Call

সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ত্বক রাঙাতে পৃথিবীব্যাপী মেহেদীর ব্যবহার হয়ে আসছে। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগেও মেহেদী দিয়ে শরীর অলংকরণ করার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও ত্বক রাঙাতে মেহেদী অনেক জনপ্রিয়। বিয়ে, ঈদ বা পূজায় আনন্দের অন্যতম উপলক্ষ্য মেহেদী দিয়ে হাত রাঙানো। চাঁদ রাতে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মেয়ে আর শিশুদের মধ্যে মেহেদী দেয়ার ধুম পড়ে যায়।

image

মেহেদী পাতায় রয়েছে লসোন (Lawsone) নামক রঞ্জক পদার্থ। লসোনের রাসায়নিক সংকেত C10H6O3. লসোনকে Hennotannic Acid নামেও ডাকা হয়। পাতায় এই হেনোট্যানিক এসিড বা লসোনের উপস্থিতির কারণে শরীর রাঙ্গাতে মেহেদী পাতার এত কদর। মেহেদী পাতার মন্ডে এসিড আছে এমন কিছু মেশানো হলে লসোন অনুগুলো পাতা থেকে বেশী পরিমানে বেরিয়ে আসে। সে কারণে, মেহেদী পাতার মন্ডে লেবুর রস, কমলার রস, ভিনেগার বা কোল্ড ড্রিংক মেশানো হলে ত্বকে ভালো রং পাওয়া যায়।

মেহেদী পাতার মন্ড ত্বকে লাগানো হলে লসোন অনু ত্বকের কোষে প্রবেশ করে। লসোন অনু ত্বকের একটি কোষ থেকে একই স্তরে অবস্থিত তার চারপাশের কোষে ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে ত্বকের যে অংশে মেহেদী পাতার মণ্ড লাগানো হয় ঠিক সেখানেই রং হয়। রংটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে, ত্বকের উপর পাতার মন্ড দিয়ে যে ডিজাইন করা হয় ঠিক সে ডিজাইন মত রং হয়।

লসোন অনুগুলো একই স্তরে অবস্থিত কোষগুলোর একটি থেকে আরেকটির মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে না। কিন্তু, ত্বকের উপরের স্তরের কোষ থেকে নিচের স্তরের কোষের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কোষে যত বেশী লসোন অনু প্রবেশ করে ত্বকের কোষগুলো তত বেশী রঙ্গিন হয়ে ওঠে। উপরের স্তরের কোষগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই বেশী লসোন অনু প্রবেশ করে। ফলে, উপরের স্তরের কোষগুলো হয় বেশী রঙ্গিন। অন্য দিকে, নিচের স্তরের কোষগুলোতে লসোন অনুর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে, নিচের দিকের কোষগুলো তুলনামূলকভাবে কম রঙ্গিন হতে থাকে।

image

আমাদের ত্বকের কোষগুলো নির্দিষ্ট সময় পর পর মরে যায় এবং ত্বক থেকে মৃত কোষ ঝরে পড়তে থাকে। আমাদের ঘরে যে ধূলো জমে তার একটি বড় অংশ আমাদের ত্বকের মৃত কোষ। ঝরে পড়া কোষের শূণ্যস্থান পূরণের জন্য ত্বকের একদম নিচ থেকে নতুন নতুন কোষ তৈরি হতে থাকে। এদিকে, ঝরে পড়া কোষের পরের কোষ-স্তরটি সবার উপরে উঠে আসে। এক সময় সেই স্তরের কোষগুলোও ঝরে পড়লে তার পরের স্তরের কোষগুলো উপরে উঠে আসে। এভাবে, বেশী লসোন অনু বিশিষ্ট বেশী রঙ্গিন কোষগুলো ঝরে পড়তে থাকে, আর কম লসোন অনু বিশিষ্ট কম রঙ্গিন কোষগুলো উপরে উঠতে থাকে। একসময় লসোন অনু বিশিষ্ট সব ত্বক-কোষ ঝরে পড়ে। এভাবেই, ত্বকে মেহেদীর রং গাঢ় থেকে হালকা হতে হতে এক সময় মুছে যায়।

মেহেদী পাতার মন্ড যত বেশী সময় ত্বকের উপর রাখা হয় লসোন অনু তত বেশী পরিমাণে কোষ স্তরের তত বেশী গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে, ত্বকে মেহেদীর রং তত বেশী গাঢ় ও তত বেশী দীর্ঘস্থায়ী হয়। আবার, পুরু ত্বকে কোষস্তর চিকন ত্বকের চেয়ে বেশী থাকে। সেজন্যে, মেহেদী পাতার মন্ড দিয়ে চিকন ত্বকের চেয়ে মোটা ত্বকে বেশী গাঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী রং পাওয়া যায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ