বিশ রাকায়াত তারাবিহ নামাযের দলিল সহ বিস্তারিত জানতে চাই?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত।  এর স্বপক্ষে দলিলসমূহঃ 



 দলিল-১:

হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর আমলে (রমযান মাসে) মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায এবং বিতরের নামাযও পড়তেন।”

Reference :

* ইমাম বায়হাকী প্রণীত ‘মা’রেফত-উস-সুনান ওয়াল্ আসার’, ৪র্থ খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৪০৯]

* মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক

* তালীকুল হাসান

* ই’লাউস সুনান,

* তাহাবী শরহে মায়ানিয়িল আছার

* আইনী শরহে বুখারী,

* উমাদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী,

* ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম

`````````হাদিসের মান সম্পর্কে :

ইমাম বায়হাকী (রহ:) অপর এক সনদে অনুরূপ একখানি রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন।

হযরত সাঈব ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে রমযান মাসে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁরা মি’ঈন পাঠ করতেন এবং খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার অসুবিধা থেকে স্বস্তির জন্যে তাঁরা নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।” [ইমাম বায়হাকী রচিত ‘সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৮-৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭] ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এটির এ সনদ সহীহ।” [‘আল-খুলাসাতুল আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]

ইমাম বদরুদ্দীন আয়নী (রহ:) বলেন, “ইমাম বায়হাকী (রহ:) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং তা খলীফা হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলেও প্রচলিত ছিল।” [’উমদাতুল ক্কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ৫ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

সালাফী’ আলেম আল-মোবারকপুরীও এই হাদীসটির সনদকে ’সহীহ’ বলেছে এবং এর পক্ষে ইমাম নববী (রহ:)-এর সমর্থনের কথা উদ্ধৃত করেছে। [’তোহফাতুল আহওয়াযী’, ৩য় খণ্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত] ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এই এ সনদে সকল রাবী তথা বর্ণনাকারী ’সিকা’ বা নির্ভরযোগ্য।” [‘আসার আল-সুনান’, ২:৫৪]

   দলিল-২:

 ইয়াযীদ ইবনে রুমান বলেছেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মুসলমানবৃন্দ রমযান মাসের (প্রতি) রাতে ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ ও বিতর ৩) নামায পড়তেন।”

Reference :

[ইমাম মালেক প্রণীত ‘মুয়াত্তা মালেক’, সালাত অধ্যায়, মা জা’আ ফী কায়ামে রমযান, ১ম খণ্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮০]

     দলিল-৩:

হযরত আবদুল আযীয বিন রাফি’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) মদীনা মোনাওয়ারায় রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযের জামা’তে ইমামতি করতেন।”

Reference :

[মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, ৭৭৬৬ নং হাদীস]

    দলিল-৪:

আবদুর রহমান সুলামী বর্ণনা করেন যে হয়রত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) রমযান মাসে কুরআন মজীদ তেলাওয়াতকারী হাফেযদের ডেকে তাদের মধ্যে একজনকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়াতে বলেছিলেন এবং নিজে বিতরের নামাযে ইমামতি করতেন।

Reference : [ইমাম বায়হাকী কৃত ’সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬২০]

হযরত আবুল হাসান রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্নিত আছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম একজন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইমাম নিযুক্ত করে উনাকে নির্দেশ দিলেন, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবেন।”

Reference : মুছান্নাফ-ইবেন আবী শায়বা

    দলিল-৫:

হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন: “খলীফা উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) রমযান মাসের (তারাবীহ) নামাযে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামা’তে কাতারবদ্ধ করেন এবং তিনি (ইবনে কা’ব) ২০ রাকআত নামায পড়ান।” [‘সিয়ার আল-আ’লম ওয়াল নুবালাহ’, ১ম খণ্ড, ৪০০-১ পৃষ্ঠা, হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা:)-এর জীবনী] ইমাম নববী (রহ:) ওপরের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন: “এর সনদ সহীহ।” [‘আল-খুলাসাত আল-আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]

    দলিল-৬:

হযরত আবূল হাসনা বর্ণনা করেন যে হযরত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) জনৈক ব্যক্তিকে রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করার নির্দেশ দেন।”

Reference :

* মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৩

* সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী,

* আল জাওহারুন নক্বী,

* কানযূল উম্মাল,

* ই’লাউস সুনান,

* উমদাতুল ক্বারী, আইনী শরহে বুখারীতে বর্ণিত আছে।

     দলিল-৭ :

হযরত নাফে’ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে ওয়াকী’ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযরত ইবনে আবি মুলাইকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) রমযান মাসে আমাদের জামা’তের ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করতেন।”

Reference :

[মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৫]

      দলিল-৮ :

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) বর্ণনা করেন যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে (প্রতি রাতে) নিজে নিজে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও পড়তেন।

Reference :

[‘সুনান আল-বায়হাকী, হাদীস নং ১২১০২]

      দলিল ৯ :

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকাত বেতরের নামাযও আদায় করতেন।

Reference :

[’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৭৬৯২]

     দলিল ১০ :

হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাতে ২০ রাকআত নামায মানুষের সাথে আদায় করেন; কিন্তু তিনি তৃতীয় রাতে আর বের হননি। তিনি বলেন, আমি আশংকা করি যে এটি তোমাদের (সাহাবা-এ-কেরামের) প্রতি আবার বাধ্যতামূলক না হয়ে যায়।

Reference :

[ইবনে ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) কৃত ‘আল-তালখীস আল-হাবীর’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৫৪০]

বি:দ্র: ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীস উদ্ধৃত করার পরে বলেন, “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (আলাইহিস সালাম) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।

     দলিল ১১ :

আল-হারিস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন, আর ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন এবং রুকূর আগে কুনুত পড়তেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৭]

     দলিল ১২ :

তারাবীহ’র সংজ্ঞাঃ হযরত আবূ আল-বখতারী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত যে তিনি রমযান মাসে জামাআতে ‘৫ তারভিয়াত’ (অর্থাৎ, ২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযের এবং ৩ রাকাত বেতরের নামাযের ইমামতি করতেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৮]

বি:দ্র: তারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকআতে এক ‘তারভিহ’ (বিশ্রামের সময়)। পাঁচ ’তারভিহাত’ হলো ৫*৪=২০ রাকআত।

     দলিল ১৩ :

হযরত আতা’ ইবনে রুবাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন: আমি সব সময়-ই মানুষদেরকে ২৩ রাকআত (তারাবীহ) পড়তে দেখেছি, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল বেতরের নামায।

Reference :

* মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭০

* ক্বিয়ামুল লাইল,

* লাইলুল আওতার,

* ফাতহুল বারী শরহে বুখারী

     দলিল ১৪ :

হযরত শায়তার ইবনে শাকী হতে প্রমাণিত যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের জামাআতে এবং বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬২]

      দলিল ১৫ :

হযরত সাঈদ বিন উবাইদ বর্ণনা করেন যে হযরত আলী বিন রাবিয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) তাঁদেরকে ৫ তারভিহাত (২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযে এবং ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।

Reference :

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭২] 

     দলিল ১৬ :
ইবনে কুদামাহ (রহ:) ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের পক্ষে যে ‘এজমা’ হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে লিখেন:আবূ আবদিল্লাহ (ইমাম আহমদ হাম্বল)-এর দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠিত দলিল হলো ২০ রাকআত (তারাবীহ); এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন সর্ব-হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:), ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) ও ইমাম শাফেঈ (রহ:)। ইমাম মালেক (রহ:)-এর মতে এটি ৩৬ রাকআত। তিনি মদীনাবাসীর রীতি অনুসরণ করেন। কেননা, সালেহ বলেন তিনি সেখানকার মানুষকে দেখেছিলেন ৪১ রাকআত কেয়ামুল্ লাইল (তারাবীহ) পালন করতে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৫ রাকআত বেতরের নামায। কিন্তু আমাদের প্রামাণ্য দলিল হচ্ছে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) মানুষদেরকে সমবেত করে হযরত ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ইমামতিতে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায জামাআতে আদায় করিয়েছেন। হযরত হাসসান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর সূত্রে এও বর্ণিত হয়েছে যে খলীফা হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) এভাবে ২০ রাত হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামাঅাতে নামায আদায় করিয়েছিলেন; আর তিনি (হযরত কা’ব) রমযানের নিসফে (ওই সময়) শেষ দশ দিন তারাবীহ নিজের ঘরে পড়তেন। এই বর্ণনা ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) ও হযরত সাইব ইবনে এয়াযীদ (রা:)-এর প্রদত্ত। ইমাম মালেক (রহ:) এয়াযীদ ইবনে রুমান থেকে এও বর্ণনা করেছেন যে, খলীফা হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর শাসনামলে মানুষেরা ২৩ রাকআত তারাবীহ আদায় করতেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৩ রাকআত বিতর।
ইবনে কুদামাহ আরও লিখেন: হযরত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াযহু) হতে এও বর্ণিত হয়েছে যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে ২০ রাকআত তারাবীহ’র জামাআতে ইমামতি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব, ২০ রাকআত তারাবীহ’র ব্যাপারে এজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। অধিকন্তু, সালেহ যে মদীনাবাসীদেরকে ৪১ রাকআত নামায পড়তে দেখেছিলেন, সে সম্পর্কে বলবো, সালেহ দুর্বল এবং আমরা জানি না ৪১ রাকআতের এই বর্ণনা কে দিয়েছিলেন। হতে পারে যে সালেহ কিছু মানুষকে ৪১ রাকআত পড়তে দেখেছিলেন, কিন্তু এটি তো হুজ্জাত (প্রামাণ্য দলিল) হতে পারে না। আমরা যদি ধরেও নেই যে মদীনাবাসী ৪১ রাকআত তারাবীহ (বেতরের ৫ রাকআত-সহ) পড়তেন, তবুও হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু)-এর নির্দেশ, যা তাঁর সময়কার সকল সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগন) অনুসরণ করেছিলেন, তা-ই অধিকতর অনুসরণযোগ্য। কয়েকজন উলামা বলেন যে মদীনাবাসী মুসলমানগণ ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়তেন যাতে মক্কাবাসী মুসলমানদের সাথে তা মিলে যায়; কেননা, মক্কাবাসীরা প্রতি রাকআত পড়ার পর তাওয়াফ করতেন এবং এভাবে তাঁরা ৭ বার তাওয়াফ করতেন। মদীনাবাসী মুসলমানগণ ওই সময়ের মধ্যে (অর্থাৎ, একেক তওয়াফে) ৪ রাকআত আদায় করে নিতেন (নওয়াফিল)। কিন্তু আমরা যেহেতু জানি যে সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) ২০ রাকআত তারাবীহ পড়েছেন, সেহেতু আমাদের তা-ই মান্য করা আবশ্যক।Reference :[ইবনে কুদামাহ প্রণীত আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা]                           

      দলিল ১৭ :
আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন গ্রন্থে লেখা আছে: তারাবীহ নামাযের অন্তর্ভুক্ত ২০ রাকআত। প্রতি দুই রাকআতে প্রত্যেকের উচিত বৈঠকে সালাম ফেরানো; ফলে এ নামায ৫ তারউইহাত-বিশিষ্ট, যার প্রতি ৪ রাকআতে একটি তারভি (অর্থাৎ, ৫ বার চার রাকআত =২০)।Reference :[বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) : আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন, ২য় খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা]                           
      দলিল ১৮ : 
ইমাম বোখারী (রহ:) তাঁর ‘আল-কুনা’ পুস্তকে রওয়ায়াত করেন: হযরত আবূ আল-খুসাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বর্ণনা করেন যে হযরত সুওয়াইদ বিন গাফালাহ (রা:) সব সময়-ই রমযান মাসে আমাদেরকে নিয়ে জামাআতে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযে ইমামতি করতেন।
Reference :* ইমাম বুখারী : আল-কুনা, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ২৩৪* সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী,* মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা,* আল্‌ জাওহারুন নক্বী,* আছারুস সুনান,* ই’লাউস সুনান,* বজলুল মাজহুদ,* শরহে আবূ দাউদ                           

       দলিল ১৯ :
হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত- নিশ্চয়ই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে সকল লোকদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন।
Reference :* মুছান্নিফ ইবনে আবী শা’ইবা,* ই’লাউস সুনান,* ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার,* ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম                            
       দলিল ২০ :
হযরত যায়িদ ইবনে ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায পড়াতেন। হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়াতেন এবং তিন রাকায়াত বিতর পড়াতেন।” হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ তারাবীহ বিশ রাকায়াত এবং বিতর রাকায়াত মোট তেইশ রাকায়াত।”
Reference :* মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বাহ                            

     দলিল ২১ : 
মুহম্মদ ইবনে কা’ব রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, “লোকেরা (হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার যামানায় (খিলাফতকালে) রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযপড়েন।”
Reference :(ক্বিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা-৯১)          

      দলিল ২২ :
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার এক সাথী হযরত শুতাইর ইবনে শেকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি রমাদ্বান মাসে ২০ তারাবীহ ও তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন।Reference :* সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী,* মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা,* আল জাওহারুন নক্বী,* মিরক্বাত শরহে মিশকাতে উল্লেখ আছে                            

       দলিল ২৩ : 
হযরত আবুল বুখতারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, “তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবীহ ও তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়তেন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা) হাফিযুল হাদীছ, ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হারিছ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবু জুবার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, “আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় তেইশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া হতো। হযরত আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উহার তিন রাকায়াত বিতর নামায।” (আইনী শরহে বুখারী)
আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই একমত যে, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত।তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত এ বিষয়ে কোন সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিমত পোষণ করেন নি। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথা বর্ণনা করেছেন- বিশ রাকায়াত তারাবীহ। এটাই সহীহ বর্ণনা।(উমাদুল ক্বারী, শরহে বুখারী)এতএব উপরের এতসব দলিলাজিল্লাহ দ্বারা প্রমানিত হলো যে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত ই পড়া সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত তাই এখন যদি কেউ ৮ রাকাত পড়ে তাহলে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন ই ভালো জানেন তার ফায়ছালা তিনি কিভাবে করবেন। নিশ্চই যারা সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম) গনের বিপক্ষে নিজের মনগড়া মতামত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করবেন না আর যা তিনি অপছন্দ করবেন তা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ও অপছন্দ করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ