একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে১০টি কোয়েল পালনকরাযায়।
কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালনপালনের জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না।ছোটআকারের একটি খাচাতেই কোয়েল পালন করাযায়।একটি প্রমাণ সাইজের মুরগির জন্য যেপরিমাণজায়গা প্রয়োজনহয়।সেই একই জায়গা কমপক্ষে ১২টি কোয়েল পালনকরা যায়।
খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটিবাচ্চাকোয়েল ডিম দিয়েথাকে।সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েলডিম প্রদান করেথাকে।এদের ডিম খুব সুস্বাদু ওপুষ্টিকর।পুষ্টিমানের দিক থেকে মুরগির ডিমেরসাথেতা তুলনীয়।
দিনে ২০থেকে ৩০ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদেরশারীরিক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে।
একটি পরিণত বয়সের কোয়েল বছরে ২৫০ থেকে৩০০টি ডিম প্রদান করতে পারে।
কোয়েলের ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দিনেরমধ্যেই বাচ্চা ফুটে বেরহয়।এই বাচ্চা পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হতেসময় লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তহ। অন্য সবগৃহপালিতপশু পাখির মতো তাদেরবাস্থান যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্যরাখা বিশেষ প্রয়োজন।
লিটার বা খাঁচায় কোয়েল পালন করা সবচেয়েযুক্তিযুক্ত।একটি খাঁচার ওপর আরেকটি খাচা এভাবেমোটামুটিভাবে অল্প জায়গাতে অনেকগুলো খাচা স্থাপনকরে কোয়েল পালন করা যায়।মোটামুটিভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটারদৈর্ঘ্য, ৬০ থেকে১০০ সিন্টিমিটার প্রস্থ এবং ২৫ থেকে ৪০সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাচায়কমপক্ষে ৬০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করাযায়।তবে কোয়েলের খাচায় ব্যবহৃতজালেরফাকগুলো একটু ঘন হতেহবে।যাতে করে কোয়েলের মুখ বা গলা সেই ফাক দিয়েবাইরে বেরিয়েনাআসে।সর্বোপরি বাচ্চা রাখার খাচাসহ পরিনত বয়সেরকোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন ইদুর, ছুচো ইত্যাদি না ঢুকতে পারে-সেদিকে লক্ষ্যরেখে খাঁচার ফাঁক তৈরি করতে হবে।
কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থাতার খাঁচাতেই রাখতে হবে।তবে লক্ষ্যরাখতে হবে-পানি খাবার বা রাখার পাত্রউল্টে যেন কোয়েলের গা ভিজে না যায়।
ঘরের যেখানে পর্যাপ্ত আরো বাতাসেরব্যবস্থা রয়েছে-সেখানে কোয়েলের খাঁচারাখা যেতে পারে।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে-বৃষ্টির পানি বাঅন্য কোন তরলপদার্থ দ্বারাকোয়েলের খাঁচা ভিজে না যায়।ভেজা স্থান কোয়েলের স্বাস্থ্যের জন্যমারাত্নকহুমকিস্বরূপ।
কোয়েলের বাচ্চা পালনের সময়একটিঅতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজনহয়।এই সময় বাচ্চাকে ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতেহয়।বাচ্চারবয়স ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিমউত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতেহয়।কারণ, ডিম থেকে ফোটার পর বাচ্চা উক্ত সময়পর্যন্ত খুবই স্পর্শকাতর এবং দুর্বলথাকে।এই সময় তাদেরকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরিযুক্তখাবারও প্রদান করতে হয়।তা না হলেসদ্যজাত বাচ্চা ক্যালোরির অভাবে শরীরঠান্ডা হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে।
সাধারণভাবে বাচ্চা ফুটলে সেগুলোকে আলাদাখাঁচায় স্থানান্তর করা উচিত।কারণ, তাহেল বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় ব্রুডিং এরব্যবস্থা করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।মুরগিরবাচ্চার মতো একই পদ্ধতিতে কোয়েলেরবাচ্চাকে ব্রুডিং বা কৃত্রিম তাপ প্রদান করারপ্রয়োজন হয়ে থাকে।বড়ো আকারের কোয়েলের খামারে বাচ্চা রাখারজন্য আলাদা ব্রুডারখাঁচাতৈরি করা হয়ে থাকে।যাতে করে বাচ্চা ডিম ফুটেবের হবার প্রায় সাথে সাথে সেইখাঁচায় বাচ্চা স্থানান্তর করাযায়।
মোটামুটিভাবে কোয়েল পালনের জন্যএইধরণের বাড়তি যত্ন আরবাসস্থান প্রয়োজন হয়।তবে হিসেব করে দেখা গেছে১০০টি মুরগিরজন্য যে ধরনেরব্যাপক বাসস্থানের প্রয়োজন হয়-সেই ধরনের জায়গায় কমপক্ষে ১০০০ থেকে১২০০ কোয়েল পালন করা সম্ভবপর হয়েথাকে।
সাধারণভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েলদিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্তখাবার গ্রহণ করতে পারে।এদের খাদ্যে আমিষ ও ক্যালোরির পরিমাণনিম্নোক্ত হওয়া উচিত।সাধারণভাবে প্রতি কেজি খাদ্যঅনুপাতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আমিষ এবং ২৫০০ থেকে ৩০০০কিলোক্যালোরি বিপাকীয় শক্তি বিদ্যমান থাকাপ্রয়োজন।সাধারণভাবে হাস মুরগির যেখাবারসরবরাহ করা হয়ে থাকেতার মধ্যেই এই ধরনের আমিষ এবং ক্যালোরি বিদ্যমান।সুতরাং হাসমুরগির জন্য যে খাবার আনা হয় তার থেকেওখাবার প্রদান করে কোয়েল পালন করা যায়।
মুরগির খামারে ব্যবহৃত আকারে একটু ছোট হলেভাল ৃহয়।তবে কোয়েল খুব ঘন ঘনপানি পান করে।তাই কোয়েলের খাচায় কয়েকটি স্থানে পানিরব্যবস্তা খাকতে হবে।তবেলক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্রগুলো যেনখাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে।যাতেপানির পাত্র উপচে বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গাভিজে না যায়।
ককুতরের মতোকোয়েলেরও তেমন কোন রোগ ব্যাধি নেই বললেইচলে।তবে মাঝে মাঝে কোয়েলকে রোগক্রান্তহতেধেখা যায়।কোয়েল রোগাক্রান্ত হলে সাথে সাথেডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
কোন কোয়েল অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকেসুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতেহবে।অসুস্থ্য কোয়েলের সংস্পর্শে থাকলে বাকিসুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে পারে।
খাঁচায় কোন কোয়েল মারা গেলে সাথে সাথে তারকারণ অসুসন্ধান করতে হবে।মরাকোয়েল পুড়িয়ে বা পুতে পেলতেহবে। কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যেআমাশয়উল্লেখ্যযোগ্য।এই রোগ হলে কোয়েলের ঘন ঘন পায়খানাহয়, খাবার গ্রহনে অনীহা দেখা দেয়পাশাপাশি কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতেথাকে।এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শঅনুযায়ীএম্বাজিন জাতীয় ঔষধখাওয়ানো যেতে পারে।
সুষ্ঠুভাবেকোয়েল পালন করতে হলে তাদের থাকার জায়গা বাবাসস্থান, খাবার জায়গা ইত্যাদিস্থানগুলোশুকনা এবং পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।পর্যাপ্তআরৌ বাতাসেরব্যবস্থা থাকতে হবে।সেই সাথে প্রয়োজনীয় সুষমতখাদ্যের সরবরাহ রাখতে হবে।