মোবাইলের সীমে টাকা ভরার জন্য দোকানদার থেকে আমরা যে রিচার্জ কার্ডটি কিনি কার্ডটিতে টাকার পরিবর্তে থাকে কিছু গোপন নাম্বার যেগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোবাইলে প্রবেশ করালে মোবাইলের সীম লোড হয়, তারপর আমরা কথা বলতে পারি। রিচার্জ হয়ে গেলে রিচার্জ কার্ডটি আমরা আর সংরক্ষণ করি না কারণ ওটার আর প্রয়োজন নেই। কেউ রাস্তায় কুড়িয়ে পেলেও উন্মুক্ত সংখ্যা গুলো আর কাজে আসে না। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন- দোকানদারকে আমরা টাকা দিচ্ছি আর বিক্রেতা আমাদের দিচ্ছে কিছু গোপন সংখ্যা। টাকাগুলো কিন্তু ওই সংখ্যার ভেতরেই লুকোনো আছে। সংখ্যাগুলো আজীবন মুখে আওড়িয়ে মোবাইলে যতই ফু-টু দেন না কেন জীবনেও টাকা লোড হবে না। একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবেই। ঠিক ”কলেমা তাইয়্যেবা” ’লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)’ কিছু আরবী অক্ষরের সমাহার মনে হলেও অক্ষর গুলোর ভেতর কিন্তু ঈমানী শক্তি লুক্কায়িত আছে। বাজারী বই থেকে কিংবা বাজারী হুজুরদের থেকে এ ”কলেমা তাইয়্যেবা” আত্মস্থ করে যতই আওড়ান না কেন তা হবে ঐ রিচার্জ কার্ডটির মতো যা ব্যবহৃত হয়ে এখন উন্মুক্ত। দামী রত্ন স্বর্ণ কিন্তু যে-সে বাজারে পাবেন না, স্বর্ণ ক্রয়ের পর আপনি কিন্তু যেখানে-সেখানে রেখেও দেন না, সংরক্ষণ করেন সুরক্ষিত স্থানে, দামী বলে। তদ্রুপ ঈমানী কলেমা সংগ্রহেরও একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে, সংগ্রহের পর তিনটি অপশক্তি (মানুষ শয়তান, জ্বীন শয়তান ও নফস শয়তান) আপনার পেছনে ২৪ ঘন্টা লেগে থাকবে এ মূল্যবান জিনিসটি আপনার নিকট হতে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য, সুরক্ষিত স্থানে রাখতে ব্যর্থ হলে আপনার দশা হবে মক্কার সেই সব লোকদের মতো যারা বাহিরে ইসলামের পাক্কা অনুসারী মনে হলেও ভেতরে মুনাফিক। ঈমানী কলেমা আল্লাহ প্রেমের ছাই রঙা আবরণে ঢাকা থাকে। এ ঈমানী কলেমা পেতে হলে আপনাকে দিতে হবে প্রেম। যেভাবে সীম কার্ড কেনার জন্য দোকানদারকে দিতে হয় টাকা। আবার ধরুন আপনি বাংলালিংক-এর গ্রাহক। এখন আপনার সীমে টাকা দরকার। বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ রিচার্জ কার্ডগুলো তাদের কাছে রেখে দেয়নি। তারা সারাদেশে তাদের ডিলারদের কাছে সব কার্ড বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আপনি চাইলেও বাংলালিংকের হেড অফিস থেকে রিচার্জ কার্ড কিনতে পারবেন না। তারা তাদের ডিলারের কাছে যেতে বলবে। রহমত করবেন আল্লাহ কিন্তু এ ’রহমত’ও তিনি নিজের কাছে রেখে দেননি। দিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধিদের কাছে যাঁদেরকে আমরা ’আওলিয়া আল্লাহ’ হিসেবে চিনি। ”আল্লাহর রহমত (তাঁর) মুহসীন বান্দাদের অতি নিকটে” (সুরা আ’রাফ, আয়াত ৫৬)। সুতরাং আজীবন আল্লাহকে ডাকতে পারেন কিন্তু রহমত ও ঈমান পেতে হলে যেতে হবে সেই সব মুহসীন বান্দাদের কাছে যারা এই আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত দান করেন প্রেম, সাধনা ও বিনয়ের বিনিময়ে।
এ মুহসীন বান্দারা ঈমানী কলেমা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় যখন আপনার ক্বলব তথা অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেবেন তখন থেকেই শুরু হবে আপনার মধ্যে পরিবর্তন কারণ এটি একটি শক্তি। এ শক্তি দুনিয়াবী বিষয় থেকে আপনার মনকে ঘুরিয়ে দেবে আখেরাতের দিকে।
ঈমানদার হতে গেলে প্রথমে আপনাকে এই বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনতে হবে মানে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যথাঃ এক আল্লাহর উপর, ফেরেস্তাদের উপর, আসমানি কিতাবের উপর, নবী রাসুলের উপর, পরকালের উপর, ভাগ্যের উপর, মৃত্যুর উপর.... যা ঈমানে মুফাচ্ছাল থেকে জানতে পারি | এরপর আপনাকে সৎ আমল করতে হবে, হালাল উপার্জন করতে হবে, সত্য কথা বলতে হবে, আমানত রক্ষা করে চলতে হবে, অন্তরে ভয় নিয়ে ইবাদত করতে হবে | এভাবে চললে হয়তো আপনি ইমানদার হতে পারবেন |
ঈমান বৃদ্ধি হওয়ার উপায় সমূহঃ প্রথম উপায়ঃ আল্লাহর সমস্ত নাম ও গুণাবলীসহ আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। আল্লাহ তাআ’লা এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমানও তত বৃদ্ধি পাবে। এ জন্যই যে সমস্ত আলেম আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা এ সম্পর্কে জ্ঞানহীন আলেমদের চেয়ে ঈমানের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী। দ্বিতীয় উপায়ঃ সৃষ্টির ভিতরে আল্লাহর নিদর্শন সমূহ সম্পর্কে গবেষণা করা এবং আল্লাহ মানব জাতিকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন, তার ভিতরে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টিরাজি নিয়ে যতই চিন্তা করবে, ততই তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ) ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺁﻳَﺎﺕٌ ﻟِﻠْﻤُﻮﻗِﻨِﻴﻦَ ﻭَﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗُﺒْﺼِﺮُﻭﻥَ ( “বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে। এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না?” (সূরা যারিয়াতঃ ২০) আল্লাহর সৃষ্টিরাজির মধ্যে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করলে যে ঈমান বৃদ্ধি পায়, এ মর্মে অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে। তৃতীয় উপায়ঃ বেশী বেশী সৎ কাজ সম্পাদন করা। সৎ আমল যতই বৃদ্ধি পাবে, ঈমান ততই বৃদ্ধি পাবে। এই সৎ আমল মুখের কথার মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক যেমন যিক্র- আযকার, নামায, রোযা এবং হজ্জ। এসব কিছুই ঈমান বৃদ্ধির মাধ্যম। ঈমান কমে যাওয়ার কারণ সমূহঃ প্রথম কারণঃ আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ঈমান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই কমবে, ঈমানও তত কমতে থাকবে। দ্বিতীয় কারণঃ সৃষ্টিতে ও শরীয়তে আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা-ভাবনা না করা ঈমানের ঘাটতি হওয়ার অন্যতম কারণ। তৃতীয় কারণঃ গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া। কেননা গুনাহের কাজ করলে অন্তরে এবং ঈমানের উপর বিরাট প্রভাব পড়ে। এই জন্যই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ﻟَﺎ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻲ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ “ব্যভিচারী ঈমান থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।” চতুর্থ কারণঃ সৎ আমল না করা ঈমান হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি বিনা কারণে কোন ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে ঈমান কমার সাথে সাথে সে শাস্তির সম্মুখীন হবে। অবশ্য গ্রহণযোগ্য কারণে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে অথবা ওয়াজিব নয় এমন কাজ ছেড়ে দিলে ঈমানের ঘাটতি হবে, কিন্তু শাস্তির সম্মুখীন হবে না। এই জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে জ্ঞান ও দ্বীনের ক্ষেত্রে অপূর্ণ বলেছেন। এর কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তাদের যখন মাসিকের রক্ত বের হয়, তখন তারা নামায-রোযা থেকে বিরত থাকে। অথচ মাসিক অবস্থায় নামায-রোযা থেকে বিরত থাকার কারণে তাদেরকে দোষারূপ করা হয় না। বরং তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু পুরুষদের তুলনায় তাদের আমল কম হয়ে গেল, সে হিসাবে তারা পুরুষেরে চেয়ে কম ঈমানের অধিকারী।