শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

যারা নিয়মিত পেপার-পত্রিকা পড়ে তারা এমনসব খবর গুলো পায়। যারা ছোট তারা নিয়মিত পত্রিকা পড়তে থাকলে এমন খবর পেতেই পারে। এই আমি আমার এই অল্প বয়সেই এরকম কয়েকটা খবর পড়েছি। একটা তো মনে হয় স্পষ্ট মনে আছে সিলেটের কাছে কোথাও হবে, তাঁর পেট ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবার চিকিৎসা স্বরূপ টিউমারের ঔষধ খেত। পরে আরোগ্য না হওয়াতে নানা টেস্ট করানোর পর ধরা পরে তাঁর পেটে বাচ্চা!!
imageকোনো পুরুষের পেটে বাচ্চা হলে তাকে নিয়ে নানান রকম খারাপ কথার ফুলঝুরি চলে যায়, তাকে নান অপবাদে জর্জরিত করা হয়। আর এসব খবর মানুষে পড়েও খুব আগ্রহ নিয়ে। হোক সেটা সত্য কিন্তু যেসব সাংবাদিক এসব খবর লিখে, তাদের বেলায় দেখা যায় তারা না বুঝে তেমন একটা বিজ্ঞান, না বুঝে পরিস্থিতি। বিজ্ঞান বুঝোয়া সাংবাদিক মনে হয় কিছুটা কমই। তাই দেখা যায় একজন পুরুষের পেটে এরকম হবার কারণ কি সেটা বলছে না বা বলতে পারছে না। আর সাংবাদিকের খবরই তো আমজনতা পড়ে, বিভ্রান্ত তো হতেই পারে!
imageআজকের প্রয়াস হিসেবে আমরা দেখে নিব কি কারণে একজন পুরুষের পেটে বাচ্চা চলে যায়। তাঁর জন্য আমাদের একটু ধৈর্য ধরে পটভূমি সহ সবটা পড়তে হবে। ভাল করে ব্যাখ্যার জন্য বাড়তি কথার দরকার ছিল। আর এই লেখাটা মূলত "মাত্র পাঁচ বছরে মা হয়েছিলেন যে শিশুটি"র পরের পর্ব।
সেদিন একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম পৃথিবীর সবচে অল্প বয়সী মা নিয়ে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সে অল্প-বয়সী মায়ের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ! সে মেয়েটির নাম ছিল লিনা মেডিনা। বাড়ি পেরু। পাঁচ বছর বয়েসে সে মা হয়েছিল কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? এই বয়েসে তো একটা মেয়ের মা হবার জন্য যা যা দরকার হয়, যা যা যোগ্যতা অর্জন করতে হয় তাঁর কিছুই থাকে না।
পাঁচ বছর বয়সে একটা বাচ্চা মেয়ের আসলেই মা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে কোনো এক অজানা কারণে সে মা হতে পেরেছিল। তখন তাঁর এমনকি নিয়মিত পিরিয়ড হোত, তাঁর স্তনও বিকশিত হয়েছিল। তবে তাঁর কেসটা আলাদা। তাঁর ব্যাপারটা বাদ দিলে দেখা যায় এই বয়েসে মা হওয়া যায় না।
তবে অন্য এক পদ্ধতিতে এই বয়েসে সন্তান আসতেও পারে। এই পদ্ধতিতে কোনো প্রকার পুরুষের মিলন ছাড়াই পেটে "সন্তান" আসা সম্ভব। এমনকি সে "সন্তান" পুরুষের পেটেও হতে পারে।
মায়ের পেটে যখন যমজ সন্তান হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই দুইটা আলাদা আলাদা ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। এবং সে ভ্রূণ দুটি পাশাপাশি একসাথে অবস্থান করে। সে ভ্রূণ দুটি যখন খুব ক্ষুদ্র থাকে তখন তারা যেন অর্ধ-তরল রক্তপিণ্ডের মতই থাকে।
এখন পাশাপাশি অবস্থান করা দুই ক্ষুদ্র ভ্রূণের কোনো একটি ভ্রূণ তুলনামূলক ভাবে অধিক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে অপর ভ্রূণের চেয়ে সবল হয়ে যেতে পারে। খাদ্য পুষ্টি গ্রহণ করে হতে পারে তুলনামূলক ভাবে আকারে বড়। একটা বড় হয়ে গেলে আপেক্ষিকভাবে অন্যটা ছোট হবেই।
এখন যদি কোনোভাবে ছোট ভ্রূণটি বড় ভ্রূণের ভেতরে ঢুকে যায় বা বড়টি ছোটটিকে গ্রাস করে নেয় তাহলে সেটি আর বিকশিত হতে পারে না। একটি ভ্রূণ আটকা পরে যায় অন্য আরেকটি ভ্রূণের ভেতরে। ছোটটিকে ভেতরে রেখে বড়টি আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে এবং এক সময় জন্ম লাভ করে। ছোটটি তখন খাদ্য গ্রহণ করে থাকে বড়টির দেহ হতে। এরকম একটু একটু করে খাদ্য নিতে নিতে ধীরে ধীরে করে বেড়ে ওঠে ছোটটি। এই ব্যাপারটাকে আমরা পরজীবী পোষক হিসেবে দেখতে পারি। পরজীবী যেমন পোষক দেহে থেকে বেড়ে ওঠে সেরকম image
imageবড়টি যখন বাইরের পৃথিবীতে খেলছে দুলছে তখন ভিতরে ছোটটি আস্তে আস্তে আকারে বাড়ছে। দেখতে দেখতে একসময় সকলে লক্ষ করে তাঁর পেট ফুলে ওঠছে ধীরে ধীরে। সবাই মনে করে তাঁর পেটের ভিতর কোনো টিউমার। প্রথম দিকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খায় পরে সামান্য চিকিৎসা করে চালিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিশাল সমস্যা কি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধে কিংবা হোমিও ওষুধে শেষ হবার জিনিস? না, তাতে শেষ হয় না। একসময় আর না পারা গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে দেখা যায় পেটে বাচ্চা এবং অপারেশন করে তা বের করতে হয়। বোঝাই যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা মেয়ের পেটেও হতে পারে আবার পুরুষের পেটেও হতে পারে। এখানে উল্লেখ রাখা দরকার এসব অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চাগুলো পূর্ণাঙ্গ হয় না, বাঁচে না। কিংবা বাচ্চা বলতে যা বোঝায় মোটেও তা হয় না। মাঝে মাঝে যেন একটা বস্তু কিংবা একটা পিণ্ড বের করা হয় ভিতর থেকে। মায়ের পেটের জিনিস কি অন্য পেটে বিকশিত হতে পারে? আর পুরুষের মাঝে তো সেটা আরও নাজুক! পুরুষের তো কোনো পেটই নেই!
এখানে আরও যেটা বলার, যদি আমরা ধরে নেই বাচ্চা কোনোভাবে বেঁচে গেল। সুস্থই রইল কয়েক বছর। কিন্তু তবুও সে বায়োলজিকালি কখনোই তাঁর সন্তান নয়। শিশুটি হবে তাঁর ভাই অথবা বোন। তাঁর ভেতরে তো বইছে সে বাবা মায়ের রক্ত।

সোর্স

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ