শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াতে শহীদদের কিছু উপকার হয়না। বরং দেশের আর্থিক অপচয় হয়। আর অপচয় খুবই খারাপ বিষয়। আর এক মিনিট বোবা হয়ে থাকা বোকামী ছাড়া কিছুই না। ফুল দেওয়া, অগ্নি প্রজ্বলন এগুলো বিজাতীয় কৃষ্টিকালচার। রাসুল সাঃ বলেছেন, যারা বিজাতির অনুসরণ করবে তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। সবদিক বিবেচনা করে বুঝা যায়, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া জায়েয নেই। তাদের স্মৃতিচারণে তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করা যেতে পারে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী কোন কবর বা স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী করা কঠিনভাবে হারাম। ঠিক সেই কারনে মদিনায় স্বয়ং নবির কবরের কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই, বা নেই কোন সাহাবির কবরের বাহারি সব স্মৃতি স্তম্ভ। যেখানে স্মৃতি স্তম্ভই নির্মান কঠিনভাবে হারাম সেখানে সেই স্তম্ভ নির্মান করে তাতে ফুল দেয়া তো ভয়াবহ ও ক্ষমার অযোগ্য হারাম কাজ। অথচ আমরা না জেনে না বুঝে সেই কথিত শহিদদের স্মরনে স্মৃতি স্তম্ভে একুশে ফেব্রুয়ারী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। যা কঠিন কঠোর ভাবে হারাম কাজ।
মুসলিম সমাজে রীতি আছে, মৃত বা শহীদ মুসলমানের মাগফেরাতের জন্য দুআর অনুষ্ঠান করা। কিন্তু ভাষা শহীদদের জন্য মাগফেরাতের দুআ করা হয় না; যা করা হয় তার সাথে ইসলামের রীতির মিল নেই। হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রতিমা-পূজার পক্ষে এ যুক্তি পেশ করেন যে, দেবতা পূজারীদের নাগালের ভেতর নেই, তাই তার প্রতিমার মাধ্যমে তাঁকে পূজা দেওয়া হয়। শহীদ মিনারের বেলায়ও এ বিশ্বাস করা হয় যে, শহীদ মিনারকে সম্মান দেখানো ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধা করার সমতুল্য।
শহীদ মিনারকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠানকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখার দরকার আছে। ভাষা শহীদরা সবাই ছিলেন মুসলমান। কাজেই তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমরা এমন কিছু করতে পারি না যা ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া কোনো মুসলমানই তাওহীদ-বিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না।
প্রায় নববই শতাংশ মুসলমান একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনে অংশগ্রহণ করেন । কিন্তু এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে যা করা হয় তা মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাসের সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। শহীদ মিনারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের অনেক কিছুরই মিল আছে হিন্দুদের পূজা-পার্বণের সাথে। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি :
১/ হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমাকে যে উঁচু স্থানে স্থাপন করা হয় সে স্থানকে বলা হয় বেদী, শহীদ মিনারের পদমূলকেও বলা হয় বেদী। বেদী শব্দটির অর্থ ‘হিন্দুদের যজ্ঞ বা পূজার জন্য প্রস্ত্তত উচ্চভূমি।’ (বাংলা একাডেমীর সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে দেখা যেতে পারে,)
২/ প্রতিমা বা মূর্তির বেদীমূলকে পবিত্র মনে করা হয়, তাই সেখানে যেতে হয় খালি পায়ে। শহীদ মিনারের মূলকেও পবিত্র মনে করার কারণেই সেখানে খালি পায়ে যেতে হয়।
৩/ হিন্দু দেবদেবীর পূজার সময় কয়েকটি বিষয় অপরিহার্য। এগুলো হল : লগ্ন, অর্ঘ্য বা নৈবেদ্য, স্তব বা স্ত্ততি, পুরোহিত, দেবতা ও অর্চনা। এসবের সাথেও একুশে ফেব্রুয়ারির আচার-আচরণের সাদৃশ্য আছে। যেমন, অনুষ্ঠান জিরো আওয়ারে শুরু করা (লগ্ন), অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (পুরোহিত), নির্দিষ্টভাবে আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো … ’ গান গেয়ে কাজ করা (স্তব/স্ত্ততি), শহীদ মিনার (জড়পদার্থ)-কে নীরবে শ্রদ্ধা জানানো (অর্চনা)।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফ থেকে ২ উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পবিত্র কুরআনে সূরা নিসার ১১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, (তরজমা) কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ নিবাস। (সূরা নিসা ৪ : ১১৫)
সুনানে আবু দাউদ শরীফের ৪০৩৩ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে সাবধানবাণী এসেছে। তিনি বলেছেন, যে কেউ কোনো কওমের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৩৩)