সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম। আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম: • আব্দুল আযীয ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ - পরাক্রমশালীর বান্দা), • আব্দুল মালিক ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺎﻟﻚ ), • আব্দুল কারীম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ - সম্মানিতের বান্দা), • আব্দুর রহীম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ - করুণাময়ের বান্দা), • আব্দুল আহাদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻷﺣﺪ - এক সত্তার বান্দা), • আব্দুস সামাদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺼﻤﺪ - পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা), • আব্দুল ওয়াহেদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ - একক সত্তার বান্দা), • আব্দুল কাইয়্যুম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻘﻴﻮﻡ - অবিনশ্বরের বান্দা), • আব্দুস সামী ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ - সর্বশ্রোতার বান্দা), • আব্দুল হাইয়্য ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻲ - চিরঞ্জীবের বান্দা), • আব্দুল খালেক ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ - সৃষ্টিকর্তার বান্দা), • আব্দুল বারী ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ - স্রষ্টার বান্দা), • আব্দুল মাজীদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺠﻴﺪ - মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি। পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন: • আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), • আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক), • আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), • আব্দুল কালাম (কথার উপাসক), • আব্দুন নবী (নবীর উপাসক), • আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক), • আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়। তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন: • মুহাম্মদ (ﻣﺤﻤﺪ ), • আহমাদ (ﺃﺣﻤﺪ ), • ইব্রাহীম (ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ), • মুসা (ﻣﻮﺳﻰ ), • ঈসা (ﻋﻴﺴﻰ), • নূহ (ﻧﻮﺡ), • হুদ (ﻫﻮﺩ ), লূত (ﻟﻮﻁ ), • শিছ (ﺷﻴﺚ), • হারুন (ﻫﺎﺭﻭﻥ), • শুআইব (ﺷﻌﻴﺐ ), • আদম (ﺁﺩﻡ ) ইত্যাদি। নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন- • আব্দুল্লাহ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ), • মুনযির (ﻣﻨﺬﺭ ), • উরওয়া (ﻋﺮﻭﺓ ), • হামযা (ﺣﻤﺰﺓ), • জাফর (ﺟﻌﻔﺮ ), • মুসআব (ﻣﺼﻌﺐ), • উবাইদা (ﻋﺒﻴﺪﺓ), • খালেদ (ﺧﺎﻟﺪ), • উমর (ﻋﻤﺮ)। ।[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]