শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
rjrahman

Call
সালাতের ওয়াক্তের সময়সীমা সর্ম্পকে বিস্তারিতঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,
 “জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। 

আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। 

মাগরিবের সময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্য হয়ে যায়। 

ইশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। 

আর ফজরের সময় প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আর সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।” [মুসলিম ৬১২] এ হাদীসে পাঁচটি সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। আর ঘড়ির কাঁটায় ওয়াক্ত নির্ধারণ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হবে। নিম্নে আমরা প্রতিটি সালাতের ওয়াক্ত বা সময়সীমা আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরব: 

এক: জোহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জোহরের সময় হলো, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তার একগুণ বা সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত।” এ কথার মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের শুরু ও শেষ দুটো সময়ই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। 

ওয়াক্তের শুরু: সূর্য যখন মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়বে তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। সূর্য হেলে পড়া তথা জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিনা, তা বুঝে নেয়ার কৌশল হলো- ‘একটা খুঁটি বা এ জাতীয় অন্য কিছু একটা উন্মুক্ত স্থানে পুঁতে রেখে খুঁটিটির প্রতি লক্ষ্য রাখা। পূর্বাকাশে যখন সূর্য উদিত হবে তখন খুঁটিটির ছায়া পশ্চিম দিকে পড়বে। সূর্য যত উপরে উঠবে ছায়ার দৈর্ঘ্য তত কমতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া কমতে থাকবে বুঝতে হবে যে সূর্য তখনও ঢলে পড়েনি। এভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে কমা থেমে যাবে। তারপর খুঁটির পূর্বপাশে ছায়া পড়া শুরু হবে। যখন পূর্বপাশে খানিকটা ছায়া দেখা যাবে, তার মানে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে এবং জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে। 

ঘড়ির কাঁটার হিসেবে সূর্য হেলে পড়ার সময় : সূর্য উদিত হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়টাকে সমান দুইভাগে বিভক্ত করুন। ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা হবে সূর্য হেলে পড়ার সময়। যেমন- যদি সূর্য সকাল ৬ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৬ টায় ডুবে তাহলে মধ্যাকাশ থেকে সূর্য হেলে পড়ার সময়টা হলো ঠিক ১২টা। এমনিভাবে, যদি ৭ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৭ টায় ডুবে, তাহলে মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া শুরু হওয়ার সময় হলো দুপুর ১টা…[দেখুন: আশ শারহুল মুমতি’ ২/৯৬] 

জোহরের ওয়াক্তের শেষ: সূর্য মধ্যাকাশে থাকাকালীন সময়ে কোন বস্তুর যে সামান্যটুকু ছায়া থাকে সে ছায়াকে বাদ দিয়ে কোন বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা ১ গুণ হওয়া পর্যন্ত। 

জোহরের ওয়াক্তের সমাপ্তি অনুধাবনের বাস্তব কৌশল: আগের উদাহরণ তথা পুঁতে রাখা খুঁটির কাছে ফিরে যাই। ধরে নিলাম যে, খুঁটিটির উচ্চতা এক মিটার। লক্ষ্য করুন, সূর্য হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত খুঁটির ছায়া কমতে কমতে একটা ছোট্ট নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। (এ বিন্দুটাকে চিহ্নিত করে রাখুন) আবার যখন ছায়া (পূর্বে) বাড়তে শুরু করল জোহরের ওয়াক্তও তখন শুরু হল। 

এভাবে ছায়া বাড়তে বাড়তে এক সময় খুঁটির সমপরিমাণ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ আপনার চিহ্নিত বিন্দু থেকে এক মিটার। এ বিন্দুর পূর্বের ছায়াকে আরবিতে ফাঈ বলে। এ ক্ষেত্রে ছায়ার এ অংশটুকু ধর্তব্য নয়) আর তখনি জোহরের ওয়াক্ত শেষ হবে এবং তারপরই শুরু হবে আসরের সময়। 

দুই: আসর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আর আসরের সময় হবে না যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে।” আমরা জেনেছি যে- জোহরের ওয়াক্ত শেষ হলে (অর্থাৎ বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে) আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আসরের শেষ সময় দু’রকম: 

(১) সাধারণ সময় (وقت اختيار): রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী অনুযায়ী তা হলো- আসরের শুরু থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত। ঋতুভেদে ঘড়ির কাঁটার হিসাবে এ সময়টি বিভিন্ন হবে।

 (২) জরুরী সময় (وقت اضطرار): সেটা হলো সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ থেকে শুরু করে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কেননা, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূর্য অস্তমিত হবার আগে অন্ততঃ এক রাকাত আসরের নামাজ পড়তে পারল, সে পুরো আসরই পেল।”[বুখারী: ৫৭৯, মুসলিম: ৬০৮]

 মাসয়ালা: (وقت اضطرار) বা জরুরী সময় বলতে কি বুঝায়? 

কেউ যদি বাধ্য হয়ে জরুরী কোন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সাধারণ সময়ে আসরের সালাত আদায় করতে না পারে; যেমন: রোগীর ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করা (সূর্য হলুদ হওয়ার আগে সালাত আদায় করা হয়তো অসম্ভব নয়; কিন্তু কষ্টকর) তাহলে তার জন্য সূর্য ডুবার পূর্ব মুহূর্তে আসরের নামায আদায় করা বৈধ। এতে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। কেননা এটা জরুরী সময় (وقت اضطرار)। সুতরাং কেউ যদি বাধ্য হয় তাহলে সূর্য ডুবার পূর্ব পর্যন্ত তার জন্য আসরের সময় থাকবে। 

তিন: মাগরিব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সন্ধ্যালোক অদৃশ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাগরিবের সময় বিদ্যমান থাকে।” অর্থাৎ আসরের জরুরী সময় শেষ হওয়া তথা সূর্য ডুবার পর হতে মাগরিবের সময় শুরু হয়। পশ্চিমাকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে। সুতরাং লাল আভা যখন অদৃশ্য হয়ে যাবে তখন মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যাবে এবং ইশার সময় শুরু হবে। ঋতুভেদে মাগরিবের ওয়াক্ত ঘড়ির কাঁটায় বিভিন্ন হয়ে থাকে। মোটকথা, আকাশের লাল আভা সমাপ্তি মাগরিবের ওয়াক্ত ফুরিয়ে যাওয়ার প্রমাণ। 

চার: ইশা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আর ইশার ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।” বোঝা গেল মাগরিবের সময় শেষের সাথে সাথেই (অর্থাৎ আকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে) ইশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকে। 

মাসয়ালা: আমরা কিভাবে মধ্যরাত নির্ধারণ করব? 

উত্তর: সূর্যাস্ত থেকে ঊষাকাল (ফজরের ওয়াক্ত শুরু) পর্যন্ত সময়টুকু হিসাব করুন। এর ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা মধ্যরাত্রি তথা ইশার নামাযের শেষ ওয়াক্ত। উদাহরণতঃ সূর্য যদি সন্ধ্যা ৫ টায় অস্ত যায় আর ফজরের ওয়াক্ত হয় ভোর ৫টায়, তার মানে মধ্যরাত হবে রাত ১১টায়। 

 পাঁচ: ফজর :

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আর ফজরের নামাযের ওয়াক্ত: ঊষাকাল (সুবহে সাদিক) থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য শয়তানের দু’ শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।

” ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় দ্বিতীয় ঊষা থেকে। দ্বিতীয় ঊষা হচ্ছে- পূর্বাকাশে বিচ্ছুরিত সাদা রেখা; যা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত থাকে। প্রথম ঊষা দ্বিতীয় ঊষার প্রায় একঘণ্টা পূর্বে বিলীন হয়ে যায়। এ দুই ঊষার মধ্যে পার্থক্য হলো-

 (ক) প্রথম ঊষা লম্বালম্বিভাবে ফুটে উঠে; আড়াআড়িভাবে নয়। অর্থাৎ এটা পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে বিচ্ছুরিত হয়। আর দ্বিতীয় ঊষা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে ফুটে উঠে।

 (খ) প্রথম ঊষা অন্ধকারের মধ্যে ফুটে উঠে। অর্থাৎ সামান্য সময়ের জন্য আলোর রেখা দেখা দিয়ে আবার অন্ধকারে ডুবে যায়। আর দ্বিতীয় ঊষার পর আলো বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। 

(গ) দ্বিতীয় ঊষা দিগন্তের সাথে যুক্ত থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার থাকে না। পক্ষান্তরে প্রথম ঊষা দিগন্ত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার বিদ্যমান থাকে।।।।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে আদায় করার জন্য ফরয করা হয়েছ। মহান আল্লাহ আমাদের দয়াল নবীজিকে মেরাজের রজনীতে মোট ৫০ রাকাত নামাজ প্রদান করেছিলেন।তারপর এক সময় ৫ রাকাত নামাজ প্রদান করেন এবং এই ৫ রাকাত নামাজে ৫০ রাকাত নামাজের সাওয়াব প্রদান করেছেন।আর এই নামাজ আদায় করার জন্য রাসূল সা: আমাদের জন্য নির্ধারিত কিছু সময় দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ সংক্ষেপে নামাজের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করছি। ফজর : ফজর নামাজের সময় শুরু হয় সুবহি সাদিক হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এর সময় থাকে। রাতের শেষে আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখা দেখা যায় তাকেই বলে সুবহে সাদিক। যোহর : দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ছায়া আসলি বাদে কোনো বস্তুর ছায়া দ্বিগুন হওয়া পর্যন্ত এর সময় থাকে। কোনো বস্তুর ঠিক দুপুরের সময় যে ক্ষুদ্র ছায়া থাকে তাকেই বলে ছায়া আসলি। আসর: যোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তবে সূর্যের রং হলুদ হওয়ার আগেই আসর সালাত আদায় করা উচিত। মাগরিব: সূর্যাস্তের পর থেকে মাগরিবের সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে যতক্ষন লালিমা বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ সময় থাকে।আর লালিমা হলো সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিমাকাশে যে লাল আবরণ দেখা যায় তাই লালিমা। ইশা : মাগরিবের সময় শেষ হলেই ইশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সুবহি সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তবে মধ্য রাতের আগেই এই নামাজ আদায় করা উত্তম। আল্লাহ আপনাকে আমাকে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।আমিন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ