1. মহিলাদের নামাজ কি পুরুষ থেকে আলাদা  ?? যদি হয়  তবে কেমন ? বিস্তারিত জানাবেন(দলিল সহ)।
  2. মহিলারা কি নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারে না ?

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

(ক) মৌলিকভাবে নারী পুরুষের নামাজ এক ও অভিন্ন। তবে কিছু বিষয়ে নারীদের নামাজ পুরুষের নামজ থেকে আলাদা। নিম্নে নারীদের নামাজের পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো। ১.    পুরুষ তাকবীরে তাহরীমার সময় এভাবে হাত উঠাবে যে, হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকবে। আঙ্গুলসমূহ কান বরাবর এবং আঙ্গুলের মাথা কানের উপরাংশ বরাবর থাকবে। আর নারীরা তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের তালু বুক বরাবর রাখবে এবং আঙ্গুল কাঁধ বরাবর রাখবে। ২.    তাকবীরে তাহরীমার সময় চাদর পেঁচানো থাকলে পুরুষ তা থেকে হাত বের করে রফয়ে ইয়াদাইন করবে। তবে ওযরের কারণে বের না করারও অনুমতি আছে। আর নারীরা চাদর ইত্যাদি থেকে হাত বের করবে না; বরং চাদর বা হিজাবের ভিতরে হাত রেখেই রফয়ে ইয়াদাইন করবে। ৩.    পুরুষ তাকবীরে তাহরীমার সময় হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখবে। একেবারে মিলিয়েও রাখবে না আবার একেবারে ফাঁকা করেও রাখবে না। আর নারীরা তার আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখবে। ৪.    পুরুষ দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং বাকি তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর রেখে দিবে। আর নারীরা ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল সোজা করে বাম হাতের উপর রেখে দিবে; বাম হাত ধরবে না। ৫.    পুরুষ কিয়াম অবস্থায় নাভীর নীচে হাত বাঁধবে। আর নারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে। ৬.    স্বাভাবিক অবস্থায় দাঁড়ানোর সময় পুরুষ দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল থেকে এক বিঘাত পর্যন্ত ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা দু’পা মিলিয়ে রাখবে। ৭.    পুরুষ একাকী জাহরী নামায পড়লে উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া উত্তম; ওয়াজিব নয়। আর নারীদের জন্য কিরাআত উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া মাকরূহ। ৮.    পুরুষ ইমাম হলে জাহরী নামাযে উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া ওয়াজিব। আর নারীরা ইমাম হলে উচ্চশব্দে কিরআত পড়া মাকরূহে তানযীহী। ৯.    পুরুষ রুকূতে এ পরিমাণ ঝুঁকবে যে, হাতের তালু হাঁটুর উপরে থাকবে এবং আঙ্গুলসমূহ হাঁটুর নীচে থাকবে। আর নারীরা এ পরিমাণ ঝুঁকবে যে, হাতের তালু রানের উপর থাকবে আর আঙ্গুলের মাথা হাঁটুর উপরে থাকবে। ১০.    পুরুষ রুকূতে তার হাত দ্বারা হাঁটুর উপর ভর দিবে। কিন্তু নারীরা হাত দ্বারা হাঁটুর উপর ভর দিবে না। ১১.    পুরুষ রুকূতে হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা করে হাঁটু আকড়ে ধরবে। নারীরা না তার আঙ্গুল ফাঁকা রাখবে না হাঁটু আকড়ে ধরবে; বরং আঙ্গুল মিলানো অবস্থায় রেখে দিবে। ১২.    পুরুষ রুকূতে বাহু এবং কনুই পাজর থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা বাহু এবং কনুই পাজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। ১৩.    পুরুষ রুকূতে মাথা এবং নিতম্ব বরাবর রাখবে। আর নারীরা রুকূতে মাথা সামান্য উঁচু করে রাখবে। ১৪.    পুরুষ রুকূতে হাঁটু, পায়ের নলা এবং উরু একেবারে সোজা রাখবে। আর নারীরা রুকূতে হাঁটু সামান্য বাঁকা রাখবে। ১৫.    পুরুষ সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু এরপর হাত রাখবে। আর নারীরা প্রথমে বসবে এরপর উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে সিজদা করবে। ১৬.    পুরুষ সিজদায় হাত হাঁটু থেকে দূরে রাখবে। আর নারীরা হাঁটুর কাছেই হাত রাখবে। ১৭.    পুরুষ সিজদায় বাহু পাজর এবং বগল থেকে দূরে রাখবে এবং বগল ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা বাহু বগলের সাথে মিলিয়ে রাখবে; ফাঁকা করবে না। ১৮.    পুরুষ সিজদায় হাত যমীনে বিছিয়ে রাখবে না। আর নারীরা তার হাত যমীনে বিছিয়ে রাখবে। ১৯.    পুরুষ সিজদায় উভয় পা দাঁড় করিয়ে রাখবে। আর নারীরা উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে রাখবে। ২০.    পুরুষ সিজদায় পায়ের আঙ্গুল যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখবে। আর নারীরা পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে না। ২১.    পুরুষ সিজদায় পায়ের নলা এবং উরু সোজা করে রাখবে। আর নারীরা ডান পায়ের নলা বাম পায়ের নলার উপরে রাখবে এবং উরু সোজা করে রাখবে না। ২২.    পুরুষ সিজদায় কোমর উঁচু করে রাখবে। আর নারীরা পুরুষদের মতো কোমর উঁচু করে রাখবে না। ২৩.    পুরুষ সিজদায় পেট উরু থেকে, উরু নলা থেকে এবং নলা যমীন থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা সিজদায় পেট উরুর সাথে এবং পায়ের নলা যমীনের সাথে মিলিয়ে রাখবে। ২৪.    পুরুষ দুই সিজদার মাঝে এবং বৈঠকের সময় ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে বাম পায়ের উপর বসবে। আর নারীরা উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসবে। ২৫.    পুরুষ সিজদা থেকে উঠে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। আর নারীরা সিজদা থেকে উঠে প্রথমে বসবে, এরপর পা সোজা করে পরে দাঁড়াবে। ২৬.    পুরুষ সিজদায় স্বাভাবিকভাবে শরীর ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা যথাসম্ভব শরীর জড়োসড়ো করে গুটিয়ে রাখবে। ২৭.    পুরুষ সিজদায় পা, পায়ের নলা, কোমর এং কাঁধ সোজা করে রাখবে। ডান-বামে হেলিয়ে রাখবে না। আর নারীরা উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে সামান্য বাম দিকে হেলে সিজদা করবে। ২৮.    পুরুষ বৈঠকের সময় পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে। আর নারীরা পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে না। ২৯.    পুরুষ বৈঠক অবস্থায় হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক রাখবে। একেবারে মিলিয়ে কিংবা একেবারে ফাঁকা করে রাখবে না। আর নারীরা তার আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখবে। ৩০.    পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে ফরয নামায পড়া উত্তম। বিনা প্রয়োজনে ঘরে পড়া মাকরূহ। আর নারীর জন্য ঘরে পড়া উত্তম; মসজিদে যাওয়া মাকরূহ। ৩১.    পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া জরুরী। আর নারীর জন্য একাকী নামায পড়া উত্তম। ঘরে বা মসজিদে জামাআতে নামায পড়া মাকরূহ। ৩২.    পুরুষের জন্য সামনের কাতারে নামায পড়া উত্তম। আর নারীর জন্য এমনটি উত্তম নয়। ৩৩.    পুরুষদের কাতার বাচ্চাদের কাতারের সামনে হবে। আর নারীদের কাতার বাচ্চাদের কাতারের পিছে হবে। ৩৪.    পুরুষের জন্য একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়ানো মাকরূহ। আর নারীর জন্য মাকরূহ নয়। ৩৫.    পুরুষ মুসল্লী ইমামকে সুবহানাল্লাহ বলে লুকমা দিবে। আর নারী যবানে নয় বরং হাতের পিঠে হাত মেরে লুকমা দিবে। ৩৬.    পুরুষ সিজদা থেকে নারীর আগে মাথা উঠাবে। আর নারী পুরুষের পরে মাথা উঠাবে। ৩৭.    পুরুষ মুআযযিন এবং মুকাব্বির হতে পারে। কিন্তু নারী মুআযযিন বা মুকাব্বির হতে পারে না। ৩৮.    পুরুষ ইমামের জন্য সুন্নাত হলো মুক্তাদীদের সামনে দাঁড়ানো। আর নারী ইমাম হলে মুক্তাদীদের মাঝে দাঁড়াবে। ৩৯.    পুরুষের জামাআতের জন্য আযান ইকামত দেয়া সুন্নাত। আর নারীদের জামাতের জন্য আযান ইকামত দেয়া সুন্নাত পরিপন্থী। ৪০.    পুরুষ নারী-পুরুষ সকলের ইমাম হতে পারে। আর নারী পুরুষের ইমাম হতে পারে না। (আব্দুল হাই লাক্ষ্নবী, আসসি‘আয়া, উমদাতুল ফিকহ) (খ) হ্যাঁ, মহিলারা নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারে। তবে তা উত্তম নয়। তাদের জন্য উত্তম হলো অন্দরমহলে নামাজ আদায় করা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ