আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যগুলো বিলুপ্তির পথে কেনো? সরকার বা আমাদের কি কি করণীয়?
১। জাতীয় পতাকা: লাল-সবুজের পতাকা। বাংলাদেশে যতগুলো বাড়িতে যতগুলো জায়গায় যতগুলো অন্য দেশের পতাকা ওড়ানো হয় (বিশেষ করে, ব্রাজিল-আর্জেটিনার পতাকা), কেনো সেই পরিমান বাংলাদেশের পতাকা সেই পরিমান জায়গায় উড়ে না। নিজ দেশের পতাকা না উড়িয়ে কেনো অন্য দেশের পতাকা নিয়ে এতো মাতামাতি? অনেক জায়গায় আবার দেখা যায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকার সাথে বাংলাদেশের ছোট পতাকা উড়ানো হয়? বাংলাদেশের পতাকা তো অন্য দেশের পতাকার তুলনায় সবচেয়ে বড় হওয়া উচিত। কি আমাদের দেশপ্রেম? আর দেশে যেখানে সেখানে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এসব পতাকা কি সরকারের চোখে পড়ে না? সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? আমরাই বা কেনো এতো অন্য দেশপ্রেমিক?
২। বাংলায় লেখা: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষালয়, হোটেল, রেস্তোরাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলা বাদ দিয়ে শুধু ইংরেজিতে লেখা হয়। এই জঘন্য অপরাধটা যারা করে, তারা সত্যিকারের রাজাকার! মাতৃভাষার প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই কেনো? আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় লিখে ব্রেকেটে ইংরেজি নামটা দিলেই তো পারেন?
৩। মৃৎশিল্প: আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরী শিল্প হারাতে বসেছি।
৪। মাটির ঘর: গরীবের এসি খ্যাত মাটির ঘর প্রায় বিলুপ্ত।
৫। গরুর গাড়ি: আমাদের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় গাড়িটি প্রায় বিলুপ্ত।
৬। মসলিন কাপড়: আমরা আমাদের এই জাতীয় ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি।
৭। দোয়েল: আমাদের এই জাতীয় পাখিটির সহজে দেখা মেলে না, প্রায় বিলুপ্ত।
৮। রয়েল বেঙ্গল টাইগার: আমরা আমাদের এই জাতীয় পশুটি হারাতে চলেছি।
৯। শাপলা: আমাদের জাতীয় ফুলটি আগে যেভাবে বর্ষাকালে পাওয়া যেতো, এখন আর সেই পরিমানে পাওয়া যায় না।
১০। হা-ডু-ডু: আমাদের জাতীয় খেলা। ক্রিকেট-ফুটবলের ভিড়ে এই খেলাটি প্রায় বিলুপ্ত।
১১। ইলিশ: আমরা এতো পরিমাণে এ মাছের ঝাটকা ধরি, যা করা অনুচিত।
১২। কাঁঠাল: আমাদের জাতীয় ফল এবং বিশ্বের বৃহত্তম ফল। অথচ নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল ব্যতীত খুব কম বাড়িতেই এই ফলের গাছ পাওয়া যায়।
১৩। সংস্কৃতি: আমরা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে কেনো যেনো বিজাতীয় বা পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরছি, যেটা আমাদের পোশাক-আশাক ও আচার-ব্যবহারে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
১৪। দেশীয় গান: নিজ দেশের বাংলা গানগুলো বাদ দিয়ে কেনো জানি আমরা হিন্দি ও ইংরেজি গানের প্রতি বেশি ঝুকে যাচ্ছি। অনেক জায়গায় বাংলাদেশের জাতীয় দিবসে বাংলা গানের চেয়ে হিন্দি গান বেশি বাজে।
১৫। মাতৃভাষা দিবস: আমরা আমাদের মাতৃভাষা দিবস বাংলায় ৮ ফাল্গুনের পরিবর্তিতে ইংরেজিতে একুশে ফেব্রুয়ারী পালন করি, যেটা বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মান।
১৬। বাংলাদেশের জন্মতারিখ: ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ যে বাংলাদেশের জন্মতারিখ, সেটা আমরা অনেকেই জানিনা।
১৭। বাংলা সিনেমা ও নাটক: বাংলা সিনেমা ও নাটকের চেয়ে হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমা ও হিন্দি সিরিয়ালের নাটক আমাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।
১৮। বাংলা ভাষার ব্যবহার: এখন আমরা কেনো যেনো অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে বেশি গর্ববোধ করি।
১৯। 'মা' ডাক: 'মা' ডাকটা কেনো জানি আর আগের মতো শোনা যায় না, এখন মাম্মি-ডেডির প্রচলন ঘটতেছে।
২০। জাতীয় ও জাতীয়তা: নিজ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ব্যক্তি, বস্তু বাদ দিয়ে কেনো জানি আমরা বিজাতীয়, পাশ্চাত্য, অন্য দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ব্যক্তি, বস্তু নিয়ে মাতামাতি করি।
আমরা বাংলাদেশীরা কেনো এমন হয়ে যাচ্ছি?