শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ভাই! নিয়্যত একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। মুখে যেটা উচ্চারণ করা হয় সেটা নিয়্যত নয়। হাদীসে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়্যতের কথা এসেছে। সুতরাং ইমাম সাহেবকে নামায পড়ানোর জন্য মুখে কিছুই বলতে হবে না। শুধু মনের ভিতর এ সংকল্প থাকলেই যথেষ্ট, আমি অমুক নামাযের ইমামতি করছি। গদবাধা আরবী পাঠ মুখস্ত করে মুখে উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।এবং এতে বাড়তি কোনো পুণ্যও নেই। বরং তাতে বাড়তি পুণ্য প্রাপ্তির আশা কিংবা বিশ্বাস করলে তা অবিধানিক হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

 

নিয়ত আরবী শব্দ যার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প। নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। তাই ইমাম সাহেব মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার কোন প্রয়োজন নেই।

ইমাম বা একজন বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্ক, বাধ্য করা হয়নি এমন লোক কোন কাজ করবে আর সেখানে তার কোন নিয়ত বা ইচ্ছা থাকবে না এটা সম্ভব নয়। এজন্য কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, নিয়ত ছাড়া কোন আমল করা যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি আবশ্যক করতেন, তবে তা হতো সাধ্যাতিত কাজ চাপিয়ে দেয়ার অন্তর্গত।

তাছাড়া রাসূল (সাঃ) থেকে এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত আছে সাহাবায়ে কেরাম থেকে।

যারা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করে আপনি দেখবেন তারা হয় আলেম বা মুরব্বীর অন্ধানুসারী।

ইমাম নওবী (রহঃ) বলেন, নিয়ত বলে মনের সংকল্পকে। যার স্থল হল হৃদয় ও মস্তিষ্ক। সুতরাং নামাযী নির্দিষ্ট নামাযকে তার মন-মস্তিষ্কে উপস্থিত করবে। যেমন যোহর, ফরয ইত্যাদি নামাযের প্রকার ও গুণ মনে মনে স্থির করবে। অতঃপর প্রথম তকবীরের সাথে সাথে 'মন-মস্তিষ্কে উপস্থিতকৃত কর্ম করার' সংকল্প করবে। (রওযাতুত ত্বালেবীন ১/২২৪, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৮৫ পৃ:)

এই সংকল্প করার জন্য নির্দিষ্ট কোন শব্দ শরীয়তে বর্ণিত হয়নি যা আগেই বলা হয়েছে। আরবীতে বাঁধা মনগড়া নিয়ত বা নিজ ভাষায় কোন নির্দিষ্ট শব্দাবলী দ্বারা রচিত নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা আওড়ানো বিদআত। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১৪, ৩১৫)।

সুতরাং নিয়ত করা জরুরী, কিন্তু পড়া বিদআত।

ইবনুল কাইয়েম (রহঃ) বলেন, নবী (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এর পূর্বে তিনি কিছু বলতেন না এবং মোটেই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতেন না। তিনি এ কথাও বলতেন না যে, 'নাওয়াইতু আন উসাল্লী লিল্লাহি....' আল্লাহর উদ্দেশ্যে অমুক নামায, কেবলাহ মুখে, চার রাকআত, ইমাম বা মুক্তাদী হয়ে পড়ছি।’

এমন 'নাওয়াইতু আন' নিয়তের কথা কেউই বর্ণনা করেন নি; না সহীহ সনদ দ্বারা, না যয়ীফ দ্বারা, না মুসনাদ রুপে, আর না-ই মুরসাল রুপে। বরং তার কোন সাহাবী হতেও ঐ নিয়তের কথা বর্ণিত হয়নি। কোন তাবেয়ীও তা বলা উত্তম মনে করেন নি, আর না-ই চার ইমামের কেউ। (যাদুল মাআদঃ ১/২০১)

তিনি অন্যত্র বলেন, নিয়ত কোন বিষয়ের উপর মনের ইচ্ছা ও সংকল্পকে বলে; যার স্থান হল অন্তর। মুখের সাথে এর আদৌ কোন সম্পর্ক নেই। এ জন্যই নবী (সাঃ) হতে, আর না তার কোন সাহাবী হতে কোন প্রকার (নিয়তের) একটিও শব্দ বর্ণিত হয়নি এবং আমরা তাদের নিকট হতে এর কোন উল্লেখও শুনিনি। পক্ষান্তরে নিয়ত হল কোন কাজ করার জন্য সংকল্প করার নাম মাত্র। (ইগাসাতুল লাহ্‌ফান ১/১৫৮)

আবার বাস্তব এই যে, নিয়তের এত এত শব্দ-সম্ভার দেখে অনেকে নামায শিখতেও ভয় পায়। মুখস্থ করলেও অনেকের ঐ অনর্থক বিষয়ে সময় ব্যয় করা হয় মাত্র। পক্ষান্তরে সূরা মুখস্থ করে ৩টি কি ৪টি! তাছাড়া বহু সাধারণ মানুষের নিকটেই নিয়তের শব্দাবলীতে তালগোল খেয়ে যায়। অনেকে তার অর্থই বোঝে না। অথচ অর্থ না বুঝলে নিয়ত অর্থহীন। সুতরাং যা আল্লাহ ও তার রসূলের নির্দেশ নয় তার পিছনে আমরা খামাখা ছুটব কেন?

বলতে পারেন ‘‘নাওয়াইতু আন’’ বলে নিয়ত শুরু করার প্রচলনটা কীভাবে হল?

কারো কারো ধারণা কায়েদা বাগদাদীর লেখক নিজে থেকে বানিয়ে এটা শুরু করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য বইয়ের লেখকেরা কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই তাদের বইগুলোতেও এগুলো নকল করেছেন। এগুলোর কোন অস্তিত্ব বা দলীল কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ