নবি (স:) অবশ্যই মাটির তৈরি.কারণ তিনি ছিলেন আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এবং জীবন-যাপনকারী.আপনি হক্কানী আলেমের কাছ থেকে এই সম্পর্কে ভালো করে দলিল সহকারে জেনে নিন.তবে মনে রাখবেন,নবি (স:) অবশ্যই মাটির তৈরি এবং তাতে কোনো সন্দেহ নেই.

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ


প্রথম কথা হলো, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্ট আর সৃষ্টিজগতের সবকিছু আমার নূর থেকে সৃষ্ট।' এটি একটি জাল বর্ণনা। এ কথার কোনো ভিত্তি নেই।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসের তৈরি ? এ প্রশ্নের উত্তর বলবো :

১. আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণীর জীবকে শরীয়তের বিধানাবলী পালনের উদ্দেশে সৃষ্টি করেছেন ১.ফেরেশতা ২. জিন ৩. মানুষ।

২. ফেরেশতা সৃষ্টির উপাদান হলো নূর তথা আলো। জিন সৃষ্টির উপাদান হলো আগুন। মানুষ সৃষ্টির উপাদান হলো মাটি। ত্রিসৃষ্টর গঠনগত এ উপাদানের কথা আলকুরআনে স্পষ্টভাবে একাধিকবার আলোচিত হয়েছে।

৩. আলো-আগুনের ধাতুগত বৈশিষ্ট হলো, এগুলোর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং ভার নেই। এবং এগুলো ধরা ছোঁয়া যায় না। আর মাটির ধাতুগত বৈশিষ্ট হলো এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং ভার সবই আছে। এবং পঞ্চইন্দ্রীয় দ্বারা তা অনুভবও করা যায়। মানুষের মাঝে তার সৃষ্টিগত উপাদানের সবগুলো বৈশিষ্টই বিদ্যমান রয়েছে। তবে ফেরেশতা এবং জিন সম্প্রদায়ের মাঝে তাদের সৃষ্টিগত উপাদানের মধ্য হতে দর্শনীয় বৈশিষ্টকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট বৈশিষ্টগুলো যথাযথভাবে বিদ্যমান রয়েছে।

৪. নূর একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ আলো বা জ্যোতি। নূরের বিপরীতার্থক শব্দ হলো যুলমাহ। অর্থ অন্ধকার। আরবী ভাষায় নূর শব্দটি দৃশ্যমান আলো এবং রূপক ও অদৃশ্য আলো তথা জ্ঞান- উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যুলমাহ শব্দটিও নূর শব্দের মত দৃশ্যমান আঁধার এবং রূপক আঁধার অর্থে ব্যবহৃত হয়। নূর-আলোর এ দ্বিবিধ অর্থের ব্যবহার সম্বন্ধে কুরআন সুন্নাহে অসংখ্য বর্ণনা বিবৃতি বর্ণিত হয়েছে। নূর শব্দটি কোথায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা শব্দের প্রয়োগ রীতি এবং পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হবে। যে স্থানে নূর শব্দ দ্বারা অদৃশ্য নূর উদ্দেশ্য সেখানে দৃশ্য নূরের ব্যাখ্যা করা তেমনিভাবে যেখানে দৃশ্য নূর উদ্দেশ্য সেখানে অদৃশ্য নূরের ব্যাখ্যা করা অর্থগত বিকৃতি বৈ কিছুই নয়।

৫. মান-মর্যাদা ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য প্রাপ্তির মাপকাঠি হল অদৃশ্যমান নূর; দৃশ্যমান নূর নয়। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাটির তৈরি বলা হলে তাঁর মর্যাদা হানি হবে আর ফেরেশতাদেরকে নূরের তৈরি বলা হলে তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে যাবে- ব্যাপারটি এমন নয়। নতুবা জিন-ফেরেশতাদের মর্যাদা নবীদের মর্যাদার চেয়ে অনেক বেশি হত। একথা সর্বজন বিদিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব সম্প্রদায়ের একজন ছিলেন এবং মানব মণ্ডলীর সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। ( সূরা কাহফ- ১১০) আর মানুষের গঠনগত উপাদান হল মাটি। আলকুরআনে এ ব্যাপারটি বহুবার উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টিতে মাটি বিনে অন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করেছেন বলে কোথাও কোনো প্রমাণ নেই। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা নামের যে সম্প্রদায়কে নূরের উপাদানে সৃষ্টি করেছেন তাদের অস্তিত্বকে মানুষের পক্ষে পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের মাধ্যমে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাদের এ বৈশিষ্টের সাথে তাদের সৃষ্টিগত উপাদানের সাযুজ্য বেশ লক্ষণীয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতাকুলের মত নূরের সৃষ্ট হলে নূরের আবশ্যকীয় বৈশিষ্টের কারণে তাঁকে অন্তত ধরা ছোঁয়ার কোনো অবকাশ ছিল না। অথচ এটা প্রমাণিত সত্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে ধরা-ছোয়াসহ মানবীয় যাবতীয় বৈশিষ্টই বিদ্যমান ছিল। এমনকি চাঁদ-সূর্যের আলোতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিচ্ছায়া সৃষ্টি হত। অথচ মানবীয় এসব বৈশিষ্ট নূর তথা আলোক বৈশিষ্টের স্পষ্ট পরিপন্থী। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃশ্যমন নূরের সৃষ্ট ছিলেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মান-মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে অদৃশ্য নূরের কারণে। সৃষ্টিগত উপাদানের কারণে নয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি বলে যেসব বর্ণনা শোনা যায় তার সবই জাল। তবে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাটির তৈরি বলে যদি তাঁর নবুওয়াত, রিসালাত কিংবা সুপ্রমাণিত কোনো শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করার সুযোগ গ্রহণ করা হয় অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নিজেদের সমতা বিধানের উদ্দেশে কিংবা উপহাস ছলে এ কথা বলা হয় তবে তা স্পষ্ট কুফুরী হিসেবে পরিগণিত হবে। ( সূরা আরাফ ১২, সূরা কাহফ ১১০, প্রচলিত জাল হাদীস ১৯৭)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ