঙ্গ মোর।


মোদের বাংলা ভাষা

লেখক: সুফিয়া কামাল


মোদের দেশের সরল মানুষ

কামার কুমার জেলে চাষা

তাদের তরে সহজ হবে

মোদের বাংলা ভাষা।


বিদেশ হতে বিজাতীয়

নানান কথার ছড়াছড়ি

আর কতকাল দেশের মানুষ

থাকবে বল সহ্য করি।


যারা আছেন সামনে আজও

গুণী, জ্ঞানী, মনীষীরা

আমার দেশের সব মানুষের

এই বেদন বুঝুন তারা।


ভাষার তরে প্রাণ দিল যে

কত মায়ের কোলের ছেলে

তাদের রক্ত-পিছল পথে

এবার যেন মুক্তি মেলে।

সহজ সরল বাংলা ভাষা

সব মানুষের মিটাক আশা।


  • কাজলা দিদি লেখক: যতীন্দ্রমোহন বাগচী


বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,

মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?

পুকুর ধারে লেবুর তলে,

থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,

মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?


সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;

দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?

খাবার খেতে আসি যখন

দিদি বলে ডাকি তখন,

ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?

আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?


বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?

কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!

দিদির মত ফাঁকি দিয়ে

আমিও যদি লুকাই গিয়ে

তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক'রে রবে?

আমিও নাই---দিদিও নাই---কেমন মজা হবে!


ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,

মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |

ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে

বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,

উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,

দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |


বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,

এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?

লেবুর তলে পুকুর পাড়ে

ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,---

রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?


  • মা লেখক: কাজী নজুরল ইসলাম


যেখানেতে দেখি যাহা

মায়ের মতন আহা

একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,

মায়ের যতন এত

আদর সোহাগ সে তো

আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।


হেরিলে মায়ের মুখ

দূরে যায় সব দুখ,

মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,

মায়ের শীতল কোলে

সকল যাতনা ভোলে

কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।


যখন জন্ম নিনু

কত আসহায় ছিনু,

কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,

ওঠা বসা দূরে থাক-

মুখে নাহি ছিল বাক,

চাহনি ফিরিত শুধু মার পিছু পিছু।


পাঠশালা হ’তে যবে

ঘরে ফিরি যাব সবে,

কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা,

খাবার ধরিয়া মুখে

শুধাবেন কত সুখে

কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’


পড়া লেখা ভাল হ’লে

দেখেছ সে কত ছলে

ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে।

বলে, ‘মোর খোকামনি!

হীরা-মানিকের খনি,

এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে।


দিবানিশি ভাবনা

কিসে ক্লেশ পাব না,

কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;

বুক ভ’রে ওঠে মা’র

ছেলেরি গরবে তাঁর,

সব দুখ হয় মায়ের আশিসে।


  • বীরপুরুষ লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


 মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে

     মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে ।

তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে 

দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,

আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরে

     টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে ।

রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে

     রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে ।


     সন্ধে হল,সূর্য নামে পাটে

     এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে ।

ধূ ধূ করে যে দিক পানে চাই

কোনোখানে জনমানব নাই,

তুমি যেন আপনমনে তাই

     ভয় পেয়েছ; ভাবছ, এলেম কোথা?

আমি বলছি, ‘ভয় পেয়ো না মা গো,

     ঐ দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা ।’


আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,

     অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো ।

তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,

      ‘দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো!’


     এমন সময় 'হারে রে রে রে রে’

     ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে ।

তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে 

ঠাকুর দেবতা স্মরণ করছ মনে,

বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে

     পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।

আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,

     ‘আমি আছি, ভয় কেন মা কর।’


তুমি বললে, ‘যাস না খোকা ওরে’

     আমি বলি, ‘দেখো না চুপ করে।’

ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,

ঢাল তলোয়ার ঝন্‌ঝনিয়ে বাজে 

কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,

     শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।

কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,

     কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।


এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে

     ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।

আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে

বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে’,

তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে

     চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে -

বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল!

     কী দুর্দশাই হত তা না হলে।’


৫ম শ্রেণির কবিতাগুলি হলো-


  • সংকল্প লেখক: কাজী নজরুল ইসলাম


থাকব না’ক বদ্ধ ঘরে

দেখব এবার জগৎটাকে

কেমন করে ঘুরছে মানুষ

যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।

দেশ হতে দেশ দেশান্তরে

ছুটছে তারা কেমন করে,

কিসের নেশায় কেমন করে

মরছে যে বীর লাখে লাখে।

কিসের আশায় করছে তারা

বরণ মরণ যন্ত্রণাকে

হাউই চড়ে চায় যেতে কে

চন্দ্রলোকের অচিনপুরে,

শুনব আমি, ইঙ্গিতে কোন

মঙ্গল হতে আসছে উড়ে।

পাতাল ফেড়ে নামব আমি

উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে,

বিশ্বজগৎ দেখব আমি

আপন হাতের মুঠোয় পুরে।


  • ফুটবল খেলোয়াড় লেখক: জসীমউদদীন


আমাদের মেসে ইমদাদ হক ফুটবল খেলোয়াড়,

হাতে পায়ে মুখে শত আঘাতের ক্ষতে খ্যাতি লেখা তার।

সন্ধ্যা বেলায় দেখিবে তাহারে পটি বাঁধি পায়ে হাতে,

মালিশ মাখিছে প্রতি গিঠে গিঠে কাত হয়ে বিছানাতে।

মেসের চাকর হয় লবেজান সেঁক দিতে ভাঙ্গা হাড়ে,

সারা রাত শুধু ছটফট করে কেঁদে কেঁদে ডাক ছাড়ে।

আমরা তো ভাবি ছমাসের তরে পঙ্গু সে হল হায়,

ফুটবল-টিমে বল লয়ে কভু দেখিতে পাব না তায়।


প্রভাত বেলায় খবর লইতে ছুটে যাই তার ঘরে,

বিছানা তাহার শূন্য পড়িয়া ভাঙা খাটিয়ার পরে।

টেবিলের পরে ছোট বড় যত মালিশের শিশিগুলি,

উপহাস যেন করিতেছে মোরে ছিপি- পরা দাঁত তুলি।

সন্ধ্যা বেলায় খেলার মাঠেতে চেয়ে দেখি বিস্ময়ে,

মোদের মেসের ইমদাদ হক আগে ছোটে বল লয়ে!

বাপ পায়ে বল ড্রিবলিং করে ডান পায়ে মারে ঠেলা,

ভাঙা কয়খানা হাতে পায়ে তার বজ্র করিছে খেলা।


চালাও চালাও আরও আগে যাও বাতাসের মত ধাও,

মারো জোরে মারো- গোলের ভেতরে বলেরে ছুঁড়িয়া দাও।

গোল-গোল-গোল, চারিদিক হতে ওঠে কোলাহলকল,

জীবনের পণ, মরণের পণ, সব বাঁধা, পায়ে দল।

গোল-গোল-গোল-মোদের মেসের ইমদাদ হক কাজি,

ভাঙা দুটি পায়ে জয়ের ভাগ্য লুটিয়া আনিল আজি।

দর্শকদল ফিরিয়া চলেছে মহা-কলবর করে,

ইমদাদ হক খোড়াতে খোড়াতে আসে যে মেসের ঘরে।

মেসের চাকর হয়রান হয় পায়েতে মালিশ মাখি,

বে-ঘুম রাত্র কেটে যায় তার চীৎকার করি ডাকি।

সকালে সকালে দৈনিক খুলি মহা-আনন্দে পড়ে,

ইমদাদ হক কাল যা খেলেছে কমই তা নজরে পড়ে।


  • ফেব্রুয়ারির গান লেখক: লুৎফর রহমান রিটন


দোয়েল কোয়েল ময়না কোকিল 

সবার আছে গান

পাখির গানে পাখির সুরে 

মুগ্ধ সবার প্রাণ।


সাগর নদীর ঊর্মিমালার 

মন ভোলানো সুর

নদী হচ্ছে স্রোতস্বিনী

সাগর সমুদ্দুর।

ছড়ায় পাহাড় সুরের বাহার

ঝরনা-প্রকৃতিতে

বাতাস তার প্রতিধ্বনি

গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে।


গাছের গানে মুগ্ধ পাতা

মুগ্ধ স্বর্ণলতা

ছন্দ-সুরে ফুলের সাথে 

প্রজাপতির কথা।

ফুল পাখি নই, নইকো পাহাড়

ঝরনা সাগর নই

মায়ের মুখের মধুর ভাষায়

মনের কথা কই।


বাংলা আমার মায়ের ভাষা

শহিদ ছেলের দান

আমার ভাইয়ের রক্তে লেখা 

ফেব্রুয়ারির গান। 


  • শব্দদূষণ লেখক: সুকুমার বড়ুয়া


গরু ডাকে হাঁসে ডাকে -ডাকে কবুতর

গাছে ডাকে শত পাখি সারা দিনভর ।

মোরগের ডাক শুনি প্রতিদিন ভোরে

নিশিরাতে কুকুরের দল ডাকে জোড়ে

দোয়েল চড়ুই ডাকে কিচির মিচির 

গান শুনি ঘুঘু আর টুনটুনির ।


শহরের পাতিকাকে ডাকে ঝাকে ঝাকে

ঘুম দেয়া মুশকিল হর্নের হঁকে ।

সিডি চলে,টিভি চলে ,বাজে টেলিফোন

দরজায় বেল বাজে কান পেতে শোন ।

গলিপথে ফেরিওয়ালা হাঁকে আর হাঁটে

ছোটদের হইচই ইশকুল মাঠে ।


পল্লীর সেই সুর ভরে যায় মন

শহুরে জীবন জ্বালা -শব্দদূষণ ।


  • স্বদেশ লেখক: আহসান হাবীব


এই যে নদী

নদীর জোয়ার

নৌকা সারে সারে,

একলা বসে আপন মনে

বসে নদীর ধারে

এই ছবিটি চেনা।

মনের মধ্যে যখন খুশি

এই ছবিটি আঁকি

এক পাশে তার জারুল গাছে

দু’টি হলুদ পাখি,এমনি পাওয়া এই ছবিটি

কড়িতে নয় কেনা।

মাঠের পরে মাঠ চলেছে

নেই যেন এর শেষ

নানা কাজের মানুষগুলো

আছে নানান বেশ,

মাঠের মানুষ যায় মাঠে আর

হাটের মানূষ হাটে,

দেখে দেখে একটি ছেলের

সারাটাদিন কাটে।

এই ছেলেটির মুখ

সারাদেশের সব ছেলেদের

মুখেতে টুকটুক।

কে তুমি ভাই,

প্রশ্ন করি যখন,

ভালবাসার শিল্পী আমি,

বলবে হেসে তখন।

এই যে ছবি এমনি আঁকা


  • ঘাসফুল লেখক: জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র


আমরা ঘাসের ছোট ছোট ফুল 

হাওয়াতে দোলাই মাথা, 

তুলো না মোদের দোলো না পায়ে 

ছিঁড়ো না নরম পাতা। 


শুধু দেখো আর খুশি হও মনে

সূর্যের সাথে হাসির কিরণে 

কেমন আমরা হেসে উঠি আর 

দুলে দুলে নাড়ি মাথা। 


ধরার বুকের স্নেহ-কণাগুলি 

ঘাস হয়ে ফুটে ওঠে। 

মোরা তারই লাল নীল সাদা হাসি

রূপকথা নীল আকাশের বাঁশি-

শুনি আর দুলি শান্ত বাতাসে

যখন তারারা ফোঁটে।


  • শিক্ষাগুরুর মর্যাদা লেখক: কাজী কাদের নেওয়াজ


বাদশাহ আলমগীর-

কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।

একদা প্রভাতে গিয়া

দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া

ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে

পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,

শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি

ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

শিক্ষক মৌলভী

ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।

দিল্লীপতির পুত্রের করে

লইয়াছে পানি চরণের পরে,

স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!

ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।

হঠাৎ কি ভাবি উঠি

কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,

শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার

দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,

ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,

বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,

প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।


তার পরদিন প্রাতে

বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।

খাস কামরাতে যবে

শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,

পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?

বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,

নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”

শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,

কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”

বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে

নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,

পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।

নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে

ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”


উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে

কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-

”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,

সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”


  • দুই তীরে লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমি ভালোবাসি আমার

     নদীর বালুচর,

শরৎকালে যে নির্জনে

     চকাচকীর ঘর।


            যেথায় ফুটে কাশ

            তটের চারি পাশ,

                  শীতের দিনে বিদেশী সব

                        হাঁসের বসবাস।


                             কচ্ছপেরা ধীরে

                             রৌদ্র পোহায় তীরে,

                        দু - একখানি জেলের ডিঙি

                             সন্ধেবেলায় ভিড়ে।


তুমি ভালোবাস তোমার                       

     ওই ও পারের বন,

যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া

     পাতার আচ্ছাদন।


            যেথায় বাঁকা গলি

            নদীতে যায় চলি,

      দুই ধারে তার বেণুবনের

            শাখায় গলাগলি।


                সকাল-সন্ধেবেলা

                 ঘাটে বধূর মেলা,

             ছেলের দলে ঘাটের জলে

                ভাসে ভাসায় ভেলা।


  • রৌদ্র লেখে জয় লেখক: শামসুর রহমান


বর্গি এলো খাজনা নিতে,

মারল মানুষ কত ।

পুড়ল শহর, পুড়ল শ্যামল 

গ্রাম যে শত শত । 

হানাদারের সঙ্গে জোরে

লড়ে মুক্তিসেনা,

তাদের কথা দেশের মানুষ 

কখনো ভুলবে না। 

আবার দেখি নীল আকাশে 

পায়রা মেলে পাখা ,

মা হয়ে যায় দেশের মাটি,

তার বুকেতেই থাকা । 

কাল যেখানে আঁধার ছিল 

আজ সেখানে আলো।

কাল যেখানে মন্দ ছিল,

আজ সেখানে ভালো 

কাল যেখানে পরাজয়ের 

কালো সন্ধ্যা হয় ,আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ