তিন শ্রেণীর মানুষের কাছে এই প্রশ্ন আসে। মুসলিম, অন্য ধর্মীয় এবং নাস্তিকদের। এখানে সবার বিষয় নিয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথমেই আমরা রাসূল(সাঃ) এর স্ত্রীদের নাম জেনে নিচ্ছি।
০১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রাঃ)
০২. সাওদা বিনতে যামআ (রাঃ)
০৩. আয়িশা বিনতে আবু বকর (রাঃ)
০৪. হাফসা বিনতে উমর (রাঃ)
০৫. যয়নাব বিনতে খুযাইমা (রাঃ)
০৬. উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবী
উমাইয়্যা (রাঃ)
০৭. যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ)
০৮. জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ইবনে আবি
যারার (রাঃ)
০৯. রামালাহ বিনতে আবু-সুফিয়ান (রাঃ)
১০. সফিয়্যা বিনতে হুওয়াই (রাঃ)
১১. মাইমুনা বিনতে হারিছ ইবনে হাযন (রাঃ)
১২. মারিয়া আল-কিবতিয়া (রাঃ)
মুসলিম ভাগঃ
মুসলিমদের মনে প্রধান প্রশ্ন রাসূল(সাঃ) এর
বিয়ের পিছনে প্রধান কারণ কি ছিল। তাদের
উদ্দেশ্যে বলতে চাই, রাসূল(সাঃ) এর বিয়ে
সম্পূর্ণ হালাল ছিল এবং আল্লাহ নির্দেশিত
ছিল। এটা কুরআন এর একটা আয়াত দ্বারা
প্রমাণিত।
"হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে
হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা
প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল
করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব
করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি
আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি,
মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা
আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন
নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন
করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও
হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য
মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা
দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও
দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি
আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল,
দয়ালু।" (আল-কুরআন, সূরা আহযাব, আয়াত- ৫০)
এবং যখন নিষেধ করা হয়েছে তখন আর তিনি
বিয়ে করেন নি। নিষেধের প্রমাণ পাওয়া
যায় নিচের আয়াতে।
"এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয়
এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও
হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে
মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন।
আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর
রাখেন।" (আল-কুরআন, সূরা আহযাব, আয়াত-
৫২)
সাধারণভাবে আমরা বিয়ের কারণের
ভিত্তিতে রাসূল(সাঃ) এর বিয়েকে ৬ ভাগে
ভাগ করতে পারি।
১. বৈবাহিক জীবন যাপন
২. স্ত্রীদের মাধ্যমে ইসলামের বিষয়াদি
শেয়ার করা যা তারা অন্য সাহাবীদের
শেয়ার করতেন
৩. সাহাবীদের বিধবা স্ত্রীদের সাহায্য
করা
৪. সাহাবীদের সাথে পারিবারিক বন্ধন
স্থাপন
৫. বিভিন্ন গোত্রে পারিবারিক বন্ধন
স্থাপনের উদ্দেশ্যে
৬. কুসংস্কার দূরীকরণ
১. বৈবাহিক জীবন যাপন
খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ(রাঃ) কে এই
ভাগে স্থান দেয়া যায়। তিনি ছিলেন মক্কার
একজন ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত মহিলা। তাঁর বয়স
যখন ৪০, তখন ২৫ বৎসর বয়সী হযরত মুহম্মদ
(সাঃ)-এর সঙ্গে তাদের বিবাহ হয়েছিল।
খাদিজা(রাঃ) ছিলেন দুইবার এর বিধবা।
হযরত ইবরাহিম (রা:) ব্যতীত হযরত মুহম্মদ
(সাঃ)-এর সকল সন্তান ইনার গর্ভে জন্ম লাভ
করে। তাঁর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ (সাঃ) আর
কোন বিয়ে করেন নি। প্রত্যেক মানুষের
বৈবাহিক জীবন যাপনের পূর্ণ অধিকার
আছে। এবং রাসূল(সাঃ) এর এই বিয়ে নিয়ে
কারও মনে কোন প্রশ্ন আসে না। সবাই
এটাকে সাধরণভাবে নেয়।
২. স্ত্রীদের মাধ্যমে ইসলামের বিষয়াদি
শেয়ার করা।
অনেক মহিলা সাহাবীরা এমন অনেক প্রশ্ন
করতেন যার উত্তর দিতে রাসূল(সাঃ)
সংকোচবোধ করতেন। রাসূল(সাঃ) এর পক্ষ
থেকে তার স্ত্রীরা তাদের সেই বিষয়
বুঝিয়ে দিতেন। এছাড়াও ইসলাম প্রচারে
অনেক ক্ষেত্রেই মেয়ে সাহাবীর ভুমিকা
অনেক বেশী ছিল। এখান উদাহরণ হিসেবে
বলা যায়- আয়েশা(রাঃ) এর কথা। তার
মাধ্যমে ইসলামের অনেক বিভ্রান্তি দূরীভুত
হয়েছে।
মুসলিম ভাইয়েরা এখানে দুইটা বিষয় ভাল
করে খেয়াল করুন-
* যদি রাসূল(সাঃ) মাত্র একটি বিয়ে করতেন
তাহলে এত সাহাবীর/তাবেঈর সবার প্রশ্নের
উত্তর একজন কিভাবে দিতেন?? এটা একজন
স্ত্রীর পক্ষে অসম্ভব ছিল
* খাদিজা(রাঃ) মারা যাবার পরও ইসলামের
অনেক বিধান এসেছে। যদি রাসূল(সাঃ) আর
বিয়ে না করতেন তাহলে এমন অনেক বিষয়
(যা রাসূল(সাঃ) এর স্ত্রীরা ছাড়া অন্য কেউ
বর্ণনা করতে পারতেন না) মানুষের অজানাই
থেকে যেত।
৩. সাহাবীদের বিধবা স্ত্রীদের সাহায্য
করা অনেক সাহাবী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। অনেকে
আবার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। রাসূল
(সাঃ) তাদের মধ্যে কিছু বিধবাকে বিয়ে
করেছেন তার মধ্যে- হাফসা বিনতে উমর
(রা), যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা), উম্মে
সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়্যা (রাঃ)
এর কথা বলা যায়।
হাফসা (রাঃ) এর স্বামী বদর যুদ্ধে মারা
যাবর পর তিনি পিতা ওমর (রাঃ) এর কাছে
এসে পড়েন। উমর (রাঃ) তার এই যুবতী বিধবা
কন্যার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত হন ও তাকে
বিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
হাফসা (রাঃ) কে বিয়ে করে ওমর (রাঃ) কে
চিন্তা হতে মুক্তি দেন এবং ওমর (রাঃ) খুব
খুশি হন।
যয়নব (রাঃ) এর স্বামী যুদ্ধে শাহাদাত বরণ
করায় তিনি শোকাহত হয়ে পড়েন, তার
চেয়েও তার পিতা বেশি শোকাহত হয়ে
পড়েন তাকে নিয়ে। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহর
নিকট পৌছালে তিনি কতিপয় সাহাবীদের
কে বিয়ের জন্য রাজী করাতে চেষ্টা করেন
কিন্তু সকলেই নানা ওজর দেখিয়ে পিছিয়ে
যান । তাই রাসূল(সাঃ) নিজেই যয়নব (রা) কে
বিয়ে করে নেন। বিয়ে হয় ৩ হিজরি সনে ।
যয়নব (রা) এর বয়স তখন ৩০ বছর । বিয়ের মাত্র
তিন মাস পর তিনি ইন্তেকাল করেন ।
উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়্যা
(রাঃ) যুদ্ধে আবু সালামা (রাঃ) শাহাদাত
বরণের পর উম্মে সালামা (রা) চরম অর্থকষ্টে
পতিত হন। অনেক সাহাবী তাকে বিয়ের
প্রস্তাব দিলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন।
রাসূল(সাঃ) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে
তিনি তিনটি কারণ দেখান এবং বলেন-
তিনি ঈর্ষায় পতিত হতে পারেন, তিনি বৃদ্ধ
এবং তার সন্তান আছে। রাসূল(সাঃ) বলেন-
আল্লাহর কাছে তিনি ঈর্ষার জন্য দোয়া
করবেন, রাসূল(সাঃ) ও বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার
সন্তান রাসূল(সাঃ) এর সন্তান। তারপর উম্মে
সালামা(রাঃ) রাসূল(সাঃ)কে বিয়ে করেন।
৪. সাহাবীদের সাথে পারিবারিক বন্ধন
স্থাপন।
এখানে একটা উদাহরণ দেয়া যায়, রাসূল
(সাঃ) আবু বকর(রাঃ) এবং উমর(রাঃ) এর
মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। আর তার
নিজের কন্যাকে উসমান(রাঃ) এবং আলী
(রাঃ) এর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।
এটাকেও অনেকে বিয়ের কারণ হিসেবে মনে
করেন।
৫. বিভিন্ন গোত্রে পারিবারিক বন্ধন
স্থাপনের উদ্দেশ্যে
এটা ছিল মূলত ইসলাম এর প্রসার ঘটানোর
উদ্দেশ্যে। যুদ্ধে পরাজিত গোত্র যুদ্ধবন্দি
হত। তাদের মেয়েদের কোন কোন সাহাবী
বিয়ে করতেন। তার মধ্যে সফিয়্যা বিনতে
হুওয়াই (রাঃ) যুদ্ধবন্দী হয়ে আসেন এবং
ঈমান আনার পর উনি রাসূল(সাঃ) কে বিয়ে
করতে রাজি হন। তার বিয়ের পর বনু নাদির
গোত্রে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে এবং
মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
রামালাহ বিনতে আবু-সুফিয়ান (রাঃ) এর
কথা বলা যায়, মক্কার কুরাইশদের সাথে
একটা শান্তিচুক্তি হয়। এই শান্তি চুক্তির পর
পরই রাসূল(সাঃ) মক্কার সর্দার আবু সুফিয়ান
এর কন্যাকে বিয়ে করেন। তার স্বামী
খ্রীষ্টান হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তিনি
ইসলামে অটল থাকেন। কুরাইশদের সাথে
সম্পর্ক স্থাপনের জন্য রাসূল(সাঃ) এই বিয়ে
ভুমিকা পালন করে।
৬. কুসংস্কার দূরীকরণ
এখানে উল্লেখযোগ্য হল- যয়নাব বিনতে
জাহশ (রাঃ)। তখনকার সময়ে পালক পুত্রকে
নিজের ছেলের মত মনে করা হত আর এই
কুসংস্কার দূর করতে রাসূল (সাঃ) তাকে বিয়ে
করেন।
এভাবে দেখা যায়, বিভিন্ন বিয়ের বিভিন্ন
প্রেক্ষাপট ছিল। এবং সবগুলো প্রেক্ষাপটই
ছিল অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। তাই রাসূল(সাঃ) এত
বিয়ে করেছিলেন এবং সব স্ত্রীই রাসূল
(সাঃ) এর সাথে সুখী ছিলেন। আশাকরি
মুসলিমরা এখান থেকে উত্তর পেয়ে যাবেন।